সপ্তম বাণী - “পিতা, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি”
(লুক ২৩ ৪ ৪৬)।
করাচির কাছাকাছি ছোট্ট একটি রেলস্টেশন, বেদিয়ান। পাহাড়ে ঘেরা এই স্টেশনটির কাছেই মাত্র কয়েকটি ছোট ঘর।মনে হয় ট্রেন কর্মীদের জন্যই শুধু এ ঘরগুলো তৈরী করা হয়েছে। যেহেতু স্টেশনটি ছোট, মেইল ট্রেন থামে না, স্টেশন মাস্টার শুধু সবুজ পতাকা উড়িয়ে বলে দেয় তুমি যেতে পার। সামনে কোন বাধা নেই। হঠাৎ মনে হলো দ্রুততম গতির ট্রেনটি এক প্রচণ্ড গর্জনে থেমে গেল । থামতে থামতে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেল। গ্যাকসিডেন্ট, এযাকসিডেন্ট! একটা অদ্ভুত দৃশ্য সকলের হৃদয়কে ভয়ে বিদীর্ণ করে তুলল। স্টেশন মাস্টার প্রতিদিনকার মতো আজও সবুজ পতাকা হাতে দাড়িয়েছিলেন ট্রেনকে ক্লিয়ারেন্স দিতে, কিন্তু হঠাৎ দেখতে পেলেন তার আট বছরের মেয়েটি বাবার জন্য টিফিন ক্যারিয়ারে করে খাবার নিয়ে লাইন পার হচ্ছে। গাড়ী এলো বলে, মেয়েটি নির্ঘাত মারা যাবে। বাবা লাফিয়ে পড়লেন, মেয়েকে তুলে ছুড়ে মারলেন প্লাটফরমের দিকে; কিন্তু তিনি তাল সামলাতে না পেরে পড়ে গেলেন দুলাইনের মাঝে । গোটা ট্রেনটি শরীরের উপর দিয়ে চলে গেল । এ দৃশ্য কল্পনার বাইরে।
মেয়েটি লাইনের পাশে দীড়িয়ে অঝোরে কীদছে। দূরে সবুজ পতাকাটি, এক পাশে এক গাদা রক্তে মাখা মাংস পিণ্ড। আর সেই মাংস পিগুটি যেন তার অবুঝ মেয়েকে বলছে, “আমার আদরের মেয়ে, তোমাকে আমি খুব ভালবাসি, আজ তোমাকে বাচাবার জন্যই আমার এই অবস্থা! তোমাকে বাঁচাতেই আমি আমার প্রাণ উৎসর্গ করলাম।
গোটা দুনিয়ার মানুষ যখন পাপের কারাগারে বন্দি, শয়তান তাদের প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, বাচার আর আশা নেই, তখন প্রেমময় ঈশ্বর আপন পুত্রকে পাঠালেন যেন তীর জীবনের বিনিময়ে গোটা দুনিয়ার মানুষ বাঁচে। তাই হলো। প্রভু যীশু অবুঝ মানুষদের বাচাতে গিয়ে বিনা দোষে দোষী হয়ে ক্রুশোপরে, দুহাত প্রেক বিদ্ধ, মাথায় কীটার মুকুট, সমস্ত শরীর ক্ষত বিক্ষত। অঝোরে রক্ত ঝরছে। পাপী মনুষকে বাচাতেই তিনি তার প্রাণ উৎসর্গ করলেন। তবে তিনি তার পিতার হাতেই নিজ প্রাণ উৎসর্গ করলেন। একমাত্র এ কাজ যীশুর পক্ষেই সম্ভব। “মরিয়ে বাচাব, রক্তে কিনে লব, পরিত্রাণ সাধিব এ বাসনা মোর ।”
বাইবেলে সাত সংখ্যাটি একটি সম্পূর্ণতা প্রকাশক সংখ্যা সুতরাং অমর সপ্ত বাণীর সম্পূর্ণতা “সপ্তমেই” পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। যীশুর এই শেষ উচ্চারণ কোনো অভিযোগ নয়, আর্তনাদ নয়, পরিপূর্ণ জয়ের তৃত্তিতে আত্মনিবেদন, এ যেন মধুর পরিসমান্তি।
ইহুদীরা রাত্রে ন্দ্রা যাওয়ার আগে গীতসংহিতা ৩১ এর ৫ (“আমি তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি”) পদটি প্রার্থনারূপে উচ্চারণ করতেন। ইহুদী মায়েরা তাদের সন্তানদের শৈশব থেকেই এই প্রার্থনা শেখাতেন। একজন যিহুদী হিসাবে যীশুও নিশ্চয় প্রতি রাত্রে নিদ্রা যাওয়ার আগে এই প্রার্থনাটি করতেন । তাই চিরনিদ্রায় নিদ্রিত হওয়ার পূর্বে তিনি তার এই প্রতিদিনকার প্রার্থনা উচ্চারণ করলেন প্রার্থনাটি হলো, “একটি প্রশান্ত, স্লি্ধ পরিসমান্তি, সকল বিচ্ছেদ, সকল উদ্বেগ, সকল যন্ত্রণার উপর এক য্লিগ্ধ মধুর মিলনের প্রলেপ? । প্রভু যীশুকে অনুসরণ করে ডঃ উইলিয়াম কেরীও প্রতি রাত্রে ন্দ্রা যাওয়ার পূর্বে এই বলে প্রার্থনা করতেন, “আমার এই অসহায় জীবন প্রভু তোমার দয়ার হাতে সমর্পণ করি”।
প্রভু যীশু ছিলেন তার পিতার বাধ্য সন্তান। আত্মসমর্পণের মধ্যে এই বাধ্যতাই প্রকাশিত হয়েছে। সর্বদা তিনি পিতার বাধ্য থেকে, তার নিরূপিত কাজ সম্পাদন করেছেন। পিতার ইচ্ছাই পালন করেছেন। গেৎশিমানী বাগানে গ্রেফতার হওয়ার আগে যীশু পিতার কাছে কাতর প্রার্থনা করেছেন, “পিতঃ সম্ভব হলে দুঃখের এ পানপাত্র দূর কর, কিন্তু আমার ইচ্ছা নয়, তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হোক।” পিতার ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ । অন্তিম মুহূর্তে সমগ্র সত্তাকে পিতার হাতে সমর্পণ করেছেন।
আমরা যদি পার্থিব জীবনের শেষে প্রভুর ন্যায় পিতার হাতে আত্ম সমর্পণ করে অনন্ত শান্তি পেতে চাই, তবে আমাদের হতে হবে প্রভুর বিশ্বস্ত অনুসারী - যাদের জীবনে দেখা যাবে তিনটি বিশেষ আত্মিক অবস্থা - নুতন উৎপত্তি, পবিত্র গতি ও উত্তম পরিণতি-
ক. নৃতন উৎপত্তি :
খ্ীষ্টানুসারীদের আত্মিক জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে যীশু বলেছেন, নৃতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না” (যোহন ৩ ঃ ৩)। যে ক্রুশে তার পবিত্র রক্ত
সেচন করে আমাদের মুক্তির কাজ “সমাণ্ত' করা হলো, সেই ক্ুশে বিশ্বাস করে আমরা পাপের ক্ষমা, তথা নৃতন জন্ম লাভ করতে পারি। বাইবেল বলে, “ফলতঃ কেহ যদি্ী ষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ সেইগুলি নৃতন হইয়া উঠিয়াছে” (২ করি ৫ $ ১৭)। মন পরিবর্তনের পর সাধু পৌল বলেছেন, “আমি শ্বীষ্টের সঙ্গে ক্রুশ বিদ্ধ হয়েছি, আমি আর জীবিত নই, শ্রীষ্টই আমাতে জীবন ধারণ করেন... ” (গালাতীয় ২ : ২০)।
প্রভুর ক্রুশই আপনার আমার আত্মিক নবজন্মের চাবিকাঠি। একজন মৃত্যুপথযাত্রী দস্যু প্রভুতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস করে স্বর্গে যাওয়ার অপূর্ব সুযোগ পেয়েছে। তার দৈহিক মৃত্যু হলেও আত্মিক নবজন্মের দ্বারা সেই দস্যু শাশ্বত জীবনের অধিকারী হলো। এই নূতন উৎপত্তির আগে চাই পুরাতন পাপময় জীবনের মৃত্যু ক্রুশের পরে কবর এবং তারপর পুনরুথান। আপনার আমার জীবনে এ নূতন উৎপত্তির (নূতন জন্মের) শুভ সূচনা যদি আজও না হয়ে থাকে, তবে সে শুভদিনের শুরু হোক এখনি । বাইবেল বলে, “দেখ, এখনই অনুগ্রহের সময়, এখন পরিব্রাণের দিন” (২ করি ৬ : ২)। আমাদের কখন কার পরলোকে যাওয়ার ডাক আসবে তা আমরা কেউ জানি না। আপনার জ্ঞাত সমস্ত পাপ-কালিমা ক্রুশ বেদীতে উজাড় করে ফেলে দিন, কিছু গোপন করার চেষ্টা করবেন না। নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করুন। দেখবেন আপনার অন্তরে নূতন সৃষ্টির কাজ শুরু হয়ে গেছে।
খ.পবিত্র গতি :
নৃতন উৎপত্তির পর আসে পবিব্র গতি বা সদাচরণ। বাইবেল বলে, “যে কেহ ঈশ্বর হইতে জাত, সে পাপাচরণ করে না, কারণ তাহার বীর্য তাহার অন্তরে থাকে এবং সে পাপ করিতে পারে না, কারণ সে ঈশ্বর হইতে জাত” (১ যোহন ৩: ৯)। আমাদের জীবনে যদি নূতন উৎপত্তির অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে প্রশ্ন হলো, আমাদের জীবনের গতি কি পিতার ইচ্ছানুযায়ী পবিত্র? আমরা কি তার ইচ্ছা পালন করতে আগ্রহী? প্রভুর পবিত্রতার শোভা কি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনযাত্রায় প্রকাশিত হয়? নাকি কেবল নিজের ইচ্ছাকেই প্রভুর ইচ্ছা বলে চালিয়ে দেওয়া? প্রভুর ইচ্ছা পালন করতে গেলে আমাদের এই জগতের অনেক সাধ-আকাঙ্খা ত্যাগ করতে হবে, যা অনেক সময় আমাদের জন্য ভীষণ কঠিন হয়ে পড়ে । “তোমরা জগৎকে প্রেম করো না... জগতে আছে দৈহিক অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, জীবিকার দর্প.. কিন্তু যে ব্যক্তি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করে সে অনন্তকাল স্থায়ী” (১ যোহন ২ ৪ ১৫-১৭)।
গ. উত্তম পরিণতি :
যদি খ্রীষ্টিয় জীবনের উৎপত্তি ও গতিতে কোনো ত্রুটি না থাকে, তবে তার হবে উত্তম পরিণতি । সাধু আগস্টিনের মৃত্যুর পূর্বে একজন বিশপ বাইবেলের একটি অংশ পাঠ আনন্দ করুন,-বলেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ঈশ্বরের সঙ্গে নিবিড় যোগ থাকলেই মৃত্যুকে এত শান্তভাবে গ্রহণ করা যায়। এইভাবে ঈশ্বরের সানিধ্যে থাকলে আমাদের জীবন এমনভাবে ঈশ্বরকেন্দ্রিক হয়ে পড়বে যে, জীবন ও মৃত্যু আমাদের কাছে একাকার হয়ে যাবে। আমরা তখন সাধু পৌলের মতো বলতে পারবো “আমার কাছে জীবন খ্বীষ্ট, মরণ লাভ। যদি বাঁচি শরীষ্টের জন্য বাচি, যদি মরি খ্রীষ্টের জন্য মরি ।”
আমাদের সকলকেই একদিন ইহলোক ত্যাগ করে চলে যেতে হবে। কিন্তু সে সময় কি আমাদের অন্তরে -“পিতা, তোমার হাতে আমার আত্মা সমর্পণ করি” - প্রভুর এই অমর বাণী কি আমাদের মুখে উচ্চারিত হবে? “সদাপ্রভুর দৃষ্টিতে বহুমূল্য তাহার সাধুগণের মৃত্যু” (গীতসংহিতা ১১৬ : ১৫)।
হ্যা, যে সাধুদের জীবন-বীণার উৎপত্তি, গতি ও পরিণতির তারগুলি থাকে একই সুরে বাধা, তারা ক্রুশবিদ্ধ প্রভুর ন্যায় পিতার হস্তে তাদের আত্মা সমর্পণ করে পরম শান্তিতে পৃথিবী থেকে প্রস্থান করেন ।
Microgaming launches new casino - GoyangFC.com
ReplyDeleteMicrogaming is part of the group of gaming development companies responsible 파라오 카지노 도메인 for 바카라롤링 the 킹스 포커 creation of the Microgaming Online 인스타셀럽 Casino website. 로투스 바카라 작업 The casino's