ক্রুশের উপরে যীশুর শেষ সাতটি বাণী

ads20
     ক্রুশের উপরে যীশুর শেষ সাতটি বাণী  - Seven words of Jesus Christ on the Cross


     ১ম বাণী

    “ পিত, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা কি করছে তা জানে না। ”- লূক ২৩;৩৪ পদ।

    ব্যাখ্যা:- ক্ষমা ছোট একটি শব্দ কিন্তু এর বিশালতা অনেক। আমরা প্রার্থনার সময় বলে থাকি, হে ঈশ্বর, তুমি ক্রোধে ধীর কিন্তু দয়াতে মহান ঈশ্বর; তুমি নিত্য অনুযোগ কর না, চিরকাল ক্রোধ রাখ না। পশ্চিম দিক হইতে পূর্ব দিক যেমন দূরবর্তী; তুমি আমাদের হইতে আমাদের অপরাধ সকল তেমনি দূরবর্তী করিয়াছ। কারণ তুমি ক্ষমার ঈশ্বর; তুমি যদি ক্ষমা না করতে আমরা এক মুহুর্তও বেঁচে থাকতে পারতাম না। তাই তোমার ধন্যবাদ করি, তোমার প্রশংসা করি যে সত্যিই তুমি আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা করেছ। একবার যীশু ক্ষমা করবার বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন, বলছিলেন, তোমার ভাই যদি তোমার বিরুদ্ধে অন্যায় করে, তবে তাকে ক্ষমা করে দিও। যীশুর এই কথার পর পিতর বললেন, প্রভু, কত বার ক্ষমা করব ? সত্তুর গুন সাতবার পর্যন্ত ? তখন যীশু বললেন, সাতবার পর্যন্ত নয়, কিন্তু সত্তর গুণ সাতবার পর্যন্ত- মথি ১৮২১-৩৫। এই কথা লইয়া যীশু একটি গল্প বললেন, যে গল্পের শেষে তিনি বলেছিলেন; “ আমার স্বর্গীয় পিতাও তোমাদের প্রতি এইরুপ করিবেন, যদি তোমরা প্রতিজন অন্তঃকরণের সহিত আপন আপন ভ্রাতাকে ক্ষমা না কর- ৩৫ পদ।” সেই যীশু যখন গেৎশিমানী বনে প্রার্থনা করছিলেন; তখন শত্রুরা তাঁকে ধরতে আসল। তিনি চাইলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতেন; কিন্তু তিনি নিলেন না। কারণ তিনিই তো শিক্ষা দিয়েছেন; শত্রুদের ক্ষমা করতে। এমন কি যখন বিনা কারণে বিনা দোষে আমার প্রভুকে ক্রুশে দিচ্ছে, তখনও তিনি পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য ক্ষমার বাণী উচ্চারণ করেছেন। কারণ তিনিই যে সেই ঈশ্বর ছিলেন; যিনি ক্রোধে ধীর কিন্তু দয়াতে মহান। আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট ক্রুশ থেকে ক্ষমার বাণী উৎচারণ করেছেন কারণ তাঁর জম্মের সময় স্বর্গদূত বলেছিল, ‘ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ থেকে ত্রাণ করিবেন ’ - মথি ১;২১ পদ। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট কখনও প্রতিশোধ নেওয়ার কথা চিন্তা করেন নি, কারণ প্রতিশোধের মধ্যে কোন মহত্ব নাই, আছে শুধু ঘৃণা। কিন্তু ক্ষমার মধ্যে আছে প্রেম, ভালবাসা, মহত্ব এবং বিরত্ব। ক্ষমাই শান্তি, ক্ষমাই আনন্দ, আর এই জন্যই যীশু ক্রুশ থেকে ক্ষমার বাণী উৎচারণ করেছেন। “ পিত, এদের ক্ষমা কর, কারণ এরা কি করছে তা জানে না। ” আমরা একটু স্মরণ করি প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের যে আদর্শ প্রার্থনা করার কথা বলেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, “ আর আমাদের অপরাধ সকল ক্ষমা কর; যেমন আমরাও আপন আপন অপরাধীদিগকে ক্ষমা করিয়াছি ”- মথি ৬;১২ পদ। তাহলে দেখা যায় যে, যখন আমরা আপন আপন অপরাধীদের ক্ষমা করতে পারি, ঠিক তখনই পিতার কাছেও ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। নতুবা এই প্রার্থনা যতবার করব, ঠিক ততবারই আমরা পুনরায় নিজেরাই অপরাধী থেকে যাই এবং আমাদের প্রার্থনার কোন গুরুত্বই থাকে না। এমনকি প্রভুর নিকট থেকে ক্ষমা পাব বলে যে আশা নিয়ে প্রার্থনা করি; সেই প্রার্থনা প্রভু গ্রাহ্য করবেন না। কারণ তিনি স্পষ্ট বলেছেন, “ অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভাইয়ের কোন কথা আছে; তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিমিলিত হও; পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও ” - মথি ৫;২৩,২৪ পদ। তিনি এখনও আমাদের সকলের জন্য ক্ষমার ভান্ডার নিয়ে অপেক্ষা করে আছেন। আমাদের জীবনে যে কোন অন্যায় থাকুক না কেন ; আমরা যদি পাপ স্বীকার করি তবে তিনি আমাদের পাপ ক্ষমা করতে প্রস্তুত। ১ যোহন ১;৯ = যদি আমরা আপন আপন পাপ স্বীকার করি, তিনি বিশ্বস্ত ও ধার্মিক, সুতরাং আমাদের পাপ সকল মোচন করিবেন এবং আমাদিগকে সমস্ত অধার্মিকতা হইতে শুচি করিবেন। আমেন


     ২য় বাণী 

    “ তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে ”- লূক ২৩;৪৩ পদ।

    যে দিন যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, সেদিন কালভেরী পাহাড়ে তিনটি ক্রুশ ছিল। মাধ্যের ক্রুশটিতে ছিলেন যীশু এবং তাঁর দু’পাশে ছিল দুই ডাকাত। সে সময় ডাকাত, খুনী, বিদ্রোহ ধরণের জঘন্য লোকদের ক্রুশে দিয়ে হত্যা করবার নিয়ম ছিল। কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের কেন এরকম শাস্তিু ব্যবস্থা করা হয়েছিল ? কেন তিনি ক্রুশের উপর ঝুলে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ? কি ছিল তাঁর অপরাধ ? তার একমাত্র উত্তর হল:- “ পাপী মানুষের জঘন্য শাস্তি চিরতরে বিনষ্ট করবার জন্য যীশু খ্রীষ্ট স্বেচ্ছায় সাদরে মৃত্যুকে গ্রহণ করেছিলেন। ” যীশুর সঙ্গে ক্রুশে ঝুলন্ত অপর ডাকাতটির বিষয়ে একটু চিন্তা করা যাক। সে যীশুকে তিরস্কার করে বলেছিল, “ তুমি নাকি মশীহ ? তাহলে নিজেকে এবং আমাদের রক্ষা কর। তখন অন্যান্য লোকেরাও এই ডাকাতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যীশুকে আরও তিরস্কার করল। কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে অপর ডাকাতের মনে বিরুপ মনোভাবের উদয় হল। সে মনে মনে অনুভব করল যে, সে দোষী। অতীত জীবনের সমস্ত পাপ তাকে ভিষণ ভাবে নাড়া দিল। প্রকৃত পক্ষে তার মনের পরিবর্তন ঘটল। তাই সে প্রথমে নিজের পাপ স্বীকার করে অপর ডাকাতকে তিরস্কার করে বলল, “ আমরা তো উচিৎ শাস্তি পাচ্ছি, আমাদের যা পাওনা, তা-ই পাচ্ছি। কিন্তু ইনি (যীশু) কোন অপকার্য করেন নি। সে মনে প্রাণে বুঝতে পেরেছিল যে, তার মৃত্যু অবধারিত; তাই সে তৎক্ষণাৎ যীশুকে বলল; “ যীশু আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করবেন। ” আমাদের দেশের আইন মতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী ‘ রাষ্ট্রপতির ’ কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারে। আমরা ঠিক জানি তখনকার সময়ে যিহুদীদের এমন রীতিনীতি/আইন ছিল কিনা। কিন্তু একটি বিষয় জানি, এই ডাকাত লোকটি যীশুর সম্পর্কে খুব ভালভাবেই জানতো। সে জানতো, যীশু ছাড়া আর কোন মুক্তি নাই। উদাহরণ ১ # যখন যীশু সেই পক্ষাঘাতী লোকটিকে বলেছিলেন; যাও, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইল। যীশুর এই কথায় অনেক অধ্যাপকেরা মনে মনে তর্ক করে বলেছিল, ঈশ্বর ব্যতিরেকে আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না। তখন তিনি তাদের মনের বিতর্কতা জেনে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, “ পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্য-পুত্রের ক্ষমতা আছে ”- মার্ক ২;১০ পদ। সুতরাং মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামী সেই ডাকাত মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহুর্তে তার সঠিক সিদ্ধান্তটি বেছে নিল। যিনি পাপ ক্ষমা করিতে এবং জীবন দিতে পারেন, তাঁর কাছেই জীবন ভিক্ষা চাইল। আর অমনি সেই দন্ডেই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সেই ডাকাতের প্রার্থনা গ্রাহ্য করলেন। এবং বললেন, “ তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে। ” ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির সম্মুখে মোশির দ্বারা বলেছিলেন, “ আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার ”- দ্বিতীয় বিবরণ ৩০;১৯ পদ।

    খ্রীষ্টেতে আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজ আমাদের সময় এসেছে, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের। আমাদের সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু দুটো পথই খোলা আছে; তাই আসুন, জীবন মনোনীত করি এবং খ্রীষ্টের দেওয়া অনন্ত জীবনে চলবার জন্য খ্রীষ্টের কাছে নিজেদের সমর্পণ করি। আমেন!


    ৩য় বাণী 

    “ যীশু মাতাকে দেখিয়া, এবং যাঁহাকে প্রেম করিতেন, সেই শিষ্য নিকটে দাঁড়াইয়া আছেন দেখিয়া, মাতাকে কহিলেন, হে নারী, ঐ দেখ, তোমার পুত্র ”- যোহন ৯;২৬ পদ। যীশু যখন এই পৃথিবীতে ছিলেন তখন সব সময় তাঁর সঙ্গে অনেক লোক থাকত। যখন তাঁকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, তখনও তিনি একা ছিলেন না। যীশুকে ক্রুশে দেবার সময় প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছিল। তাদের মধ্যে ছিল সৈন্যেরা, যীশুর শিষ্যেরা, মহিলারা এবং আরও অনেকে। যারা সেদিন সেখানে এসেছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন যীশুর প্রিয় শিষ্য যোহন। যোহনকে যীশু তাঁর অন্য শিষ্যদের চেয়ে বেশী ভালবাসতেন। মৃত্যুর আগে যীশু যখন তাঁর শিষ্যদের সাথে শেষ ভোজ গ্রহণ করছিলেন, সেই ভোজেও তাঁর প্রিয় শিষ্য যোহন তাঁর কোলে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। যীশুকে ক্রুশে দেবার সময় গালীল থেকে কয়েকজন মহিলাও এসেছিলেন; তাদের মধ্যে ছিলেন যীশুর মা মরিয়ম। মনে করিও না যে, আমি ব্যবস্থা কি ভাববাদী গ্রন্থ লোপ করতে আসিয়াছি; আমি তাহা লোপ করতে আসি নাই, কিন্তু পূর্ণ করিতে আসিয়াছি- মথি ৫;১৭ পদ। কিন্তু কাল সম্পূর্ণ হইলে ঈশ্বর আপনার নিকট হইতে আপন পুত্রকে প্রেরণ করিলেন; তিনি স্ত্রীজাত, ব্যবস্থার অধীনে জাত হইলেন- গালাতীয় ৪;৪ পদ। “ আইনের ” উর্দ্ধে কেউ নাই, কথাটি আমাদের সকলের মনে রাখা দরকার। আমরা জানি, ঈশ্বর ইস্রা জাতিকে ব্যবস্থা দিয়েছিলেন যেন তারা ব্যবস্থা পালনের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের বাধ্যগত জীবন যাপন করে। সেই ঈশ্বর, যখন পুত্র ঈশ্বর হিসেবে জগতে আসলেন এবং আমাদের পাপের জন্য জীবন দিলেন। ঠিক সেই সময়, যখন খ্রীষ্ট আমাদের পাপের নিমিত্ত ক্রুশে বিদ্ধ; তখনও তিনি ভুলে যান নি মায়ের প্রতি তাঁর দায়িত্বের কথা। খ্রীষ্ট যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম যাতনা ভোগ করছিলেন; ঠিক তখন এক করুণ দৃষ্টি দিয়ে তিনি তাঁর মাকে দেখছিলেন। প্রভু যীশু খ্রীষ্টের এই করুণ দৃষ্টির মধ্যে ছিল ‘ পিতা-মাতার ’ প্রতি সন্তানের অকৃত্রিম ভালবাসা ও সম্মানের চিহ্ন। দৃষ্টি দেওয়া মাত্রই যীশু বুঝে নিয়েছিলেন মায়ের (মরিয়মের) অন্তরের নীরব ভাষা এবং সন্তান হারা মায়ের অভাব। কি করতে পারেন তিনি ? যখন তিনি সমস্ত জগতের পাপভার বহন করছেন ? যীশু মরিয়মের অব্যক্ত হৃদয়ের ভাষা বুঝে নিকটে দাঁড়িয়ে থাকা প্রিয় শিষ্যকে উদ্দেশ্য করে বললেন; “ ঐ দেখ তোমার মাতা ” এবং মাকে বললেন, “ ঐ দেখ তোমার পুত্র।” এই বাণীর মধ্য দিয়ে যীশু ব্যবস্থা পূর্ণরুপে সাধন করলেন যেন আমরাও আমাদের পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন করি, আমেন।


    চতুর্থ বাণী 

    “ এলী, এলী, লামা শবক্তানী, ” অর্থাৎ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, কেন তুমি আমাকে পরিত্যাগ করেছ। ”- মথি ২৭;৪৬ পদ। আমরা পবিত্র বাইবেলে খুব কম জায়গায়তেই যীশুর নিজ এলাকার ভাষায় কথা বলতে দেখি। আমরা জানি নূতন নিয়ম প্রথমে গ্রীক ভাষায় লেখা হয়। যীশু নিজে অরামিক ভাষা ব্যবহার করতেন। “ এলী, এলী, লামা শবক্তানী ” কথাটি অরামিক ভাষায় লেখা হয়েছে। যীশু যখন ক্রুশের উপর থেকে বলেছিলেন “ এলী, এলী, লামা শবক্তানী ”, তখন তাঁর কথার অর্থ কেউ বুঝতে পারে নি। যারা ক্রুশের কাছে দাঁড়িয়েছিল, তারা ভেবেছিল যে, যীশু এলিয়কে ডাকছেন। তাতে যারা কাছে দাঁড়িয়েছিল, তাদের কয়েকজন এই কথা শুনে বলল, ও এলিয়কে ডাকছে- মার্ক ১৫;৩৫ পদ। মৃত্যু যাতনা যে কত অসহ্য, তা মৃত্যু কোলে ঢলে পড়া মুমূর্ষ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না। সেই যাতনা সহ্য করতে না পেরে মানুষ চিৎকার করে। যদিও যীশু একাধারে শতভাগ ঈশ্বর; আবার শতভাগ মানুষও ছিলেন। শতভাগ মানুষ হিসাবে যীশু খ্রীষ্ট সেই যাতনা ভোগ করার সময় অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করে বলেছিলেন; “ এলী, এলী, লামা শবক্তানী। ” প্রভু যীশু খ্রীষ্টের মুখ নিঃসৃত বাণী থেকেই বুঝা যায় উক্ত বাণীটি বলার সময় তাঁর পুরোপুরি জ্ঞান ছিল। তিনি দায়ুদের রচিত একটি গীতের প্রথম দুটি লাইন মুখস্ত বলেছিলেন. “ ঈশ্বর আমার, ঈশ্বর আমার, তুমি কেন আমাকে পরিত্যাগ করেছে ? ”- গীত ২২;১ পদ। সপ্তবাণীর মধ্যে চতুর্থ বাণীটি একটু খাপছাড়া খাপছাড়া লাগে। মনে প্রশ্ন জাগে, ঈশ্বর কি সত্যিই যীশু খ্রীষ্টকে ছেড়ে/পরিত্যাগ করেছিলেন ? মনে হয় যীশু কিছু সময়ের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন। যিনি নিজে বিশ্ব ব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন, তিনি নিজেই আজ ক্রুশে ঝুলছেন। তাই যে সূর্য তিনি সৃষ্টি করেছেন, সেই সূর্য স্্রষ্টার এমন দুরবস্থা দেখে আত্মগোপন করেছিল। যীশুকে ক্রুশে দেবার আগে প্রায় সব শিষ্যই তাঁকে ছেড়ে পালিয়েছিল। কিন্তু এখন ? স্বয়ং পিতাই যে পুত্রকে ত্যাগ করলেন। তিনি ্একেবারে একা নিঃসহায় হয়ে পড়েছেন; তাই চিৎকার করে পিতাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘ ও পিতা, তুমি কেন আমায় পরিত্যাগ করেছ ? “ এলী, এলী, লামা শবক্তানী ” অন্ধকারের মধ্যে তিনি যেন একাকী অবলম্বন খুঁজে ফিরছেন। আর্তস্বর করে ডেকে বলছেন, “ ওহে তোমরা কোথায় ? তোমাদের জন্যই যে আজ আমার এই অবস্থা। কাজেই তোমরা মন ফিরাও। কারণ আমার হাত-পা দেখ, এসবই তোমাদের জন্য হয়েছে। আর দেরী নয়, আজই চলে এসো। ” মথি ১১;২৮ = হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব। যিনি পাপ জানেন নাই, তাঁকে পাপ স্বরুপ হতে হয়েছে। ঈশ্বর ন্যায়বান, তাঁর ইচ্ছা পালন করতেই হবে। পাপী মানুষকে অনন্ত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে গিয়ে প্রভু যীশু নিজে মৃত্যুবরণ করলেন। মানুষকে অনন্ত জীবন দিতে গিয়ে তাঁকে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে হয়েছে। খ্রীষ্ট নিজের জীবন দিয়ে পাপের অন্ধকারে নিমজ্জিত লোকদের জন্য মহা আলোর ব্যবস্থা করলেন। ঈশ্বর পবিত্র, পাপী মানুষের সাথে পবিত্র ঈশ্বরের সন্বন্ধ স্থাপনের জন্যই খ্রীষ্টকে অন্ধকারের গহŸরে নামতে হয়েছিল। ঈশ্বর অন্ধকার থেকে দূরে থাকতে চাইলেন, তাই পুত্রের সাথে ক্ষণকালের জন্য সন্বন্ধ শিথিল হয়ে পড়েছিল। মৃত্যুর কিছু দিন আগেও তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন; “ তোমরা দল ছাড়া হয়ে আমাকে একলা ফেলে যে যার জায়গায় চলে যাবে। তবুও আমি একা নই, কারণ পিতা আমার সঙ্গে সঙ্গে আছেন ” - যোহন ১৬;৩২ পদ। তাই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আজ চিৎকার করে বললেন, “ এলী, এলী, লামা শবক্তানী। ” যদি আপনি মনে করেন ঈশ্বর আপনাকে ত্যাগ করেছেন তবে খ্রীষ্টের দিকে তাকান। খ্রীষ্টের ক্রুশের দিকে লক্ষ্য করুন।খ্রীষ্ট আপনার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে পরিত্যক্ত হয়েছিলেন। কাজেই হতাশ হবেন না, খ্রীষ্টের কাছে আসুন; তিনি আপনাকে সান্তনা দিবেন। কারণ তিনিই বলেছেন, “ আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব নাইব্রীয় ১৩;৫ পদ।


     পঞ্চম বাণী 

    “ আমার পিপাসা পেয়েছে ” - যোহন ১৯;২৮ পদ। যীশু খ্রীষ্টের সাতটি ক্রুশীয় বাণীর মধ্যে পঞ্চম বাণীটিই সব চেয়ে হৃদয় বিদারক মনে হয়। ঘটনাটি একটু অবিশ্বাস্য নয় কি ? যিনি আকাশ-মন্ডল, পৃথিবী, দৃশ্য-অদৃশ্য সব কিছু সৃষ্টি করলেন; আজ তিনিই নিজে কিনা বলছেন, “ আমার পিপাসা পেয়েছে। ” এক গ্রীস্মকালের দুপুরে ভীষণ গরমের মধ্য দিয়ে যীশু হেঁটে হেঁটে গালীলের দিকে যাচ্ছিলেন। গালীলে যাবার সময় তাঁকে শমরিয়া দেশের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। শমরিয়া দেশে পিতৃপুরুষ যাকোবের একটা কুয়া ছিল। যীশু ক্লান্ত ও পিপাসিত হওয়ায় সেই কুয়ার পাশে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এমন সময় একজন স্ত্রীলোক কুয়া থেকে জল নেবার জন্য আসল। যীশু সেই স্ত্রীলোকের কাছে খাবারের জন্য একটু জল চাইলেন। সেই সময় শমরিয়দের সাথে যিহুদীদের মেলামেশা ছিল না। সেই জন্য শমরিয় নারীটি যীশুকে জল দিতে অস্বীকার করল। তখন যীশু নারীকে বললেন, “ যে কেউ এই জল খায়, তার আবার পিপাসা পাবে, কিন্তু আমি যে জল দেব, যে তা খাবে, তার আর কখনও পিপাসা পাবে না ” - যোহন ৪;১৩,১৪ পদ। যীশুর এই কথা শুনে স্ত্রীলোকটি বড়ই আশ্চর্যান্বিত হয়েছিল। যিনি এমন জল দিতে পারেন, যে তা পান করবে; তার আর কোন দিন পিপাসা পাবে না। আর এখন কিনা তিনি নিজেই ক্রুশ থেকে বলছেন, “ আমার পিপাসা পেয়েছে। ” “ আমার পিপাসা পেয়েছে ” যীশু খ্রীষ্টের এই উক্তি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনিও সুখ-দুঃখ ভোগী মানুষ ছিলেন। অনেক কারণে মানুষের পিপাসা পায়। যদি শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয় এমনকি রক্ত বের হয়; তখন মানুষের অনেক পিপাসা পায়। ইতিহাস থেকে বুঝা যায় যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে কিভাবে প্রহার এবং নির্যাতন করা হয়েছিল। তাঁর শরীর থেকে অঝর ঝরে রক্ত বের হয়ে গিয়েছিল। কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে আমরা প্রায় সকলেই কমবেশী চাষাবাদ দেখেছি। লাঙ্গল দিয়ে ভুমি চাষ করবার সময় মাটি দু’দিকে সড়ে গিয়ে একটা রাস্তার মত সৃষ্টি হয়। ভ‚মি চাষের মত করে প্রভু যীশুর পিঠ চাষ করা হয়েছে। পবিত্র বাইবেল বলে, “ চাষীদের মত করে তারা আমার পিঠ চষে ফেলেছে, তারা লম্বা করে খাঁজ কেটেছে ” - গীত ১২৯;৩ পদ। প্রতিটি মানুষের জন্য যীশুর এই তৃষ্ণা। যীশুর পিপাসা কেবল মানূষই নিবারণ করতে পারে। কোন মানুষ নিজের পাপ সন্বন্ধে চেতনা পেয়ে অনুতাপ করে যেদিন যীশুর ক্রুশের দিকে দৃষ্টি দেবে; সেদিনই সে তার জীবন দিয়ে প্রভু যীশুর পিপাসা দূর করতে পারবে। পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের জন্য আজও খ্রীষ্টের পিপাসা আছে। প্রভু যীশু মানুষের হৃদয়-দ্বারে দাঁড়িয়ে আজও অনুরোধ করে বলছেন, “ তোমার হৃদয় আমার জন্য খুলে দেও ” কারণ তোমার জন্য আমার পিপাসা।পাপী মানুষেদের লাভ করবার জন্য যীশুর আত্মা পিপাসিত হয়েছিল। যতদিন পর্যন্ত সমস্ত মানুষ মন পরিবর্তন পর্যন্ত না পৌছে ততদিন পর্যন্ত খ্রীষ্টের এই পিপাসা থাকবে।কোন পানীয় খ্রীষ্টের পিপাসা দূর করতে পারবে না। প্রত্যেক খ্রীষ্ট ভক্তকে খ্রীষ্টের এই পিপাসার কথা মনে রাখতে হবে। এই পিপাসা নিবারণের দায়িত্ব বিশ্বাসীদের। খ্রীষ্টের পথ থেকে যারা দূরে আছে, তাদের কাছে খ্রীষ্টের প্রেমের বারতা ছড়িয়ে দেওয়া প্রত্যেক খ্রীষ্ট ভক্তের নৈতিক দায়িত্ব। পাপের মূল্য দিতে গিয়ে যীশুর দেহের রক্ত শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁর পিপাসা লেগেছিল। তিনি বলেছিলেন, “ আমার পিপাসা পেয়েছে। ” কে তাঁর এই পিপাসা দূর করবে ? সে কি আমি নাকি আমরা ? কে এগিয়ে আসবে তাঁর আত্মার এ পরিতৃপ্তির জন্য ?


    ষষ্ঠ বাণী

    সিরকা গ্রহণ করিবার পর যীশু কহিলেন, “ সমাপ্ত হইল ” ; পরে মস্তক নত করিয়া আত্মা সমর্পণ করিলেন- যোহন ১৯;৩০ পদ। ঈশ্বর তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি সব সময় মানুষের সাথে সহভাগিতা উপভোগ করতেন। মানুষের সাথে ঈশ্বরের এই নিবিড় সন্বন্ধ শয়তানের অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। মানুষের সাথে প্রেমময় পিতা ঈশ্বরের বন্ধুত্ব নষ্ট করতেই হবে এ ছিল শয়তানের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। তাই শয়তান মানুষের দুর্বল মুহূর্তে চরম আঘাত হানল। শয়তানের ছলনাময়ী বাক্যে মানুষ নিজেকে হারিয়ে ফেলল, ভুলে গেল স্্রষ্টাকে। সে পরাজিত হয়ে মৃত্যুকে ডেকে আনল। আর সেই কারণে পবিত্র শাস্ত্র আমাদের বলে, “ একটি মানুষের মধ্য দিয়ে পাপ জগতে আসল ও সেই পাপের মধ্য দিয়ে মৃত্যুও উপস্থিত হল ” - রোমীয় ৫;১২ পদ। যে ঈশ্বর নিজ প্রতিমূর্তিতে মানুষকে সৃষ্টি করলেন, সেই মানুষের জন্য তিনি মর্মাহত হলেন। পাপের হাত থেকে মানুষকে রক্ষার নিমিত্ত পিতা ঈশ্বর পুত্র-ঈশ্বরকে জগতে পাঠালেন। পুত্র-ঈশ্বরের পৃথিবীতে আগমনের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ‘ পাপী মানুষদের পাপ থেকে উদ্ধার করা ’ -মথি ১;২১ পদ। তাই ঈশ্বর তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করলেন। পাপের বলিরুপে খ্রীষ্ট নিজেকে ক্রুশের উপর উৎসর্গ করলেন। পাপের মুক্তির মূল্যরুপে খ্রীষ্ট নিজেকে দান করলেন। মানুষের সমস্ত পাপের ঋণ পরিশোধ হবার সাথে সাথে যীশু চিৎকার করে বললেন, “ সমাপ্ত হইল। ” প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যে কাজ করবার জন্য এই পৃথিবীতে আসলেন, তা শেষ হয়েছে। ঈশ্বর যীশু খ্রীষ্টের কাজে সন্তোষ্ট হয়েছেন। শয়তানের মস্তক পিষে দেওয়া হয়েছে। পাপের ফলে যে মৃত্যু জগতে এসেছিল, প্রভু যীশু সেই মৃত্যু জয়ে রুপান্তরিত করলেন। মৃত্যুর হুল খ্রীষ্ট চুর্ণ করলেন। শাস্ত্র বলে “ মৃত্যু তোমার জয় কোথায় ? মৃত্যু তোমার হুল কোথায় ? ১ করি ১৫;৫৫ পদ। ”পাপ দ্বারা শয়তান ঈশ্বরের সাথে মানুষের যে বিচ্ছেদ জম্মাইয়াছিল; খ্রীষ্ট তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করে পাপী মানুষকে আবার ঈশ্বরের সাথে মিলন করিয়ে দিলেন।

    খ্রীষ্টের সমাপ্ত কাজ পাপী মানুষের মনে এক প্রত্যাশার আলো সঞ্চার করেছে। কারণ খ্রীষ্ট তাঁর কাজ শেষ করে আমাদের জন্যই ঈশ্বরের সম্মুখে উপস্থিত হয়েছেন। আর এই কারণ পবিত্র বাইবেল এই কথা বলে, “ যেন তিনি আমাদের হয়ে ঈশ্বরের সামনে এখন উপস্থিত হতে পারেন ” -ইব্্রীয় ৯;২৪ পদ। যীশু খ্রীষ্টের মৃত্যু দ্বারা আমরা ঈশ্বরের সাথে পুনরায় মিলিত হতে পেরেছি। যীশু খ্রীষ্ট পাপের উপর জয়লাভ করেছেন। সেই জন্য পাপ মানুষকে ঈশ্বরের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। ঈশ্বরের সাথে পাপী মানুষের মিলিত হবার যে প্রতিবন্ধকতা ছিল, খ্রীষ্ট তা দূরীভুত করেছেন। তিনি রুদ্ধ ঘরের দরজা খুলে দিয়েছেন। খ্রীষ্টের কাজ শেষ হয়েছে, কিন্তু আমাদের কাজ বাকী আছে। আমরা কি ঈশ্বরকে সন্তোষ্ট করতে পারছি ? আমরা কি খ্রীষ্টের মত বলতে পারি ঈশ্বর আমাকে যে জন্য জগতে পাঠিয়েছেন, তা আমি শেষ করেছি ও ঈশ্বরকে সন্তোষ্ট করতে পেরেছি ? যীশু বলেছেন, ‘ সমাপ্ত হইল ’। কিন্তু কি শেষ হয়েছে ? পবিত্র বাইবেল বলে, “ সব কিছু শেষ হয়েছে ” - যোহন ১৯;২৮ পদ। যীশু যে কেবল ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছেন বা দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন বলেই যে “ শেষ হয়েছে ” বলেছেন, তা নয়। তিনি আমাদের জন্য ও সমস্ত মানুষের প্রয়োজন পরিপূর্ণ করেছেন; সেই জন্যই বলেছেন, “ সমাপ্ত হইল ”।



    সপ্তম বাণী 


    “ যীশু চিৎকার করে বললেন, “পিতা, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” লূক ২৩;৪৬ পদ। অবশেষে খ্রীষ্ট জগতের দুঃখ-কষ্ট চিরতরে ত্যাগ করে চিৎকার করে বললেন, “পিতা, তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” পাপী মানুষের জন্য তিনি একবার ও শেষবারের মত নিজের জীবন দিলেন। বিনতি সহকারে তিনি পিতার কাছে নিজের প্রাণ সমর্পণ করলেন। খ্রীষ্ট যে জন্য এই জগতে এসেছিলেন, তা শেষ হয়েছে। কাজেই এই পৃথিবীতে তাঁর আর থাকার প্রয়োজন নেই। দৈহিক ভাবে তিনি শেষবারের মত ঈশ্বরকে পিতা বলে সন্বোধন করেছেন। প্রথম ক্রুশীয় বাণীতেও যে যীশু ঈশ্বরকে ‘পিতা’ বলে ডেকেছেন তা নয়; কিন্তু তিনি আমাদেরকেও পিতা বলে ডাকবার অধিকার দিয়েছেন। পবিত্র বাইবেল বলে, “ তবে যতজন তাঁর উপর বিশ্বাস করে তাঁকে গ্রহণ করল, তাদের প্রত্যেককে তিনি ঈশ্বরের সন্তান হবার অধিকার দিলেন ”- যোহন ১;১২ পদ। আমরা যখন ঈশ্বরের সন্তান তখন তিনি কি আমাদের পিতা নন ? ঈশ্বর তাঁর সন্তান হবার জন্য আমাদের সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু পাপ মানুষকে ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর ক্রুশীয় মৃত্যুর মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে মানুষের মিলন করিয়ে দিলেন। ঈশ্বরের পথ থেকে দূরে থাকলে মানুষের মনে কোন শান্তি থাকতে পারে না। একথা আমাদের মনে রাখা দরকার যে, ধন-দৌলত, জ্ঞান-বুদ্ধি মানুষের অন্তরাত্মাকে আনন্দ দিতে পারে না। ঈশ্বরের অনন্ত নিরাপত্তার মধ্যে জীবন সমর্পণ না করা পর্যন্ত মানুষের হতাশা দূরভ‚ত হয় না। যাদের জীবনে খ্রীষ্ট আছেন এবং যারা খ্রীষ্টে থাকে, তাদের কিছুই তারা নিজের বলে দাবি করতে পারে না। তাদের সব কিছুই ঈশ্বরের এবং ঈশ্বরের সব কিছুই তাদের। বিশ্বাসীদের জীবন যখন তার নিজের নয় তখন তা ধরে রাখতে চেষ্টা করাও বৃথা। যীশু খ্রীষ্ট তেত্রিশ বছর বেঁচে থাকার জন্য এ পৃথিবীতে আসেন নি। তিনি নিজের জীবন দিয়ে মানুষকে পাপ থেকে মুক্ত করবার জন্যই এসেছিলেন। মানুষের জন্য মুক্তির কাজ শেষ হবার পরেই তিনি তাঁর জীবন পিতার কাছে সমর্পণ করলেন। বিশ্বাসীদের জীবন যখন ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারে এ পৃথিবীতে জীবন কাটাতে হয়, তখন আবার ঈশ্বরের ইচ্ছানুসারেই তাদের জীবন ঈশ্বরের কাছে সমর্পণ করতে হয়। বিশ্বাসীদের পক্ষে নিজের জীবন খ্রীষ্টের হাতে তুলে দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকা প্রয়োজন। মৃত্যুকালে ঈশ্বরের কাছে আত্মা-সমর্পণ দ্বারা মনে শান্তি পাওয়া যায়। জীবনকালে যে মানুষ ঈশ্বরের সাথে ঘনিষ্ট সন্বন্ধ ও সহভাগিগতা রাখতে পারে, মৃত্যুকালে তার কোন ভয় থাকতে পারে না বরং তার মন আনন্দে ভরে উঠে। দৈহিক জীবনের অবসানে সে চিৎকার করে বলতে পারে, “প্রভু তোমার হস্তে আমার আত্মা সমর্পণ করি।” সাধু পৌল বলেছেন, “ আমি মরে গিয়ে খ্রীষ্টের সঙ্গে থাকতে চাই, কারণ সেটা অনেক ভাল”ফিলি ১;২৩ প। এটাই প্রকৃত খ্রীষ্টের অনুসরণকারীদের আনন্দ। প্রভু যীশু খ্রীষ্টই বিশ্বাসীদের প্রত্যাশাভূমি। প্রভুর কাছে সর্বদা আত্মসমর্পণ করতে প্রস্তুত থাকা আমাদের কর্তব্য। উপসংহার:- ঈশ্বর চান যেন আপনি আপনার এই দেহ ও মনকে তাঁর জন্য উৎসর্গ করেন। আর এই কারণ পবিত্র শাস্ত্র বলে, “তাহলে ভাইয়েরা, ঈশ্বরের এই সব দয়ার জন্যই আমি তোমাদের বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি, তোমরা তোমাদের দেহকে জীবিত, পবিত্র ও ঈশ্বরের গ্রহণযোগ্য উৎসর্গ হিসাবে ঈশ্বরের হাতে তুলে দেও”- রোমীয় ১২;১ পদ।

    Pastor Kishor Talukder



    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS