ভূমিকা ঃ- পবিত্র বাইবেলে স্বর্গ-রাজ্য সম্পর্কে সাতটি দৃষ্টান্তের বিবরণ দেখতে পাই। আবার যীশু খ্রীষ্টের বিচার দিনের সম্পর্কেও তিনটি দৃষ্টান্তের বিবরণ দারুন ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। যীশু যিরুশালেমের মধ্য দিয়া গমন করিবার সময় মন্দির দর্শন করিবার প্রাক্কালে ইহার ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী করেন- মথি ২৪;১,২ পদ। শিষ্যগণ বেশ কৌতুহলের দৃষ্টিতেই প্রভূকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে যিরুশালেমের ধ্বংস কখন এবং কিভাবে হবে। তাহাদের এই প্রকার প্রশ্নের উত্তরেই যীশু এই দৃষ্টন্ত গুলি ব্যবহার করেছিলেন। এই দৃষ্টান্তটি যীশু খ্রীষ্টের পূনরাগমনের পরেই প্রযোজ্য কেননা মথি ২৪;৩০ পদে যীশুর পূনরাগমন এবং তার পরেই দশ কুমারীর বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে।
পবিত্র বাইবেল পাঠ ঃ- মথি ২৫;১-১০ পদ।
দশজন কুমারী বরের সহিত সাক্ষাত করিবার জন্য পথে বাহির হইল। বরের জন্য অপেক্ষা করিতে করিতে তাহারা সকলেই ঘুমাইয়া পড়িল। মধ্য রাত্রিতে বর আসিয়া উপস্থিত হইলেন এবং তাহারা সকলেই বরের সহিত সাক্ষাত করিবার জন্য অগ্রসর হইল। কিন্তু ইহাদের মধ্যে পাঁচজনের প্রদীপ তৈলাভাবে নিভিয়া গেল; সুতরাং তাহারা তৈল ক্রয় করিবার জন্য বিক্রেতাদের নিকট গমন করিল। কিন্তু ইতিমধ্যে বর উপস্থিত হওয়ায় ওপর পাঁচজন বরের সহিত গমন করিল এবং তাহাদের পশ্চাতে দ্বার রুদ্ধ হইল। অপর পাঁচজন যথাসময়ে তৈল লইয়া দৌড়াইয়া আসিয়া দেখিল, দ্বার রুদ্ধ; সুতরাং আর বিবাহ বাটিতে প্রবেশ করিতে পারিল না। কারণ তাহাদিগকে আর ভিতরে প্রবেশ করিতে অনুমতি দেওয়া হইল না।
ব্যাখ্যা ঃ- এই দৃষ্টান্তটি ব্যাখ্যা করিবার পূর্বে আমাদের যে সর্বদা প্রস্তুত থাকা বাঞ্জনীয়, সে সম্পর্কে প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট যে তিনটি দৃস্টান্তের উল্লেখ করেন, আসুন, সেই দৃষ্টান্ত গুলোর প্রতি একটু মনযোগী হই।
ক) নোহের কথা ... মথি ২৪;৩৭-৩৯ পদ।
খ) গৃহকর্তা ... মথি ২৫;৪৩-৫১ পদ।
গ) দশ কুমারী ... মথি ২৫;১-১০ পদ।
ইহা অতি গুরুত্বপূর্ণ যে মথি ২৪;১-২৫ পদ অতীত, ৩০-৩৬ পদ বর্তমান এবং ২৪;৪০- ২৫;১-১০ পদ ভবিষ্যৎকাল সম্পর্কীয়।
কখন যিরুশালেম নগর ধ্বংস হবে- এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি মথি ৪;১৫ পদ এবং তারপর ২৪;১৬-২১, ২৩ ও ২৫ পদ প্রয়োগ করেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন কিভাবে যিরুশালেম ধ্বংস হবে, ইহার উত্তরে ২৪;৩০ পদ প্রয়োগ করেন। এবং তৃতীয় প্রশ্ন ‘কি’ ইহার উত্তরে ১৪ পদ প্রয়োগ করেন। খ্রীষ্ট তাঁর পূনরাগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেন কিন্তু কোন্ সময় তাঁর আগমন হবে, সে কাল/সময় অনিশ্চিত রেখে গেছেন- মথি ২৪;৩৬-৪২, ২৫;১৩ পদ।
১। বর ... স্বয়ং প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট।
২। কন্যা ... খ্রীষ্টিয় মন্ডলী (ইফি ৫;২৫-২৭, ২করি ১১;২১)।
৩। পাঁচজন সুবুদ্ধি কন্যা ... বিশ্বাসী যিহুদীগণ (প্রকা ১৪;৪,৫)। অর্থাৎ বর্তমান খ্রীষ্টিয় যুগান্তে যিহুদী জাতির মধ্যে যাহারা যীশুকে মশীহ বলিয়া বিশ্বাস ও স্বীকার করে, তাহারা সকলেই।
৪। পাঁচজন নির্বুদ্ধি কন্যা ... অবিশ্বাসী যিহুদীগণ। অর্থাৎ বর্তমান খ্রীষ্টিয় যুগান্তে যিহুদী জাতির মধ্যে যাহারা যীশুকে মশীহ বলিয়া বিশ্বাস ও স্বীকার করে না, তাহারা সকলেই- প্রকা ১৪;১-৫ পদ।
৫। প্রদীপ ... ব্যক্তিগত জীবনে মশীহ/খ্রীষ্ট সম্পর্কে সাক্ষ দেওয়া।
৬। তৈল ... পবিত্র আত্মার প্রতিক।
৭। মধ্য রাত্রিতে ... খ্রীষ্টে পূনরাগমনের ঠিক পরেই।
৮। উৎসব ... খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের আত্মিক আনন্দ।
৯। রুদ্ধদ্বার ... খ্রীষ্টকে গ্রহণ করিবার সকল প্রকার সুযোগের সমাপ্তি।
‘যাহারা অতি বিলম্বে এসেছিল’ অর্থাৎ যাহারা কেবলমাত্র মৌখিক ধর্মাভাবে পরিপূর্ণ ছিল। তাহারা তৈল/পবিত্র আত্মা যাষ্ণা করিবে কিন্তু তাদেরকে স্মরণে রাখিতে হবে যে, নৈতিক যোগ্যতা ও আত্মিক উন্নতি মূহুর্তেই সম্ভব হয় না অর্থাৎ রাতারাতি; বিশেষতঃ শেষ মূহুর্তে। সময়ের এক ফোর, অসময়ের দশ ফোর।
গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ঃ-
(১) যীশু খ্রীষ্টের আগমনের নিশ্চয়তা।
(২) আমরা সকলেই তাঁহার সহিত সাক্ষাত করিবার জন্য আহুত/মনোনীত।
(৩) কেহ কেহ তাঁহার সহিত মিলিত হইবে, আবার কেহ কেহ অনুপযুক্ত বলিয়া গণ্য হবে। আমরা হয়তো দেখব যে, ‘দরজা বন্ধ’ অর্থাৎ আমাদের শেষ সুযোগটিও নষ্ট হয়েছে। যেমন: ক্রুশের দু‘পাশের দুই দস্যু, একজন সুযোগের সৎ ব্যবহার করে অনন্ত জীবনে প্রবেশ করল। আর একজন সুযোগ হারাল।
(৪) ‘আমি তোমাদিগকে চিনি না’ এই প্রকার মন্তব্য কেবলমাত্র অবিশ্বাসীদের প্রযোজ্য। কারণ খ্রীষ্ট আপনার নিজস্বদের বিষয়ে এই প্রকার কথা বলিতে অসমর্থ- যোহন ১০;২৭ = আমার মেষেরা আমার রব শুনে, আর আমি তাহাদিগকে জানি, এবং তাহারা আমার পশ্চাৎ গমন করে; আর আমি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দিই, তাহারা কখনও বিনষ্ট হইবে না, এবং কেহই আমার হস্ত হইতে তাহাদিগকে কাড়িয়া লইবে না।
উপসংহার ঃ- যদিও খ্রীষ্টের দ্বিতীয় আগমনের কাল/সময় সম্পূর্ণ অনির্দিষ্ট; তথাপি তাঁহার আগমনের প্রতিক্ষায় সকলকে প্রস্তুত থাকিতে শিক্ষা দেওয়াই এই দৃষ্টান্তের মূল উদ্দেশ্য। যাহারা প্রকৃতই খ্রীষ্টের আত্মা প্রাপ্ত কেবল তাহারই তাঁহার সহিত মিলিত হইবে; কিন্তু যাহারা মাত্র মূখে স্বীকার করে, তাহারা নয়। যখন দরজা বন্ধ হইবে, তখন আপনি কোথায় স্থান লাভ করিবেন ? বাহিরে না ভিতরে ? ঈশ্বর তাঁর মধুর বাক্যের আলোকে আমাদের সকলকে আশীর্বাদ দান করুন, আমেন।
পালক কিশোর তালুকদার
হাউজ চার্চ অব বাংলাদেশ, ঢাকা।