সত্য কি ?

ads20

প্রতিটি দেশেই আদালত আছে। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে উভয় পক্ষকে শপথ বাক্য পাঠ করা হয়, যথা: যাহা বলিব, সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না। আবার মহান জাতীয় সংসদে যাহারা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, প্রধান মন্ত্রী এমনকি রাষ্ট্রপতি সকলকেই পর্যায় ক্রমে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয় একই নিয়মে একই ভাষায়। কিন্তু যতদুর সম্ভব, আমাদের ধর্মিয় প্রতিষ্ঠান গুলোতে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে শপথ বাক্য পাঠ করানো হয় কিনা জানি না। যদিও পবিত্র মন্ডলী গুলোতে শপথ পাঠ করানো হয় কিন্তু সে সময় এই বাক্যটি থাকে না, যথা: যাহা বলিব, সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না। কিন্তু পিতর বলেছিলেন, “ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না।”

১ম বিষয় ঃ- পথ = মথি ৭;১৩ ও ১৪ পদ = সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর, কেননা সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্থ ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা জীবনে যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।

ব্যাখ্যা ঃ- যীশু যখন এই পৃথিবীতে ছিলেন, তখন বিশেষ কয়েকজন যুবক যীশুর নিকটে এসেছিলেন যেন তারা অনন্ত জীবন পায়। তিনি যখন তাদের বলেছিরেন, তোমার যাহা কিছু আছে তাহা বিক্রয় কর এবং দরিদ্রদের দান কর আর আমার পশ্চাৎগামী হও (মথি ১৯;১৬ থেকে শেষ + মার্ক ১০;১৭-৩১, লুক ১৮;১৮-৩০)। তখন তারা যীশুর আহŸানে সারা না দিয়ে যে যার পথে ফিরে গিয়েছিল। শিষ্যগণ সেই সকল ঘটনার প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী ছিলেন। তাই তাহারা বার বার হতাশ হচ্ছিল যে আসলে তাদের কি হবে ? ঠিক তাই যীশু যখন পিতার রাজ্যে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছিলেন, তখন থোমা প্রশ্ন করেছিলৈন, প্রভু, আপনি কোথায যাইতেছেন, তাহা আমরা জানি না, পথ কিসে জানিব ? যোহন ১৪;৫ পদ। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, আমিই পথ ও ---- ৬ পদ।

উদাহরণ ঃ- ঈশ^র ই¯্রায়েল জাতিকে অতি কষ্টের মধ্য দিয়ে প্রতিজ্ঞাত কনান দেশে নিয়ে গিয়েছিলেন। কারণ কনান দেশ ছিল ই¯্রায়েল জাতির জন্য প্রতিজ্ঞাত দেশ। ঠিক তেমনি আমাদের জন্য যীশু প্রতিজ্ঞা করেছেন স্বর্গ রাজ্যের জন্য = যোহন ১৪;১-৩।

জীবন্ত উদাহরণ ঃ- নথনেল যখন যীশুর বিষয়ে অবিশ্বাসের কথা বলছিলেন, তখন ফিলিপ নথনেলকে বলেছিলেন, আইস, দেখ। তখন আবার যীশুর সঙ্গে নথনেলের কথা হচ্ছিল। কথা বলতে বলতে এক সময়ে যীশু নথনেলকে বলতে বাধ্য হযেছিলেন, সত্য সত্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা দেখিবে, স্বর্গ খুলিযা গিয়াছে এবং ঈশ্বরের দূতগণ মনুষ্যপুত্রের উপর দিয়া উঠিতেছেন এবং নামিতেছেন- যোহন ১;৪৩-৫১ ( আদি ২৮;১২ )

প্রয়োগ ঃ- গান- আছে আছে পথ আছে, আছে দু’টি পথ আছে, কোন পথে যাবিরে মনো, যীশুর পথে জীবন আছে। স্বর্গে যাওয়ার একমাত্র সিড়ি / পথ যীশু খ্রীষ্ট।

২য় বিষয় ঃ- সত্য = যোহন তার লেখার শুরুতে বলেছেন, আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। তিনি আদিতে ঈশ্বরের কাছে ছিলেন- ১;১,২ পদ। আর সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন; আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ = ১৪ পদ। যীশু খ্রীষ্ট সত্যে পূর্ণ ছিলেন বলেই থোমা এবং অন্যান্য শিষ্যদের বলতে বাধ্য হয়েছিরেন যে, ‘ আমিই পথ ও সত্য ও জীবন। যীশুর স্বর্গে যাবার সময় হযে আসছিল জেনে শিষ্যদের বলেছিলেন, আমি তোমাদিগকে অনাথ রাখিয়া যাইব না- ১৪;১৮ পদ। তথাপি আমি তোমাদিগকে সত্য বলিতেছি, আমার যাওয়া তোমাদের পক্ষে ভাল, কারণ আমি না গেলে সেই সহায় তোমাদের নিকটে আসিবেন না; কিন্তু আমি যদি যাই, তবে তোমাদের নিকটে তাহাকে পাঠাইয়া দিব- ১৬;৭ পদ। পরন্ত তিনি,“ সত্যের আত্মা,” যখন আসিবেন, তখন পথ দেখাইয়া তোমাদিগকে সমস্ত সত্যে লইযা যাইবেন- যোহন ১৬;১৩ পদ।

যীশুর সাক্ষ্য ঃ-বিচারের জন্য যীশু যখন পীলাতের সম্মূখে উপস্থিত হন, তখন পীলাত যীশুকে প্রশ্ন করেছিলেন, তবে তুমি কি রাজা ? যীশু উত্তর করিলেন, তুমিই বলিতেছ যে আমি রাজা। আমি এই জন্যই জম্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্যই জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেহ সত্যের, সে আমার রব শুনে। পীলাত তাঁহাকে (যীশুকে) বলিলেন, সত্য কি ? ১৮;৩৭,৩৮ পদ।

শতপতির সাক্ষ্য ঃ- শতপতি এবং যাহারা তাঁহার সঙ্গে যীশুকে চৌকি দিতেছিল, তাহারা ভুমিকম্প ও আর যাহা যাহা ঘটিতেছিল, দেখিয়া অতিশয় ভয় পাইয়া কহিল, সত্যই, ইনি ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন- মথি ২৭;৫৪, মার্ক ১৫;৩৯

প্রয়োগ ঃ- কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না- প্রেরিত ৪;২০ পদ। পিতর এবং যোহনের মতো আমাদের একই ভাবে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়া একান্ত জরুরী।

৩য় বিষয় ঃ- জীবন = এবার একটু পুরাতন নিয়মের দিকে ফিরে যাই। মোশির ৪র্থ বক্তৃতায় ই¯্রায়েল জাতিকে যখন ঈশ্বরীয় নিয়মের কথা বলছিলেন যেন তারা ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি পূর্ণ ভয়ে জীবন-যাপন করে। ঠিক তখনই তিনি তাদের সিদ্ধান্তের জন্য একটি চ্যালেন্স ছুরে দিয়ে দিয়েছিলেন, “আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্ব্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি স্ববংশে বাঁচিতে পার- ২ বিবরণ ৩০;১৯।”

ব্যাখ্যা ঃ- যোহন ৬;৫৩-৫৮ পদ = যীশু তাহাদিগকে কহিলেন, সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপূত্রের মাংস ভোজন ও তাহার রক্ত পান না কর, তোমাদিগেতে জীবন নাই। ----এই খাদ্য যে ভোজন করে, সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে। যীশু খ্রীষ্ট তাঁর মৃত্যুর পূর্বে শিষ্যদের নিয়ে নিস্তার পর্বের ভোজ পালন করেছিলেন। তখন তিনি তাদের বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন যে, তাদের পিতৃপুরুষেরা প্রান্তরে মান্না খাইয়াছিল এবং মরিয়া গিয়াছিল, সেইরুপ নয়, এই খাদ্য অর্থাৎ খ্রীষ্টের দেহ/মাংস এবং রক্ত/পানিয় যে ভোজন করে, সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে- যোহন ৬;৫২-৫৮ পদ। যখন আমরা খ্রীষ্টকে হৃদয়ে গ্রহণ করি এবং বাপ্তিস্ম প্রাপ্ত হই তখন আমরা একটি মন্ডলীর সদস্য হই। মন্ডলীর মস্তক খ্রীষ্ট, সুতরাং মন্ডলীতে পবিত্র প্রভুর ভোজের অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়, তখন সেই ভোজে অংশ গ্রহণ করতে হয়। কারণ এটি যীশুর আদেশ, যতদিন তিনি পূনরায় এই পৃথিবীতে ফিরে না আইসেন, ততদিন যেন আমরা তাঁর দেহরুপ রুটি এবং রক্ত পান করি। তাহলেই খ্রীষ্ট আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকেন এবং আমরাও তাঁর সঙ্গে সংযুক্ত থাকি। অর্থাৎ আমাদের মধ্যে অনন্ত জীবন বিদ্যমান থাকে। যোহন ১১;২৫ ও ২৬ পদে মার্থার সঙ্গে যীশুর কথোপকথোনের বিবরণ, যিনি ইতিপূর্বে অনেককে জীবন দিয়েছেন, তিনিই বলিয়াছিলেন, আমিই পুনরুত্থান ও জীবন, যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে। আর যে কেহ জীবিত আছে এবং আমাতে বিশ্বাস করে, সে কখনও মরিবে না; ইহা কি বিশ্বাস কর ? ঠিক এর পর পরেই তিনি তাঁর বন্ধু লাসারকে পূন: জীবন দান করেন।

ঐ গানটি খ্রীষ্ট সঙ্গীত ৬৮ = মৃতে জীবন দান করি, হইলেন মৃত্যুহারী

এ প্রকার ভূরি ভূরি লিখিত আছে শা¯্রেেত।

প্রয়োগ ঃ- এই কারণ প্রকৃত খ্রীষ্ট বিশ^াসীরা মারা যায় না কিন্তু কেবল মাত্র প্রভুতে নিদ্রিত হয়- প্রকা ১৪;১৩ পদ। এটাই সেই জীবন, যে জীবন দিবার জন্য তিনি স্বর্গ ছেড়ে এই মর্তে এসেছিলেন, যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। অতএব খ্রীষ্টে বিশ্বসী সকলকে স্বতস্ফুর্তভাবে পবিত্র প্রভুর ভোজে অংশ গ্রহণ করা খুবই জরুরী।

উপসংহার ঃ- যোহনের লেখা শুরু হয়েছিল, তিনি (খ্রীষ্ট) অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ। বিচারের জন্য যীশু যখন পীলাতের সম্মূখে উপস্থিত হন, তখন পীলাতের সম্মূখে যীশু সাক্ষ্য দিয়েছিলেন,‘ আমি এই জন্যই জম্ম গ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্যই জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই। যে কেহ সত্যের, সে আমার রব শুনে।’ পীলাত তাঁহাকে (যীশুকে) বলিলেন, সত্য কি ? হ্যা, খ্রীষ্টেতে প্রিয় ভাই-বোন, আমরা এখন যে সত্য জেনেছি অর্থাৎ যীশু খ্রীষ্টকে, তিনি যেমন সত্যে পূর্ণ ছিলেন, তাঁর দাস/শিষ্য হিসাবে আমরাও তদ্রæপ সত্যে জীবন-যাপন করি এবং খ্রীষ্টকে প্রচার করে সমূদয় জগতে সত্য প্রকাশ করি। কাউকে প্রশ্রয় না দিয়ে সত্য

বলার সাহস রাখি। ঈশ্বর আমাদের সকলকে তাঁর বাক্যের আলোকে প্রচুর আশীর্বাদ দান করুন, আমেন।

পালক কিশোর তালুকদার

হাউজ চার্চ অব বাংলাদেশ, ঢাকা।

পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট