প্রভুর আহবানে স্থির থাকা
মাইকেল মিন্টু সরদার
প্রভু যীশু খ্রীষ্টের একটি বিশেষ উক্তি দিয়ে শুরু করতে চাই -“বাস্তবিক অনেকে আহূত,কিন্তু অল্পই মনোনীত” (মথি-২২:১৪)। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্ম অবধি বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন জাতি,গোষ্টি,বিভিন্ন মানুষের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচারিত হয়ে আসছে। অনেকেই প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে গ্রহণ করে তাঁর কাছে আসছে। আবার নানা প্রতিক‚লতার মাঝে খ্রীষ্টের কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু অল্প সংখ্যক খ্রীষ্টে বিশ্বাসী রয়েছে যারা খ্রীষ্টের আহবানে স্থীর থেকে বিশ্বাসে জীবন-যাপন করছে। প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করে হৃদয়ে গ্রহণ করা হলো প্রথম এবং প্রধান ধাপ;আর খ্রীষ্টকে জীবনে ধারণ করে খ্রীষ্টীয় জীবন-যাপন করাই হলো দ্বিতীয় ধাপ। প্রত্যেকের খ্রীষ্টীয় জীবনে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত উপেক্ষা করে চলতে হয়। যাকে বলা হয় আত্মিক যুদ্ধ। যখন থেকে আমাদের জীবনে খ্রীষ্টকে গ্রহণ করি তখন থেকেই আত্মিক যুদ্ধ আমাদের জীবনে শুরু হয়। এই যুদ্ধ রক্ত ও মাংসের যুদ্ধ নয়।এটি একটি আত্মিক যুদ্ধ, যা চোখে দেখা যায় না। এই আত্মিক যুদ্ধের জীবন সংগ্রামে সবাই টিকে থাকতে পারে না।এই জন্য প্রভু যীশু মথি ৭:১৪পদে বলেছেন -“কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দূর্গম, এবং অল্প লোকেই তা পায় ”।
প্রিয়জন, প্রত্যেক খ্রীষ্ট বিশ্বাসীর জীবনে সরু দরজা রয়েছে।যার মধ্যে দিয়ে দীর্ঘ দূর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়।এই দীর্ঘ পথের যাত্রাকালে জীবনে অনেক দুঃখ থাকে, কষ্ট থাকে,থাকে হতাশ,নিরাশা,নিপিড়ন,নির্যাতন,অত্যাচার,অভাব,অনাটন,নিন্দা,সংকট মোট কথায় এক তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে এই সংঙ্কীর্ণ পথ পাড়ি দিতে হয়। এজন্য প্রয়োজন প্রচুর প্রার্থনা আর পবিত্র আত্মার শক্তি। অনেকে এই আত্মীক যুদ্ধে পরাজিত হয় শয়তানের কাছে এবং যীশুকে ভুলে গিয়ে পরিত্রাণের পত থেকে দূরে সরে যায় । কিন্তু প্রকাশিত বাক্য ২:১০ পদ বলে - “তুমি মরণ পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাক,তাহাতে আমি তোমাকে জীবন-মুকূট দিব”। প্রিয়জন,পবিত্র বাক্য আমাদেরকে বলে আমার যেন শেষ পর্যন্ত প্রভুতে স্থীর থাকি, বিশ্বস্ত থাকি। প্রেরিত পৌল ফিলিপীয় ৩:১২-১৪ পদে বলেছেন -“আমি যে জন্য চেষ্টা করছি তা এখনই যে পেয়ে গেছি কিম্বা পূর্নতা লাভ করে ফেলেছি এমন নয়। কিন্তু যে জন্য খ্রীষ্ট যীশু আমাকে ধরেছিলেন সেটাই ধবার জন্য আমি ছুটে চলেছি। ভাইয়েরা,আমি যে সেটা ধরতে পেরেছি তাহা মনে করি না।
তবে একটা কাজ আমি করেছি, পিছনের সমস্ত কিছু ভুলে গিয়ে সামনের দিকে ঝুকে সব শক্তি দিয়ে আমি শেষ সীমার দিকে ছুটে চলেছি। এতে যেন খ্রীষ্ট যীশুর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের স্বর্গমুখী ডাকের মধ্যে যে পুরস্কার রয়েছে তা আমি পাই।(ঈখ) প্রেরিত পৌল তাঁর জীবনে আত্মীক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে শেষ সীমানার দিকে লক্ষ্য স্থীর করে ছুটে চলেছিলেন। যে কারণে ২তীমথিয়৪:৭ পদে তিনি বলতে পেরেছিলেন- আমি উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ করিয়াছি, নিরুপিত পথের শেষ পর্যন্ত দৌড়াইয়াছি, বিশ্বাস রক্ষা করিয়াছি। প্রিয়জন,আমরা কি আমাদের জীবনের আত্মিক যুদ্ধ উপলদ্ধি করতে পারি? যদি অনুধাবন করতে পারি যে আমরা একটি আত্মিক যুদ্ধ ক্ষেত্রে রয়েছি,তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই প্রাণপণে যুদ্ধ করে,সংগ্রাম করে খ্রীষ্টের ক্রুশের দিকে অগ্রসর হতে হবে। আমাদেরকে বিভিন্ন মৃত্যুচ্ছায়ার উপত্যকা দিয়ে গমন করতে হবে।অর্থাৎ ক্লেশ,সঙ্কট,তাড়না,দুর্ভিক্ষ,উলঙ্গতা,প্রাণ-সংশয়,খড়্গ নানা বিধ বিষয় আমাদের জীবনে থাকবে।মাঝে মাঝে এমন কিছু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে যা আমাদের হৃদয়কে বিষিয়ে তুলবে। তবুও সবই ধৈর্য পূর্বক সহ্য করতে হবে।কারণ বাক্য বলে-“...কেহ যদি আমার পশ্চাৎ আসিতে ইচ্ছা করে, তবে সে আপনাকে অস্বীকার করুক,আপন ক্রুশ তুলিয়া লউক, এবং আমার পশ্চাদগামী হউক।”-(মথি১৬:২৪পদ) তাই আমরা আমাদের জীবনে চলার পথে নানা প্রতিক‚লতার মাঝে নিজেকে অস্বীকার করার বদলে,যেন খ্রীষ্টকে অস্বীকার না করি।চলতে চলতে জগতের প্রলোভনে থেমে না যাই। হৃদয়ের মধ্যে প্রজ্বলিত পবিত্র আত্মার অগ্নিকে নিভিয়ে না ফেলি। শিথিল হৃদয়ে প্রভুর কর্ম না করি। সাবধান,কারণ বাক্যে বলে-“ আমি জানি তোমার কার্য সকল, তুমি না শীতল না তপ্ত; তুমি হয় শীতল হইলে নয় তপ্ত হইলে ভাল হইত. . .”(প্রকাশিত বাক্য ৩:১৫-১৬)।
প্রিয়জন, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশের উপরে অসহ্য মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করেছিলেন বলে,আজ আমরা তাঁর মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের অনন্ত জীবন লাভ করতে পারি। দেখুন, সূর্য নিজে পুড়ে এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডকে আলো দিচ্ছে। আমরাও আমাদের খ্রীষ্টীয় জীবনে সরু পথ ধরে চলার সময় যতই কষ্ট, যতই যন্ত্রণা এবং পরীক্ষা সহ্য করবো, ততোই আমরা নিজেকে খাঁটি করতে পারবো। জগতের লোক আমাদের মধ্য দ্বারা খ্রীষ্টের আলো দেখতে পাবে। -“ধন্য সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষা সহ্য করে; কারণ পরীক্ষাসিদ্ধ হইলে পর সে জীবনমুকুট প্রাপ্ত হইবে,তাহা প্রভু আমাদিগকেই দিতে অঙ্গীকার করিয়াছেন, যাহারা তাঁহাকে প্রেম করে।” (যাকোব ১:১২পদ)।
প্রিয়জন,পরিশেষে বলতে চাই,আমাদের জীবন চলার পথে যতই বিপদ আসুক,ঝড়ঝাপটা আসুক আমরা যেন খ্রীষ্টের ক্রুশের নিচে তাঁর আহব্বানে স্থীর থাকি এবং নিজেকে পরীক্ষাসিদ্ধ লোক দেখাইতে যত্ন করি (২তীমথিয়২:১৫)।প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ক্রুশের দিকে লক্ষ্য রেখে প্রেরিত পৌলের মতো প্রাণপণে শেষ সীমানার দিকে দৌড়াইতে থাকি।তবেই আমরা ঈশ্বর নিরুপিত সেই জীবন মুকুট অর্জন করতে পারবো।প্রভু তাঁর বাক্যে আমাদেরকে আশির্বাদ করুন যীশু নামে,আমেন।।