বেশি ভাগ লোককে বলতে শোনা যায়, ‘‘পাপকে ঘৃণা করো, কিন্তু পাপীকে ভালবাস।’’ কথাটি আজকে খ্রীষ্টিয়ানদের কাছে একটি শ্লোগানের মত হয়ে পড়েছে। অনেক লোক আছেন যারা এই নীতিটি মেনে চলতে চান, কিন্তু তাদের কেউই বুঝতে পারেন না যে কাকে ভালবাসবেন আর কাকেই বা ঘৃণা করবেন। এমন কোন লোক কি আছেন যিনি বলতে পারেন, ‘‘পালক আমার পাপকে ঘৃণা করেন, কিন্তু আমি জানি যে, তিনি আমাকে ভালবাসেন।’’
একজন মানুষ যখন‘‘ পাপীকে ভালবাসে আর পাপকে ঘৃণা করে’ আসলে সে তখন তিনটি পাপ কাজ করে। প্রথমত- লোকটি প্রথমেই বিচার করছে যে, অন্য লোকটি পাপ করেছে। দ্বিতীয়ত-লোকটি অন্য লোকটিকে পাপী বলে রায় দিচ্ছে। তৃতীয়ত-লোকটি নিজেকে পাপের বিচারকের স্থানে বসিয়েছে। কিন্তু একজন মানুষ হিসাবে আমরা পাপ বিচার করার ক্ষমতা পাইনি, আমরা কেবল আমাদের পাপকে ঘৃণা করতে পারি।
বিষয়টি আমরা অন্য ভাবেও বলতে পারি, কাউকে পাপী বলে প্রথমেই আমরা একজন লোকের গায়ে পাপী হিসাবে তকমা পরিয়ে দিচ্ছি, এটা আরও বলে যে, আমরা তাকে ভালবাসছি না বরং পাপী বলে স্বীকার করছি এবং পরোক্ষ ভাবে বলছি যে, সে ঈশ্বর অনুগ্রহের বাইরে একজন লোক। আমরা কাউকে পাপী বলে,‘‘ আমি বনাম সে’’ এই তুলনা করছি। তাকে যখন পাপী বলছি। আমরা আসলে মুখে কেবল বলি যে,
আমরা খ্রীষ্টিয়ানরা এই কথাটি বিশ্বাস করি না, কারণ আমরা খুব সহজেই অন্যদেরকে পাপী বলে তকমা পরাই। সত্যি কথা হল আমরা প্রত্যকেই পাপ করেছি, কিন্তু যখনই কেউ আমাদের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখিয়ে দেয় আমাদের পাপ, তখন আমরা অসন্তুষ্ট হই। যেমন মিথ্যা বলা, গর্ব, লোভ, অলসতা, ব্যভিচার, ঘৃণা,রাগ, এরকম অনেক পাপ আমরা সব সময়ই করছি। কেউ যদি আমাদেরকে এসব বিষয়ে বলে, আমরা বিভিন্ন অজুহাত দেখাই এর কারণ হিসাবে। আসলে একজনকে বলির পাঠা বনানোর স্বভাবটা আমাদের আদি থেকেই রয়ে গেছে। কাউকে পাপী বলে বিচার করার কাজটা প্রথম শুরু করতে হবে আমাদের নিজেদের জীবন থেকে। অন্যের দিকে আঙ্গুল না তুলে প্রথমে নিজেদের দিকে তোলা দরকার।
পাপী কে? সাধারণ কথায় আমাদের কাছে এর অর্থ হল এমন একজন লোক যে গভীর ভাবে ভ্রষ্ট,মন্দ বা খারাপ ।কিন্তু খ্রীষ্টিয়ান বিশ্বাসী পাপী বলতে এই অর্থ করে না। খ্রীষ্টিয়ান বিশ্বাসে, ‘পাপী’ বলতে কোন মানুষের নৈতিকতার বর্ণনা করেন, কিন্তু সম্পর্কহীন,অর্থাৎ ঈশ্বর সাথে সম্পর্কে আমাদের বিচ্ছেদের অবস্থা।ঈশ্বর সাথে,তাঁর সৃষ্ট সব কিছুর সাথে আমাদের একটি দূরত্ব । এই দূরত্ব একজন মানুষের জন্য পার হওয়া অসম্ভব। মানুষের এই অসম্ভব কাজকে সম্ভব করতে ঈশ্বরের পক্ষ থেকে একটি সেতু রচনা করা হল, যিনি যীশু খ্রীষ্ট। যিনি পাপীদের একমাত্র আশা। ঈশ্বর এই কাজটি করলেন কারণ তিনি তাঁর সৃষ্ট মানুষকে ভালবাসেন।
পাপ কি? আমরা যদি আদি পাপের উচ্চারণ নাও করি তবু বলতে হয় যে পাপ হল আমাদের ভিতরে েএমন কিছু যা আমাদেরকে এমন কিছু করতে উৎসাহিত করে যা আমাদের ভেতরে থাকা কিছু বিষয়কে নগ্ন ভাবে প্রকাশ করে। পবিত্র বাইবেল অনুসারে এই ‘ভিতরের কিছু’ হল পা (রোমীয় 7: 8; 16-17) আর পাপসমূহ হল সেই ভিতরের কিছুর উৎসাহে আমরা বাহ্যিক ভাবে যে কাজগুলো করে থাকি। পবিত্র বাইবেলের পাপগুলো আমাদের আচরণের সাথে সম্পর্কিত, অন্যদিকে পাপ আমাদের হাত , পা, মুখ, ইন্দ্রিয় এসব দিয়ে করে থাকি। পৌল এই বিষয়ে বলেছেন যখন তিনি দেহের বিষয়ে বলেছেন (রোমীয় 8:13 ।) পাপ হল যা আমাদের ভিতরে থাকা এমন কিছু যা আমাদের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে নিয়ন্ত্রণ করে (রোমীয়7:23) আমাদের ভিতরে থাকা এমন কিছু যা আমাদেরকে পাপ কাজ করতে বাধ্য করে। আমরা খুব সহজেই বিষয়টি ছোট ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে বুঝেতে পারি, তাদের মিথ্যা কথা বলতে শিক্ষা দেওয়ার হয় না, অথচ তারা গড়গড় করে মিথ্যা বলে যায়, এর একমাত্র কারণ হল তারা পাপ স্বভাব নিয়ে জন্মেছে। তাই আমাদের পাপময় স্বভাব হল আমাদের পাপ করার কারণ । আর এজন্য আমরা এই অজুহাত দিতে পারি না যে আমাদের আদি পিতাদের পাপ স্বভাব আমার মধ্যে প্রবাহিত হয়েছে আর সেই কারণে আমরা পাপ করছি, অথচ আমরা তা করতে চাইনা, আসলে এটা কোন অজুহাতই নয়। আমরা যখন প্রভু যীশু কে গ্রহণ করি তখন সেই আত্মিক শক্তি আমাদের ভেতরে আসে যার দ্বারা আমাদের পাপ স্বভাবকে দমন করে রাখতে পারি।
পবিত্র বাইবেলের পাপ:
পবিত্র বাইবেলের পাপকে বর্ণনা করা হয়েছে ঈশ্বরের ব্যস্থাকে লংঘন করা (1যোহন 3:4) এবং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে(দ্বি বি 9:7; ইউসা 1:18) পাপ শুরু হয়েছে লুসিফার থেকে ,সম্ভবত দূতদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ও ক্ষমতাশালী ছিল পদের আকাংখী ছিল, এটাই ছিল তার পতনের কারণ, আর পাপের সূচনা (ইশাইয়া 14:12-15)।তাকে শয়তান নামে অভিহিত করা হয়। শয়তান এদোন বাগানে মানব জাতির মধ্যে পাপ নিয়ে আসে। তাঁর নিজের মত ্ একই আকাংখ্যায় সে আদম ও হাওয়াকে প্রলোভিত করে,‘ তোমরা ঈশ্বরের মত হবে।’’
আদি পুস্তকে তিন অধ্যায় সুন্দর ভাবে বর্ণনা করেছে আদম ও হাওয়া ঈশ্বর ও তাঁর আদেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। সেই সময় থেকে , মানব জাতির বংশ পরস্পরার মধ্যে দিয়ে পাপে চলে এসেছে এবং আমরা আদমের বংশধর হিসাবে পাপী বলে গণ্য হয়েছি। এবং উত্তরাধিকার সুত্রে তার কাছ থেকেই পাপ পেয়েছি। রোমীয় 5:12 পদ বলে, আদমের মধ্যে দিয়ে জগতে পাপ প্রবেশ করেছিল এবং সকল মানুষের কাছে মৃত্যু উপস্থিত হয়েছে। কারণ ‘‘পাপের বেতন মৃত্যু’’ (রোমীয় 6:23)
যখন আদম পাপ করেছিল , তার ভিতরের স্বভাব রূপান্তরিত হয়েছে তার বিদ্রোহী মনোভাবের দ্বারা , তার জবিনে এসছে আত্মিক মৃত্যু এবং মরণশীলতা যেটি তার বংশধরদের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছে। আমরা যে পাপ করেছি বলে পাপী হয়েছি তা নয় বরং আমরা পাপ করি কারণ আমরা পাপী।যেভাবে আমরা পিতামাতার কাছ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার পাই তেমনি এই পাপও উত্তরাধিকার সূত্রে আমরা ভাল করি। আমরা আদমের কাছ থেকে আমাদের পাপের পূর্ণ স্বভাবকে পেয়েছি। গীত 51:5 পদে তার এই পাপময় স্বভাবের জন্য বিলাপ করেছেন, ‘‘ পাপের আমার জন্ম, মাতার গর্ভ হতেই আমি পাপী।
তাই ঈশ্বর মানুষের উপরে এই অর্পিত পাপকে বর্তালেন যীশু খ্রীষ্টের উপরে, যিনি সেই পাপের শাস্তি বহন করলেন ক্রুশে মৃত্যু বরণের মাধ্যমে। আমাদের উপরে অর্পিত পাপ যীশুর ্উপরে বর্তালো বলে ঈশ্বর যীশুর সাথে এমন ব্যবহার করলেন যে তিনি যেন পাপী, যদিও তিনি তা ছিলেন না এবং তাঁকে সমগ্র জগতের জন্য মৃত্যুবরণ করতে হল (1যোহন 2:2)। এই কথা সব সময় মনে রাখতে হবে যে যীশুর উপরে পাপ অর্পিত পাপের মূল্য পরিশোধ করলেন। কিন্তু তিনি নিজে কখনও পাপী ছিলেন না। পাপ তাঁর নিম্পাপ জীবনকে স্পর্শ করতে পারে নাই। যীশুর উপরের মানুষের পাপকে আরোপ করে ঈশ্বর খ্রীষ্টের উপরে মানুষের পাপকে আরোপ করে ঈশ্বর যীশুকে ধার্মিকতা মানুষের উপরে বর্তালেন, আর আমাদের ধার্মিক বলে গণনা করলেন।
আবার আমরা ব্যক্তিগত ভাবে প্রতিদিন পাপ করে থাকি যেহেতু আমরা আদম থেকে পাপ স্বভাব পেয়েছি। যারা যীশুর উপরে বিশ্বাস করেনি তারা তাদের ব্যক্তিগত পাপের শাস্তি ভোগ করবে, সেই সঙ্গে তাদের উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া পাপ ও পাপের জন্য। কিন্তু বিশ্বাসীরা পাপের অনন্তকালিন শাস্তি থেকে মুক্ত, আমাদের এখন শক্তি আছে পাপকে প্রতিরোধ করার। যেহেতু আমাদের পাপ প্রতিরোধের ক্ষমতা আছে সেহেতু আমাদের ই ঠিক করতে হবে যে আমরা ব্যক্তিগত পাপ করবো কি করবো না। আমাদের মধ্য যে পবিত্র আত্মা আছেন তিনিই আমাদের পাপ প্রতিরোধ করার শক্তিদান করেন।রোমীয় 8:9-11। যখন আমরা আমাদের ব্যক্তিগত পাপ করেন ও তাঁর সঙ্গে সহভাগিতার বন্ধনে আমাদের আবদ্ধ করেন। (1যোহন 1:9)
আজকে আমরা আমাদের প্রচারে, উপদেশে, শিক্ষায় অন্যের পাপকে দেখি দিয়ে মনে মনে সন্তুষ্টি লাভ করি। কিন্তু নিজেদের দিকে দেখি না বরং সুসমাচার প্রচারের সময়ে অন্যদের দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাই যে তাদের জীবন থেকেই কতটা! তাই পাপকে ঘৃণা করার কাজটি আমাদের জীবন থেকেই শুরু করতে হবে। আমরা কখনই অন্যদের পরিবর্তন আশা করতে পারি না যতক্ষন আমরা নিজেরা পরিবর্তিত না হই।তাই যখনই আমরা ঈশ্বরকে সত্যিকার বাবে ভালবাসাতে পারবো তখনই আমরা আমাদের পাপকেও ঘৃণা করতে পারবো ।অন্যথায় নয়। আমিন।