বীর সন্ন্যাসী সাধু সুন্দর সিং

ads20

    বীর সন্ন্যাসী সাধু সুন্দর সিং


    সবার আগে আপডেট পেতে পেইজে লাইক দিন


    আমাদের সকল সংগ্রহ শুধু মাত্র আপনাদের মনোঞ্জনের জন্য
    আপনাদের প্রয়োজন মতে যেকোন খ্রীষ্টিয়ান বইগুলো সংগ্রহ করে পড়ুন
    PDF ফাইল ডাউনলোড করতে নিচের Download PDF ক্লিক করুন
    বীর সন্ন্যাসী সাধু সুন্দর সিং
    সাধু সুন্দর সিং ১৮৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ৩ সেপ্টেম্বর পাতিয়ালা রাজ্যের রামপুরে এক ধনী শিখ পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তার ধর্মভীরু মা দেখলেন যে, তার ছেলে শুধু শিখ ধর্মেই নয়, সংস্কৃত এবং বিশেষভাবে ভগবদগীতা সম্পর্কেও অনেক জ্ঞান লাভ করেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি এ সকল ধর্মে কোন শান্তি খুজেঁ পাননি। তিনি অনেকদিন পর্যন্ত খ্রীষ্ট-ধর্মকে উপেক্ষা ও ঘৃণার চোখে দেখেছেন। এই ঘৃণা চরমভাবে প্রকাশ পেল যখন ১৯০৪ খ্রীষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর, সবার সামনে একটি বাইবেল পুড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু এর পর থেকেই তাঁর জীবন যেন অন্য রকম হয়ে গেল।
    বাইবেল পোড়ানোর মধ্যে দিয়ে ঐ সময়ে তাঁর অজ্ঞাতে তাঁরই অন্তরে খ্রীষ্টের বীজ রোপিত হয়। সত্য জানার আগ্রহে তিনি ব্যাকুল হলেন। পরিশেষে, তিনি এই প্রতিজ্ঞা করলেন যে, যদি কোন ‘সত্য’ থেকে থাকে, তবে আজ রাতেই তাকে দেখা দিতে হবে, তা না হলে তিনি ট্রেনের চাকার তলায় মাথা রেখে আত্মহত্যা করবেন। শীতের  এক রাতে তিনি উপবাসসহ সারারাত ধ্যানে মগ্ন থাকলেন, আর অপেক্ষায় থাকলেন, সেই অজানা সত্যের দর্শনে। সকাল হয়ে আসছে, কিন্তু তিনি কোন দর্শন না পাওয়ায় পূর্ব প্রতিজ্ঞানুসারে আত্মা-হত্যার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এই সময়ে তিনি ‘খ্রীষ্টের’ এক দর্শন পেলেন। কে যেন বলছেন, ‘‘আমি পথ, আমি তোমাকে রক্ষা করার জন্য এসেছি’’ । তাঁর মন শান্ত হলো এবং তিনি নিশ্চিৎ হলেন যে, এতোদিন ধরে তিনি যে সত্যের সন্ধান করছিলেন তা আর কেউ নয়,‘‘জীবন্ত প্রভু যীশু খ্রীষ্ট’’। এর পর সকলের সামনে তিনি খ্রীষ্টকে গ্রহণ করেন।  কিন্তু এর ফলে তাঁর পরিবার ও শিখ সম্প্রদায় থেকে অনেক বাধা আসে, এমন কি তাকে মেরে ফেলার জন্য বিষ পর্যন্ত খাওয়ান হয়। তবে তিনি যাঁকে বিশ্বাস করেছেন, তিনিই তাকে সকল বাধা থেকে রক্ষা করলেন। শত বাধা সত্তে¦ও তিনি ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর সতেরতমম জন্ম বার্ষিকীতে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেন। তারপর তিনি নিজ পরিবার পরিজন ত্যাগ করে প্রভুর উদ্দেশে পথ চলতে শুরু করেন।
    তাঁর প্রকৃত আহবান বুঝবার জন্য তিনি কিছু সময় নেন। তিনি ১৯০৫-১৯১১ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত লাহোরে ধর্মতত্ত্ব বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। এই সময়ে তিনি অনুভব করলেন যে, অভিষিক্ত যাজক পদের জন্য তিনি মানানসই নন, তাই তিনি গৃহত্যাগী সাধু হয়ে ভ্রমণশীল প্রচারকের জীবন গ্রহন করেন। তিনি ভারতীয় উপমহাদেশে ছোট বড় অনেক স্থানে ও প্রতিবেশী হিমালয়ের কাছাকছি দেশগুলোতে পায়ে হেঁটে প্রচার করেছেন । শ্মশ্রুম-িত ও গেরুয়া পোশাকধারী সাধু হিসেবে তিনি সর্বসাধারণের কাছে সুপরিচিত ছিলেন। এরপর ১৯২০ এবং ১৯২২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ব্রিটেনে তাঁর প্রচার কাজ আরম্ভ করেন। এছাড়া ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও তিনি প্রচার করেছেন। সর্বত্রই তিনি তাঁর নিজের দেশের মধ্যে  বিশেষভাবে হিমালয়ের কাছাকাছি দেশগুলোতে তিনি প্রচার করতে চাইতেন, কিন্তু আপনজনেরা তাকে গ্রাহ্যই করত না। নেপাল ও তিব্বতের দেশগুলোতে প্রচার করতে গিয়ে তিনি অনেক কষ্ট ও অত্যাচার সহ্য করেছেন। কারণ তখন ঐ সব দেশে সুসমাচার প্রচার করা নিষেধ ছিল। তাঁর জীবনে অনেক কষ্টের অভিজ্ঞতা আছে, যা প্রায় সাধু পৌলের মতোই। তাঁকে মৃত্যু-গুহায় ফেলে দেওয়া হয়েছে, হিং¯্র পশুদের লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং শারীরিক নির্যাতন তো ছিলই, কিন্তু প্রতিবারই তিনি প্রভুর অনুগ্রহে রক্ষা পেয়েছেন।
    সাধু সুন্দর সিং বলতেন, আমরা যখন স্বর্গে যাব তখন প্রভুর জন্য তাঁর ক্রুশ বহনের সুযোগ আমাদের কেউ দেবে না। আজ আমরা ক্রুশের পথ পরিহার করতে পারি কিন্তু তা করলে প্রভু যে রক্তমাখা পথে হেঁটেছিলেন, সে পথে হাঁটার সুযোগ অনন্তকালেও আর পাওয়া যাবে না। প্রিয় প্রভুর সঙ্গে যখন সাক্ষাৎলাভের সৌভাগ্য হবে, তখন দেখতে পাব তাঁর হাতে পায়ে পেরেকের দাগ। তখন আমাদের মনে পড়বে যে, কত যতœ করে আমরা পৃথিবীতে ক্রুশের পথ পরিহার করেছি, তখন কি মনস্তাপ হবে বলুন তো? ঈশ্বর করুন যেন সেই মনস্তাপে পড়তে না হয়, যেন প্রতি পদক্ষেপে আমরা ক্রুশ তুলে নিই ও প্রভুর পশ্চাদগামী হই।
    হেঁটে হেঁটে প্রচার ও মানুষের কল্যাণ কাজ করতে করতে তিনি নিজের অজান্তে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েন এবং স্বাস্থ্যও ভেঙ্গে পড়ে। ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে তাঁর বন্ধুদের উপদেশ অগ্রাহ্য করে প্রচার কাজের জন্য তিব্বতে যাত্রা করেন। এই যাত্রাই যেন এই জগতে তাঁর শেষ যাত্রা কারণ এরপর তাঁর সম্পর্কে আর কোন কিছুই জানা যায় না। সুতরাং কীভাবে এবং কখন তিনি মৃত্যুবরণ করলেন তা কেউ আজ পর্যন্ত জানতে পারেননি।
    সাধু সুন্দর সিং সত্যিই সুন্দর, ধার্মিক ও প্রভু যীশু খ্রীষ্টের একজন বিশ্বস্ত সৈনিক ছিলেন। সকল খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের কাছে তিনি একজন প্রাতঃস্মরণীয় বিশ্বাসের সুমহান বীর হিসেবে সুপরিচিত। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং বীরত্বপূর্ণ উজ্জ্বল নাম এখন আর খুব শোনা যায় না। তাঁর জীবনাদর্শ ও শিক্ষা সকল স্থানের খ্রীষ্টভক্তদের আকৃষ্ট ও বিভিন্নভাবে সাহায্য করে থাকে। তাই যখন তাঁর  জীবনের জন্য আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিই, তখন এই প্রার্থনাও করি যেন আমরা সত্যিকারভাবে তাঁকে অনুসরণ করি। ঈশ্বরের ধন্যবাদ হোক যে, বীর সন্ন্যাসী সাধু সুন্দর সিং-এর মতো একজন মহান ব্যক্তি আমাদের উপমহাদেশে জন্মেছিলেন।

    বীর সন্ন্যাসী সাধু সুন্দর সিং জীবণী


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS