ঈশ্বরের সাথে মানুষের জীবনের সেতু বন্ধন

ads20
    ঈশ্বর মাত্র একজন আছেন এবং ঈশ্বর ও মানুষের মধ্যেও মাত্র একজন আছেন । সেই মধ্যস্থ হলেন খ্রীষ্ট যীশু। তিনি সব মানুষের মুক্তির মূল্য হিসাবে নিজের জীবন দিয়েছিলেন--- ১ তীমথিয় ২:৫-৬ পদ । পবিত্র বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ঈশ্বর সবাইকে ভালবাসেন এবং তিনি চান যেন সবাই তাঁকে জানে। কিন্তু মানুষ, ঈশ্বর ও তাঁর ভালবাসার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে। কারণ মানুষ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছে। তাই আমাদের পাপ সদাপ্রভুর কাছ থেকে তোমাদের আলাদা করে দিয়েছে । রোমীয় ৩:২৩ পদে বলা হয়েছে ” কারণ সবাই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে ।
    শান্তিতে বসবাস :
    মানুষ যেখানেই বাস করুক না কেন সেখানে নানা রকম সংস্কৃতির লোক থাকে। এই নানারকম সংস্কৃতির লোকদের সাথে মিলে মিশে বসবাস করার জন্য বিভিন্ন প্রয়াস চালিয়ে থাকে। আমাদের বাংলাদেশ একটি ছোট দেশ- আমাদের এই দেশে, আমাদের সমাজে শান্তি ও  ঐক্যকে নিশ্চিন্ত করবার জন্য আমাদের প্রতিবেশীদের সংগে একত্রে বাস করাকে আমরা অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকি। এই বিষয়ে জ্ঞানী শলোমনের কিছু জ্ঞানপূর্ণ কথা ---হিতোপদেশ  ৩: ২৭--২৯,  ১১: ২৫ পদে বলা আছে। যারা উপকার পাবার উপযুক্ত তাদের উপকার করবার ক্ষমতা যখন তোমার হাতে থাকবে তখন তা করতে তুমি অস্বীকার করো না । সাহায্য করবার ক্ষমতা তোমার হাতে থাকলে কাউকে বলো না  ”যাও, পরে এসো বা কালকে করব । তোমার প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে কোন কুমতলব করো না, সে তো তোমার পাশে নিশ্চিন্তে বসবাস করে। যে খোলা হাতে দান করে তার উন্নতি হয়; যে অন্যকে তৃপ্ত করে সে নিজেও তৃপ্ত হয় ।  প্রতিবেশীকে ভালবাসা ও দান করার মধ্যদিয়ে যে তৃপ্তি অনুভুত হয় সেটি হলো ঈশ্বরের সাথে আমাদের বন্ধন । ঈশ্বর এই বন্ধনটি তৈরী করতে চান। তাহলে আমাদের প্রতিবেশী কে ? যীশু খ্রীষ্টের সময়ে যিহুদীদের ও শমরিয়দের মধ্যে খুবই খারাপ সম্পর্ক ছিল । যদিও  তারা একে অপরের প্রতিবেশী ছিল তবুও তাদের সংস্কৃতি, ধর্ম , রাজনীতি একে অপরের চেয়ে ভিন্ন ছিল বলে তারা অপরকে ঘৃনা করত। প্রতিবেশীদের বিষয়ে ধারনা দেবার জন্য যীশু দয়ালু সমরীরের গল্প বলে শিক্ষা দিয়েছিলেন। আমাদের প্রভু যীশুর শিক্ষার মধ্যে যে বিষয়টি ফুটে উঠেছিল, তা হলো ভালবাসা । সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে দরকারী আদেশ হল তোমার সমস্ত অন্তর, তোমার সমস্ত প্রাণ ও তোমার সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে । আর তার পরের দরকারী আদেশটা প্রথমটারই মত তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে। আর এই ভালবাসার বন্ধনই ঈশ্বরের সাথে সেতু তৈরীতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে থাকে।
    ঈশ্বরকে জানার জন্য অন্যকে ভালবাস :
    এ বিষয়ে পবিত্র বাইবেলের ১ যোহন ৪:৭-৮ ও ১৯-২০ পদে বলা আছে প্রিয় সন্তানেরা, আমরা যেন একে অপরকে ভালবাসি, কারণ ভালবাসা ঈশ্বরের কাছ থেকেই আসে, যাদের অন্তরে ভালবাসা আছে ঈশ্বর থেকেই তাদের জন্ম হয়েছে এবং তারা ঈশ্বরকে জানে । যাদের অন্তরে ভালবাসা নেই তারা ঈশ্বরকে জানে না, কারণ ঈশ্বর নিজেই ভালবাসা । প্রভু যীশুর শিষ্য পৌল সত্যিকারের ভালবাসা সম্বন্ধে বলেছেন, আমি যদি মানুষের এবং স্বর্গদূতদের ভাষায় কথা বলি কিন্তু আমার অন্তরে ভালবাসা না থাকে, তবে আমি জোরে বাজানো ঘন্টা বা ঝনঝন করা করতাল হয়ে পড়ি। যদি ভাববাদি হিসেবে কথা বলার ক্ষমতা আমার থাকে, যদি আমি সমস্ত গোপন সত্যের বিষয় বুঝতে পারি, আর যতি আমার সব রকম জ্ঞান থাকে, এমন কি পাহাড়কে পর্যন্ত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে দেবার মত পূর্ণ  বিশ্বাস থাকে, কিন্তু আমার মধ্যে ভালবাসা না থাকে, তবে আমার কোন মূল্য নেই। আমার যা কিছু আছে তা যদি আমি গরীবদের খাওয়াবার জন্য দান করি, এমন কি দেহটাও পোড়াবার জন্য দিয়ে দেই, কিন্তু আমার মধ্যে ভালবাসা না থাকে, তবে আমার কোন লাভ নেই । ভালবাসা ধৈর্য ধরে, দয়া করে, হিংসা করে না, গর্ব করে না, অহংকার করে না। খারাপ ব্যবহার করে না, নিজের সুবিধার চেষ্টা করে না, রাগ করে না, কারও মন্দ ব্যবহারের কথা মনে রাখে না, মন্দ কিছু নিয়ে আনন্দ করে না বরং যা সত্য তাতে আনন্দ করে। ভালবাসা সব কিছুই সহ্য করে, সকলকেই বিশ্বাস করতে আগ্রহী করে, সব কিছুতে আশা রাখে আর সব অবস্থায় স্থির থাকে। এই ভালবাসা কখনও শেষ হয় না। ভাববাদি হিসাবে কথা বলবার যে ক্ষমতা আছে তা শেষ হয়ে যাবে, বিভিন্ন ভাষায় কথা বলবার যে ক্ষমতা আছে তা চলে যাবে; জ্ঞান আছে, তাও শেষ হয়ে যাবে; কারণ আমরা সব বিষয় পুরোপুরি ভাবে কথা বলতে পারি না। কিন্তু যা পূর্ণ তা যখন আসবে তখন যা পূর্ণ নয় তা শেষ হয়ে যাবে। আমি যখন শিশু ছিলাম তখন শিশুর মত কথা বলতাম, শিশুর মত চিন্তা করতাম আর শিশুর মত বিচারও করতাম এখন আমার বয়স হয়েছে তাই শিশুর আচার ব্যবহার গুলো বাদ দিয়েছি। আমরা এখন যেমন আয়নায় অস্পষ্ট দেখছি, কিন্তু তখন সামনা সামনি দেখতে পাব। আমি এখন যা জানি তা সস্পূর্ণ, কিন্তু ঈশ্বর আমাকে যেমন সম্পূর্ণভাবে জানেন তখন আমি তেমনি সম্পূর্ণ ভাবে জানতে পারব। তা হলে দেখা যাচ্ছে বিশ্বাস, আশা আর ভালবাসা- এই তিনটিই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে: এগুলোর মধ্যে ভালবাসাই সবচেয়ে বড়।
    আমাদের প্রভু যীশুকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলে ঈশ্বর তাঁর প্রচরু মমতায় আমাদের নতুন জন্ম দান করেছেন। তার ফলে আমরাও একটা জীবন্ত আশ্বাস পেয়েছি, অর্থাৎ ভবিষ্যতে এমন একটি সম্পত্তি পাবার আশ্বাস আমরা পেয়েছি যা কখনও ধ্বংস হবে না, যাতে খারাপ কিছু থাকবে না এবং যা চিরকাল নতুন থাকবে। এই সম্পত্তি তোমাদের জন্য স্বর্গে জমা করা আছে। তোমরা সম্পূর্ণভাবে পরিত্রান না  পাওয়া পর্যন্ত ঈশ্বরের শক্তিতে বিশ্বাসের মধ্যদিয়ে তোমাদের নিরাপদে রাখা হচ্ছে। শেষ সময়ে প্রকাশিত হবার জন্য সেই পরিত্রানের আয়োজন করে রাখা হয়েছে। অবশ্য যদিও কিছুকালের জন্য নানা পরীক্ষার মধ্য দিয়ে হয়তো এখন তোমাদের দু:খ পেতে হচ্ছে, তবুও পরিত্রান পাবার আশায় তোমাদের মন আনন্দে ভরে উঠছে। সেই সব পরীক্ষা আসে যেন তোমাদের বিশ্বাস খাঁটি বলে প্রমানিত হয়, আর তার ফলে যীশু খ্রীষ্ট প্রকাশিত হবার সময়ে তোমরা প্রশংসা, গৌরব ও সম্মান পাও। যে সোনা ক্ষয় হয়ে যাবে তাকেও আগুনে খাঁটি করে নেওয়া হয় কিন্তু তোমাদের বিশ্বাসের দাম তো সেই সোনার চেয়ে আর বেশী। যদিও তোমরা যীশুকে দেখ নাই তবুও তোমরা তাঁকে ভালবাস। যদিও এখন তোমরা তাঁকে দেখতে পাচ্ছ না তবুও তোমরা তাঁর উপর বিশ্বাস করছ, আর যে আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা যায় না ও যা স্বর্গীয় মহিমায় পরিপূর্ণ, সেই আনন্দে তোমরা আনন্দিত হচ্ছ; কারণ তোমাদের বিশ্বাসের শেষ ফল তোমরা পেতে যাচ্ছ, আর তা হল তোমাদের সম্পূর্ণ পরিত্রান। আমরা তো সবাই একটি আনন্দপূর্ণ নতুন জীবন চাই তাই নয় কি ? পাপময় জীবন থেকে উঠে এসে আমরা কি নতুন জীবনের পথে- পরিত্রানের পথে চলতে চাইব না ? অবশ্যই চাইব ।
    যীশু খ্রীষ্ট আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমাদের অবশ্যই মানুষকে ভালবাসতে হবে। একবার একজন ধর্ম শিক্ষক  যীশুর কাছে এসে যীশুকে পরীক্ষা করবার জন্য সেই ধর্ম শিক্ষক বললেন, গুরু কি করলে আমি অনন্ত জীবনের অধিকারী হতে পারব ?  যীশু তাকে বললেন, মোশির আইন-কানুনে কি লেখা আছে ? সেখানে কি পড়েছেন ? সেই ধর্ম শিক্ষক যীশুকে উত্তর দিলেন, তোমরা প্রত্যেকে তোমাদের সমস্ত অন্তর, সমস্ত প্রাণ, সমস্ত শক্তি ও সমস্ত মন দিয়ে তোমাদের প্রভু ঈশ্বরকে ভালবাসবে; আর তোমাদের প্রতিবেশীকে নিজের মত ভালবাসবে। যীশু তাঁকে বললেন, আপনি ঠিক বলেছেন, যদি আপনি তা করতে থাকেন তবে জীবন পাবেন। সেই ধর্ম শিক্ষক নিজের সম্মান রক্ষার জন্য আবার যীশুকে বললেন, আমার প্রতিবেশী কে ? যীশু উত্তর দিয়ে সেই দয়ালু সমরীয়ের গল্পটি বলেছিলেন যা আমাদের সবাইর জানা আছে। গল্পের শেষে যীশু বললেন, এখন আপনার কি মনে হয় ? সেই তিনজনের মধ্যে কে সেই ডাকাতদের হাতে পড়া লোকটির প্রতিবেশী ? সেই ধর্ম শিক্ষক বললেন, যে তাকে মমতা দেখালো । যীশু তখন তাকে বললেন, তা হলে আপনিও গিয়ে সেই রকম করুন। ভালবাসা কাকে করতে হবে তার কোন নির্দিষ্টতা নেই ।এই জগতের প্রত্যেকটি মানুষ একটি পরিবারের সদস্য, আবার সকলেই আমাদের প্রতিবেশী, সুতারং যে কোন সময়, যে কোন অবস্থায় আমাদের উচিৎ প্রত্যেককে ভালবাসা ও যতœ নেয়া। 

    ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসেন তবু মানুষ কেন তাঁর ভালবাসা থেকে দুরে সরে গিয়েছে ? কারণ মানুষ ঈশ্বরের বিরুদ্ধে পাপ করেছে। যিশাইয় ৫৯: ২ পদে বলা হয়েছে’ কিন্তু তোমাদের অন্যায় সদাপ্রভুর কাছ থেকে তোমাদের আলাদা করেছে ।
    রোমীয় ৩:২৩ পদে বলা হয়েছে-”কারণ সবাই পাপ করেছে এবং ঈশ্বরের প্রশংসা পাবার অযোগ্য হয়ে পড়েছে । আমরা কি জানি ঈশ্বরের সাথে এই দুরত্ব আমাদের কোথায় নিয়ে যায় ? এই দুরত্ব আমাদের মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায় এবং ঈশ্বরের বিচার সভায় দাঁড় করায় । ঈশ্বর ঠিক করে রেখেছেন যে, প্রত্যেক মানুষ একবার মরবে এবং তার পরে তার বিচার হবে---ইব্রীয় ৯:২৭ পদ। যারা ঈশ্বরকে জানে না আর যারা প্রভু যীশুর বিষয়ে সুখবরের কথা মেনে চলে না তাদের তিনি তখন শাস্তি দিবেন। প্রভু যখন আসবেন তখন তাদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে যার ফলে তারা তাঁর উপস্তিতি এবং মহা শক্তির বাইরে পড়ে চিরদিন ধরে ধ্বংস হতে থাকবেন---২ থিষলনীকীয় ১:৮-৯ পদ। মানুষ ভাল কাজ দিয়ে ঈশ্বরের সাথে জীবনের সেতু বন্ধন তৈরী করতে চেষ্টা করে, কিন্তু আমাদের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে তা করা অসম্ভব। আমরা প্রত্যেকে অশুচি লোকের মত হয়েছি আর আমাদের সব সৎ কাজ নোংরা কাপড়ের মত-- যিশাইয় ৬৪: ৬ পদ ।  ইফিষীয় ২: ৮ পদে বলা আছে  ঈশ্বরের দয়ায় বিশ্বাসের মধ্যে দিয়ে তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ । এটা তোমাদের নিজেদের দ্বারা হয় নি, তা ঈশ্বরেরই দান । 

    যীশু খ্রীষ্ট, যিনি আমাদের পাপের জন্য ক্রুশে প্রাণ দিলেন, তিনিই হলেন ঈশ্বরের কাছে যাবার একমাত্র পথ। হ্যাঁ, যারা ব্যক্তিগতভাবে যীশু খ্রীষ্টকে তাদের জীবনে ত্রানকর্তা হিসাবে গ্রহন করবে এবং বিশ্বাস করবে যে, তিনি তাদের পাপ ক্ষমা করতে পারেন তাদের সাথেই ক্রুশের মাধ্যমে একটি সেতু তৈরী হবে। ” যোহন ১:১২ পদে বলা আছে তবে যতজন তাঁর উপড় বিশ্বাস করে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি  ঈশ্বরের  সন্তান হবার অধিকার দিলেন। আমরা পবিত্র বাইবেলে দেখতে পাই ঈশ্বর মানুষকে এত ভালবাসেন যে, তাঁর প্রিয় একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ সেই পুত্রের উপরে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায় - যোহন ৩:১৬ পদ । আর আমাদের জীবনের সাথে যখন ঈশ্বরের সেই সেতু বন্ধন তৈরী হবে তখন আমরা সেই নিশ্চয়তা পাব যা তিনি যোহন লিখিত সুসমাচারের ১৪:১৪ পদে বলেছেন। আর আমার নামে যদি আমার কাছে কিছু চাও তবে আমি তা করিব। তিনি আমাদের এ আশ্বাসও দিয়েছেন, যদি কেউ একান্তভাবে তাঁর কাছে এভাবে প্রার্থনা করে, হে প্রভু যীশু দয়া করে আমার অন্তরে এসো, আমার পরিত্রানকর্তা হও এবং আমার প্রভু আমার হও দয়া করে আমার পাপ সকর ক্ষমা কর এবং আমাকে অনন্ত জীবন দান কর । তাহলে তিনি অবশ্যই তা করবেন।   আমেন ।

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS