মানব জীবনে বাপ্তিস্মের গুরুত্ব

ads20

    ভুমিকা: যদি কোন পিতা-মাতাকে প্রশ্ন করা হয়, আপনারা কি চান যে আপনাদের সন্তানেরা ধ্বংস/বিনষ্ট হউক ? নিশ্চয় কোন পিতা-মাতা বলবেন না, হ্যাঁ চাই; সকলেই বলবেন, আমরা আমাদের সন্তানদের একটি সুন্দর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। তাই স্বর্গীয় পিতাও চান না যে, কেউ ধ্বংস/বিনষ্ট হউক; তিনি চান যেন সমূদয় মানব জাতি পরিত্রাণ পায় অর্থাৎ পাপের ক্ষমা পেয়ে অনন্ত জীবন পায়। আর সেই কারণে সাধু পৌল তীমথিয়ের কাছে তার ১ম পত্রের ২ অধ্যায়ের ৪ পদে সেই বিষয়েরই বর্ণনা করেছেন। আর সেই জন্য মানব জীবনে বাপ্তিস্মের কোন বিকল্প নাই।

    যেহেতু পবিত্র বাইবেল এই কথা বলে, ‘ব্যবস্থার কার্য দ্বারা কোন প্রাণী তাঁহার (ঈশ্বরের) সাক্ষাতে ধার্মিক গণিত হইবে না।’ এস্থলে আবার প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে ব্যবস্থার কি প্রয়োজন নাই ? অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কারণ ব্যবস্থা না থাকলে আমরা বুঝতাম না, ‘পাপ কি ?’

    ২য় প্রশ্ন: যোহন বাপ্তাইজক কেন লোকদের বাপ্তাইজ করতেন ?

    উত্তর: যীশুর জন্য পথ প্রস্তুত করা, কারণ ঈশ্বর যিশাইয় ভাববাদী দ্বারা পূর্বেই ঠিক করে রেখেছেন যেন তিনি লোকদেরকে প্রভু যীশুর জন্য প্রস্তুত রাখতে পারেন।

    ৩য় প্রশ্ন: তাহলে যীশু কেন বাপ্তাইজিত হলেন ?

    উত্তর: কথায় আছে, ‘আইনের উর্দ্ধে কেউ নাই।’ স্বয়ং প্রভু যীশু খ্রীষ্টও ব্যবস্থার অধীনেই জাত হইলেন। অর্থাৎ শাস্ত্র বলে, “ কিন্তু কাল সম্পূর্ণ হইলে ঈশ্বর আপনার নিকট হইতে আপন পুত্রকে প্রেরণ করিলেন; তিনি স্ত্রীজাত, ব্যবস্থার অধীনে জাত হইলেন; যেন তিনি মূল্য দিয়া ব্যবস্থার অধীন লোকদিগকে (মানব জাতিকে) মুক্ত করেন, যেন আমরা (মানব জাতি) দত্তকপুত্রত্ব প্রাপ্ত হই ” - গালাতীয় ৪;৪ পদ।

    যোহন ১;১২ পদে বলা হয়েছে, ‘ কিন্ত যত লোক তাঁহাকে (যীশু খ্রীষ্টকে) গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার (যীশু) নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান (দত্তকপুত্রত্ব) হইবার ক্ষমতা দিলেন।’ যীশু খ্রীষ্টও একশত ভাগ মানুষ ছিলেন, তাই তিনিও বাপ্তিস্ম নিলেন এবং মানব জাতির জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেলেন। যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায় অর্থাৎ পাপের ক্ষমা পায়। আর এই কারণ প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তাঁর মহান আদেশে বলেছেন, “ তোমরা সমূদয় জগতে যাও, সমস্ত সৃষ্টির নিকটে সুসমাচার প্রচার কর। যে বিশ্বাস করে ও বাপ্তাইজিত হয়, সে পরিত্রাণ পাইবে; কিন্তু যে অবিশ্বাস করে, তাহার দন্ডাজ্ঞা করা যাইবে ”- মার্ক ১৬;১৫,১৬ পদ।

    বাপ্তিস্মের আবশ্যকতা সম্পর্কে নি¤েœ কিছু প্রশ্নের উত্তরপর্ব দেওয়া হইল:

    ১। বাপ্তিস্ম / নতুন জন্মের অর্থ কি ?

    উত্তর ঃ- জল এবং আত্মা  হইতে জন্ম গ্রহণ করা।

    মানূষ মায়ের গর্ভ থেকে একবার জন্ম নেয়। শিক্ষা-দীক্ষার দ্বারা মানুষ নিজেকে দ্বিতীয়বার জন্ম দেয়। যেন সে সমাজে কৃতিত্বের সঙ্গে বেঁচে থাকতে পারে। এখানেই শেষ নয়, স্বর্গ-রাজ্যে যাওয়ার জন্য মানুষকে আর একবার জন্ম নিতে হয়। আর সেই জন্ম সম্পর্কেই যীশু নীকদীমকে বলেছিলেন- যোহন ৩;১-৫ পদ। প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন নীকদীমকে নতুন জন্মের’ আহŸান জানান, তখন নীকদীম বুঝতে পারেন নি। তাই যীশু তাকে পাঁচ পদে বুঝিয়ে দিলেন যে, যদি কেহ জল ও আত্মা হইতে না জন্মে, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে না। যীশু খ্রীষ্টের এই শিক্ষাকে উপেক্ষা করার কোন উপায় নাই আমাদের।

    ২। বাপ্তিস্মের প্রয়োজন কেন ?

    উত্তর ঃ- কারণ বাপ্তিস্ম ছাড়া কেহ স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।কারন এটি যীশুর আদেশ, যোহন ৩ অধ্যায় অনুসারে। কারণ তিনি নিজেই বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন এবং সমগ্র মানব জাতির জন্য একআদর্শ রেখে গিয়েছেন।

    ৩। আমি কেন বাপ্তিস্ম গ্রহণ করব ?

    উত্তর ঃ- কারণ আমি পাপী, আমার নতুন জন্মের প্রয়োজন, পাপ নিয়ে আমি কখনও ঈশ্বরের নিকটে যাইতে পারি না।কারণ - যীশুই একমাত্র পথ ও সত্য ও জীবন- যোহন ১৪;৬ পদ।

    ৪। বাপ্তিস্মের জন্য সাধারণঃ বয়সের সময় সীমা কি ?

    উত্তর ঃ- সাধারণতঃ ১৮ বছরের যে কোন ছেলেমেয়েদের বাপ্তিস্ম দেওয়ার উপযুক্ত সময়। তবে যদি কোন সন্তান ১৮ বছরের পূর্বে  তাঁর নিজের পাপ ও পরিত্রাণ সম্পর্কে বুঝতে পারে, এবং সেচ্ছায় আগ্রহী হয় যে, এখন তাঁর বাপ্তিস্মের জন্য কোন বাঁধা নেই, ঠিক তখনই মন্ডলী তাঁকে বাপ্তিস্ম দিতে বাধ্য- প্রেরিত ৮:২৬-৩৯ পদ অনুসারে। একজন নপুংসক ফিলিপের দ্বারা এমনি ভাবেই বাপ্তাইজিত হয়েছিল।

    উত্তর ঃ- খ্রীষ্টকে গ্রহনের মধ্য দিয়ে ( যোহন ১:১২ পদ অনুসারে )

    ৫। বাপ্তিস্ম সম্পর্কে সাধারণ ধারনা ঃ-

    উত্তর: সম্পুর্ন পানির মধ্যে নিমজিত হওয়া অর্থ পূরাতন স্বভাবকে/চরিত্রকে কবরে সমাধিস্থ করা/ত্যাগ করা এবং জল থেকে উপরে উঠে আসার অর্থ হল খ্রীষ্টকে পরিধান করা অর্থাৎ খ্রীষ্টিয় স্বভাব পরিধান করা। ‘আমরা তো পাপের সন্বন্ধে মরিয়াছি, আমরা কি প্রকারে আবার  পাপে জীবন যাপন করিব ?অথবা তোমরা কি জান না যে, আমরা যত লোক খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, সকলে তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত হইয়াছি ? অতএব আমরা তাঁহার মৃত্যুর উদ্দেশে বাপ্তিস্ম দ্বারা তাঁহার সহিত সমাধিপ্রাপ্ত হইয়াছি; যেন, খ্রীষ্ট যেমন পিতার মহিমা দ্বারা মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপিত হইলেন, তেমনি আমরাও জীবনের নূতনত্বে চলি’- রোমীয় ৬;২-৪ পদ।

    উদাহরণ ঃ- ২করি ৫:১৭ পদ = ফলতঃ কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পূরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে। 

    ৬। পরিত্রাণ এর সাধারণ ধারণা :-

    ক)  কারণ তুমি যদি ‘মুখে’ যীশুকে প্রভু বলিয়া স্বীকার কর, এবং‘হৃদয়ে’ বিশ্বাস কর যে, ঈশ্বর তাঁহাকে মৃতগণের মধ্য হইতে উত্থাপন করিয়াছেন,তবে পরিত্রাণ পাইবে। কারণ লোকে হৃদয়ে বিশ্বাস করে, ধার্ম্মিকতার জন্য, এবং মুখে স্বীকার  করে , পরিত্রাণের জন্য- রোমীয় ১০;৯,১০ পদ।  

    খ) সেই যীশু আমাদের অপরাধের নিমিত্ত সমর্পিত হইলেন, এবং আমাদেরধার্ম্মিকতার নিমিত্ত উত্থাপিত হইলেন- রোমীয় ৪;২৫ পদ। 

    ৭। ব্যবস্থা কি পাপ হইতে আমাদের মুক্তি দিতে পারে ? উত্তর ঃ- না।

    ৮। তাহলে ব্যবস্থা আমাদের কি দেয় ?  উত্তরঃ- পাপ সম্পর্কে জ্ঞান দেয়- রোমীয় ৩;২০।

    ৯। আমরা সকলে কি ?  উত্তর ঃ- পাপী - রোমীয় ৩;১০-১২, ২৩ পদ।

    ১০। পাপ কি ?    উত্তর ঃ- ঈশ্বরের অবাধ্যতাই পাপ।

    ১১। পাপের বেতন কি ? উত্তর ঃ- মৃত্যু ( রোমীয় ৬;২৩ পদ)কিন্তু ঈশ্বরের অনুগ্রহ দান আমাদের প্রভূ যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।

    ১২। একজন খ্রীষ্টি বিশ্বাসী মারা গেলে কি হয় ?

    উত্তর ঃ- পরমদেশে যায় অর্থাৎ খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের আত্মা যেখানে থাকে। আবার একথাও বলা যায় যে, আমরা সকলে খ্রীষ্টে জীবিত থাকি, কারণ প্রভূ যীশু খ্রীষ্ট মার্থাকে বলেছিলেন, আমিই পুনরুত্থান ও জীবন; যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে; আর যে কেহ জীবিত আছে, এবং আমাতে বিশ্বাস করে, সে কখনও মরিবে না, ইহা কি বিশ্বাস কর ?। যোহন ১১;২৫,২৬। 



    উদাহরণ: প্রকা ১৪;১৩ = পরে আমি স্বর্গ হইতে এই বাণী শুনিলাম, তুমি লিখ, ধন্য সেই মৃতেরা যাহারা এখন অবধি প্রভুতে মরে; হ্যাঁ, আত্মা কহিতেছেন, তাহারা আপন আপন শ্রম হইতে বিশ্রাম পাইবে; কারণ তাহাদের কার্য সকল তাহাদের সঙ্গে সঙ্গে চলে।

    বিঃদ্রঃ পরিবর্তন নতুন জন্মের পরে, কথাটি মনে রাখতে হবে। কারণ আমি আগুনের মধ্যে হাত দিয়েছি। এখন থেকে আমার জীবন খ্রীষ্টের জন্য প্রতিদিন দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হবে এবং শেষ পর্যন্ত তাঁহাতে স্থির থাকতে হবে। কারণ পবিত্র শাস্ত্র এই কথা বলে, যে কেহ শেষপর্যন্ত স্থির থাকিবে, সেই পরিত্রাণ পাইবে। মথি ২৪;১৩ পদ। আর এই কারণে বলা হয়ে থাকে,‘ নতুন জন্ম ’ হইল পরিত্রাণের জন্য বায়না দেওয়া।

    # পবিত্র প্রভুর ভোজ: আমাদের মন্ডলীতে পবিত্র প্রভুর ভোজের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে। অনুষ্ঠান শুরুর প্রথমে আহবান করা হয়, ‘ যারা ব্যক্তিগত জীবনে প্রভু যীশু খ্রীষ্টকে ত্রাণকর্তা ও মুক্তিদাতা হিসাবে গ্রহণ করেছেন; কেবল মাত্র তারাই এই পবিত্র প্রভুর ভোজে অংশ গ্রহণ করবেন।’ তাহলে এখানে বাপ্তিস্মের বিষয়টি খুবই পরিস্কার যে, “বাপ্তিস্ম” ছাড়া কেহ এই পবিত্র প্রভুর ভোজে অংশ গ্রহণ করতে পারে না।

    আর এই কারণে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট শিষ্যদের তথা ধর্মিয় নেতাদের উদ্দেশে শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদের মধ্যে জীবন নাই’ - যোহন ৬;৫৩ পদ। যে জীবন দিতে ঈশ্বর স্বর্গ ছেড়ে এই মর্তে এলেন, এবং মানব জাতির জন্য ক্রুশে তাঁর জীবন উৎসর্গ করলেন; যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়, আমেন।

    # অনেকে মনে করেন যে, যীশুর ক্রুশের সেই দস্যু তো বাপ্তিস্ম নেয় নি, কিন্তু প্রভু তাকে স্বর্গে যাওয়ার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। হ্যা, আমি অস্বীকার করছি না, কিন্তু এস্থলে জ্ঞান দেখা যায়। যেখানে প্রভু সরাসরি বলেছেন, সেখানে আমাদের কোন কিছু বলার থাকে না। কারণ ঐ সময়ে ঐ দস্যুর বাপ্তিস্মের সময় ছিল না। পরিবেশ পরিস্থিতির উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। কিন্তু আমাদের সময় আছে, তাই আজ বিশ্বের প্রতিটি মন্ডলীতে বাপ্তিস্মের জন্য পূর্ব থেকে শিক্ষা দেওয়া হয় যেন সকলে জেনে-শুনে, সেচ্ছায় বাপ্তিস্ম গ্রহণ করতে পারে। মনে রাখতে হবে, জেনে-শুনে কেউ নরকে যেতে চাইবে না।

    উপসংহার: যেহেতু আদমের পাপের বেতন হিসাবে এই জগতে মৃত্যু মানব জীবনে রাজত্ব করছে অর্থাৎ আমরা মারা যাই। কিন্তু ঈশ্বর তাঁর পুত্রের মাধ্যমে আমাদের অনুগ্রহ দান করেছেন, যেন আমরা দ্বিতীয় মৃত্যু দ্বারা কবলিত না হই কিন্তু অনন্ত জীবন পাই। আর সেই জন্যই মানব জীবনে বাপ্তিস্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

    লেখক: পাষ্টর কিশোর তালুকদার


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS