পৃথিবী যেন একটি যুদ্ধক্ষেত্র । এই যুদ্ধটি হল পাপের বিরুদ্ধে। বর্তমান জগতে নানাভাবে নানা ছদ্দবেশে পাপ আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। সুনিপূণ কৌশল অবলম্বন করে শয়তান আমাদেরকে পাপ করতে বাধ্য করে। পাপের বিরদ্ধে মোকাবেলা করার সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ও কার্যকরী হাতিয়ার হল এঁশবাণী | একজন যোদ্ধা যেমন শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য রণসজ্জায় সঙ্জিত হয়, তেমনিভাবে পাপের করতে হয়। যুদ্ধের সাজেই সঙ্জিত হতে হয়। শয়তানের বিরুদ্ধে বাণীকে যদি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার না করি তবে আমরা পাপের কাছে পরাজিত হব । পাপের অন্ধকারেই ডুবে যাব । পরাজয়ের পরিণতিকরতে হবে । সেই জীবনে থাকবে না কোন আনন্দ ও সুখঃ থাকবে শুধু কান্না, বেদনা, দাত ঘষাঘষি ও পরাজয়ের গ্রানি। এশবাণীকে পাপের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার জন্য আমাদের সবার জীবনে নিল্ললিখিত বিষয়গুলোতে আলোকপাত করতে হবে -
বাণী যদি আমাদের মধ্যে থাকে তাহলে শুকিয়ে যাবে না কখনো (যোহন ১৫:৭-৮)। বাণী আমাদের প্রেরণা ও শক্তির উৎ্স। বাণীতে রয়েছে এমন আধ্যাত্বিক শক্তি যা আমাদের জীবন বদলে দিতে পারে । এই করে তোলে । আর এই বাণী হলেন স্বয়ং করেছেন।
বাণী আমাদের পথ প্রদর্শক : এশবাণী আমাদের চলার পথ প্রদর্শক । আমরা সঠিক পথের ঠিকানা খুঁজে পাই এশবাণী থেকে ।এশবাণী আমাদের সঠিক পথের ঠিকানা বলে দেয় ও আমাদের আলোর পথ দেখায় । যিশু যেমনটি বলেছেন, “আমি জগতের আলো। যে আমার অনুসরণ করে, সে কখনো অন্ধকারে চলবে না; কিন্তু জীবনের আলো লাভ করবে” (যোহন ৮:১২)। অর্থাৎ শবাণী আমাদের জীবনকে আলোর পথেই পরিচালিত করে। এশবাণীই আমাদের জীবনকে স্বর্গীয় পিতার দিকে চালিত করে । যিশু হলেন সত্য, পথ ও জীবন যার মধ্যদিয়ে না গেলে কেউ পিতার কাছে যেতে পারে না। বাস্তব জগতের চ্যালেঞ্জের মধ্যেও বাণী আমাদের ঈশ্বরের দেখানো পথে হাটতে সাহায্য করে । তাই পাপের পথে নয়
বরং পিতার পথেই বাণী আমাদের পরিচালিত করেন । আমাদের প্রভু যিশ্ত খ্রিস্ট ঈশ্বরের বাক্য ও পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে বলেছিলেন, “দূর হও শয়তান” । তাই আসুন, আজ আমরাও শয়তানকে আমাদের জীবন থেকে তাড়িয়ে দিই আর বলি, “দূর হও শয়তান, এবং এশবাণীকে করি আমাদের জীবনে ধ্যান-জ্ঞান; পাপের বিরদ্ধে আমাদের জীবনের হাতিয়ার |
বাণীতে দীক্ষিত হওয়া: পাপের বিরদ্ধে সংথাম করতে হলে আমাদের এশবাণীর মন্ত্রে দীক্ষিত হতে হবে। সাধু যেরোম
বলেন, “শাস্ত্র সম্পর্কে অজ্ঞতা হল খ্রিস্ট সম্পর্কে অজ্ঞতা" ৷ তাই আমদের সকলের উচিত এই সৃষ্টিশীল, শক্তিশালী, ফলপ্রসূ, জীবন্ত, রূপান্তরকারী ও প্রাণদায়ী বাণীকে গভীর বিশ্বাস সহকারে শ্রবণ করা, পাঠ করা ও বাণী অনুসারে জীবন যাপন করা। মোটকথা, বীজ বপকের কাহিনীর উর্বর করতে হবে । যাতে আমরা বাণী অনুসারে একশত গুণ ফসল উৎপন্ন করতে পারি। তবে কোন কিছুই আমাদেরকে পাপের দিকে চালিত করবে পারতে না। বাণীতে দীক্ষিত হওয়ার মধ্যদিয়ে আমরা নতুন মানুষ হয়ে উঠতে পারব ।
বাণীতে আত্মগঠন: এশবাণী কখনো ব্যর্থ হয় না। বাণী প্রতিনিয়ত আমাদের আলোকিত করে, গঠন করে ও রাপান্তর
করে । বাণী শ্রবণের মাধ্যমে ঈশ্বরের সাথে আমাদের একটি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে । বাণীর মাধ্যমে আমরা এশইচ্ছা জানতেপারি । আমরা যখন স্বেচ্ছায় এশবাণীর রস আস্বাদন করি তখনই পবিত্র আত্মা আমাদের গঠনদান শুরু করে । আমাদের ধ্যানে, জ্ঞানে ও আচরণে এঁশবাণী সহচর হয়ে ওঠে । বাণী আমাদের নবীকৃত জীবনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় । আমাদের দেহ, মন ও আত্মা পবিত্র আত্মার আলোয় উদ্ভাসিত হয় এবং প্রভুর সাথে একাত্ম হওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে । পাপের পথে অগ্রসর হতে ঈশ্বরের বাণী আমাদের সর্বদা বাধা প্রদান করে | এভাবেই বাণীতে আত্মগঠন সম্পন্ন হয় । আমরা আত্রশক্তিতে বলীয়ান হয়ে ওঠি।
নিজ জীবনে বাণীকে জাত রাখী : আমাদের জীবনের সমস্ত শক্তি, প্রেরণা, সান্ত্বনা, শান্তি ও ভালবাসার উৎস ধশবাণী ৷এশবাণী তখনই পরিপূর্ণতা লাভ করে যখন আমাদের জীবনে আমরা তা অব্যাহত চর্চা করি । আমরা যে বাণী শ্রবণ করি ও পাঠ করি তা নিজ জীবনে জীবন্ত রাখতে হবে । অনেক সময় সংসারের ভাবনা-চিন্তা আর ধন-সম্পদের মিথ্যা মোহে পড়ে আমাদের হৃদয় দুয়ার বন্ধ হয়ে যায় । আমরা বাণীর প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ি | আমরা বাণী শুনি কিন্ত সেই বাণী আমাদের মর্মে পৌঁছায় না, তাই কোন কাজেও আসে না। আমাদের আন্তরিকতার অভাবে বাণী অঙ্কুরিত হওয়ার
আগেই বিফলে যায় । এই বাণীশূন্য জীবনে শয়তানের মত অনেক শক্র এসে পাপের দিকে আমাদের জীবনকে চালিত করে। বাণীর অভাবে আমাদের জীবন শিকড়হীন হয়ে যায় । ঠিক কচুরিপানার মত জগতের শ্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে আমরা অন্ধকারের জীবনকে বেছে নেয়। তাই অন্ধকারকে মোকাবেলা করতে আমাদের আরও মনোযোগ সহকারে, আগ্রহের সঙ্গেই বাণীকে শ্রবণ করতে হবে ও অন্তরে ধারণ করতে হবে । তবেই বাণী আমাদের মধ্যে জাগ্তত থাকবে আর আমরা বাণী অনুসারে একশগুণ ফলভারেই ফলশালী হয়ে উঠব (দ্র: মার্ক ৪:২০)।
এঁশবাণীতে জীবনের উৎকর্ষতা সাধন : পৃথিবীর বিরামহীন কর্মময় অবস্থায় এশবাণীর বিশ্বাসে নিজ জীবনের উৎকর্ষতা সাধন করতে সর্বদা প্রচেষ্টা চালাতে হবে । এশবাণীর প্রতি বিশ্বাস যদি অস্পষ্ট হয় তাহলে জীবনে নেমে আসে দুঃখ-কষ্ট, বঞ্চনা, নানা সমস্যা, হতাশা-নিরাশা ও পাপ করার মত অনেক প্রলোভন । এশবাণীর উৎকর্ষতার অভাবে আমরা দুর্বল মানুষে পরিণত হই । শয়তান দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে আমাদের পাপে পতিত করে । তাই এশবাণীর আলোকে উদারতা, নশ্রুতা, পরোপকারীতা ও ভালবাসার মত গুণগুলো চর্চার মাধ্যমে জীবনে সবল করে তুলতে পারি। এতে শয়তানের চালাকি আমরা বুঝতে পারব । তাকে এশবাণীর শক্তিতে জীবন থেকে দূর করে দিতে পারব । এশবাণীর
মর্মার্থ হদয়ঙ্গম করা : বাণী আমাদের আধ্যাত্মিক খাদ্যের প্রধান উৎস । বাইবেল হল ঈশ্বরের বাণী । বাইবেলে অনেক বিষয়ে প্রভু যিশু আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন। এই বাণী নিয়ে যদি যথাযথ ধ্যান প্রার্থনা করা হয় তবেই এর যথার্থ অর্থ বুঝতে পারা যায় এবং তা হৃদয়ঙ্গম করা যায় । বাণী ধ্যানের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জিত হয় । সাধু আম্বোস বলেন, “যে ব্যক্তি বাইবেল পাঠ শুরু করেছে, সে এই জগতের স্র্ণরাজ্যে প্রভুর সাথে পথ চলতে শুরু করেছে” । যেখানে স্বয়ং প্রভু আমাদের সাথে থাকেন, সেখানে কোন কিছুই আমাদের টলাতে পারে না। পরিশেষে বলতে চাই, এশবাণীর আলো ঘরে ঘরে জলুক যেন এশবাণীর আলোকে শুধু নিজেরা নয় বরং অন্যদেরও আলোকিত করি। শুধু নিজের জীবন থেকে পাপকে বিতাড়িত নয় বরং গোটা জগৎ ও মানুষের কাছ থেকে এঁশবাণীর মাধ্যমে পাপকে পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য করতে পারি ।এশবাণীর আলোকে জীবন যাপন করার মাধ্যমে বিশ্বজগতের কাছে বাণীর সাক্ষ্য হয়ে উঠি । এই এশবাণী ধ্যান, পালন, চর্চা, পাঠ ও যাপনের মাধ্যমে আমাদের জীবনে যেন পরিবর্তন আসে ও নব রূপান্তর ঘটে ।আমরা যেন সাধু পলের মত বলতে পারি “এই যে আমি জীবিত আছি, সে তো আমি নয়, আমার অন্তরে স্বয়ং খ্রিস্টই জীবিত আছেন” গোলাতীয় ২:২০)।
সহায়ক প্রস্থ
১. মিংঙো, স্রীস্টিয়া, ও সজল বন্দোপাধ্যায়,
মঙ্গলবা্তা, ঢাকা, প্রতিবেশী গ্রকাশনী, ২০১১ ॥
২. পিউরিফিকেশন, সত্য ও রিংকু হিউবার্ট
কন্তা: গঠনপ্রার্থীদের জীবনে এশবাণী,
দী্তসাক্ষ্য, ৩৫তম বর্ষ, ১ম সংখ্যা,
ঢাকা, . পবিত্র আত্মা উচ্চ
সোমিনারী,২০০৯ ॥
লেখক:যোয়াকিম রবিন হেম্ব্রম ও রাসেল আন্তনী রিবেরু