সুসমাচার প্রচার করার কৌশল

ads20

     সুসমাচার প্রচার করা প্রত্যেক বিশ্বাসীর পবিত্র দায়িত্ব ও কর্তব্য। কারণ মথি 28:19-20 পদে, মার্ক 16:15-16 পদে,লূক 24:47 পদে এবং প্রেরিত 1:8 পদে প্রভুযীশু আমাদের সেই মহান আদেশ করেছেন। আমরা অনেকে সময় কেন সে কাজ করতে যাব?

    প্রকৃত পক্ষে আমরা খ্রীষ্টকে জীবনে গ্রহন করে, যে পরিত্রাণের আনন্দ পেয়েছি; সেই পরিত্রানের অভিজ্ঞতা ও আনন্দ অপরের নিকট তুলে দেওয়া এবং সুসমাচার প্রচার করে মানুষকে নরক যাতনা থেকে রক্ষা করাই আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই সাধূ পৌল বলেছেন- প্রত্যেক বিশ্বাসীই খ্রীষ্টের পক্ষে রাজদূতের কর্ম করে যাচ্ছে (2করি 5:20;) সুসমাচার প্রচারের মধ্যদিয়ে বিশ্বাসীরা ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় অপরকে জানাতে পারে এবং রাজদূতের কর্ম করতে পারে। সাধ্য অনুযায়ী সকল বিশ্বাসীর প্রচার করা উচিত।
    সুসমাচার প্রচার করা যদি একজন বিশ্বাসীর দায়িত্ব কর্তব্য হয়; তবে আমাদের জানা উচিত কি ভাবে আমরা সুসমাচার অপরের কাছে তুলে ধরব বা প্রচার করব। অনেক পালক প্রচারক আছেন যারা সুসমাচার প্রচার করতে গিয়ে বাইবেলের আদি পুস্তক থেকে আরম্ভ করে প্রকাশিত বাক্য পর্যন্ত একটি উপদেশের মধ্যেই প্রচার করে ফেলেন। আবার অনেক সময় বাইবেলের বাইরে অনেক চমক লাগা ঘটনা মানুষের কাছে প্রচার করে বাহবা কুড়াতে চেষ্টা করে।
    কার্যত : বহু মন্ডলীতে, বিশেষ করে গ্রামীন মন্ডলী গুলিতে এমন অনেক লোককে উপাসনা পরিচালনা ও উপদেশ প্রদান করতে হয, যারা বাইবেল বিষয়ে কোন প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নয। বাইবেল থেকে বিচিছন্ন ভাবে কয়েকটি পদ নির্বাচন করে সেগুলি ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করলেই উপদেশ হয়ে উঠেনা।

    প্রকৃতপক্ষে সুসমাচার প্রচার সব সময় বাইবেল ভিত্তিক হওয়া উচিত এবং নিদ্দিষ্ট একটা সময়ে মধ্যে শেষ করা উচিত । তা ছাড়া প্রচারের বিষয় ও ভাষা সহজ, সরল, প্রাঞ্জল হওয়া উচিত। মানুষ যাতে মনে রাখতে পারে, সহজেই বুঝতে পারে, শিক্ষা গ্রহন করতে পারে এবং খ্রীষ্টিয় জীবনে বৃদ্ধি পেতে পারে সে বিষয় বিশেষ লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন।

    প্রচারের সমন্ধে কিছুটা ধারনা দেওয়া এবং সকল বিশ্বাস িবর্গকে প্রচারে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আমি এই সুসমাচার প্রচার করার কৌশল প্রকাশ করতে যাচ্ছি। বিশেষ ভাবে প্রচার বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার র্দীঘ দিন অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি নিজেকে এই কাজে নিয়োজিত করতে চাই।

    প্রকৃত পক্ষে প্রচার একটি কঠিন কাজ। তা ছাড়া ঈশ্বরের দেওয়া দান ছাড়া একজন লোক সার্থক প্রচারক হতে পারে না। ঈশ্বরই মানুষকে প্রতিভা দিয়ে থাকেন। কিন্তু সবাইকে সব ধরণের প্রতিভা দেন না। ঈশ্বর একজনকে এক তালন্ত, দ্বিতীয় জনকে তিন তালন্ত,তৃতীয় জনকে পাঁচ তালন্ত দিয়ে থাকেন। যে যত তালন্ত পাবে, সে গুলি উপযুক্ত ভাবে ব্যবহার করবে। ঈশ্বর আমাদের কাছে সেটাই আশা করেন। 

    এখানে একটি কথা মনে রাখতে হবে যে, এই উপদেশ গুলি মডেল মাত্র। অতএব আমার পরামর্শ থাকবে এগুলি হুবহু নকল করা থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রচারক বা বক্তা সব সময়ই তার নিজের মত করে উপদেশ প্রস্তুত করে, নিজস্ব কায়দায় ও ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে প্রচার করবেন সেটাই কাম্য এবং তা হলেই উপদেশ আকর্ষনীয় ও ফল প্রসু হবে বলে আমার বিশ্বাস।

    আমরা দেখব সুসমাচার প্রচার বলতে কি বুঝি? 
    সাধারণ অর্থে প্রচার বলতে আমরা বুঝি---
    1। প্রচার হচ্ছে সুসমাচার ঘোষনা করা।
    2। প্রচার হচ্ছে সুসমাচার শিক্ষা দেওয়া।
    3।প্রচার হচ্ছে আরাধনায় সহায়তা দান করা।
    4।প্রচার হচ্ছে খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনে উৎসাহিত করা।
    5।প্রচার হচ্ছে নূতন জন্ম লাভে সহায়তা করা।
    6। প্রচার হচ্ছে সমস্যার সমাধান দান করা।

    কি কি থাকা দরকার  :
    1। ঈশ্বরের বাক্য
    2। প্রচারক
    3। শ্রেুাতা থাকতে হবে।

    সুসমাচার প্রচার হচ্ছে- ঈশ্বরের বাক্যের সত্যকে ঘোষনা করার জন্য বাক্যের সেবক নিজের জীবনে ঈশ্বরের বাক্যের সত্যকে প্রয়োগ করে ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে শ্রোতাদের কাছে গ্রহন যোগ্র করে তুলে ধরাই হচ্ছে সুসামাচার প্রচার।

    সুসমাচার প্রচারে বাইবেল ব্যবহার
    প্রচারের মূল উৎস হচ্ছে পবিত্র বাইবেল। তাই আসুন আমরা ্এবারে দেখি বাইবেল কি কি ভাবে ব্যবহার করতে পারি।
    1। বাইবেল থেকে একটি পদ নিয়ে প্রচার করতে পারি।
    যেমন: প্রেরিত 2:32; 2তীম 2:15 পদ
    2। দুই বা ততোধিক বাইবেল অংশ ব্যবহার করে।
    যেমন: মার্ক 7:10;লূক 14:26 পদ
    3। একটি পদের খন্ডিত অংশ নিয়ে।
    4। একটি মূখ শব্দ নিয়ে। রোমীয় 5:1; 8:1; 12;1 পদ।
    5। সমগ্র অধ্যায় উপরে নিয়ে।
    ইত্যাদি।
    সুসমাচার প্রচারের প্রস্তুতির জন্য বিশেষ দুটি দিক রয়েছে।


    উপদেশ উপস্থাপন প্রনালী:
    আমরা যদি উপদেশটি সুন্দর ভাবে তৈরি না করতে পারি তা হলে উপদেশটি উপস্থাপন বা পরিবেশন যতই ভাল হোক মানুষের কাছে আকর্ষনীয় হতে পারে না। অনেক সময় আমরা মনে করে থাকি পুলপিটে উঠেই মেরে দেব; এরুপ মনে করা ঠিক হবে না। যদিও বাইবেলে রোমীয় 8:26 পদে বলে উপস্থিত মতে পবিত্র আত্মাই বলেই দেবে কি প্রচার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের অনেক দুর্বলতার কথা স্বীকার করতেই হবে।কারণ পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হয়ে সব সময় আমাদের প্রচার করা সম্ভব নাও হতে পারে। যারা বিশ্বাসে ও অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ কেবল তাদের ক্ষেত্রেই কথাটি প্রযোজ্য হতে পারে। কিন্তু যদি আমরা আমাদের চেষ্টা ও যত্নের মাধ্যমে উপযুক্ত ভাবে প্রচারটি তৈরি করতে পারি, তবে পবিত্র আ্ত্মা অবশ্যই আমাদের সাহায্য করবেন।  কোরিয়ান পালকেরা সব সময়ই সমপূর্ণ উপদেশটি লিখে ফেলেন এবং ভাল করে প্রস্তুতি নিয়ে পুলপিটে গিয়ে প্রচার করেন যেন পুলপিটে দক্ষ প্রচার করতে পারেন।

    অনেক সময় উপদেশের মধ্যে তেমন কোন আত্মিক খাদ্য থাকে না। প্রতিটি উপদেশে অবশ্যই খ্রীষ্টিয় শিক্ষায় ভরপুর থাকতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় বক্তা শুধু বাইবেল থেকে একটি ঘটনা পাঠ করে ঘটনাটি আলোচনা করতে থাকে কিন্তু বাস্তব জীবনের জন্য কোন আধ্যাত্মিক শিক্ষা রয়েছে কিনা সে বিষয়ে বলতে পারে না।
    উদাহরণ হিসাবে বলা যায়- অতিথিদের নিমন্ত্রন করে ভাল করে পোলাও বিরানী রান্না না করে শুধু জাকজমক সহকারে টেবিলে দামী দামী থালা গ্লাসে পরিবেশন করলেই অতিথিবর্গ পরিতৃপ্তি সহকারে ভোজন করতে পারবে না। লবন, হলুদ, মরিচ, বেশি বা কম হলে তৃপ্তি সহকারে ভোজন করা যাবে না।
    কিন্তু যদি মশলা-পাতি পরিমান মত দিয়ে রান্না করে সুসাদ খাবার যদি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ভাবে পরিবেশন করা হয়, তবে অতিথিবর্গ ভোজন করে পরিতৃপ্ত হবে। সুতরাং আমরা বুঝতে পারি উপদেশ তৈরি করাই হচ্ছে আসল বিষয়। এখানে কোন অলসতা অবহেলা বা অজুহাত দেবার কোন স্থান নেই।

    আমরা দেখি উপদেশ তৈরি করার পূর্বে আমাদের কি কি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত  প্রয়োজন।
    1। কাদের কাছে উপদেশটি প্রচার করব তাদের সমন্ধে জানা একান্ত প্রয়োজন।
    অর্থ্যাৎ যারা শ্রোতা, তারা কি কোন জেলে সমাজ, না মুচি সমাজ, না কৃষক বা তাঁতী সমাজ। তারা কি শিক্ষিত অথবা অশিক্ষিত বাইবেল সমন্ধে একেবারেই অজ্ঞ? সব কিছু জেনে তাদের বোধ গম্য করে উপদেশটি তৈরি করা প্রয়োজন।
    2। শ্রোতাদের সমস্যা সমন্ধে বা সময় উপযোগী করে উপদেশটি তৈরি করা প্রয়োজন। অর্থাৎ শ্রোতাদের কোন সমস্যাটি সবচেয়ে প্রধান সে বিষয়টি জেনে সমাধানের নিমিত্ত উপদেশটি তৈরী করতে হবে। 
    3। শ্রোতাদের কি বিষয়ে শিক্ষার প্রয়োজন সে বিষয়টির প্রতি লক্ষ্য রেখে উপদেশটি তৈরী করতে হবে।
    4। প্রতিটি উপদেশ তৈরি করার পূর্বে প্রার্থনা করে, নিজেকে প্রভুর কাছে সমর্পন করা উচিত।
    5। কতটুকু সময়ের মধ্যে উপদেশটি ্উপস্থাপন করা যেতে পারে সে বিষয়টি মনে রাখা প্রয়োজন (সাধারণত :30 মিনিট)
    6। উপদেশটি পরিস্কর ভাবে সাজানোর হচ্ছে কিনা, সে বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
    7। উপদেশের একটি লক্ষ্য স্থির করা অর্থাৎ কি শিক্ষা থাকতে সে বিষয়ে স্থির করা।
    8। মূল বচর নির্দ্ধারন করা।
    9। পবিত্র আত্মার পরিচালনায় উপদেশটি তৈরী করা।
    10। বিষয়টি সম্বন্ধে বই পুস্তকে মাধ্যমে অনুসন্ধান করা।
    11। কেবল মাত্র উপদেশের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত বিষয় ব্যবহার করা।
    12। উপদেশটি সংক্ষেপে সহজ ও সকলের বোধগম্য করে তৈরী করা। ্উ্পদেশের শেষে গিয়ে আবেদনের মাধ্যমে প্রার্থনায় নিয়ে যাওয়া হবে।

    আসুন এবারে আমরা দেখব একটি উপদেশের কাঠামোগত কি কি থাকা প্রযোজন :

    1। শিরোনাম
    2। ভূমিকা
    3। বাইবেল অংশ
    4। মূলবচন
    5। পটভূমিকা
    6। কেন্দ্রিয় সত্য
    7। পয়েন্ট সমূহ
    8। উপসংহার / আবেদন

    আজ এই পর্যন্ত-----পরবর্তী  কাঠমোটির প্রতিটি বিষয় সমন্ধে আলোচনা করা হবে। 
    সাথে থাকুন-ধন্যবাদ






    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS