একজন উত্তম স্বামী

ads20

     একজন উত্তম স্বামী 

    মাইকেল মিন্টু সরদার

    প্রত্যেক ব্যক্তির পরিপূর্ন জীবন লাভের জন্য একজন উপযুক্ত জীবন সঙ্গী প্রয়োজন।আদিপুস্তক২:২০ পদে দেখতে পাই পৃথিবীর প্রথম পুরুষ আদমের প্রয়োজনীয় সব কিছুই ছিল,কিন্তু তার একজন উপযুক্ত জীবন সঙ্গিনী ছিল না। আর তাই ঈশ্বর আদমের অনুরূপ একজন সহকারিনী নির্মাণ করে আদমকে দিলেন।(আদি ২:১৮,২১- ২২পদ) তারপর থেকে তারা দুজনে একত্রে পরম আনন্দে ঈশ্বরের সহিত শান্তিতে বসবাস করতে লাগল।



    আর সেই থেকে আমাদের সমাজের সামাজিক রীতি-নীতি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুই পরিবারের সম্মতি ক্রমে বিবাহ প্রথা প্রচালিত হয়।আর এই বৈবাহিক জীবনে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনে সুখে-দুখে,বিপদে-আপদে,রোগে-শোকে এবং সংকট কালে এক আত্মায়,এক দেহে,এক মনে,এক ভালবাসার বন্ধনে একে অন্যকে গড়ে তোলার মনোভাব নিয়ে আমরণকাল পর্যন্ত ধরে রাখাকে দাম্পত্য জীবন বলে।এ জন্য আদিপুস্তক ২:২৩ পদে আদম বলেছেন-“এইবার হইয়াছে;ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস;”


    প্রশ্ন হল আমাদের সমাজে বা আমাদের চারিপাশে যেসব পরিবার এবং স্বামী-স্ত্রীদের দেখতে পাই,তারা কি সব একে অন্যের অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস?? 


    বর্তমান সমাজের দিকে লক্ষ্য করলে আমরা দেখতে পাই দিনের পর দিন বহু বিবাহ,পারিবারিক অশান্তি,স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অমিল, ঝগড়া-বিবাদ,কট‚ বাক্য,শারীরিক ও মানুষিক নির্যাতন,পরস্ত্রী কাতরতা,স্ত্রীর পরকিয়া প্রেম এবং ডির্ভোসের পরিমান বেড়েই চলেছে।এসবের কারণ কী? এসবের কারণ হল,সব স্বামী-স্ত্রীই একে অন্যের অস্থির অস্থি ও সাংসের মাংস না হওয়া। প্রিয়জন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি একাত্মা,এক প্রেমের বন্ধন না থাকে,তাহলে কখনই একটি সুখি-সমৃদ্ধ খ্রীষ্টিয় পরিবার গঠন করা সম্ভাব নয়।তাই প্রেরিত পৌল ২করি ৬:১৪ পদে বলেছেন-“অসম জোঁয়ালিতে বদ্ধ হইও না”। অসম জোঁয়ালী অর্থাৎ ভিন্ন বিশ্বাস ,ভিন্ন ইচ্ছা,ভিন্ন পরিকল্পনা মোট কথায় নিজের মনের মত না হওয়া।


    প্রিয়জন, স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে যদি এক বিশ্বাস,এক প্রেম,এক আত্মা,ধৈর্য্যগুন,মাধূর্য্যতা না থাকে তাহলে সেই দাম্পত্য জীবন সুখের হতে পারে না।তাই আমরণ কাল পর্যন্ত সুখি দাম্পত্য জীবন ধরে রাখতে স্বামী-স্ত্রী সমজোঁয়ালী হওয়া বিশেষ প্রয়োজন।যেন ভালোবেসে সারা জীবন একে অন্যের ভার বহন করতে পারে। 


    প্রিয়জন একটি সুন্দর আদর্শ সুখি পরিবার গঠনে যেমন একজন গুণবতী স্ত্রীর প্রয়োজন রয়েছে,তেমনি একজন সৎ,যোগ্যতা সম্পন্য,উত্তম পুরুষেরও প্রয়োজন রয়েছে।ইফিষীয় পত্রে প্রেরিত পৌল ৫:২২-২৩ পদে বলেছেন - “নারীগণ,তোমরা যেমন প্রভুর,তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভ‚ত হও।কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক।যেমন খ্রীষ্টও মন্ডলীর মস্তক;”।স্বামী অর্থাৎ প্রভু, যিনি একজন স্ত্রীর উপর কর্তত্বকারী,যার উপরে নির্ভর করে একজন নারীর বর্তমান এবং ভবিষাৎ জীবন।আর তিনি যদি ঈশ্বর ভয়শীল,বিশ্বাসী এবং সৎ চরিত্রবান না হন, তাহলে কিভাবে সেই স্বামীর বশীভ‚ত হয়ে জীবন-যাপন করা যায়? কোন নারীর পক্ষ্যে কী সম্ভব এমন স্বামীর বশিভূত হয়ে সারাটি জীবন পার করা? না কখনই সম্ভব নয়। 


    হিতোপদেশ ১২:৪ পদে রাজা শলোমন তিনি বলেছেন -“গুনবতী স্ত্রী স্বামীর মুকুটস্বরূপ”। প্রিয়জন, গুনবতী স্ত্রী যেমন একজন স্বামীর মুকুটস্বরূপ,তেমনি একজন উত্তম স্বামীও একজন স্ত্রীর মুকুট স্বরূপ।


    প্রিয়জন,এ সময় পবিত্র বাইবেলের এমনই দুজন উত্তম স্বামীর চরিত্র নিয়ে আলোচনা করতে চাই।


    প্রথম জন হলেন ১শমূয়েল ১:১-৮ পদে হান্নার স্বামী ইল্কানা। এই ইল্কানার হান্না এবং পন্নিনা নামে দুজন স্ত্রী ছিল।পন্নিনার সন্তান হয়েছিল,কিন্তু সদাপ্রভু হান্নার গর্ভ রূদ্ধ করাতে তার কোন সন্তান হয়নি।আর এ কারণে হান্নার সপত্নী পন্নিনা তাকে মানসিকভাবে আঘাত করার জন্য,দুঃখ,কষ্ট দেওয়া এবং হেয়প্রতিপূন্য করার জন্য বিভিন্ন ভাবে বিরক্ত করতেন।এসব কারণে হান্না হৃদয়ের কষ্টে আহার ত্যাগ করে সব সময় কান্না করতেন এবং প্রত্যেক বছর সদাপ্রভুর গৃহে গিয়ে চোখের জলে প্রার্থনা করতেন।


    স্বামী হিসাবে ইল্কানাকে দেখতে পাই,যদিও পন্নিনার সন্তান হয়েছিল তথাপি ইল্কানা হান্নাকে ভালোবাসতেন।সবকিছুর দ্বিগুণ অংশ তিনি হান্নাকে দিতেন। কারণ তিনি হান্নার হৃদয়ের কষ্ট,সন না হওয়ার দুঃখ,তার চোখের জল এবং সন্তান না হওয়ায় পারিবারিক এবং পারিপার্শিক মানুষের যে মানুষিক নির্যাতন তা তিনি জানতেন।এজন্য ইল্কানা হান্নাকে বেশি ভালোবাসতেন এবং সব সময় তাকে সাত্বনা দিতেন।১শমূয়েল ১:৮ পদে দেখি ইল্কানা তার স্ত্রী হান্নাকে সাত্বনা দিয়ে বলেছেন - “হান্না, কেন কাঁদিতেছ?কেন ভোজন করিতেছ না? তোমার মন শোকাকুল কেন?তোমার কাছে দশ পুত্র হইতেও কি আমি উত্তম নহি?” 


    প্রিয়জন আমরা আমাদের বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখতে পাই,যখন কোন নারীর সন্তান না হয় তখন স্বামী তাকে ত্যাগ পত্র দিয়ে পুনরায় আবার বিয়ে করেন,অথবা প্রথম স্ত্রীকে রেখে নতুন আর একটি বিয়ে করে আনেন। আর যখন দুজন স্ত্রীর মধ্যে একজনের সন্তান হয় তখন স্বাভিক ভাবে স্বামী সহ পরিবারের সবাই তাকে একটু বেশি ভালোবাসেন।অপর দিকে যিনি বন্ধা হন,তার সন্তান না হওয়ার যে কষ্ট,দুঃখ,সন্তান না হওয়ায় হৃদয়ের মধ্যে যে চাপা কান্না,তার উপরে পরিবার এবং সমাজের বিভিন্ন মানুষের হীনতা পূর্ন আচারণএবং গাল মন্দ করে নানা কথা বলা,সে যে কি বিষম যন্ত্রণা যা একমাত্র একজন বন্ধা স্ত্রী লোকই জানেন!!


    ঠিক এমন একটা মূহত্বে হান্না যখন দুঃখ, কষ্টে জর্জরিত ছিলেন যখন সবাই তার সাথে খারাপ ব্যবহার করতেন ,তখন তার একমাত্র আশ্রয় ছিলেন তার স্বামী ইল্কানা । হান্নার স্বামী তাকে ভালোবাসতেন বলে, তিনি তার কষ্টের বিষয় গুলো তার স্বামীর সাথে শেয়ার করতে পারতেন।এবং হান্না তার স্বামীর কাছ থেকে সব সময় সাত্বনা পেতেন।


    প্রিয়জন, এখানে আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি যে ইল্কনা ছিলেন হান্নার মুকুটস্বরূপ।এমন একজন উত্তম স্বামী পাওয়া কি হান্নার সৌভাগ্যের ব্যাপার নয়? অবশ্যই সৌভাগ্যের ব্যাপার । দ্বিতীয় জন হলেন,যীশুর মা মরিয়মের স্বামী যোসেফ। মথি ১:১৮-২৫ পদে দেখতে পাই,যোসেফের সাথে মরিয়মের বিয়ের কথা ঠিক হয়ে যায় ,কিছু দিন পরেই বিয়ে,এমন সময় তিনি শুনতে পান তার বাগদত্তা স্ত্রী মরিয়ম গর্ভবতী। যদি বিয়ের আগে কোন কুমারী মেয়ে গর্ভবতী হয় তাহলে সমাজের কেউই তাকে বিয়ে করতে চাইবে না এটাই স্বাভিক। ঠিক এমন একটা সিদ্ধান্ত যোসেফও নিচ্ছিলেন।যোসেফ ধার্মীক ছিলেন যে কারণে তিনি মরিয়মকে বিয়ে করে ঘরে তুলতে চাননি।কিন্তু ঈশ্বর স্বপ্ন যোগে দূতের মাধ্যমে তাকে দর্শন দিয়ে জানালেন,মরিয়মকে গ্রহণ করতে,কারণ তাঁহার গর্ভে যে সন্তান,তাহা পবিত্র আত্মার মাধ্যমে হয়েছে। আর তখন যোসেফ মরিয়মকে গ্রহণ করতে রাজি হলেন।

    প্রিয়জন,হয়ত যোসেফ পারতেন ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে,মরিয়মকে বিয়ে না করতে। কিন্তু তিনি ধার্মীক ব্যক্তি হওয়াতে সেটি না করে বরং ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে মরিয়মের ভার গ্রহণ করলেন।তিনি মরিয়মের স্বামী হলেন।মরিয়মও তাঁর দূর সময়ের আশ্রয় হিসাবে তার স্বামী যোসেফকে পেলেন। মরিয়মের সন্তান প্রসবের কঠিন যন্ত্রণার সময়,চরম কষ্টের সময় সহায়ক হিসাবে যোসেফ তার পাশে ছিল।আমাদের মনে রাখতে হবে,যোসেফ শুধুমাত্র তার দুঃখ কষ্টের সহভাগি হননি বরং পিতা হিসাবে তাঁর সন্তানের পরিচয়ও বহন করেছিলেন।


    প্রিয়জন, এমন একজন ঈশ্বর ভয়শীল,বিশ্বাসী,সৎ ,উত্তম স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল স্বামী কে না চায়, তার জীবন সঙ্গী হিসাবে বেছে নিতে! আমি বিশ্বাস করি,প্রত্যেক মেয়েই চায় এমন একজন স্বামী যার কাছে নিজের দুঃখ,কষ্ট, মনের আবেগ, অনুভ‚তি এবং সুখের মুহূত্ব গুলো শেয়ার করতে পারবে,যে তার হৃদয় বুঝবে।


     হিতোপদেশ ১৯:১৪ পদে বলা হয়েছে - “বাটী ও ধন পৈত্রিক অধিকার;কিন্তু বুদ্ধিমতী স্ত্রী সদাপ্রভু হইতে পাওয়া যায়।”


    প্রিয় পাঠক,বুদ্ধিমতী স্ত্রী যেমন সদাপ্রভুর কাছ থেকে পাওয়া যায়,পক্ষান্তরে একজন বুদ্ধিমান,ঈশ্বর ভয়শীল,সৎ বিশ্বাসী,উত্তম পুরুষ সদাপ্রভুর কাছ থেকে পাওয়া যায়।যা প্রত্যেক নারীর জন্য ঈশ্বর দত্ত আর্শীবাদ ও মুকুট স্বরূপ। একটি আর্শীবাদের খ্রীষ্টীয় পরিবার গঠনে একজন গুনবতী স্ত্রীর পাশাপাশি একজন ঈশ্বর ভয়শীল,বিশ্বাসী, উত্তম পুরুষের ভ‚মিকা অপরিহায্য।তাই. ..

    পরিশেষে বলতে চাই, প্রত্যেক মেয়েরই উচিৎ সম জোঁয়ালী অথাৎ ঈশ্বর ভয়শীল,বিশ্বাসী,সুযোগ্য উত্তম পুরুষ নিজের জীবন সঙ্গী হিসাবে পেতে,ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা।এবং প্রত্যেক পিতা মাতাদেরও উচিৎ ছেলে মেয়েদের জন্য এই বিষয় নিয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা, যেন ঈশ্বর উপযুক্ত সময় উপযুক্ত জীবন সঙ্গী অথাৎ অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস যুগিয়ে দেন। তাহলে একজন স্বামী স্ত্রীর দাম্পত্য জীবন হবে,সুখ ,শান্তি ও প্রেমের জীবন।আমেন।।

    Christo Sangeet Presenter

    খ্রীষ্ট সঙ্গীত অ্যাপ

    আপনার উপাসনার সঙ্গী, এখন আপনার হাতের মুঠোয়।

    সহজ ও নিরাপদ এবং সম্পূর্ণ অফলাইন সুবিধা।

    আজই ডাউনলোড করুন

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS