স্বামী স্ত্রী একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া খুবই গুরুপ্তপূর্ণ

ads20

     স্বামী স্ত্রী একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া খুবই গুরুপ্তপূর্ণ

    মাইকেল মিন্টু সরদার

    বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রী হলো একে অন্যের পরিপূরক।অভিধানিক অর্র্থে স্বামীকে প্রভু এবং স্ত্রীকে অর্ধাঙ্গিনী বলা হয়। অর্থাৎ যিনি তার স্বামীর অর্ধেক অঙ্গের অধিকারিনী। একটু সহজ করে বললে, একজন স্ত্রী হলেন তার স্বামীর দেহের এক অংশ। কিন্তু পবিত্র বাইবেল আরও গভীরে গিয়ে আমাদেরকে বলেন “...মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতেআসক্ত হইবে,এবং তাহারা একাঙ্গ হইবে’’-আদি ২:২৪। পবিত্র বাইবেলের ভাষায়স্বামী-স্ত্রী হলো একাঙ্গ অর্থাৎ একটি দেহ যা অবিচ্ছেদ অংশ। কারণ স্বামী-স্ত্রীর এই যোগ বন্ধন ঈশ্বর থেকে হয়। তাই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন,“...তাহারা আর দুই নয় কিন্তু একাঙ্গ অতএব ঈশ^র যাহা যোগ করিয়া দিয়াছেন,মনুষ্য তাহা বিয়োগ না করুক”-মথি ১৯:৬পদ।রূপক অর্থে একাঙ্গ বলা হলেও বাস্তবতায় ভিন্ন,যেমন দেহ আলাদা, প্রত্যেকের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব স্বত্বা রয়েছে,ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে, ভিন্ন মন-মানসিকতা,ভিন্ন চিন্তা ধারা, ভিন্ন চাহিদা, ভিন্ন বৈশিষ্ট রয়েছে। তবুও এক ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীকে পার করতে হয় সারাটি জীবন।আপনি ভালো কিংম্বা খারাপ যাই হোন না কেন সে আপনার উত্তম অর্ধেক অর্থাৎ better half  । পবিত্র শাস্ত্র অনুসারে স্বামী স্ত্রী যখন এক অঙ্গ,তখন স্বামীর সব কিছুতে যেমন স্ত্রী অধিকার রয়েছে তদ্রুপ স্ত্রীর সব কিছুতে স্বামীর অধিকার রয়েছে। তাই প্রেরিত পৌল বলেছেন,“নিজ দেহের উপরে স্ত্রীর কতৃত্ব নাই,কিন্তু স্বামীর আছে; আর তদ্রুপ নিজ দেহের উপরে স্বামীর কতৃত্ব নাই,কিন্তু স্ত্রীর আছে” ১করি৭:৪। শুধুমাত্র দৈহিক বিষয় নয়,বরংস্বামীর সকল সন্মান,গৌরব আর সমস্ত অর্জনে যেমন তার স্ত্রী ভ‚ষিত হন,তদ্রুপ স্ত্রীর সকল কৃতিত্ব,সন্মানে তার স্বামীও সন্মানীত হন।ইফিষীয় মন্ডলীতে পাঠানো একটি পত্রের মধ্যে প্রেরিত পৌল স্বামী-স্ত্রীর বিষয় উল্লেখকরে বলেছেন “...তোমরাও প্রত্যেকে  আপন আপন স্ত্রীকে আপনার মত প্রেম কর; কিন্তু স্ত্রীর উচিৎ যেন সে স্বামীকে ভয় করে।’’-ইফিষীয় ৫:৩৩ পবিত্রবাক্য অনুসারে প্রত্যেক ব্যক্তি যেমন নিজেকে ভালোবাসে, নিজের দেহের প্রতি যত্ন নেয়,শরীরের কোথাও আঘাত পেলে সে নিজে যেমন ব্যাথায়, যন্ত্রণায় কষ্ট পায়; তদ্রুপ নিজের মতো করে স্ত্রীকে ভালোবাসা,তার সার্বিক বিষয়ের প্রতি যত্নশীল হওয়া,স্ত্রীর শারিরীক এবং মানুষিক কষ্ট, হৃদয়ের আবেগ,অনুভ‚তি গুলো উপলব্ধি করা একজন স্বামীর কর্তব্য;একই ভাবে স্ত্রীরও কর্তব্য তার স্বামীকে সন্মান করা এবং প্রাণের সহিত ভালোবাসা। কোন স্বামী যখন তার স্ত্রীকে অসন্মান করে তখন সে তার নিজেকে অসন্মান করে,আবার একজন স্ত্রী যখন তার স্বামীকে অসন্মান করে তখন সে তার নিজেকে অসন্মান করে,কারণ তারা একদেহ।যদি স্বামী স্ত্রী একে অন্যকে সন্মান করতে না পারে,তাহলে প্রতিবেশী,সমাজ,আত্মীয়-পরিজন কেউ সেই পরিবারকে কখনো সন্মান করবে না। তাই বৈবাহিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা এবং একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

    বিবাহিত জীবন হলো একটি নতুন জীবন, যেখানে একে-অন্যকে ভালোবেসে অনেক দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয়, ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, ধৈয্য ধারণ করতে হয়,নিজের চেয়ে অন্যের ইচ্ছা টাকে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়।এমনকি অনেক সময় নিজের সুখটাকেও বির্সজন দিতে হয়।কিন্তু আমাদের সমাজ এবং পরিবার গুলোর দিকে একটু গভীর ভাবে দৃষ্টি দিলে একটি বিরূপ চিত্র দেখতে পাই। যেখানে একজন স্বামী বা স্ত্রী জেনে-শুনে অথবা অবচেতন মনে অনেক সময় একে-অন্যকে অসন্মান করে। যা কখনো একটি সুখি দাম্পত্য জীবন ও আদর্শ পরিবারেরকাম্য নয়।যে কারণে সেসব পরিবারের মধ্যে অমিল,অশান্তি,ঝগড়া-বিবাদ দেখা যায়। মনে রাখা দরকার যে,পরিবারের খুঁটি-নাটি বিষয় গুলো থেকেই বড়-বড় সমস্যার তৈরী হয়। অনেক সময় ডিভোর্সও হয়ে যায়। তাই,স্বামী-স্ত্রী একে-অন্যকে কিভাবে মূল্যায়ণ করতে হয় তা জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।

    স্ত্রীর প্রতি স্বামীর কর্তব্যঃ- একজন স্বামী হলেন পরিবারের কর্তা, তাই তাকে অনেক প্রজ্ঞার পরিচয় বহন করতে হয়। স্ত্রী,সন্তান,মা-বাবা এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে। তবে তা অবশ্যই স্ত্রীর সাথে প্রথমে।কারণ একজন আদর্শ স্বামী-স্ত্রীই পারে একটি আদর্শ সুখি পরিবার গঠন করতে।কিন্তুপ্রশ্ন হলো একজন স্বামীর দৃষ্টিতে স্ত্রী কে? যিনি স্বামীর যৌবনকালের সঙ্গী? শুধুমাত্র সন্তানের মা? পরিবারের দেখাশুনা কারী? বার্ধ্যক্ষের সেবাকারী? না। স্ত্রী হলেন একজন সহযোদ্ধা, যিনি বিবাহিত জীবনে স্বামীর হাত ধরে জীবন সংগ্রামের নানান পরিস্তিতি,সুখ-দুঃখ,উত্থান-পতন সমস্ত কিছু মোকাবেলা করে জীবনের শেষ পর্যন্ত পাশে থাকে। স্বামীর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তার স্ত্রী। স্বামী যখন কোন বিষয় নিয়ে হতাশা গ্রহস্ত,বিচলিত,চিন্তিত,সংকটাপন্য সময়ের মধ্যে দিয়ে দিন কাটায়, তখন একজন স্ত্রী পারে বুদ্ধি,সাহস,অনুপ্রেরণা,দিয়ে স্বামীর মানুষিক শক্তি যোগাতে। এজন্য পবিত্র বাক্যে বলে “গুণবতী স্ত্রী স্বামীর মুকুটস্বরূপ ...” হিতোপদেশ১২:৪।পুরুষের জীবনে মায়ের পরে স্ত্রীর ভূমিকা অপরিহায্য। প্রত্যেকেপুরুষের উত্তম জীবন সঙ্গী হলেন একমাত্র তার স্ত্রী। কিন্তু,সমাজের বহু পুরুষ রয়েছে যারা নিজের স্ত্রীকে সন্মান,শ্রদ্ধা করে না বরং বিভিন্ন ভাবে স্ত্রীকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্ল,অবমাননা,অপমান,শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন করে থাকে। যা কখনো একজন আদর্শবান স্বামীর পরিচয় বহন করে না।আমাদের সমাজের একটা সামাজিক প্রাচীনপ্রথা প্রচালিত ছিল, যখন কোন ছেলে বিবাহ করতে যেত, তখন ছেলে তার মাকে প্রণাম করে বলে যেত, মা আমি তোমার জন্য দাসি আনতে যাচ্ছি। এবং বিবাহের পরে স্ত্রীর সাথে ঠিক দাসির মতোই আচরণ করা হতো। এমন কি এখনো সমাজের মধ্যে এবিষয় গুলো পরিলক্ষিত হয়।যা খুবই দুঃখজনক বিষয়। অনেক পরিবারের স্ত্রীকে শুধু মাত্র সংসারের যাবতীয় কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়।ভোরের ঘুম থেকে ওঠা থেকে রাতে বিছানায় যাওয়া অবধি স্বামী,সন্তান,শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর পরিবারের অন্য সদস্যদের সেবা যত্বের ভার স্ত্রীকে বহন করতে হয়।অথচ পারিবারিক কোন আলোচনা বা সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্ত্রীকে মূল্যায়ণ করা হয় না,তার কোন মতামতকে প্রধান্য দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না। পরিবারের সব সদস্যরাই একজন স্ত্রীর উপরে প্রভুত্ব করতে চেষ্টা করে থাকে। এমনকি তার খাবার, স্বাজ-স্বজ্জা,পোশাক-পরিচ্ছেদের উপরেও নজরদারি করা হয়।একটু এদিক-সেদিক হলে কঁটাক্ষ্য ভাবে গাল মন্দ করে কথা বলা হয়।স্বামী, শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর মতামতের বাহিরে ডানে কি বামে ফেরার জোঁ নেই। একজন স্ত্রী বা পুত্রবধূকে কখনো দাসী ভাবা, বাড়ির কাজের লোকের সাথে তুলনা করা উচিৎ নয়। কারণ দাসী বা বাড়ীর কাজের লোক স্বর্ত সাপেক্ষ্যে অর্থের বিনিময়ে একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত পরিবারের সেবা দিয়ে থাকে, কিন্তু স্ত্রী হলেন পরিবারের একটি অংশ যিনি ভালোবেসে সারাটি জীবন পরিবারের সকলের যত্ন নিয়ে থাকে।তাই স্ত্রীকে তার স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া,পারিবারিক যেকোন বিষয় আলোচনা করা,তার মতামত,পরামর্শ নেওয়া অতান্ত্য গুরুপ্তপূর্ণ। স্বামী হিসাবে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো তার স্ত্রী যেন পরিবারের অন্য কোন সদস্য,আত্মীয়-পরিজন,প্রতিবেশী দ্বারা কোন ভাবে অসন্মানীতা,নির্যাতন,নিপিড়নের স্বীকার না হন সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখা।

    অনেক স্বামীরা পরিবারের হিসাব-নিকাশ,ব্যক্তিগত বিষয় নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে,স্ত্রীকে বলার প্রয়োজন মনে করেনা।অথচ, বিবাহিত জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে স্ত্রীর পরামর্শ,প্রার্থনা অতান্ত গুরুত¦পূর্ণ। তাই কোন কিছু করার আগে স্বামী-স্ত্রীর একান্ত পরিকল্পনা এবং উভয়েরই মতামতেরভিত্তিতে প্রার্থনা পূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসার মধ্যে ফাটল ধরে সম্পর্কের অবনতি হয়,পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয় এমন ধরণের কাজ,আচার-ব্যবহার,হাসি,তামাসা,রহস্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে। স্বামীরা অনেক সময় স্ত্রী চিকন বা মোটা হলে, গায়ের রং কালো, লম্বা অথবা খাটো হলে, শারিরীক কোন সমস্যা থাকলে বন্ধু মহলে,পরিবারের সকলের মধ্যে সেসব নিয়ে হাসি,তামাসা করা,কথায়-কথায় শারিরীক দূর্বলতা নিয়ে খোটা দিয়ে থাকে।স্ত্রীরা প্রথমে স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে সবার মাঝে হাসি সাথে উড়িয়ে দিলেও আস্তে আস্তে তা নিজের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজেকে ভালোবাসে। তাই স্ত্রীর আত্ম-সন্মানে আঘাত লাগে এমন আচারণ পরিহার করতে হবে।সমাজের অনেক পুরুষ রয়েছে,যাদের স্ত্রী অসুন্দর বা মনের মতো না হওয়ার কারণে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কোথাও বের হতে চান না,ঠিক মতো কথাও বলে না। এটি স্ত্রীর সাথে অন্যায় আচারণ এবং মানুষিক নির্যাতনের অর্ন্তরভ‚ক্ত বটে। বিয়ের আগে স্ত্রীর কারোর সাথে প্রেমের সম্পর্কবা আপত্তিকর কোনবিষয় থাকলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবার আগে জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিৎ।কারণ বিয়ের পরে স্ত্রীর অতিতের বিষয় গুলো বার বার টেনে তোলা,সন্দেহ প্রবণ আচরণ করার ফলে অনেক পরিবারের মধ্যে অশান্তি,ঝগড়া বিবাদ হতে দেখা যায়।অনেক সময় স্ত্রীর কোন দোষ,ত্রুটি না থাকলেও স্ত্রীর পরিবার,আত্মীয়-স্বজনদের কারোরজীবনের খারাপ কোন বিষয় টেনে তুলে নানান কথা শোনানো হয়।প্রেরিত পৌল করিন্থীয় মন্ডলীতে পাঠানো ২য় পত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন“ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পারাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেইগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে” - ২করি৫:১৭।বাক্যটিযেমন প্রভু যীশুর খ্রীষ্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য,ঠিক তেমনি আমাদের ব্যক্তি জীবনেও সমান ভাবে গুরুপ্তপূর্ণ।স্বামী স্ত্রী যত বেশি উভয়েরঅতিতের মন্দ বিষয় গুলো ত্যাগ করে ভালো,সুন্দর বিষয় গুলো গ্রহণ করতে পারবে,ততোবেশি ব্যক্তি জীবনে ও পারিবারিক ভাবে সুখ,শান্তি অনুভাব করতে পারবে।অন্যথা পরিবারের মধ্যে শুধু অশান্তি,ঝগড়া-বিবাদই সৃষ্টি হবে। তাই শুধু-শুধু অতিতের মন্দ বিষয় টেনে তুলে বার বার স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া উচিৎ নয়।বরং তাকে নূতন করে বাঁচতে শিখানো একজন স্বামীর কর্তব্য।যৌতুক না পাবার কারণে  স্ত্রীর উপর পিড়াপিড়ি করা,গাল মন্দ করে কথা বলা হয়। যেখানে স্ত্রীর কিছু করারথাকে না, নিরবে স্বামী,শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর কট‚ কথা শোনা ছাড়া। আর যেখানেঅর্থের লালসা থাকে,সেখানেআত্মার সম্পর্ক তৈরী হয় না।ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় না বরং দুজনের মধ্যে দিনের পর দিন দূরত্ব তৈরী হয়।

    অতিরিক্ত যৌন চাহিদা বা দৈহিক মিলনের প্রতি প্রবল আকাংঙ্খার ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মন-মালিন্য বা অশান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভাল নয়, তাই অধিক দৈহিক কামনা-বাসনা বা মাংসিক অভিলাষকে দমনে রাখা বাঞ্চনীয়। যেন সর্বসময় সবকিছুতে একে-অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা,ভালোবাসা প্রকাশ পায়। যখন কোন ব্যক্তিনিজ স্ত্রীকে রেখে গোপনে অন্য নারীর সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় বা পরকিয়া প্রেমে আবদ্ধ হয়,তখন সে নিজ স্ত্রীকে অসন্মান করে এবং ব্যভিচার করে। তাই রাজা শলোমন বলেছেন,“তুমি নিজ জলাশয়ের জল পান কর, নিজ কূপের স্রোতের জল পান কর।” এবংতিনি আরও বলেন,“তোমার উনুই ধন্য হউক,তুমি তোমার যৌবনের ভার্যায় আমোদ কর” হিতোপদেশ ৫:১৫,১৮।অতএব প্রত্যেক পুরুষের উচিৎ শুধুমাত্র নিজ স্ত্রীতে আসক্ত হওয়া।

    সবার মেধা শক্তি,বোঝার ক্ষমতা,যোগ্যতা এক না।তাই  স্ত্রীর কোন অসুস্থতা বাদূর্বল দিক নিয়ে অন্যের সামনে উপহাস করে স্ত্রীকে সবার কাছে ছোট করা,অসন্মান করার মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। আমাদের সকলের মধ্যে সবল দিক,দূর্বল দিক উভয়ই রয়েছে।তাই স্বামী স্ত্রী একে অন্যের সবলতা,দূর্বলতা মানিয়ে নিয়ে সংসার জীবন পরিচালনা করতে হয়।

    বিয়ের প্রথম পর্যায়ে অধিকাংশ ছেলেরা চায় তার স্ত্রী যেন সবসময় তার পিতামাতার সেবা-যত্ন করে।বেশ, ভালো চিন্তা।তবে আগে নিজে নিজের বাবা-মাকে বেশি ভালোবাসতে হবে, সেবা-যত্ন করতে হবে,তারপর নিজের বাবা-মায়ের মতো করে স্ত্রীর বাবা-মা অর্থাৎ শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীকেও ভালোবাসতে হবে। স্ত্রীর পিতা-মাতার খোঁজ-খবর, সেবা-যত্ন না করে স্ত্রীর কাছ থেকে নিজের বাবা-মায়ের শতভাগ সেবা-যত্ন পাবার আশা করা নিন্তাত্যই বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।যা অধিকাংশ পুরুষই করে থাকেন।স্বামী তার স্ত্রীর কাছ থেকে যেমন ব্যবহার আশা করেন নিজেকেও টিক তেমন ব্যবহার করা উচিৎ।স্বামীর কাছে স্ত্রীর অনেক ধরণের চাহিদা থাকতে পারে, সেটি গুরুপ্ত সহকারে দেখা এবং যথা সম্ভব দিতে চেষ্টা করতে হবে।

    অধিকাংশ পুরুষের চিন্তাধারা, স্ত্রী তার অধিনস্থ; সে যাহা বলবে স্ত্রী তা পঙ্খানু-পঙ্খু ভাবে পালন করতে বাধ্য। তাই সময়ে-অসময়ে স্ত্রীর শারীরিক-মানুষিক অবস্থা বিবেচনা না করে, বিভিন্ন কাজ দিয়ে থাকে। স্ত্রী তাৎক্ষণিক ভাবে সে কাজ করতে না পারলে বা করতে দেরি হলে স্বামীরা স্ত্রীর উপরে রাগা-রাগি,চিৎকার-চেঁচামেচি করে থাকে। আবার অনেক সময় বাহিরের অন্য কারোর উপরে রাগ বা মন খারাপ থাকলে তা ঘরের স্ত্রীর উপরে এসে প্রয়োগ করে থাকে। যার ফলে পরিবারের মধ্যে অযথা অশান্তি সৃষ্টি হয়। এরকম আচারণ পরিহার করতে হবে।নিজে উগ্র মেজাজের না হয়ে বরং স্ত্রীর প্রতি যতœশীল হওয়া,স্ত্রীকে সাহায্য করা, একজন দায়িত্ববান স্বামী হওয়া উত্তম।প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের প্রশংসা পেতে ভালোবাসে। তাই বার-বার স্ত্রীর রান্ন-বান্না সহ অন্য কাজের ভুল না ধরে, বরং উৎসাহ মূলক কথা বলা, প্রশংসা করা উচিৎ। আমরা পুরুষেরা অধিকাংশ সময় স্ত্রীদের সাথে অকৃতাঙ্গতা পূর্ণ আচারণ করে থাকি। একদিন রান্নায় একটু ত্রæটি হলে সাত কথা শুনিয়ে দেই,অথচ ভাল কোন কাজ বা রান্নার জন্য ধন্যবাদ দিতে শিখি না। স্ত্রীকে ধমক দিয়ে আদেশ করতে অভস্থ,ন¤্রতার সাথে কথা বলতে পারি না। একজন পুরুষ হিসাবে বিবাহিত জীবনেস্ত্রী কষ্ট পায় এধরণের অনেক ছোট-খাটো বিষয় গুলো থেকে বিরত থাকা,এবং নিজেদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায় এমন ব্যবহার করা, স্ত্রীকে সন্মান করা,সময় দেওয়া,তার প্রতি যত্নশীল হওয়া, তার অনুভূতিগুলো উপলদ্ধি করা,কর্তব্য পরায়ণ হওয়া এবং সর্বপরি ভালোবাসা দিয়ে স্ত্রীকে সারাজীবন আগলে রাখা উচিৎ।

    স্বামীর প্রতি স্ত্রী কর্তব্যঃ একটি পরিবারের সবচেয়ে বড় ভ‚মিকা পালন করে থাকে একজন স্ত্রী। স্ত্রী তার নিজের গুণ এবং বুদ্ধিমত্তা দিয়ে একটি পরিবারকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে পারে। বড়-বড় জাহাজ যেমন ছোট হাইল দ্বারা নিয়ন্ত্রীত হয়,একটি পরিবারের স্ত্রী তদ্রুপ! তাকে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। ত্যাগ স্বীকার করা,ধৈয্য ধারণ করতে হয়।নিরবে সহ্য করতে হয় পরিবারের খুঁটি-নাটি অনেক বিষয়। এজন্য প্রয়োজন আত্মসংযমীএবং নম্র স্বাভাব। অনেক সময় স্বামীরা চাকুরী,ব্যবসা, অর্থ উর্পাজন নিয়ে ব্যস্ত থাকে,পরিবারে তেমন সময় দিতে পারেনা। সে ক্ষেত্রে স্ত্রীকে বাজার করা থেকে শুরু করে পরিবারের সকল দায়িত্ব পালন করতে হয়।একজন স্ত্রীকে পরিবারের ছোট-খাটো হিসাব রক্ষকও বলা চলে।স্বামীর আয়ের উপরে নির্ভর করে পরিবারের চাহিদা এবং ব্যয়। এজন্য স্ত্রীকে অনেক মিতুব্যয়ীহতে হয়,যেনতিনিঅত্যান্তসুকৌশলে স্বল্প উপার্জনে সংসার চালিয়েও অর্থ সঞ্চয় করতে পারে।কিন্তু অনেক নারীরা রয়েছেন যারা প্রচুর চাহিদা সম্পূর্ণ,সুখাভিলাষী,বিলাস বহুল জীবন-যাপন করতে পছন্দ করে। স্বামীর আর্থিক অবস্থা বিবেচনা না করেবাহারী স্বাজ-পোশাক,শাড়ী-চুড়ি,গহোনা দাবি করে থাকে। স্বামী চাহিদা পূরণ করতে না পারলে, স্ত্রীরা অন্য  নারী ও পুরুষের সাথে তুলনা করে পরিবারের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করে থাকে। সবার আর্থিক অবস্থা,পরিবেশ,পরিস্থিতিএকই রকম থাকে না। তাই অন্যের পরিবারের ঘর সাজানো দামি আসবাপত্র বা সুখ দেখে নিজের স্বামীকে পিড়াপিড়ি করা উচিৎ নয়।বরং নিজে কম চাহিদা সম্পূর্ণ হওয়া উত্তম,তাহলে পরিবারে সবসময় সুখ-শান্তি বজায় থাকবে।স্বামীকে সন্দেহ করা,অতিরিক্ত নজরদারিতে রাখা,স্বামীর মন-মেজাজ না বুঝে  পরিবারের বিভিন্ন দোষ-ত্রুটি,নানান সমস্যার কথা বলে  মাথা ভারি করে দেওয়ার ফলে  পরিবারের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ তৈরী হয়। অনেক স্বামীরা খুব সরলএবং অল্প বুদ্ধি সম্পন্য হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে নারীরা পরিবারের মূখ্য ভ‚মিকা পালন করে। বেশ ভাল।তাই বলে কোন ভাবেইনিজ স্বামীকে অবমূল্যায়ণ,অশ্রদ্ধা,অসন্মান করা যাবে না।কেননা  প্রেরিত পৌল  ইফিষীয় পত্রে  বলেছেন, “নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর  বশীভ‚ত হও।কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক যেমন খ্রীষ্ট মন্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রানকর্তা;” প্রেরিত পৌল আরও বলেন, “. . . মন্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভ‚ত,তেমনি নারীগণ, সর্ববিষয়ে  আপন আপন স্বামীর বশীভ‚ত হউক”-ইফিষীয়৫:২২-২৩,২৪। পবিত্র বাক্য অনুযায়ীপ্রত্যেক নারীর উচিৎস্বামীর আজ্ঞাবহ হয়ে বাধ্যতায় জীবন-যাপন করা।

    অনেক স্ত্রী ফর্সা,সুশ্রী-সুন্দরী হবার কারণে আত্ম-অহংকারী হয়ে ওঠে। নিজ স্বামীকে রেখে অনেক পুরুষে আসক্ত হয়। যে কারণে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায় ঝগড়া-অশান্তি,মন-মালিন্য হয়ে থাকে। পবিত্র বাইবেল বলে, “লাবণ্য মিথ্যা,সৌন্দর্য অসার, কিন্তু যে স্ত্রী সদাপ্রভুকে ভয় করেন,তিনিই প্রশংসনীয়া-হিতোপদেশ ৩১:৩০।”বলা বাহুল্য যে, যে নারী ঈশ্বর সদাপ্রভুকে ভয় করে, সে তার নিজস্বামীকেও ভক্তিপূর্ণ ভয়,শ্রদ্ধা,সন্মান সবই করে।পরনিন্দা,পরচর্চা,ঝগড়াটে স্বাভাব থাকলে তা পরিত্যাগ করতে হবে। সমাজের অধিকাংশ নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা একটু সুযোগ পেলেই নিজ পরিবারের ভুল-ত্রুটি,খুটি-নাটি বিষয় নিয়ে প্রতিবেশী অন্য নারী ও আত্মীয়-পরিজনদের মাঝে পরিচয় করে থাকে। আপন স্বামীর নানা দোষের কথাও অন্যের কাছে তুলে ধরতে কম করে না। এর ফলে নিজ স্বামীর প্রতি অন্যদের খারাপ মনোভাব তৈরী হয়। এবং অবচেতন মনে নিজের স্বামীকে অসন্মান করা হয়। স্বামীর নানা ধরণের দূর্বল দিক থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে একজন স্ত্রীর কর্তব্য নিজেদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক বিষয় অন্যদের কাছে প্রকাশ না করে নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা।এবং নিজের ভালোবাসা দিয়েস্বামীকে জয় করা। সুখ-দূঃখ সব পরিস্থিতে স্বামীর পাশে থেকে প্রার্থনা,বুদ্ধি,পরামর্শ দিয়ে সাহস,অনুপ্রেরণা যোগানো,স্বামীকে ভালোবাসা এবং সন্মান করা একজন আদর্শ গুণবতী স্ত্রীর পরিচয়।

     

    পরিশেষেবলতে হয়, বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রী চলারপথে ভালো সময় খারাপ সময় আসবে। ভুল বোঝা-বুঝি,অর্থ-সংকট,মতের অমিল,অশান্তি,মন-মালিন্য সৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্তু তা দ্রুত নিজেদের মধ্যে সমাধান করে ফেলতে হবে। বাস্তবিক সত্য হলো, স্বামী-স্ত্রী সবকিছুতেযে একে-অন্যের মনের মতো হবে তা নয়।অনেক ভালো বিষয় থাকবে,খারাপ বিষয় থাকবে;সবকিছু মানিয়ে নিয়ে সমন্বয় করে চলতে হবে।উভয়ের প্রতি আত্ম-বিশ্বাস,নির্ভরতা,ভালোবাসা থাকতে হবে।সবকিছুর উর্ধে¦ স্বামী-স্ত্রী পরশপরের প্রতি যোগ্য সন্মান দেখানো, শ্রদ্ধাশীল হওয়া গুরুপ্তপূর্ণ।তবেই স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক আরও মধুর,সুখ ও শান্তিময় হবে যীশু নামে. . .আমেন।


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS