চতুর্থ বাণী ‘‘এলী এলী লামা শবক্তানী’’ অর্থাৎ ‘‘ ঈশ্বর আমার , ঈশ্বর আমার , তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?

ads20

     চতুর্থ বাণী - “এলী এলী লামা শবক্তানী” অর্থাৎ “ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?”


    মথি ২৭ :৪৬
    এক সময় প্রোেস্টান্ট মণ্ডলীর জনক মার্টিন লুার আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে প্রায় দু'দিন চতুর্থ বাণীটি নিয়ে ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। শেষে হঠাৎ চিৎকার করে তিনি বলে উঠলেন, “ঈশ্বর ঈশ্বরকে পরিত্যাগ করেছেন - এটা কে বুঝতে পারে?” মার্টিন লৃথারের মত “যাত্রিকের গতি' বইটির অমর লেখক জন্‌ বানিয়ানও ঘোষণা করেছিলেন-“নিম্পাপ-নির্দোষ ঈশ-পুত্রের ত্যাজ্যপুত্র হওয়া মানবিক যুক্তির দ্বারা বুঝা দায়।” সত্যি, এ বাণীর তাৎপর্য সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। এই বাণীর তিনটি লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো ঃ


    (ক) বাইবেলের সকল অনুবাদে এই বাণীটি যীশুর মাতৃভাষায় রাখা হয়েছে। হয়ত এক অস্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে এবং উচ্চরবে যীশু কথাটি বলেছিলেন বলে ক্রুশের তলায় যারা দীড়িয়েছিল তাদের মনে এক বিশেষ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে শ্রোতাদের মনে এই প্রতিক্রিয়াটি স্তার করে দিতে তারা সক্ষম হয়েছিল। অনুবাদকগণ সেই ভাবটি বজায় রাখার জন্যই সম্ভবত অরামিক ভাষায় বাণীটি সংরক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন ।

    (খ) এই প্রথম যীশু ঈশ্বরকে 'পিতা' না বলে 'ঈশ্বর' বলে সম্বোধন করেছেন। যীশু সব সময় ঈশ্বরকে পিতা বলেই ডেকেছেন (যোহন ১৪ : ১-২৬, ১৫ ঃ ১, ৮, ১৬, ১৭ 8 ১, ৫, ১১, ২৫ এবং অন্যব্র)। গেৎশিমানী বাগানে তিনি মানসিক যন্ত্রণায় কাতর হয়ে যীশু ঈশ্বরের কাছে মিনতি করেছেন - “পিতা, যদি তোমার ইচ্ছা হয় ..।' আবার ক্রুশবিদ্ধ যীশু শক্রদের জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করেছেন - 'পিতঃ ইহাদিগকে ক্ষমা কর ..।' কিন্ত এখানে 'ঈশ্বর' বলে সম্বোধন করেছেন কেন?

    (গ) এই বাণীটি গীতসংহিতা ২২ : ১ পদের উদ্ভৃতি। ভক্ত দায়ুদ তার সংকটকালে ঈশ্বরের কাছে এই আর্তনাদ করেছিলেন। ইহুদী সন্তানদের গীতসংহিতা ও ভাববাদী পুস্তক মুখস্থ করতে হতো । তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে যীশুর এই পদটি মুখস্থ ছিল। রষ্টের দুঃখভোগের কাহিনী প্রকৃতপক্ষে প্রিয়জনকর্তৃক তার পরিত্যক্ত ও নিঃসঙ্গ হওয়ার কাহিনী । জীবনে চলার পথে পদে পদে তাকে অপমানিত এবং পরিত্যক্ত হতে হয়েছে। পরিবার থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়েছেন। নিজের শহর নাসরত তাকে গ্রহণ করেনি। যে জাতির মুক্তির জন্য এলেন, তারা তাকে পরিত্যাগ করল। যিহুদা আগেই তাকে পরিত্যাগ করেছিল। যে পিতরকে তিনি পাথর আখ্যা দিয়েছিলেন, তিনিও তাকে তিনবার অস্বীকার করেছিলেন এবং গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে যীশুর সঙ্গে একটি নিরাপদ দূরতৃ বজায় রেখে চলছিলেন। শেষ পর্যন্ত যোহন ছাড়া আর সকলেই তাকে ত্যাগ করে ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। গেতশিমানী বাগানে যীশুর মানসিক যন্ত্রণার ভাগীদার না হয়ে তাকে নিংসঙ্গ রেখে শিষ্েরা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ইহুদী মহাসভা, হেরোদ অথবা পীলাতের বিচার সভায় যীশুর পক্ষে কেউই দীড়ায়নি। যীশু একজন নিঃসঙ্গ মানুষ । কিন্তু সকল দৈহিক নির্যাতন, ক্ষিপ্ত জনতা, রোমীয় সেনা ও পথচারীদের ব্যঙ্গ-বি্দ্ধপ তিনি নীরবে সহ্য করতে পেরেছিলেন কারণ তিনি জানতেন সকলে পরিত্যাগ করলেও পিতা ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেননি বা করতে পারেন না।

    পিতা সত্যিই তার প্রিয় পুত্রকে পরিত্যাগ করেছিলেন কি না তা আমরা জানি না। কিন্তু যীশু অনুভব করেছিলেন যে, পিতার কাছ থেকে তিনি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। খাঁর সান্নিধ্যে এ যাবৎ তাকে সকল যন্ত্রণার মধ্যেও স্থির রেখেছিল কিন্তু এখন সেই পিতার সঙ্গে যে তার এক বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি আর্তনাদ করে


    কিন্তু পিতার সঙ্গে এই ব্যবধানের কারণ কি? মানব জাতির মুক্তির জন্য ঈশ্বর যে পরিকল্পনা করেছিলেন জগৎ সৃষ্টির পূর্বে, তার মধ্যেই পাওয়া যাবে এই প্রশ্নের উত্তর। যীশু জানতেন পিতার পরিকল্পনাকে সার্থক করার জন্যই তীর মর্তে আগমন। তিনি এও জানতেন, এক যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু তার জন্য অপেক্ষা করছে, ভাববাদী পুস্তকে (যিশাইয় ৫৩) তার স্পষ্ট উল্লেখ আছে। যীশু নিজেও শিষ্যদের কাছে তা বার বার উল্লেখ করেছেন । মানবের পাপের প্রায়শ্িত্তের জন্য তাকে আত্মবলি দিতে হবে, এই হলো পিতার পরিকল্পনা । সর্বমানবের পাপের প্রতীক হয়ে যে পিতার সামনে তিনি আজ দীড়িয়েছেন, তিনি একদিকে গ্নেহশীল, অন্যদিকে ন্যায় বিচারক। তার বিচার অন্রান্ত, ন্যায্য ও নিরপেক্ষ- পাপের শাস্তি মৃত্যু । সেই মৃত্যুর মুখোমুখি দীড়িয়ে যীশু পিতার সঙ্গে এক অসহনীয় ব্যবধান অনুভব করছেন। তাই এই আর্তনাদ, “কেন তুমি আমায় পরিত্যাগ করিয়াছ?”

    রষ্ট নিজেকে পাপীদের মধ্যে পরিগণিত করলেন। সেই পাপই পিতার সঙ্গে ব্যবধান সৃষ্টি করেছে। এদোন উদ্যানে আদম হবার পাপ তাদের ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। গীতরচক দায়ুদ পাপে পতিত হয়ে অনুভব করেছিলেন যে ঈশ্বর তাকে পরিত্যাগ করেছেন (গীত ২২ : ১)। যিশাইয় ভাববাদী বলেছেন, “তোমাদের অপরাধ সকল তোমাদের ঈশ্বরের সহিত তোমাদের বিচ্ছেদ জন্মাইয়াছে; তোমাদের পাপ সকল তোমাদের হইতে তাহার শ্রীমুখ আচ্ছাদন করিয়াছে, এই জন্য তিনি শুনেন না”৫৯ : ২)। কিন্তু সেই বিচ্ছেদ যেন চির-বিচ্ছেদে পরিণত না হয়, যেন পুর্মমিলনের দ্বার উন্মুক্ত থাকে, সেই জন্য বীশু স্বয়ং আমাদের হয়ে পিতার সঙ্গে বিচ্ছেদ যন্ত্রণা ভোগ করলেন এবং আমাদের পাপের জন্য মৃত্যুবরণ করেলেন।



    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS