দু:খের পরে জয়ের আনন্দ ও শান্তি

ads20
    ছাত্র জীবনে পড়াশুনা করা যেন একটি কঠিন বিষয় ছিল, বাবা মা বা কোন বয়জ্যাষ্ট্য পড়তে বললে মাথায় যেন বাজ পড়ত। নিয়মিত স্কুলে যাওয়া, সকালে বিকালে পড়তে বসা যেন একটি কষ্টের বিষয় ছিল । এখন আমাদের সন্তানদের পড়তে বললে তারাও মনে হয় বিরক্ত প্রকাশ করে যদিও সকলে মুখফুটে বলে না। কিন্তু চোখে মুখে তা প্রকাশ পায়। কলেজ ইউনিভারসিটি শেষ করে কখন চাকুরি করব সেই চিন্তা, চাকুরী করলে পড়াশুনার ঝামেলা চুকে যাবে, টাকা রোজগার হবে ফলে আর কষ্ট থাকবে না।  পড়াশুনার পাঠ চুকে শুরু হলো চাকুরী জীবন। চাকুরী পাবার পরে মনে হলো আর কষ্ট থাকবে না । বেশ আনন্দের সাথে কর্মজীবন শুরু হলো । সামাজিক কাজ, রাষ্ট্র, সমাজ ও মানুষের উন্নয়নের কাজ। ভালই লাগলো, মাস শেষ হলেই মাসের বেতন, মনে আনন্দ শুরু হলো, কিন্তু সংসারের দায়িত্ব যখন বাড়তে থাকে, মা বাবা, স্ত্রী সন্তানদের দায়িত্ব যখন কাঁধে আসে তখন আবার সেই আনন্দ নিরানন্দ হয়ে যায়। কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে পার করতে হয় জীবন । এর মাঝে অফিসে বসের মনমত কাজ না হলে বা তার মন যুগিয়ে কাজ না করতে পারলেও ঝামেলা আরও বেড়ে যায়। এক চাকুরী ছেড়ে অন্য চাকুরী ধরলে তাতে যে খুব লাভ হবে তা কিন্তু নয় । বসতো সব জায়গাতেই আছে। আছে জবাবদিহিতা। সেই সময় মনে হতো আগে ছাত্র জীবনেই ভাল ছিলাম । এখন মনে হয় সংসারের জীবন আরও বেশী ঝামেলার জীবন।
     সেই সমস্ত কঠিন সময় পার করে অবসর জীবনে মনে হলো প্রভুর পক্ষে কাজ করাই হবে সহজ, কোন ঝামেলা নেই, আমি স্বাধীন, আমি স্বাধীনভাবে কাজ করব, কাউকে জবাব দিতে হবে না ইত্যাদি। সত্যি কি প্রভুর পক্ষে কাজ করা বা প্রভুর পরিচর্য্যার কাজ করা এত সহজ? প্রভুর আহবানে শুরু হলো পরিচর্য্যার কাজ ।  যে এলাকায় কাজ শুরু করলাম সেখানে লোক খুবই দরিদ্র ও অভাবি, নেই কোন লেখাপড়া, দিন আনে দিন খায়, তারা খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে, তাদের কে সেবা দেওয়া, তাদের মাঝে প্রভুর বানী প্রচার করতে গিয়ে সবচেয়ে বেশী সমস্যায় পড়তে হয় ।এত সমস্যার মাঝে আছে আবার কিছু গ্রামের নেতাদের  আপত্তি বাধা বিপত্তি। মানুষের মন জয় করা যে কত কঠিন তা বোঝা গেল এই পরিচর্য্যার কাজ শুরূ করে। মানুষকে প্রভুর পক্ষে আনা যে কত কঠিন তা বলে বোঝানো যায় না । জাগতিকতার মধ্যে ডুবে থাকা মানুষ গুলোকে নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যে রাখা, সেবা দেয়া, বিপদে আপদে পাশে থাকা যা অনেক সময় হয়ে উঠে না ফলে সেই সব লোক জন মনে মনে অসন্তোষ্ট প্রকাশ করে। আর্থিক সমস্যার কারনেও অনেক সময় পরিচর্য্যার কাজ ব্যহত হয় । তাই মাঝে মাঝে হতাশ হতে হয়। কিন্তু প্রশান্তি হলো আমরা প্রভুর কাজ করি। 
    এখানে পবিত্র বাইবেল আমাদের শিক্ষা দেয়, যীশুর শিষ্যরা যীশুর মৃত্যুর সময় থেকে শুরু করে কত না নির্যাতন ভোগ করেছেন, পবিত্র শাস্ত্রে এও দেখতে পাই সাধু পৌল যে এক সময় খ্রীষ্টের অনুসারীদের অত্যাচার করতেন তিনি প্রভুর আহবানে সাড়া দিয়ে কত না নির্যাতন ভোগ করেছেন । বিভিন্ন সময় সেই দুর্গম পথ পাড়ি দিয়েছেন, অত্যাচারিত হয়েছেন, সাপের কামড় খেয়ে, জেল খেটেও তিনি প্রভুর পক্ষে কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছেন। তিনি ভাল করে জানতেন যে, যে কোন সময়ে খ্রীষ্টের জন্য তাকে মৃত্যুবরণ করতে হতে পারে। অপর দিকে এই কথা সত্য হতে পারে যে ঈশ্বর তাকে স্বাধীনতা দিতে চান।  এই দুটি চিন্ত্ইা তার মনে রয়েছিল। কিন্তু তিনি বিচলিত হন নাই, তিনি বলেছেন তোমরা আনন্দ কর, প্রভুতে আনন্দ কর। আমার পক্ষে জীবন খ্রীষ্ট । আমাদের প্রভু তিনি নিজেই তো কত কষ্ট করেছেন। তিনি নিজে নত হয়েছেন, সকলের দাস বলে জীবন যাপন করলেন, ক্রুশে মৃত্যু বরণ করলেন। তার পূনরূত্থানের মধ্যদিয়ে দু:খজয়ী আনন্দ তিনি আমাদের দিয়ে গেলেন। 
    শান্তি ও আনন্দ :
    আমরা যে শুধু ঈশ্বরের সঙ্গে এবং অন্যদের সঙ্গে শান্তিতে জীবন যাপন করতে আহুত তা নয় । আমাদের হ্রদয়েও শান্তি থাকতে হয় । কিসে শান্তি আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যায় ? তা হয় উদ্বেগ বা ভাবনা-নিজের সম্বন্ধে ভাবনা, প্রিয় লোকদের জন্য ভাবনা, ভবিষ্যতের সম্বন্ধে ভাবনা, অন্য কোন বিষয়ে ভাবনা ।
    খ্রীষ্টিয় জীবন আমাদের আশ্চর্য্য কাজ করতে আহ্বান করে। যেমন পবিত্র বাইবেলে দেখতে পাই সাধু পৌল বলেন,”সর্বদা আনন্দ কর”, তোমাদের শান্তভাব মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক। তিনি এমনও বলেন, কোন বিষয়ে চিন্তিত হইও না। আমরা যদি কোন বিষয় প্রার্থনায় ঈশ্বরের কাছে জানাই, তবে কোন কিছুতে আমাদের ভাবিত হওয়ার দরকার নেই। আমরা ঈশ্বরকে প্রার্থনায় সব কিছু বলতে পারি। এমন ক্ষুদ্র বিষয় নাই আমরা যা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে বলতে পারি না কারণ তিনি আমাদের জীবনের সমস্ত খুঁটিনাটি ব্যাপারেও চিন্তিত হন--মথি ১০:২৯-৩০ পদ। এমন বড় বিষয় নাই আমরা যা ঈশ্বরের কাছে নিয়ে আসতে পারি না কারণ তিনি সমস্ত পৃথিবীকে তাঁর হাতে ধরে রাখেন। আমরা যখন আমাদের প্রেমময় পিতাকে বিশ্বাস করে তাঁর কাছে প্রার্থনা করি তখন ভাবনা পালিয়ে যায় এবং ঈশ্বরের শান্তি আমাদের হয় এবং যা আমাদের  হ্রদয় ও মনকে রক্ষা করে-যিশাইয় ২৬:৩ পদ।
    আনন্দিত হওয়াই খীষ্টিয়ানদের একটি দায়িত্ব। ” পৌল বলেন”, সর্ব্বদা আনন্দ কর, আমরা সর্ব্বদা কি করে আনন্দ করতে পারি ? সময়ে সময়ে মনে হয় পৃথিবী আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে । আবার সময়ে সময়ে মনে হয় পৃথিবীর মানুষ আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করছে । সেই জন্য মাঝে মাঝে আনন্দ করার ইচ্ছা থাকে না। পবিত্র বাইবেল থেকে আমার শিক্ষা গ্রহন করতে পারি, যে সব মানুষ খ্রীষ্টের পক্ষে কাজ করেছেন তারা সকলেই কষ্টের মধ্যে পড়েছেন কিন্তু সেই কষ্টের মধ্যে আবার তাঁরা আনন্দ উপভোগ করেছেন । সেই রহস্যই হলো---প্রভুতে । যদি আমাদের জীবন খ্রীষ্টেতে থাকে তবে আমরা আনন্দ পাওয়ার উপরে বা অন্য কিছুর উপরে নির্ভর করি না। বাস্তবিক পক্ষে, সময়ে সময়ে যারা ধনবান ও তাদের কাজে সাফল্যমন্ডিত হয়েছে তারা সবচেয়ে বেশী অসুখী । প্রভু যীশু খ্রীষ্ট আমাদের জীবনে বাস করলে আমাদের জীবন কখনও অসার হবে না। আমাদের অসুখী , নিরুৎসাহ ও বিষন্ন হওয়ার প্রয়োজন নাই । তিনি আমাদের জন্য যা করেছেন, তিনি আমাদের জন্য যা করছেন, তিনি আমাদের জন্য যা করবেন, তিনি আমাদের পক্ষে যা হন আমরা সর্ব্বদা তাতে আমাদের আনন্দ পেতে পারি। অর্থাৎ আমরা খ্রীষ্টেতে সর্ব্বদা আনন্দ পেতে পারি।
    আমরা কিসে আনন্দ পেতে পারি ? প্রভুতে আনন্দ পেতে পারি। কারণ আমাদের প্রভু আমাদের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। যোহন লিখিত সুসমাচার ৭:;৭-৮ পদে বলা হয়েছে ---”যাঞ্চা কর তোমাদিগকে দেওয়া যাইবে; অন্বেষণ কর, পাইবে; দ্বারে আঘাত কর, তোমাদের জন্য খুলিয়া দেওয়া যাইবে। কেননা যে কেহ যাঞ্চা করে, সে গ্রহণ করে, এবং যে অন্বেষণ করে, সে পায়; আর যে আঘাত করে, তাহার জন্য খুুলিয়া দেওয়া যাইবে। একই ভাবে যোহন লিখিত সুসমাচার ১৪: ১৩-১৪ পদে বলা হয়েছে- আর তোমরা আমার নামে যাহা কিছু যাঞ্চা করিবে, তাহা আমি সাধন করিব, যেন পিতা পুত্রে মহিমান্বিত হন। যদি আমার নামে আমার কাছে কিছু যাঞ্চা কর, তবে আমি তাহা করিব। এত বড় নিশ্চয়তা আর কে দিতে পারে? এক মাত্র প্রভুই আমাদের দিয়েছেন। আমাদের শান্তিতো এখানেই, আমাদের সব কিছুর ভার আমাদের প্রভু গ্রহণ করেছেন। আর আমরা জানি, যাহারা ঈশ্বরকে প্রেম করে, যাহারা তাঁহার সংকল্প অনুসারে ্চলে, তাহাদের পক্ষে সকই মঙ্গলার্থে এক সংগে কার্য করিতেছে।  কারণ খ্রীস্টিয়ানের জীবনে প্রেমই হলো প্রথম ও শ্রেষ্ট গুণ ( ১ করিন্থীয় ১৩অধ্যায়, গালাতীয় ৫:২২পদ) । আমাদের প্রভু নিজে যেমন বলেছেন, প্রেমই হলো ঈশ্বরের নিয়মকে মান্য ও পূর্ণ করার পদ্ধতি ( রোমীয় ১৩:৮-১০পদ)। নিজেদের জন্য ও অন্যের জন্য প্রার্থনা করা দরকার যেন এই ধরনের প্রেম ও প্রাচুর্য্য থাকে--বিশ্রী ও বিকৃত, পথভ্রষ্ট লোকদের প্রেম করা, যাদের সঙ্গে বাস করি এবং কাজ করি তাদের প্রেম করা, আমাদের প্রেমময় প্রভুর বাধ্য হয়ে তাঁরই জন্য আমাদের প্রেম প্রকাশ করা।
    আমাদের দু:খ নেই, সাধু পৌলের মত আমাদের বলতে হবে তোমরা প্রভুতে আনন্দ কর । কেননা আমরা বিজয়ীর চেয়ে অধিক বিজয়ী হয়েছি কেবল মাত্র প্রভুতে ।  তাই রোমীয় ৮:৩৫- ৩৯ পদে বলা হয়েছে- খ্রীষ্টের প্রেম হইতে কে আমাদিগকে পৃথক করিবে. কি ক্লেশ?  কি সঙ্কট?  কি তাড়না?  কি দুর্ভিক্ষ?  কি উলঙ্গতা?  কি প্রাণ-সংশয়?  কি খড়গ?  যেমন লেখা আছে আমরা সমস্ত দিন নিহত হইতেছি; আমরা বধ্য মেষের ন্যায় গণিত হইলাম। কিন্তু যিনি আমাদিগকে প্রেম করিয়াছেন, তাঁহারই দ্বারা আমরা এই সকল বিষয়ে বিজয়ী অপেক্ষাও অধিক বিজয়ী হই। কেননা আমি নিশ্চয় জানি, কি মৃত্যু, কি জীবন, কি দূতগণ, কি আধিপত্য সকল, কি উপস্থিত বিষয় সকল,কি ভাবি বিষয় সকল, কি পরাক্রম সকল, কি উর্ধ্ব স্থান, কি গভীর স্থান, কি অন্য কোন সৃষ্ট বস্তু, কিছুই আমাদের প্রভু খ্রীষ্ট যীশুতে অবস্থিত ঈশ্বরের প্রেম হইতে পৃথক করিতে পারিবে না। পবিত্র বাক্যের এই কথা দ্বারা পরিস্কার বোঝানো হয়েছে খ্রীষ্টের প্রেম আমাদের দু:খ বেদনা, হতাশা, দারিদ্রতা দুর করে, মনে প্রশান্তি আনে ।
    উপসংহার :  খ্রীষ্টের মধ্যদিয়েই দু:খ জয়ী আনন্দ অনুভব করা যায় । এই জন্য খ্রীষ্টিয় জীবনের আরম্ভ ও শেষ এবং অন্য সমস্ত অংশ প্রার্থনা দিয়ে পরিপূর্ণ করতে হয় । আমরা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে বলতে পারি প্রভু তুমি আমাদের ত্রানকর্তা, তুমি আমাদের কাছে তোমার যে সব অনুগ্রহ, প্রেম, ও ধার্মিকতা  দিয়েছ, আমরা তার জন্য তোমার প্রশংসা করি । কেননা এই প্রার্থনা আমাদের শান্তি দেয় আর তখনই আমদের  দু:খ কষ্ট, বেদনা, হতাশা দারিদ্রতা দুর হয়ে যায়, মনে প্রশান্তি আসে। প্রভুর পরিচর্য্যর কাজের মাধ্যমে বাক্য বীজ বপনের পরে যখন তা অংকুরিত হয় তখনই পরিচর্য্যাকারীর মনে এক অনাবিল আনন্দ অনুভুত হয়, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। তখনই আমাদের শত কষ্ট ও দু:খের পরে জয়ের আনন্দ ও শান্তি অনুভুত হয় ।
    আমেন।
    Christo Sangeet Presenter

    খ্রীষ্ট সঙ্গীত অ্যাপ

    আপনার উপাসনার সঙ্গী, এখন আপনার হাতের মুঠোয়।

    সহজ ও নিরাপদ এবং সম্পূর্ণ অফলাইন সুবিধা।

    আজই ডাউনলোড করুন

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS