যীশু খ্রীষ্ট কেন মানুষের মত হয়ে জন্মীলেন ?

ads20
    সামনে আসছে শূভদিন প্রভু যীশুর শুভ জন্মদিন। বড়দিন মানে নতুন চেতনা, বড়দিন মানে খ্রীষ্টের শুভ জন্মদিন। আমরা সকলেই জানি আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট এই ধরাধামে এসেছিলেন মানুষের পাপের জন্য। তিনি মানুষ বেসে এসেছিলেন, তিনি একদিকে যেমন মানুষ ছিলেন, ঠিক তেমনি অন্যদিকে ঈশ্বর ছিলেন। যীশু খ্রীষ্ট রক্ত মাংস বিশিষ্ট মানুষ ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তার জন্ম হয়েছিল পবিত্র আত্মার মাধ্যমে এবং একটি কুমারির গর্ভে। আমরা মথি ১:২১পদে দেখতে পাই স্বর্গদুত যোষেফকে বলেছিলেন ”কেননা তাঁহার গর্ভে যাহা জন্মিয়াছে তাহা পবিত্র আত্মা হইতে হইয়াছে”। সুতারং প্রভু যীশুর জন্ম পৃথিবীর ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রম ধর্মী ঘটনা। সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে একটি আনন্দের বিষয়। আমাদের কাছে এটি একটি মহামিলনের দিন। সকল বিশ্বাসী এক হয়ে আনন্দধনী করে, বাড়ি বাড়ি ঘুরে প্রশংসা গান ও কীর্তণ করে, পিঠা পায়েস তৈরী সহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর রাস্তাঘাট, দোকানপাঠ, ঘরবাড়ি আলোকশয্যায় আলোকিত করা হয়। এই উৎসবমুখর দিনই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, সেই যীশু খ্রীষ্টের জন্মদিনের কথা। সে সময়ে আনন্দের বারতা সর্গদূতেরা দিয়েছিল রাখালদের, দিয়েছিল পন্ডিতদের। আর তারা বিভিন্ন উপটৌকন সহ হাজির হয়েছিল যীশুকে দেখার জন্য বৈৎহেম নগরে। খ্রীষ্টের আগমনের মধ্যদিয়ে প্রকাশ পায় যে, ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সম্পূণভাবে পূর্ণ হয়েছে। ঈশ্বর যে সমস্থ প্রতিজ্ঞা আদম, হবা, দায়ুদ যিশাইয়, মীখা বা অন্য ভাববাদীদের কাছে করেছিলেন তা সম্পূর্ণ করেছেন। আমাদের ত্রান কর্তা খ্রীষ্টের জন্মদিনের কথা স্মরন করে খ্রীষ্টে বিশ্বাসীগণ উৎসব পালন করে। শুভ বড়দিনের আমজে ও আনন্দই আলাদা। যার যেমন সামর্থ সে সেইভাবে বড়দিনের আনন্দ উৎসব করার জন্য আয়োজন করে থাকে। 

    যীশু খ্রীষ্ট কেন মানুষের মত হয়ে জন্মীলেন ? 
    যীশু স্ব-ইচ্ছায় মানুষ হয়েছেন। তিনি নিজেকে নত করে স্বর্গ থেকে পৃথিবীতে এসেছেন । তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান ছিলেন তথাপি পাপী মানুষের জন্য মর্তে আগমন করেছেন। ফিলিপীয় ২:৫-৮ পদে ”খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক। ঈশ্বরের স্বরুপ বিশিষ্ট থাকুক। তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয়ে জ্ঞান করিলেন না । কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রুপ ধারণ করিলেন, মানুষের সাদৃশ্যে জন্মীলেন এবং আকারে প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন”।
    আমাদের সকলের একটি প্রশ্ন যীশু খ্রীষ্ট কেন মানুষের মত হয়ে জন্মীলেন ? কেন তিনি স্বর্গ থেকে এই পাপময় পৃথিবীতে নেমে আসলেন ? এর চারটি কারণ আছে। আমাদের মনে রাখার সুবিধার জন্য এই চারটি কারণ "প'' শব্দ দিয়ে আরম্ভ করা হয়েছে। 
    ১। প্রকাশ করা ----
    "ঈশ্বরকে কেহ কখনও দেখে নাই: একজাত পত্র, যিনি পিতার ক্রোড়ে থাকেন, তিনিই তাহাকে প্রকাশ করিয়াছেন । যোহন  ১ঃ ১৮ পদ। মানুষ যেন ঈশ্বরকে জানতে পারে সেই জন্য যীশু খ্রীষ্ট এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। আমরা ঈশ্বর সম্বন্ধে যীশু  খ্রীষ্টের কাছ থেকে জানতে পারি। তিনি ঈশ্বরকে প্রকাশ করেছেন। একটি ছেলেকে দেখে আমরা তার বাবা সম্বন্ধে কিছু জানতে পারি। কোন একটি ছেলের কাপর চোপর, তার কথা বার্তা ও আচার ব্যবহার দেখে তার বাবা সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা  করা যায়। অর্থাৎ বাবা ধনী কি গরিব, শিক্ষিত কি অক্ষিত, একটি মোটামুটি  ধারণা সাধারণ ভাবে মানুষের জন্মে । যেমন আমরা যদি একটি বাঙ্গালী ছেলেকে দেখি, আমরা কি মনে করব যে তার বাবা একজন বিলাতী ? নিশ্চয় না, ঠিক সে রকম যীশু  খ্রীষ্ট এ পৃথিবীতে আসার ফলে আমরা ভালভাবে ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে  পেরেছি। যেমন ধরুন যীশু  খ্রীষ্ট এ পৃথিবীতে আগমনের ফলে ঈশ্বররে প্রেমের কথাই প্রকাশ পায়,  
    "কারণ  ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে,
    আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, 
    যে কেহ তাঁহাকে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, 
    কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।  
    যীশু খ্রীষ্ট ঈশ্বরের বাক্য এবং ঈশ্বরের প্রকাশ, আদিতে বাক্য ছিলেন,  এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন। এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। আর সেই বাক্য মাংসে মূওিমান হইলেন। যোহন ১ঃ ১,১৪। ঈশ্বর তার পুত্রের মধ্যে দিয়ে আমাদের কাছে কথা বলেছেন। আমরা যদি কোন লোককে দেখি কিন্তু তিনি যদি কিছু না বলেন তবে আমরা তার সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারি না। আমরা বাইবেল থেকে স্পষ্টই দেখতে পাই যে,  ঈশ্বর যীশুর মধ্য দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলেছেন, ঈশ্বর পূর্ব্বকালে বহুভাবে ও বহুরুপে ভাববাদিগণকে পিতৃলোকদিগকে কথা বলিয়া,এবং এই শেষ কালে পুত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন্। ইব্রীয় ১ঃ ১। আমরা যদি কোন দেশ সম্বন্ধে পড়ি তবে আমরা অনেক কিছু বুঝতে পারি। মানচিত্র সে বিষয়ে আরও পরিষ্কার হয়। আমরা বই থেকে জানতে পারি দেশে আবহাওয়া, জলবায়ু, উৎপন্ন দ্রব্য বা অন্য সব কিছু। সেখানে যদি কোন এক বন্ধু থাকেন তিনি হয়তো আমাদের কিছু লিখে সেই দেশ সম্বন্ধে আরও একটু ভালো ধারণা দিতে পারেন। কিন্তুু সেই দেশ সম্বন্ধে আমাদের ধারণা আরও পরিষ্কার হয়, যদি সেই দেশের কোন লোক আমাদের কাছে এসে মুখে সব কথা বলেন। আমরা বিশ্বাস করব তার কথা সত্য, কারণ তিনি নিজে দেখে শুনে এবং সেই দেশ থেকে নানা অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরে এসেছেন। যীশু খ্রীষ্ট প্রথম থেকেই স্বর্গে ছিলেন আর তিনিই পৃথিবীতে এসেছেন এবং বলেছেন, আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না। যোহন ১৪ : ৬ পদ।
    ২। প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করা- আমরা জানি ঈশ্বর অনেক ভাববাদীর কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, একজন মুক্তিদাতা আসবেন, যেমন অব্রাহাম, দায়ূদ, যিশাইয়, মীখা প্রত্যেকের কাছে ঈশ্বর মুকিক্তদাতার আগমনের কথা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। যীশু খ্রীষ্টের এই পৃথিবীতে আগমন দ্বারা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা সকল পূর্ণ হল তাই পবিত্র বাইবেলে লেখা আছে-
    এই সকল ঘটিল, যেন ভাববাদী দ্বারা কথিত প্রভুর এই প্রতিজ্ঞা পূর্ণ হয়।” মথি ১:২২ পদ।
    ৩। প্রাণ দেওয়া---
    যীশু খ্রীষ্ট ৩৩ বছর কেবল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য আসেন নাই। মানুষকে পাপ থেকে রক্ষার জন্য তিনি বহু মূল্য প্রাণ মূল্য স্বরূপ দিয়েছিলেন। তাই পবিত্র শাস্ত্রে লেখা আছে, ”তোমরা ত জান, তোমাদের পিতৃপুরুষগণের সমর্পিত অলীক আচার ব্যবহার হইতে তোমরা ক্ষয়নীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই, কিন্তু নির্দোষ ও নিস্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরুপ খ্রীষ্টের বহুমূর‌্য রক্ত দ্বারা মুক্ত হইয়াছ। ১ পিতর ১ঃ১৮-১৯ পদ। আমরা দেখতে পাই যীশু এসছিলেন তাঁর বহুমূল্য প্রাণ দেবার জন্য যেন আমরা পাপের শৃঙ্খল খেকে ও শয়তানের দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে পারি।

    ৪। পরিত্রান দেওয়ার জন্য--
    যীশুর আগমন আমাদেরকে পরিত্রান দেয়। লুক ১৯ ঃ ১০ পদে লেখা আছে ”কারণ যাহা হারাইয়া গিয়াছিল, তাহার অন্বেষণ ও পরিত্রাণ করিতে মনুষ্যপুত্র আসিয়াছেন। যে মানুষ তাঁর কাছ থেকে দূরে সরে গেছে তাদের রক্ষা করার জন্য যীশু খ্রীষ্ট এসেছেন, তাই যীশু খ্রীষ্ট বলেছেন, কেননা আমি ধার্মিকদিগকে নয়, কিন্তু পাপীদিগকে ডাকিতে আসিয়াছি। মথি ৯ঃ১৩ পদ। ঈশ্বর আপনার আমার পিতা হতে চান। তিনি চান যেন আমরা তার সন্তান হই। তিনি অপেক্ষা করে আছেন কখন আমরা তাঁর কাছ আসব। 
    তাই বাইবেলে লেখা আছে----”দেখ আমি দ্বারে দাঁড়াইয়া আছি,ও আঘাত করিতেছি, কেহ যদি আমার রব শুনে ও দ্বার খুলিয়া দেয়, তবে আমি তাহার কাছ প্রবেশ করিব ও তাহার সহিত ভোজন করিব, এবং সেও আমার সহিত ভোজন করিবে। প্রকাশিত বাক্য-৩ ঃ২০ পদ।

    প্রভু যীশু খ্রীষ্ট নিজেকে প্রকাশ করেছেন, প্রতজ্ঞা পূর্ণ করেছেন,  প্রাণ দিয়েছেন,এবং আমাদের পরিত্রান দিয়েছেন। খ্রীষ্টের আগমন বিশ্বাসীদের কাছে একটি বিরাট অর্থ বহন করে। আর সেই কারণে সমস্ত পৃথিবীর বিশ্বসীগণ তাঁর জন্মদিনকে স্মরণ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, অনন্দ করে উল্লাসিত হয়, যেমনি হয়েছিল পন্ডিতেরা, রাখালেরা। আর এই আনন্দের সহভাগি শুধু বিশ্বসীরা নয়, সমগ্র বিশ্ববাসি এতে অংশগ্রহণ করতে পারে। কারণ বিশ্বাসিদের দায়িত্ব হচ্ছে অবিশ্বাসীদের কাছে সেই মহামানবের জন্মের বারতা পৌছে দেওয়া । আমরা নিজেরা আনন্দ করলাম আর জানতে পারল না আমদের প্রতিবেশী, এটাতো হতে পারে না। অনেক চার্চ বা তাঁর সদস্যবৃন্দ বড়দিনের অনুষ্ঠানকে তাদের সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। কিন্তু আমাদের প্রভু বলেছেন সমুদয় জগতে যাও এবং আমার কথা প্রচার কর। সেই দায়িত্বটি আমাদের। আমার জানা মতে বিলিগ্রাহামের অর্থায়নে একটি প্রকল্প বাংলাদেশে চালু হয়েছিল, অনেক কর্মী নিয়োগ দেওয় হয়েছিল, বিভিন্ন প্রশিক্ষন দিয়ে ষ্টাফ তৈরী করা হয়েছিল এবং সিডি ক্যাসেট বের করা হয়েছিল যেন অন্তত বড়দিনের দিন আমরা যাদের নিমন্ত্রন দেই তাদেরকে সেই বিলিগ্রাহামের প্রচারের ক্যাসেট বাজিেেয় প্রভুর আগমনের বারতা জানাতে পারি। এখনও প্রকল্পটি চালু আছে কিনা জানি না তবে প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল মহত ও প্রভু যীশুর আজ্ঞাবহনের একটি জলন্ত উদাহরণ্ । ছোট বেলার সেই বড়দিনের কথা স্মরন করতে গিয়ে মনে পরে যায় গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজেলার রামশীল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামের হিন্দু অধ্যশিত এলাকায় অবস্থিত কয়েকটি খ্রীষ্টিয়ান পরিবারের কথা। বরিশাল ব্যাপ্টিষ্ট বডিংএ থেকে লেখাপড়ার সুবাদে দেশের বাড়িতে খুববেশি থাকা হত না; কিন্তু বড়দিনের সময় লম্বা ছুটি মিলত বিধায় বড়দিনের আনন্দটা গ্রামের বাড়িতেই হত। আর সেই সময় যথারিতি বড়দিনের আয়োজন, বিভিন্ন রংঙের চিনা কগজ কেটে বিভিন্ন ডিজাইন করে শুভ বড় দিন লেখা হত, কে কত সুন্দর করে ডিজাইন করতে পারে তার পাল্লা চলতো আর সেই সব দিয়ে ঘর, উঠান আঙ্গিনা সাজানো হত, ঘর বাড়ি পরিস্কার করা এবং মা ও মা সমতুল্যদের পিঠা তৈরীর জন্য চাউলগুরা করা যেন প্রকাশ করত বড়দিনে আগমনের আমেজ। প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায় এর মানুষ বাড়ির আশপাশদিয়ে যাবার সময় জানতে চাইত এবং বলতো তোমাদের বড়দিন আসছে নিশ্চই!   বড়দিনের সময় ঘনিয়ে এলে রাতে চলবে কীর্তন গান। গান গাইবার মত অনেক লোকই ছিল আমাদের মন্ডলীতে; কিন্তু বাধসাধতো মৃদঙ্গ বাদক নিয়ে, কে বাজাবে বাজনা! ভাল বাজনা ছাড়াতো কীর্তন গান হয় না, কিন্তু দেখা যেতো আমাদে প্রতিবেশী হিন্দু সম্প্রদায়ের হরনে ফলিয়া যিনি ভাল বাজনা বাজাতে ও গান গাইতে পারতেন,লম্বা চুল ছিল তার, তাকে আমরা হরেন কাকা বলে ডাকতাম, সে বড়দিনের আগের রাতে কীর্তনগানে অংশগ্রহন করার জন্য তার দলবল নিয়ে হাজির, মনে হত আমাদের চেয়ে বড় অনুষ্ঠান তাদের। শুধু খ্রীষ্টিয়ান বাড়ি নয়, মন্ডলীর আশপাশের প্রায় বাড়িতেই কীর্ত গানের দল যেত, তাদের পক্ষ থেকেই উৎসাহ দেখাতো যেন আমরা কীর্তন গানের দল নিয়ে হিন্দু বাড়িতে যাই। অল্প কয়েকটি খ্রীষ্টিয়ান পরিবার থাকলেও সেই বড়দিনের রাতে তাদের অংশগ্রহনের ফলে মনে হত একটি বড় মন্ডলী। বড়দিনের দিন উপাশনার পরে প্রীতিভোজ, সেই ভোজেও থাকতেন তারা এ যেন এক মহা মিলন। এর পরে ভাগ্যেও পরিহাস আমাকে আসতে হলো ”হীড বাংলাদেশ” সংস্থায় চাকুরী নিয়ে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায়। বিশাল প্রজেক্ট, খ্রীষ্টিয়ান ষ্টাফ এর চেয়ে হিন্দু মুসলিম ষ্টাফ এর সংখ্যা অনেক বেশী ছিল। বড়দিন চিরাচরিত নিয়মে বাড়িতেই করা হতো। তাই বড়দিনে ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে আসতে হতো; কিন্তু কমলগঞ্জ প্রজেক্টে বড়দিনের আগে প্রাক-বড়দিনের অনুষ্ঠান করা হতো। আর সেই সময় একই সমস্যা। প্রাক বড়দিনের অনুষ্ঠানের কীর্তন গানে বাজনা কে বাজাবে? ঢোলের বাজনা ভাল না হলে কীর্তনগাণ হয় না। সেখানেও পাওয়া গেন পরেশ দেবনাথ নামে এক হিন্দু ভাই। সে ভাল বাজনা বাজাতে পারে, গানের গলাও ভাল তার। আর চলতো কীর্তনগান। এভাবে কমলগঞ্জে আমার ১৪বছরের কর্মজীনে আমদের গায়ক ও বাদক ভাই পরেশ দেবনাথকেই প্রাক বড়দিনের অনুষ্ঠানে আনন্দের সাথে ঢোল বাজাতে দেখেছি এবং তিনি আমাদের খ্রীষ্ট সংগীতের প্রায় সব গানই গাইতে পারতেন। অংশ গ্রহণ করেছেন সেখানকার সকল ধর্মের ষ্টাফ ও তাদের পরিবারের সদসরা, আমাদের আনন্দের সহভাগী হয়েছেন সকলে। আজ মনে হয় হারিয়ে গিয়েছে সেই সোনালী দিনগুলো। প্রতিবেশীদের অংশগ্রহণ গ্রামে কিছু থাকলেও শহওে নাই বললেই চলে । আজ প্রচার শুনাতে পয়সা খরচ কর্ েসিডি বের করতে হয়, কীর্তন গান নিজেরা না গেয়ে সিডি বাজানো হয়। আধুনকতার ছোয়া আমাদেরকে অনেক দুরে চলে যেতে সাহায্য করেছে। 
    যীশু খ্রীষ্ট আপনার আমার পাপের কারণে মানুষ বেসে এই ধরাধামে এছেছিলেন যেন, মানুষ জীবন পায়। আজ আমরা তার জন্মদিনকে স্মরণ করে আনন্দ করি,উল্লাস করি তার কারণ হল তার জন্মের বিষয়ে ভবিষ্যৎ বানী হয়েছিল, একটি কুমারীর গর্ভে পবিত্র আত্মার মাধ্যমে জন্ম হয়েছিল। তাঁর জন্মের পরে সর্গদূতের মাধ্যমে রাখালদের কাছে,পন্ডিতদের কাছে সেই আনন্দের সংবাদ জানানো হয়েছি । স্বর্গদূত ঘোষনা করলেন যে তিনি অর্থৎ মরিয়ম পুত্র প্রসব করবেন এবং তার নাম যীশু অর্থাৎ ত্রানকর্তা রাখা যাইবে। জন্মের সময় আকাশে নতুন তারা দেখা দিয়েছিল। এসবই অলৌকিক ঘটনাবহই প্রকাশ করে যীশু মহান ছিলেন।

    যীশু খ্রীষ্ট অদ্বিতীয় মানুষ ছিলেন ঃ- যীশু খ্রীষ্ট কিভাবে অদ্বিতীয় মানুষ ছিলেন ? তাঁর মনুষ্যত্বের কাছে অন্য কোন মনুষ্যত্বের তুলনা হয় না। পৃথিবীতে সমস্ত মানুষ প্রাকৃতিক নিয়মের বশীভুত হয়ে জন্মগ্রহণ করেছে। একটি শিশু জন্মগ্রহণ করলে নিশ্চই তার মা থাকবে। কেবল মা থাকলে চলবে না বাবাও থাকতে হবে। নর ও নারী ছাড়া সন্তানের অস্তিত্বের কথা চিন্তা করা যায় না। কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের বেলায় আমরা প্রাকৃতিক নিয়মের কথা চিন্তাও করতে পারি না। যীশুর কোন জাগতিক পিতা ছিলেন না। কিভাবে পিতা ছাড়া তিনি মরিয়মের গর্ভে এসেছিলেন ? এ বিষয়ে লুক ১:৩০,৩১,৩৫ পদে দেখি-স্বর্গদূত মরিয়মকে বললেন, মরিয়ম ভয় করিও না, কেননা তুমি ঈশ্বরের নিকটে অনুগ্রহ প্রাপ্ত হইয়াছ। তুমি পবিত্র আত্মার মাধ্যমে গর্ভবতী হইবে ও পুত্র প্রসব করিবে ও তাঁহার নাম যীশু রাখিবে------------।
    যীশুর জন্মে কোন নারী পুরূষের সম্বন্ধ ছিল না। মথি ১:১৮ পদে বলা আছে-”যীশু খ্রীষ্টের জন্ম এই রুপে হইয়াছিল। তাঁহার মাতা মরিয়ম যোষেফের প্রতি বাগদত্তা হইলে তাঁহাদের সহবাসের পূর্ব্বে জানা গেল, তাঁহার গর্ভ হইয়াছে পবিত্র আত্মা থেকে।
    যীশু নিস্পাপ ছিলেন, তাঁর মধ্যে পাপের কোন চিহ্ন ছিল না । ২য় করিন্থীয় ৫:২১ পধে-”যিনি পাপ জানেন নাই,তাঁহাকে তিনি আমাদের পক্ষে পাপস্বরুপ করিলেন, যেন আমরা তাঁহাতে ঈশ্বরের ধার্মিকতা স্বরুপ হই”। তিনি ঐশ্বরিক বা স্বর্গীয় ক্ষমতা বলে এ পৃথিবীতে এসেছেন। তাই বাইবেল স্পষ্ট বলে, ”প্রথম মনুষ্য মৃত্তিকা হইতে,মৃম্ময়, দ্বিতীয় মনুষ্য স্বর্গ হইতে।” ১ম করিন্থীয় ১৫: ৪৭ পদ। কারণ আদমে যেমন সকলে মরে তেমনি আবার খ্রীষ্টেই সকলে জীবন প্রাপ্ত হইবে- ১ম করিন্থীয় ১৫: ২২ পদ।

     
    উপসংহার ঃ
    যীশুর আগমন যেমন সমগ্র মানব জাতীর জন্য তেমন তার আনন্দের সহভাগী হতে হবে সকল ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলের। অনেক দরিদ্র খেটে খাওয়া বিশ্বাসী পরিবার রয়েছে যাদের সামর্থ নেই বড়ধরনের আয়োজন করার, সামর্থ নেই তার ছেলে মেয়ের পোষাক কিনে দেবার, তাদের কথা আমরা একটু চিন্তা করতে পারি। চিন্তা করতে পারি কিভাবে এই বড়দিনে অন্তত একটি অবিশ্বাসী পরিবারে কাছে যীশুর আগমনের উদ্দেশ্য বর্ননা করতে পারি। বড়দিন উৎযাপন সার্থক হবে যখন ধনী গরিবের বড়দিন উৎযাপনের বৈষম্য দূর হবে। যীশু খ্রীষ্ট যদি কেবল সাধারন মানুষ হতেন তবে তিনি একজন মানুষের বোঝা নিতে পারতেন কিন্তু তিনি মানুষ বেশী ঈশ্বর বলেই সমস্ত মানুষের পাপভার নিয়েছিলেন। একারনেই আমাদের আনন্দ যে তিনি আমার আপনার পাপের ভার নিয়েছেন। তাই তাঁর আগমনের দিনটিও আমদের আনন্দের।
    Wishing you Marry Christmas and Happy New year 2020

    আইভান সমদ্দার
    মৌলভীবাজার মিশন হাউজ 
    মৌলভীবাজর




    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS