যীশুর মহিমা ও বড়দিনের তাৎপর্য চার্লস স্বাধীন বিশ্বাস

ads20
    যীশু খ্রিস্ট বা ঈসা মসিহের জন্মদিনকে বড়দিন বলা হয়। যিশু খ্রিস্টের জন্ম এভাবে হয়েছিল, ‘হেরোদ রাজার রাজত্বের সময়ে যিহুদিয়ার বেথলেহেম গ্রামে একটি গোয়াল ঘরে পবিত্র আত্মার (পাক-রুহের) শক্তি দ্বারা কুমারি মরিয়মের মাধ্যমে যিশু খ্রিস্ট জন্মগ্রহণ করেন।’ প্রভু যিশু খ্রিস্টের জন্ম নেয়া নিয়ে অনেকে মনে করেন, ‘পুরুষ ছাড়া নারীর সন্তান লাভ অসম্ভব’ ঠিক তাই। কিন্তু মানুষের কাছে যা অসম্ভব ঈশ্বরের কাছে তা সম্ভব, তাই তো তিনি সর্বশক্তিমান ¯্রষ্টা। পবিত্র বাইবেল বলেন, ‘(ইঞ্জিল শরিফে লুক ১:৩০-৩৫) স্বর্গদূত তাঁহাকে বলিলেন মরিয়ম ভয় করিও না, কেননা তুমি ঈশ্বরের নিকটে অনুগ্রহ পাইয়াছ। আর দেখ, তুমি গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে, ও তাহার নাম যিশু রাখিবে। তিনি মহান হইবেন, আর তাহাকে পরাৎপরের পুত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাহার পিতা দায়ুদের সিংহাসন তাহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কুলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন ও তাহার রাজ্যের শেষ হইবে না। তখন মরিয়ম দূতকে কহিলেন, ইহা কিরূপে হইবে? আমি তো পুরুষকে জানি না। দূত উত্তর করিয়া তাহাকে কহিলেন, পবিত্র আত্মা তোমার উপরে আসিবেন এবং পরাৎপরের শক্তি তোমার উপরে ছায়া করিবে; এই কারণে যে পবিত্র সন্তান জন্মিবেন, তাহাকে ঈশ্বরের পুত্র বলা যাইবে।’
    বড়দিন মানে কী?
    বড়দিন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের সবচেয়ে বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের শুরুর দিন। বড়দিন মানে মানুষের জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া নিদর্শন ও অনুগ্রহে শ্রেষ্ঠ দিন। বড়দিন মানে খারাপ কাজ, মিথ্যা কথা, চালাকি, প্রতারণা, ভণ্ডামি ছেড়ে ভালো পথে চলার দিন, তাই আজ বড়দিন। বড়দিন মানে পবিত্র, নিষ্পাপ, প্রেমময়, দয়াময় প্রভু যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন, তাই আজ বড়দিন। রোমান শব্দ ঢসধং পরে ঈযৎরংঃসধংং মানে খ্রিস্টের উদ্দেশ্যে জমায়িত হওয়া। ৩৫০ শতাব্দীতে ঈযৎরংঃসধংং-এর একটি ঝ বাদ দিয়ে ঈযৎরংঃসধং হয়। ভোলানাথ শর্মা যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনের নাম দেন খ্রিস্টামি। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত নাম দেন বড়দিন।

    প্রিয়বন্ধুরা, এই লেখায় আপনাদের কাছে আমি তিনটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয় তুলে ধরতে চাই।

    ১. কে এই যিশু খ্রিস্ট? ২. কেন যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে এসেছিলেন? ৩. বড়দিনের সার্থকতা কোথায়?
    কে এই যিশু খ্রিস্ট?
    যার জন্মদিনে আমরা মহা আনন্দে উৎসবে মেতেছি। বিশ্বজুড়ে মানুষের মনে একটি প্রশ্ন কে এই যিশু খ্রিস্ট? তিনি কি একজন মানুষ? তিনি কি একজন নিষ্পাপ, পবিত্র, ক্ষমতাবান ব্যক্তি? তিনি কি একজন নবী বা ভাববাদী? তিনি কি একজন মহামানব? এ রকম অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন খ্রিস্ট বিশ্বাসীদের হতে হচ্ছে। আসলে যিশু খ্রিস্টের বিষয়ে সব প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ বললেও তাঁর পরিচয় অসমাপ্ত থেকে যায়।

    কেননা যিশু খ্রিস্ট হলেন, ‘মানুষ রূপে বিশেষ ঐশী ব্যক্তিত্ব।’ তিনি সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরের মাংসিক অবতার। যিশু খ্রিস্ট ১০০% পবিত্র মানুষ আবার একই সঙ্গে ১০০% সর্বশক্তিমান ঈশ্বর ছিলেন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ মানুষ এবং সম্পূর্ণ ঈশ্বর। যিশু খ্রিস্টের জন্মের সাতশত বছর আগে ভাববাদী যিশাইয়ের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ‘যিশু হলো ইম্মানুয়েল যার অর্থ আমাদের সঙ্গে ঈশ্বর।’ পবিত্র বাইবেল যিশাইয় ৭:১৪ পদ।
    পবিত্র বাইবেল বলেন, ‘ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জম্মিলেন; এবং আকারে প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।’ ফিলিপীয় ২:৬-৮ পদ।
    পবিত্র বাইবেল বলেন, ‘যিশু খ্রিস্টতেই আমরা মুক্তি, পাপের মোচন, প্রাপ্ত হইয়াছি। ইনিই অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্তি, সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত; কেননা তাঁহাতেই সবই সৃষ্ট হইয়াছে; স্বর্গে ও পৃথিবীতে, দৃশ্য কি অদৃশ্য যে কিছু আছে, সিংহাসন হউক, কি প্রভুত্ব হউক, কি আধিপত্য হউক, কি কর্তৃত্ব হউক, সকলই তাঁহার দ্বারা ও তাঁহার জন্য সৃষ্ট হইয়াছে।’ ইঞ্জিল শরিফ কলসীয় ১:১৪-১৬ পদ।

    যিশু খ্রিস্টের জন্য পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে। যিশু খ্রিস্টের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। তিনিই সব ক্ষমতার মালিক, এই নিয়ে তর্কের কোনো অবকাশ নেই। শাস্ত্রীয় প্রমাণিত, ঐতিহাসিক প্রমাণিত, তত্ত্বগত, যুক্তিগত, স্থানগত প্রমাণিত যে যিশু খ্রিস্টই স্বয়ং সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর।

    এক ঈশ্বর তিনভাবে প্রকাশিত হলেন। অন্যভাবে বলতে গেলে ঈশ্বর তিনভাবে আমাদের মাঝে কাজ করেন। প্রথমত, আদম-হবা থেকে যিশু খ্রিস্ট আসার আগ পর্যন্ত ঈশ্বর সরাসরি ভাববাদীদের সঙ্গে কথা বলেছেন, কাজ করেছেন। দ্বিতীয়ত, এক ঈশ্বর মানুষ হয়ে, যিশু খ্রিস্ট হয়ে প্রকাশিত হলেন, কাজ করলেন। মানুষকে পাপের শাস্তি থেকে রক্ষা করার জন্য যিশু খ্রিস্ট নিজে শাস্তি গ্রহণ করে মৃত্যুবরণ করলেন এবং মৃত্যুকে জয় করে তিন দিনের দিন তিনি জীবিত হয়ে উঠলেন। যিশু খ্রিস্ট মৃত্যুকে জয় করে উত্থিত হওয়ার পরে ৪০ দিন এই পৃথিবীতে ছিলেন এবং শত শত মানুষকে দেখা দিলেন এবং শত শত মানুষের সামনে স্বর্গে জীবিত অবস্থায় উঠে গেলেন।

    তৃতীয়ত, যিশু খ্রিস্ট স্বর্গে চলে যাওয়ার পর থেকে যিশু খ্রিস্টের দ্বিতীয় আগমন না হওয়া পর্যন্ত এই সময়কাল এক ঈশ্বর আত্মা রূপে আমাদের মাঝে কাজ করে চলেছেন। অর্থাৎ এখন পবিত্র আত্মার কাজ চলছে। ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়, তার কোনো শরিক নেই। ঈশ্বর নিজেকে বিভিন্নভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা রাখেন। ঈশ্বর একজন তা নিয়ে তর্কের কোনো সুযোগ নেই। প্রভু যিশু খ্রিস্টের ঈশ্বরত্ব বিষয়টি খ্রিস্ট বিশ্বাসী ছাড়া অন্যরা সহজে বুঝতে পারেন না।

    যিশু খ্রিস্ট কেন পৃথিবীতে এসেছিলেন?
    যিশু নামের অর্থ ত্রাণকর্তা (নাজাতদাতা) বা উদ্ধারকর্তা বা রক্ষাকর্তা। ঈশ্বর পবিত্র আর মানুষ পাপী তাই পাপ নিয়ে ঈশ্বরের কাছে স্বর্গে যাওয়া যায় না। পাপের শাস্তি অনন্ত মৃত্যু। তাই প্রভু যিশু খ্রিস্ট পৃথিবীতে আসলেন যেন পাপী পাপের ক্ষমা পায় এবং অনন্ত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়ে মানুষ স্বর্গে যেতে পারেন। প্রভু যিশু খ্রিস্ট খ্রিস্টিয়ানদের জন্য পৃথিবীতে আসেননি কিন্তু সব মানবজাতির পরিত্রাণের জন্য এসেছিলেন।

    প্রভু যিশু খ্রিস্ট কী কী বিষয়ে পরিত্রাণ করতে পৃথিবীতে এসেছিলেন? যিশু খ্রিস্ট সর্ব বিষয়ে পরিত্রাণ করতে এসেছিলেন। ক. যিশু খ্রিস্ট আত্মিক পরিত্রাণকর্তা। খ. যিশু খ্রিস্ট দৈহিক পরিত্রাণকর্তা। গ. যিশু খ্রিস্ট মানসিক পরিত্রাণকর্তা। ঘ. যিশু খ্রিস্ট সামাজিক পরিত্রাণকর্তা।

    আত্মিক পরিত্রাণ হলো পাপ থেকে মুক্তি লাভ করা বা পাপের ক্ষমা লাভ করা। ফলে ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বর্গে যাওয়ার বিষয়ে নিশ্চয়তা রয়েছে। পবিত্র বাইবেল বলেন, ‘কেননা পাপের বেতন মৃত্যু কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ দান, আমাদের প্রভু যিশু খ্রিস্টতে অনন্ত জীবন।’ রোমিয় ৬:২৩ পদ। ‘কেননা অনুগ্রহেই বিশ্বাস দ্বারা তোমরা পরিত্রাণ পাইয়াছ এবং ইহা তোমাদের হইতে হয় নাই ঈশ্বরেরই দান তাহা কর্মের ফল নয় যেন কেহ অহঙ্কার না করে।’ ইফিষীয় ২:৮ পদ।

    যে কোনো পাপী ব্যক্তি প্রভু যিশু খ্রিস্টের ওপর বিশ্বাস করে তাকে গ্রহণ করলে সব পাপের ক্ষমা হবে এবং তিনি সুনিশ্চিত স্বর্গে যাবেন এই নিশ্চয়তা আছে। বিশ্বাসে পরিত্রাণ পাওয়া যায়, কাজের মাধ্যমে নয়, তবে যে যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে সেই ব্যক্তি সর্বদা ভালো কাজ বা সৎকাজ করবেন।

    দৈহিক পরিত্রাণ হলো সুস্থ-সবল থাকা, অধিক পরিশ্রম করতে পারা। দৈহিক পরিত্রাণ পেতে হলে নেশামুক্ত, ব্যভিচারমুক্ত পবিত্র জীবনযাপন করতে হবে। মানসিক পরিত্রাণ পেতে হলে চালাকি, ভণ্ডামি এবং প্রতারণা পরিত্যাগ করে সব ভাবনা-চিন্তার ভার যিশু খ্রিস্টের ওপর দিতে হবে কেননা তিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন। মানসিক পরিত্রাণপ্রাপ্ত ব্যক্তির ঘুম ভালো হয় এবং টেনশন ও ভয়মুক্ত জীবনযাপন করতে পারেন।

    সামাজিক পরিত্রাণের বিষয়ে পবিত্র বাইবেল বলেন, ‘যাহারা আমাকে প্রেম করে আমিও তাহাদিগকে প্রেম করি, যাহারা সযতেœ আমার অšে¦ষণ করে তাহারা আমাকে পায়। আমার কাছে রহিয়াছে ঐশ্বর্য ও সম্মান অক্ষয় সম্পত্তি ও ধার্মিকতা। যেন যাহারা আমাকে প্রেম করে, তাহাদিগকে স্বত্ববান করি, তাহাদের ভাণ্ডার সকল পরিপূর্ণ করি।’ (হিতো ৮:১৭-২১)। পবিত্র বাইবেল বলেন, ‘ন¤্রতা ও সদা প্রভুর ভয়ের পুরস্কার ধন, সম্মান ও জীবন।’ হিতো ২২:৪ পদ।

    সামাজিক পরিত্রাণ হলো সমাজে মাথা উঁচু করে সম্মানের সঙ্গে সবাই মিলেমিশে বসবাস করা। সামাজিক পরিত্রাণের মধ্যে অর্থনৈতিক পরিত্রাণ নিহিত থাকে। প্রভু যিশুকে ভালোবাসা ও তাকে অন্বেষণ করা তাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করা ও ন¤্রতার সহিত জীবন যাপন করা এবং তাঁর আরাধনা করা, দান করা ও অন্যের উপকার করলে সামাজিক পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

    বড়দিনের সার্থকতা কোথায়?
    আমাদের জীবনে বড়দিনের সার্থকতা কোথায়? উপহার দেয়া-নেয়াতে, ত্যাগ স্বীকারে, নাকি ভোগবিলাসে? বড়দিন সার্থক হবে যদি আমরা সব ধর্মের মানুষকে এবং যিশু খ্রিস্টকে ভালোবাসি। বড়দিন সার্থক হবে যদি আমরা যিশু খ্রিস্টকে অন্বেষণ করি এবং মানুষের উপকার করি। বড়দিন তখনই সার্থক হবে যখন আমরা মানুষের দুঃখ-কষ্টে ও বিপদে সান্ত¡না দিব এবং সাধ্য মতো উপকার করব। যিশু খ্রিস্ট একমাত্র পরিত্রাণকর্তা বা নাজাতদাতা যখন তা সবার কাছে প্রচার করব তখন বড়দিন সার্থক হবে। যখন আমরা যিশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করব, নির্ভর করব ও তাঁর ওপর আস্থা রাখব তখনই বড়দিন সার্থক হবে। বড়দিন সার্থক হবে যখন আমরা যিশু খ্রিস্টকে নিজ নিজ হৃদয়ে প্রথম স্থান দিব।

    যখন আমরা একে অন্যকে সম্মান করব, ভালোবাসব তখনই বড়দিন সার্থক হবে। আমাদের হৃদয় থেকে লোভ, হিংসা, অহঙ্কার ও মিথ্যা দূর করলেই বড়দিন সার্থক হবে। বন্ধুরা, আসুন আমরা একে অন্যকে ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। অন্যদের ক্ষতি করা থেকে নিজেদের বিরত রাখি। লোভ, হিংসা, মিথ্যা, চালাকি, ভণ্ডামি ও প্রতারণা থেকে নিজেকে বিরত রাখি। প্রভু যিশু খ্রিস্টের জন্মদিন সার্থক করে তুলি।

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS