আমাদের জীবনের জন্য জন্মিলেন যে মানুষটি

ads20
    বড়দিন বড়দিন প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিন। সামনে এসেছে সেই শুভ দিন। ষীশু খ্রীষ্ট পৃথিবীর সকল মানুষের মুক্তি ও কল্যানের জন্য আর্বিভুত হয়েছিলেন। তাই তো তাঁর জন্মদিন ”বড়দিন”। বড়দিন আমাদের বিশ্বাসিদের জীবনে ও খ্রীষ্টিয়ান সমাজের জন্য বড় আনন্দের ও মহামিলনের দিন। বড়দিনের পরই আসে নতুন বছর, তাইতো আমাদের কাছে মনে হয়- বড়দিন মানে পুরাতনের অবসান নতুনের আর্বিভাব। পুরাতনকে যেতে দাও নতুনকে স্বাগত জানাও। তাইতো সারা পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জন্মের দিনটির অপেক্ষায় থাকে। এই বড়দিনের অপেক্ষার শেষে প্রভুর জন্ম দিনের স্মরনে আয়োজন করে অনেক জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠান, ঘর সাজানো, নতুন নতুন পোশাক পরে গীর্জায় যাওয়া, আত্মীয় স্বজনের বাসায় আনন্দ করা, হরেক রকমের খাবার গ্রহণ ইত্যাদি।
    ভাল মন্দ বোঝার বয়স থেকেই শুনেছি খ্রীষ্টের জন্মের কথা, তারপরেও আমাদের কাছে এটি একটি নতুন ও বেশ আনন্দের। যীশুর জন্মের বারতা পেয়ে আনন্দিত হয়েছিলেন রাখালেরা, আনন্দিত হয়েছিলেন পন্ডিতেরা, আনন্দ গান করেছিল স্বর্গদূতেরা। উন্নত দেশগুলোতে ডিসেম্বর মাস মানেই বড়দিন।

    যীশু খ্রীষ্টের জন্ম বারতা বয়ে এনেছিলেন স্বর্গদূতেরা। আমরা পবিত্র বাইবেলে থেকে পাই, ঈশ্বর গালীল দেশের নাসারৎ নামক গ্রামে মরিয়ম নামে এক কুমারী মেয়ের কাছে গাব্রিয়েল দূতকে প্ঠাাইলেন। স্বর্গদূত মরিয়মের কাছে আসিয়া তাঁহাকে মঙ্গলবাদ করিয়া বলিলেন ”প্রভু তোমার সঙ্গে আছেন এবং তোমাকে অনেক আর্শীবাদ করিয়াছেন। নারীদের মধ্যে তুমি ধন্যা। এই কথা শুনিয়া মরিয়ম মনে মনে খুব অস্থির হইলেন এবং ভাবিতে লাগিলেন এই রকম কথার অর্থ কি হইতে পারে। তখন স্বর্গদূত তাঁহাকে বলিলেন ভয় করিও না, কারণ ঈশ্বর তোমাকে খুব দয়া করিয়াছেন। দেখ তুমি গর্ভবতী হইয়া একটি পুত্র সšতান প্রসব করিবে ও তাঁহার নাম যীশু রাখিবে। তাঁহাকে মহান বলা যাইবে ও ঈশ্বরের পুত্র বলা হইবে। পবিত্র আত্মা তোমার উপর আসিবেন এবং ঈশ্বরের শক্তি তোমার উপর থাকিবে। এই জন্য যে পবিত্র সšতান জন্মিবেন তাঁহাকে ঈশ্বরের পুত্র বলা হইবে, এবং একই সাথে স্বর্গদূত যোহনের জন্মের সংবাদটিও দিয়ে বলেছিলেন দেখ, এই বৃদ্ধ বয়সে তোমার আত্মীয়া ইলীশাবেতের গর্ভেও পুত্রসšতান আছে। লোকে বলিত তাহার ছেলে মেয়ে হইবে না কিন্তু এখন তাহার ছয়মাস চলিতেছে। ঈশ্বর এর কাছে অসম্ভব বলিয়া কোন কিছুই নাই। তখন মরিয়ম বলিলেন, আমি প্রভুর দাসী, আপনার কথা মতই আমার উপর সমস্থ কিছুই হোক। পরে স্বর্গদূত মরিয়মের কাছ হইতে চলিয়া গেলেন। মরিয়ম আর্শ্চ্যান্বিত হইলেন ও পরে আনন্দিত হইয়াছিলেন। আনন্দের সাথে তিনি তাড়াতাড়ি করিয়া যিহূদীয়া দেশের মধ্যে পাহাড়ী জায়গার একটি গ্রামে গেলেন এবং সখরিয়ের বাড়িতে ঢুকিয়া ইলিশাবেতকে মঙ্গলবাদ করিলেন। সংবাদটি এতই আনন্দের ছিল যে, মরিয়মের কথা শুনিয়াই ইলীশাবেত এর গর্ভের শিশুটি নাচিয়া উঠিল।


    এভাবে খ্রীষ্টের জন্মের অলৌকিকত্ব ধরনীতে অবস্থিত বিশ্বাসীদের আকর্ষন করে ও আনন্দ দেয় সন্দেহ নেই। প্রভুর জন্মে যেখানে সমস্থ পৃথিবী আন্দোলিত হয়েছিল, সেখানে ভীত হয়েছিল তৎকালীন শ্বাসক শ্রেনী। রাজার আসন করে নেবে হরণ। তাইতো প্রাচ্যের পন্ডিতদের কাছ থেকে নতুন রাজার আগমনের কথা শুনে হেরোদ রাজার সিংহাসন কেঁপে উঠেছিল, ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়েছিলো সেই হেরোদ রাজা, কিন্তু তার পরেও সমস্থ ধরণী আনন্দে মুখরিত হয়েছিল প্রভুর আগমনে। রাখালেরা তাদের পশুর পাল রেখে তাদের উপহার নিয়ে প্রচন্ড শীতকে উপেক্ষা করে যাত্রা করেছিলেন যিরূশালেমের উদ্দেশ্যে, পন্ডিতেরা গণনা করে যখন জানলেন এক মহান রাজার জন্ম হয়েছে তারাও সুদুর পথ পাড়ি দিয়ে রাজকীয় উপটৌকন নিয়ে হাজির হয়েছিলেন।
    প্রভু যীশুর জন্মের অভিনবত্য ও অলৌকিকত্ব হইল- স্বর্গ দূতের মাধ্যমে আগাম বাণী, এক কুমারী নারীর গর্ভে ধারণ ও লালিত হওয়া, পবিত্র আত্মার মাধ্যমে জন্ম গ্রহন, বিভিন্ন শ্রেনী ও পেশার মানুষের মাঝে দূতের মাধ্যমে সংবাদ প্রেরণ, গোয়াল ঘরে জন্মগ্রহণ ইত্যাদি।
    প্রভু যীশুর জন্ম ঈশ্বরের একটি পরিকল্পনা- ২য় শমুয়েল ৭: ৮-১৬ পদে আছে দায়ুদের কুলে এই ত্রানকর্তা বা মুক্তিদাতা জন্মগ্রহণ করিবেন এবং তিনি হবেন দায়ুদ সšতান। যিশাইয় ৭: ১৪ পদে আছে, দেখ সেই কণ্যা গর্ভবতী হয়ে পুত্র প্রসব করিবে এবং তাঁহার নাম হইবে ইম্মানুয়েল। যিশাইয় ৯: ৬-৭ পদে আছে ”একটি বালক আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করিবেন, যার নাম আশ্চর্যমন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা ও শাšিতরাজ। যোহান ৩:১৬ পদে আছে- ” কারণ ঈশ্বর জগতকে এমন প্রেম করিলেন যে আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন”। ঈশ্বর তিনি স্বর্গদূতের মাধ্যমে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে মরিয়ম গর্ভবতী হয়ে পুত্র প্রসব করিবেন এবং সেই সšতানের নাম ত্রানকর্তা রাখা যাইবে। যিনি প্রজাদের পাপ থেকে পরিত্রাণের জন্য এই পৃথিবীতে এসেছেন।  ঈশ্বর তার প্রজাদের রক্ষার জন্য তার প্রিয় পুত্রকে প্রেরণ করেছিলেন। মানুষ আমরা পাপী, অধম, নগণ্য তাইতো তাঁহার আগমন। ঈশ্বর তার সৃষ্টি মানুষকে রক্ষা করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন কিন্তু আমরা মানুষ তথাপি বিপথগামী হইয়াাছি। ঈশ্বর তার পুত্রকে প্রেরণের মধ্য দিয়ে তাঁহার মহাত্ম, তার গভীর ভালবাসা দেখিয়েছেন। কিন্তু মানুষ আমরা কি করেছি?
    একবার এক বক্তা তার বক্তব্যে বলেছিলেন- আমাদের সামনে এই মূহুর্তে যদি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আসেন তাহলে আমরা কি করিব? উত্তরে শ্রোতারা বলেছিলেন আমরা তাকে ফুলের মাল্য দিয়ে ভূষিত করিব, আবার তিনি বলিলেন- এবার যদি আমাদের মাঝে দেশের প্রধানমšী¿ আসেন তাহলে আমরা কি করিব? উত্তরে এবার শ্রোতারা বলিলেন আমরা সকলে আসন ছেড়ে উঠিয়া তাকে স্বাগত জানাব।এর কিছু পরে বক্তা বলিলেন- ধরুন এবার আমাদের মাঝে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এসেছেন, তাহলে আমরা কি করিব? এবার সকলেই নিরব, কোন জবাব নেই, আমরা প্রভুর জন্য কি করিব তা জানিনা, কিছু সময় নিরব থাকার পরে শ্রোতাদের মধ্য থেকে একজন বলিলেন- আমরা আমাদের চোখের জল দিয়ে তাঁহার চরণ ধুয়ে দিব, কারণ আমরা পাপী, আমাদের ক্রন্দন ছাড়া আর কিছুই করার নেই। আজকে আপনার আমার জীবনে একই প্রশ্ন –- প্রভু আমাদের কাছে আসলে আমরা সত্যিকারে কি করিতে পারিব? আমাদের জীবনের জন্য জন্মিলেন যে মানুষটি তার জন্য কি আমাদের কিছুই করার নেই?
    একজন কাঠ খোদাইকারী শিল্পীর সম্বন্ধে একটা কাহিনী প্রচলিত, যিনি কাঠ দিয়ে খোদাই করে একটা ছোট ছেলের মূর্তি তৈরী করলেন। এই কাঠের ছেলেটি দেখতে ছিল খুবই সুন্দর। শিল্পী তাকে পিনাকি নাম দিলেন। তিনি তার এই কাজের জন্য গর্ব বোধ করতেন, কিন্তু প্রাণ ছিল না বলে কাঠের ছেলেটি তাকে ভালবাসতে সক্ষম ছিল না।
    শিল্পী যদি কাঠের ছেলেটির মধ্যে একটা কথা বলার যন্ত্র ঢুকিয়ে দিতেন তাহলে কেমন হতো? তিনি হয়তোবা যস্ত্রের সাহায্যে ওটাকে হাঁটাতে পারতেন, এবং আমি তোমাকে ভালবাসি একথা বলাতে পারতেন, কিন্তু তাতে কি শিল্পী সন্তুষ্ট হতেন? তিনি কি রোমাঞ্চিত হয়ে বলতে পারতেন ”এখন আমি জানলাম আমার সৃষ্টি আমাকে ভালবাসে”? না, কারণ সেটা ভালবাসার প্রকাশ হত না, তা হত কোন রকম অনুভুতিহীন এক যান্ত্রিক কথা মাত্র।
    গল্পটি আরও বলে যে, কোনভাবে কাঠের ছেলেটি একদিন জীবন লাভ করল। তার নিজের মন ছিল, আর সে যখন বলত ”আমি তোমাকে ভালবাসি” তখন শিল্পী সত্যি সত্যিই শিহরিত হতেন। কেন? কারণ কাঠের ছেলেটিকে ঐ কথা বলতে বাধ্য করা হয়নি- সে ভালবাসার সাথেই তা বলেছিল।
    আমরা জানি যে গল্পটা গল্পই, কিন্তু ঈশ্বর যখন মানুষ সৃষ্টি করলেন তখন তিনি কিরূপ বোধ করেছিলেন এ থেকে আমরা তার একটা চিত্র পাই। তিনি তাকে সুন্দর করে তৈরী করেছিলেন, সিদ্ধাšত গ্রহণের ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টির সেরা সৃষ্টি হিসাবে তাকে তৈরী করেছিলেন। তিনি অনেক গুনাবলি মানুষের মাঝে দিয়েছিলেন। মানুষকে বড় সাধ করে তৈরী করেছিলেন। আর এই সাধের মানুষ্রে অধ:পতন তিনি কোন ভাবেই সইতে পারলেন না, তাইতো তিনি তার প্রিয় পুত্রকে পাঠালেন এই ধরা তলে যেন তার সাধের মানুষ বিনষ্ট না হয়, যেন রক্ষা পায়। পাপিষ্ট মানুষকে উদ্ধারের জন্য এই পৃথিবীতে ঈশ্বর তার প্রিয় পুত্রকে পাঠালেন।
    আর যীশু নিজেই বলেছিলেন, আমি এসেছি যেন, তাহারা জীবন পায় এবং উপচয় পায়- (যোহন ১০:১০ পদ)।

    খ্রীষ্টের জন্ম ঈশ্বরের ভালবাসার এক অপূর্ব নিদর্শন। ঈশ্বর মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক স্থাপনের জন্য প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে পাঠিয়েছিলেন। তিনি মানুষ বেশে ঈশ্বর ছিলেন।তাই খ্রীষ্টানদের জীবনে বড়দিন একটি অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ দিন। এই আগমনের সুসমাচার বিশ্ববাসিকে জানানোর দায়িত্ব আমাদের। শুভ হোক বড়দিন, শুরূহোক নতুন জীবন, শান্তি বয়ে আসুক পৃথিবীতে।

    লেখক: আইভান সমদ্দার
    খ্রীষ্টিয়ান মিশন, কোর্ট রোড মৌলভীবাজার


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS