The name Crusades ল্যাটিন একটি শব্দ crux, meaning "Cross" এই জন্য ধর্মযুদ্ধের সৈনিকেরা ক্রুশের চিহ্নের পোশাক ও ক্রুশের চিহ্নের ঢাল ব্যবহার করতেন। প্রায় দুইশত বৎসর ধরে (1095-1291) এই যুদ্ধ চলেছিল। এই যুদ্ধের কারণ ছিল পবিত্র ভূমি থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত করা। (a "holy war" for the Holy Land). পূর্বে বলা হয়েছে যে এই সময় খ্রীষ্টিয়ান সমাজের একটি অভিন্ন শক্র ছিল ইসলাম ধর্ম, কেননা ইসলাম ধর্মাবম্বীরা তখন খ্রীষ্টিয়ানেরা যে যে স্থানে বসবাস করত সেই স্থানগুলো অন্যায়ভাবে দখল করে রেখেছিল এবং প্রাচ্যের খ্রীষ্টধর্মাবলম্বীদের ভীতিপ্রদর্শন করে আসছিল। একারণেই বিশেষ কিছু খ্রীষ্টিয়ান ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের আকারে নিজেদের অস্ত্র-সজ্জিত করতে আরম্ভ করেন ও ধর্মীয় দণ্ড ব্যবস্থার আকারে দমনমূলক বিচার ব্যবস্থা সুসংগঠিত করতে শুরু করেন।আর এভাবেই ন-খ্রীষ্টিয়ানদের ঠেকাতে এই ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের জন্ম। কিন্তু এটি সমস্যার কোন পূর্ণ সমাধান ছিল না। বলপ্রয়োগ করে সুসমাচার প্রচার করা যায় না। আর সব থেকে বড় বিষয়, হলো খ্রীষ্টধর্ম প্রেমের ধর্ম, শক্রকে ভালবাসার ধর্ম। শক্রকে শেষ করে দিয়ে নিজের ধর্মমতকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়ার অর্থ খ্রীষ্টকে অস্বীকার করা , কারণ প্রভু যীশু খ্রীষ্টের জীবন ও শিক্ষায় এ রকম কার্যক্রম কখনওই দেখা যায় নি।যেভাবে ক্রুসেডের জন্ম হলো (যিরূশালেমে তীর্থযাত্রা): বিভিন্ন ধর্মযুদ্ধের উৎপত্তি হয় যিরূশালেম নগরীর তীর্থযাত্রা থেকে। এই তীর্থযাত্রা ছিল প্রথানত আত্মশুদ্ধির ও পাপের প্রায়শ্চিত্তের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। প্যালেস্টাইনে যাওয়ার মধ্য দিয়ে তীর্থযাত্রীরা খ্রীষ্টের পার্থিব জীবনের ও তাঁর দুঃখ-যাতনার অংশীদার হতে চেষ্টা করেন। এমন কি যীশু যেখানে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তারাও সেখানে মরতে ইচ্ছা প্রকাশ করেন যাতে করে তাঁরা শেষ বিচারের দিনে তাঁর সঙ্গে পুনরুত্থিত হতে পারেন।তীর্থযাত্রাকালে তীর্থযাত্রীরা যে সব বিপদ-আপনদের সম্মুখীন হতেন তা থেকে তাঁদের মনে‘সশস্ত্র’তীর্থযাত্রার চিন্তার উদয় হয়।উপরন্তু, স্পেনে তখন এমনও দাবি করা হতো যে, যারা অবিশ্বাসীদের (মুসলমানদের) বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে মারা যাবেন, তাঁরা নিশ্চিতভাবে পরিত্রাণ লাভ করবেন।
ধর্মযুদ্ধের শুরুঃ প্রথম ধর্মযুদ্ধের সাতটি বড় ধরনের যুদ্ধ ও পাঁচটি ছোট যুদ্ধ হয়েছিল। 1095 খ্রীষ্টাব্দে পোপ দ্বিতীয় উর্বান প্রাচ্যের খ্রীষ্টিয়ানদের সাহায্যার্থে পাশ্চাত্যের নাইটদের (Knight হলেন তাঁরা, যাঁরা মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ করেন, তাঁদের জন্য সম্মান-সূচক উপাধি বিশেষ ) এগিয়ে আসতে ও পুণ্যভুমির পবিত্র স্থানগুলো জয় করে নিতে আহবান জানান। এভাবে তিনি খ্রীষ্টিয়ান নেতা ও সাম্রাজ্যের সেসব দেশগুলোর উত্তরাধিকারীরূপে তাঁর ভুমিকা পালন করেন। যারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয়, তিনি তাদেরকে পুরস্কার হিসেবে তাঁর সাম্রাজ্যের পূর্ণমুক্ত দেশগুলোর দায়িত্ব প্রদান করেন। একই সময় নাইটদের চলে যাওয়াতে খ্রীষ্টিয়ান অঞ্চলে যুদ্ধবিগ্রহের বুঁকি অনেকটা হ্রাস পায়। এ যাবৎ খ্রীষ্টমন্ডলী রক্তপাতের আশস্কবোধ করে আসছিল । কিন্তু মন্ডলী এখন নিজেই ধর্মযুদ্ধের আয়োজন করছে। যারা যুদ্ধ যাত্রার প্রাক্কালে পবিত্র ক্রুশ ধারণ করতেন তাদেরকে পোপ মহোদয় পূর্ণ দণ্ডমোচন প্রদান করতেন। তাদের নিজ পাপের মার্জনার জন্য অপরিহার্য সকল প্রায়শ্চিত্ত করা থেকে তাদেরকে অব্যাহতি প্রদান করা হতো।
পাঁহাজার নাইট যিরূশালেমের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন কারণ 638 খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত যিরূশালেম মুসলমানদের অধিকারে ছিলো। এই যুদ্ধে অনেকে যোগ দিয়েছিলেন, কারণ পোপ উর্বান তাদের কাছে প্রচার করেছিলেন যে, যারা এই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবেন তাদের সকল পাপ মুছে যাবে। কেউ কেউ এটিকে নিয়েছিলেন অভিযান হিসাবে।প্রভু যীশু যেখানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সে স্থান স্বচক্ষে দেখতে পাওয়া ও সৌভাগ্যের বিষয়। এজন্যও অনেকে যিরূশালেমে নাইট হিসেবে গিয়েছিলেন।