রংপুর মন্ডলীর ইতিহাস

ads20

     রংপুর মন্ডলীর ইতিহাস 

    (শিকড়ের সন্ধান)

    সকলকে খ্রীষ্টীয় শুভেচ্ছা জানাই। আমি এলিস অরুণ মজুমদার রংপুর সদর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের সহ-সম্পাদক হিসাবে প্রথম মনোনীত হই ১৯৮৩ সালে এবং পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে সম্পাদকের দ্বায়িত্ব পালন করার সময় থেকে রংপুর সদর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চের প্রতিষ্ঠার দিনক্ষণ খোঁজ করি। কিন্তু মন্ডলীর কাগজ পত্রে তা না পেয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে বাংলাদেশের মন্ডলীর ইতিহাস বই সংগ্রহ করতে থাকি এবং মন্ডলীর প্রাচীনদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকি। যে সমস্ত বই আমি সংগ্রহ করেছি তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ হলো রেভাঃ প্রিয় কুমার বাড়ৈ, শ্রী মথুরা নাথ, রেভাঃ রাজেন্দ্র নাথ বাড়ৈ, ক্ষিতিস চন্দ্র দাসের বই। যাদের কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয় তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তাপস মজুমদার, রেভা: শ্যামসন টুডু, মুকুল দাস, গ্রেসই ডস (অস্ট্রেলিয়ান মিশনারী), আনন্দ কর্মকার, শশিমুখি মজুমদার ইত্যাদি।  


    তথ্যের ভিত্তিতে আমি আপনাদের রংপুর মন্ডলীর ইতিহাস সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে চাই। আমি রংপুর মন্ডলীর ও সম্মিলনীর ইতিহাস খুজতে গিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন খ্রীষ্টিয় ইতিহাস বই সংগ্রহ ও পড়াশুনা করি। যেমন এনসিসি থেকে প্রকাশিত গডন সোডির লেখা ইতিহাস বই, প্রফেসর দিলীপ পন্ডিত, রেভাঃ প্রিয় কুমার বাড়ৈ, শ্রী মথুরা নাথ, রেভাঃ রাজেন্দ্র নাথ বাড়ৈ সহ অনেকের বই সংগ্রহ ও পড়াশুনা করে জানতে পারি যে, ১৮৫০ সালের প্রথম দিকে এই মন্ডলী শুরু হয়েছিল বলে ধারনা লাভ করি। কারণ হিসাবে গডন সোডির লেখা বইতে দেখা যায় যে, ১৮৩০ থেকে ১৮৫৫ সালের মধ্যে একজন মিশনারী মিঃ জোনস্ শ্রীরামপুর থেকে রংপুরে প্রচার করতে আসেন। গডন সোডির লেখা বইয়ে আরো দেখা যায় যে, ১৮৬০ সালের শ্রীরামপুরের রির্পোটে, রংপুরের খ্রীষ্টিয়ানদের উপেক্ষা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।  সেই সময় রংপুর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ জলপাইগুড়ি আঞ্চলিক সংঘের অধিনে ছিল। যদিও রংপুর মন্ডলী জন্ম তারিখ কোথাও উল্লেখ নেই তবে কয়েকটি বিষয় পর্যালোচনা করলে অনুমান করা যায় যে, এই মন্ডলী শুরু হয়েছিল ১৮৫০ দশকে। কারণ হিসাবে আমার দাদু ইন্দ্রভুষণের জন্ম তারিখ থেকে হিসাব করা যায় কারণ ইন্দ্রভুষণ মজুমদার খ্রীষ্টিয়ান পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার ঠাকুরদাদা খ্রীষ্টিয়ান  হয়েছিলেন। আমার দাদুর নাম ইন্দ্রভুষণ মজুমদার এবং জন্ম তারিখ ০২/১০/১৮৭৯ মৃত্যু ২১/০৬/১৯৫৭। দাদুর বাবার নাম শ্রীনাথ মজুমদার ও কাকার নাম যাকোব মজুমদার। ইন্দ্রভুষণ মজুমদারের ঠাকুরদাদার নাম রামচন্দ্র মজুমদার যিনি ১৮৪৫ সালের দিকে খ্রীষ্টিয়ান হয়েছিলেন বলে জানা যায়। তারপর ১৮৫০ সালের দিকে রামচন্দ্র মজুমদার তার নিজ বাড়ীর পাশের্^ একটি চার্চ বিল্ডিং তৈরী করেন যা কৈলাশ রঞ্জন হাই স্কুলের পাশের্^ ছিল। রামচন্দ্র মজুমদার ছিলেন রংপুরের দেওয়ান বাড়ীর জমিদার নৃসিংহ মজুমদারদের বংশধর ছিলেন। কাকিনার জমিদার শম্ভুচন্দ্র রায় চৌধুরীর (১৮২৩-১৮৬৮) * ১ম দত্তক পুত্র কৈলাশরঞ্জন রায় চৌধুরীর নাম স্মৃতি রক্ষার্থে কৈলাশ রঞ্জন স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল যা অদ্যাবধি আছে। 



    ইতিহাসের পাতা থেকে আজ পর্যন্ত রংপুর পৌর এলাকায় রংপুর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ থাকা অবস্থায়, সেই রাস্তার নাম চার্চলেন বলে পরিচিত এবং এই নামে ভুমি অফিসের নথিভুক্ত রয়েছে। চার্চলেন এলাকায় রামচন্দ্র মজুমদারের বংশধরদের বসবাস আছে যা মজুমদার বাড়ী নামে খ্রীষ্টিয়ান সমাজের সকলেই চেনে। এই রাস্তার পাশের্ একটি বাম্ম্র মিন্দির ছিল/আছে (যা এখন পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে)। তাপস মজুমদার ও প্রভাত মজুমদারের কাছে শোনা যায় যে ১৯০৮ সালে চার্চলেন এলাকা (বর্তমানে সিটি/পৌর বাজার) থেকে ধাপে চার্চ স্থানান্তরিত হওয়ার পর গির্জার ঘরের একটি স্তম্ভ ছিল তা যে মানুষটি ভাঙ্গার দায়িত্ব নিয়ে ভাঙ্গার কাজ যেদিন শেষ করেছিলেন সেই রাতেই তার মৃত্যু হয়। 


    ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় যে, রেভাঃ জন এলিসন নামে একজন অষ্ট্রেলিয়ান মিশনারী ১৮৯১ সালে রংপুর পরিদর্শন কালে শহরের খ্রীষ্ট্রিয়ানদের সঙ্গে সহভাগিতা রক্ষা করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৮৯৬ সাল থেকে তিনি রংপুরে মিশনারী হিসাবে স্থায়ীভাবে বসবাস করা শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯০৮ সালের ২০ জুন রংপুর মিশন ধাপে স্থাপন করেন ও মন্ডলী স্থানান্তরিত করেন। রংপুর ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ধাপে প্রতিষ্ঠার সময় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে যারা ছিলেন তারা হলে রংপুর মন্ডলীর সদস্য মিঃ ইন্দ্রভুষণ মজুমদার, রামচরন সরকার ও আজগর আলী মল্লিক এবং রেভাঃ জে এলিসন ও মিসেস এলিসন।  

     ১. Baptist in Bangladesh – Rev. Gordon Soddy (M.A BMS Staff 1933 to 1974)

     ২. রংপুরের ইতিহাস - ড. মুহম্মদ মনিরুজ্জামান পৃষ্ঠা ১৬০

     ৩. বাংলাদেশের খ্রীষ্টিয়ান ইতিহাস - প্রফেসর দিলীপ পন্ডিত 



    রংপুর ব্যাপ্টিষ্ট মিশন ধাপ, রাধাবল্লভ এ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, আজগর আলী মল্লিক কাউনিয়া এলাকায় একটি মন্ডলী পরিচালনা করতেন। ১৯১২ সালে রংপুর থেকে মিঠাপুর উপজেলার বলদিপুকুর এলাকায়, ১৯১৩ সালে বদরগঞ্জ উপজেলা এলাকার লোহানীপাড়া এবং গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা এলাকার বাণীহারাতে আরও তিনটি মন্ডলী স্থাপন হয়। এরপবর্তীতে গাইবান্ধা সদর, নওয়াবগঞ্জ উপজেলার (স্বপ্নপুরী) এলাকায় ঘাড়ঘুটু, খালিফপুর, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় দইহারা, এবং পীরগঞ্জ উপজেলার চত্রা এলাকায় আরও ৫টি মন্ডলী স্থাপিত হয়।  ১৯৮৮ সালে মোট ১২ টি ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ, রংপুর আঞ্চলিক ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ সংঘের অধিনে ছিল যেমন কাউনিয়া উপজেলায় ঢোলখানা ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ, বদরগঞ্জ উপজেলায় আমতলা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ। ২০০৭ সাল থেকে বর্তমানে ২০২১ সালে মোট ৪৩ টি মন্ডলী রয়েছে। তবে উল্লেখ্য গাইবান্ধা সদর, ঢোলখানা, আদমপুর ব্যাপ্টিষ্ট মন্ডলীর বর্তমানে অস্থিত্ব সংকটে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। 


    রংপুর এলাকায় মন্ডলী স্থাপনে অনেক পালক, প্রচারক ও চার্চ সম্পাদকের অবদান রয়েছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য যারা হলেন  ইন্দ্রভুষণ মজুমদার, রেভাঃ জে এলিসন, ডেভিট পাহান, বিশ্রাম পাহান (বলদিপুকুর), প্রফেসর ব্যানার্জী (গাইবান্ধা), রেভা: এ, জি লুইস, বীরসিংহ হাসদা, যাকোব কুজুর, রেভাঃ চুনি মন্ডল, রেভাঃ মার্টিন আউক, রির্চাড অনুপ মজুমদার (দিপু), রেভাঃ সখরীয় বৈরাগী, রেভাঃ যোনা মুর্ম্মু, বালেয়া টুডু (চত্রা), স্তিফান মিনজি (বলদিপুকুর), ম্যানুয়েল কুজুর, দুখন মার্ডি, বিপিন লাকড়া, নাথন টুডু উল্লেখযোগ্য। 


    তথ্য সংগ্রহ ও সংকলনঃ

    এলিস অরুণ মজুমদার লিটু

    সদস্য - রংপুর সদর ব্যাপ্টিষ্ট চার্চ



    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS