খেতেবসলেইমনেপড়ে- মানুষের জন্য মানুষ জীবনের
জন্য জীবন। খ্রিস্ট বিশ্বাসী হিসাবে খাদ্য গ্রহনের পূর্বে আমরা খবারের
জন্য ধন্যবাদ দিয়ে বলি-প্রভু, আমাদের যেমন খাবার দিচ্ছো তেমনিভাবে গরীব
দুঃখীদের দাও, যারা খাবার পাচ্ছেনা।কিন্তু বর্তমানের অবস্থা খুবই কঠিন। যারা
খেটে খাওয়া নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা কিছু মধ্য শ্রেণীর লোক। তাদের কষ্ট বড় বেদনাদায়ক।
তারা কাজ করতে পারছে না, বের হতে পারছেনা, আনহারে অর্ধাহারে ঘরে আটকে আছে।আজ সকালে টিভি চালু করেই
দেখি-নারী এবং পুরুষ সমস্ত মানুষেরা রাস্তা অবরোধ করছে। তারা বলছে আমরা আর ঘরে বসে
থাকতে পারছিনা। করোনায় মরার আগেই আমরা নাখেয়ে মরে যাব। তাই লজ্জা শরম ফেলে ক্ষুধার
জ্বালায় রাস্তায় নামছি।
১।যীশু জানতেন যে, ভবিষ্যতেএই পৃথিবীতে করোনার মত
মহামারী আসবে?। আর তাইতো যীশু বলেছিলেন-“কারন জাতির বিপক্ষে জাতি ও
রাজ্যের বিপক্ষে রাজ্য উঠিবে,এবং স্থানে স্থানে দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হইবে”(মথি-২২:৭)। তাহলে আমরা কি প্রভু যীশুর
আদেশ আমান্য করে, করোনাকে ভয় করে, শুধু চুপ করে ঘরে বসেই থাকবো? নাকি প্রতিবাশীর
জন্য কিছু করবো?আমার ব্যক্তিগত উত্তর হল-অবশ্যই আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী
প্রতিবাশীকে সহযোগিতাও করবো।
২।আমরা প্রভুর বাক্যে বিশ্বাস করি।“সদাপ্রভু আমার
পালক, আমার অভাব হইবেনা।যখন আমি মৃত্যু ছায়ার
উপত্যকা দিয়া গমন করিব,তখনও অমঙ্গলের ভয় করিবনা,কেননা তুমিই আমার সঙ্গে
সঙ্গে আছ(গীত-২৩:১,৪পদ)।উক্ত বাক্য আমাদিগকে বলে আমাদের অভাব হইবেনা। আর
সেই কারনে আমাদের যা কিছু আছে আমরা তাই দিয়ে আমাদের প্রতিবেশীদেরকে সহযোগিতা করতে
পারি।
৩।একজন বিশ্বাসী হিসাবে আমরা প্রভুকে ভয় করবো এবং
তাঁরই বাক্য পালন করবো। যিশা-৪১
:১০পদ ঈশ্বর বলেছে-“ভয় করিওনা,কারন আমি তোমার
সঙ্গে সঙ্গে আছি;ব্যাকুল হইওনা,কারন আমি তোমার ঈশ্বর;আমি তোমাকে পরাক্রম দিব;আমি
তোমার সাহায্য করিব;আমি আপন ধর্ম শীলতার দক্ষিন হস্ত দ্বারা তোমাকে ধরিয়া প্রভু যীশু খ্রিস্ট নিজেবলেছেন-আর দেখ,আমিই
যুগান্ত পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি(মথি-২৮:২০পদে)।“সঙ্গে সঙ্গে থাকা” বাক্যটি
দুইবার বলে প্রভু আমাদের সঙ্গে বাস করার নিশ্চয়তা-দিয়েছেন।
৪।আমরা জানি প্রভু যীশু যখন পুনায় এই পৃথিবীতে বিচারক
হিসাবে আসবেন।বিশেষ করে যারা দুঃখার্ত, রোগাগ্রস্থ, ক্ষুধার্ত,
পিপাসিত,আশ্রয়হীন,বস্রহীন,কারাগারস্থ, অতিথি দেরকে যারা সেবা করবেন তাদেরকে যীশু
তাঁর ডানদিকে রাখবেন।এবং যারা সেইমত সেবা করবেন না, প্রভু তাহাদিগকে তাঁর বাম দিকে
রাখবেন। উক্ত বাক্য আমাদিগকে এই শিক্ষা দেয়, আমরা যেনসেবার কাজ করি
এবং দেহের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি দেই(যাকোব-২.১৬-১৭পদ)। শুধু“নিজে বাচলে
বাপের নাম”এই কথা বলে ঘরে বসে থাকলে পার পাওয়া যাবেনা।অবশ্য একথা সত্য
যে,খ্রিস্টীয় মন্ডলী গুলিও এই করোনা পরিস্থিতিতে সমস্যাগ্রস্থ স্বল্প আয়ের মানুষের
জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য কিছু এবং কিছু অর্থ যোগান দিচ্ছেন।
বাস্তব অভিজ্ঞতাঃ
গতকাল আমাদের এক প্রতিবেশীর বাসা থেকে শিশুদের কান্নার শব্দ
শুনে,আমি জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তাদের ঘরে খাবার নেই।এছাড়া শিশুরা বদ্ধঘরে
থাকতে চায়না।প্রতিবাশী হিসাবে আমরা যতটূকু পারি এটাই এখন তাদের জন্য অনেক কিছু।আপনার
আমার কিঞ্চিত সহভাগীতাই প্রতিবেশীদের উপকার হতে পারে।যদিও সরকারীভাবে,
সংস্থাগতভাবে এবং ব্যক্তিগতভাবে কেউ কেউ কিছু অনুদানকিংবাখাবার সামগ্রী কিংবা অর্থ
দিয়ে সাহায্য করছেন তবে তা সবাই পাচ্ছেনা।
বাস্তব পরিস্থিতিঃ
একটু আগে ইউটিউবে দেখলাম, মায়ের করোনা হয়েছে সন্দেহে সন্তানেরা
মাকে অসুস্থ অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে এসেছে।কারনমায়েরভাইরাসেযদিআরওকাউকেআক্রান্তহতেহয়
সেই ভয়ে।পরে অন্য মানুষ উদ্ধার করে সেই অসুস্থ মাকে
করোনা পরীক্ষা করার পর জানা গেছে সেই মা সাধারন ঠান্ডা জরে অসুস্থ ছিলেন, করোনা
ভাইরাসে নয়।আজবিশ্বের দুই শতাধিক দেশের মানুষেরা আকান্ত। কোন কোন
পরিবারের সবাই মারা গেছে। কে কার সেবা করবে?কেউ বেঁচে নেই। ভয়ে প্রতিবেশীরা কেউ তাদের কাছে আসে নি। বেশ কয়েকদিন পরে প্রশাসনের লোকেরা
এসে তাদের সৎকার করেছিলেন।
প্রতিবাশীরপ্রতিভালবাসাঃএই পৃথিবীতে কোন মানুষই
আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ নই।আমার যা আছে অন্যের তা নেই। তবে প্রত্যেকের কিছু নাকিছু আছে।প্রভু যীশু মানুষ হয়ে এই পৃথিবীতে এসে সকল মানুষের জন্য তাঁর অমুল্য জীবন দিয়ে পরিত্রাণ সাধন করেছিলেন(১তীম-২:৫-৬)।আর সেই কারনে তিনি সকল মানুষের মুক্তিদাতা।তিনি
অলৌকিক কাজ করেছেন এবং ক্ষুধার্ত মানুষকে আহারও দিয়েছিলেন।কিন্তু আমি তাঁর একজন অনুসারী হয়ে মানুষের জন্য কি করতে পারছি।মাঝে
মাঝে ভাবি,তিনি যখন পৃথিবীতে পুনরায় ফিরে আসবেন, তখন কোন মুখে আমি তাঁর সামনে দাড়াবো? আমি তাঁকে বিশ্বাস করি কিন্তু
সেই বিশ্বাসের কাজ কি আমার জীবনে আছে? প্রভু যীশুর শিক্ষনুযায়ী
আমি কি আমার প্রতিবেশীকে আপনার মত ভালবাসতে পারছি?
উপসংহারঃ
আজ এই বিশ্ব করোনা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে যারা
অনাহারে আছে আপনার আমার একমুঠো চাউল কিংবা অন্যান্য খাদ্য কিংবা আপনার জমানো কিংবা
নিজের খরচের অর্থ আমাদের প্রতিবেশীদের প্রান বাঁচাতে সহায়ক হতে পারে।আমাদের প্রতিবারে রান্না বাখাবার প্রস্তুত করার সময় আমরা কিছু চাউল বা অন্যান্য খাবার আমাদের প্রতিবেশীদের জন্য রাখতে পারি।তাই সকলের প্রতি, বিশেষ করে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসী ভাই ও বোনদের প্রতি আমার সবিনয় অনুরোধ।আসুন আমাদের যা কিছু আছে তাই দিয়ে আমরা প্রথমতঃ প্রভুর সেবা করি এবং তাঁর জীবন্ত বাক্যানুযায়ী প্রতিবেশীকে আপনার মত করে ভালবাসি এবং সাহায্য করি। প্রভু চান এই করোনাপরিস্থিতির সুযোগে আমরা যেন তাঁর উপাসনা, প্রার্থনার পাশাপাশী প্রতিবেশীকে ভালবাসার মধ্য দিয়ে সুসমাচার প্রচার করি।আমেন।
ধন্যবাদান্তে-
বিনীত খ্রিস্টেতে সহদাস,
রেভাঃ সাইমন সরকার।