লুক 24:34
একটি সিড়বগ্ধ শান্ত সকালের প্রাক্কালে প্রগাঢ়
নিস্তব্ধ বাগানে সর্বকালের চিরসত্য ঘটনাটি
ঘটেছিল, ঠিক এইভাবে আমরা একটু
কল্পনা করি সেই বিশেষ প্রত্যুষে ঘটে
যাওয়া অকল্পনীয় ঘটনাটি যেক্ষনে পিতা
ঈশ্বরের শক্তিতে বা ইচ্ছায় প্রভুযীশু মৃত্যু
থেকে পুনরায় জীবন ফিরে পেলেন।
আমরা কি কল্পনায় অনুভব করতে পারি
মহান সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক পূর্বনির্ধারিত সেই
রাতের পরিশুদ্ধ, সতেজ, হিমেল, নিস্তব্ধ
বাতাসের সাথে মহিমান্বিত যীশুর নুতন
জীবন বা শরীর প্রাপ্তির সাথে প্রকৃতিগত
সামঞ্জসতা, পুনঃঅবয়ব ফিরে পেয়ে
কিছুক্ষনের জন্য হয়ত নিশ্চুপভাবে দাঁড়িয়ে
দূর থেকে যিরুশালেম নগরীর ভোরবেলার
নিভুবাতিগুলোর ঝিকিমিকি দেখছিলেন
আর হয়ত ভাবছিলেন, ঘুমে বিভোর ঐ
নির্বোধ লোকেরা জানতেই পারলোনা যে
তাদের খুব নিকটেই ঘটে গেল পৃথিবীর
একমাত্র আশ্চর্য্যতম ঘটনা অর্থাৎ তাদের
দ্বারাই তিরস্কৃত মেরেফেলা লোকটি মৃত্যুকে
জয় করে জীবনের নুতনতায় প্রবেশ করল।
এই পুনরুত্থানটি ছিল প্রচন্ড ঝড়-ঝঞ্জার
পর সম্পূর্ন একটি শান্ত অবস্থা অর্থাৎ
পাপময়তা এবং মৃত্যুর মধ্যকার যে
যুদ্ধাবস্থা তার অবসান ঘটল, ঘটাল
মৃত্যুঞ্জয়ী প্রভুযীশু স্বয়ং বিজয়ের মুকুট
পড়লেন তিনি এবং এই পথে অবশেষে
মানবজাতির পরিত্রানের বা মুক্তির দরজা
খুলে গেল। কিন্তু যীশুর এই বিজয় মুকুট
ধারণ খুব সহজেই সম্ভব হয়নি, এর পিছনে
পিতা ঈশ্বরের প্রতি তার পূর্নাঙ্গ বাধ্যতা
কাজ করেছে। যীশুর ক্ষনিক পার্থিব জীবনে
বিভিনড়ব তিক্ত ঘটনা ও পরিক্ষা-নিরীক্ষার
অভিজ্ঞ বা পরিপক্ক হয়ে সিদ্ধতা অর্জন
করতে হয়েছে। সব ধরনের অপমান
লাঞ্ছনা সহ্য করবার ক্ষমতা ]ুশে বিদ্ধ হয়ে
মরবার মত যাতনাদায়ক ও লজ্জা জনক
বিষয়টি ও যীশুকে নীরবে মেনে নেবার
ক্ষমতা অর্জন করতে হয়েছে। আরো দুঃখ
জনক ও করুন ঘটনা বহন বা সহ্য করতে
হয়েছে তাঁকে যেটা হচ্ছে, যাদেরকে রক্ষা
করার জন্য ইতিহাসের সব থেকে ঘৃন্য
যন্ত্রনাদায়ক মৃত্যু তাঁকে বেছে নিতে হলো
তারাই শেষ পর্যন্ত তাকে অত্যাচার, নিগ্রহ
ও অস্বীকার করলো। সত্যিই আমরা
অবনত ও সেইসাথে চমৎকৃত হই প্রভুর
সহ্য করার ক্ষমতা, সৎসাহস এবং নিজেকে
বিনম্র করার বিষয়গুলির জন্য। “--------
আইস আমরাও সমস্ত বোঝা ও সমস্ত
বাধাজনক পাপ ফেলিয়া দিয়া ধৈর্য্য পূর্বক
আমাদের সন্মুখস্থ ধাবন ক্ষেত্রে দৌড়ি,
বিশ্বাসের আদিকর্তা ও সিদ্ধিকর্তা যীশুর
প্রতি দৃষ্টি রাখি। তিনি আপনার সন্মুখস্থ
আনন্দের নিমিত্ত ]ুশ সহ্য করিলেন এবং
লূক ২৪ঃ৩৪
ঈশ্বরের সিংহাসনের দক্ষিনে উপবিষ্ট
আছেন। (ইব্রীয় ১২ঃ১-২)
]ুশে যীশু মৃত্যুর ইতি টেনেছেন এইভাবে
চিৎকার করে বলেন “সমাপ্ত হইল” (যোহন
১৯ঃ৩০) তারপর তাঁর শরীর মৃত্যুর কোলে
ঢলে পড়লো। পবিত্র বাইবেলে কোথাও
লেখা নেই যে যীশু মৃত্যুর পর পরই
সরাসরি স্বর্গে উঠে গেছেন বা তাঁর আত্মা
স্বর্গে চলে গেছে, বলা আছে তিনি কবর
প্রাপ্ত হলেন, তাঁর মৃতদেহটিকে তিনদিন
কবরে রাখা হয়েছিল (মথি ১২ঃ৪০) আর
সেই কারনেই যীশুর পুনরুত্থান এত বেশী
গুরুত্ব বহন করে। সুতরাং যীশুর মৃত্যু
যেমন সত্য তেমনিই তাঁর পুনরুত্থিত
হওয়াটাও সরল সত্য ঘটনা।
পুনরায় যীশু তাঁর চিন্তা শক্তি, ধ্যান-ধারণা
ফিরে পেয়েছিলেন যার মাধ্যমে পুনরায়
প্রভু যীশু তাঁর পিতার সাথে যোগাযোগ
করতে পারতেন অক্ষয় শরীর নিয়ে,
ঈশ্বরের দৃষ্টিতে দুর্বল মরণশীল শরীর নিয়ে
নয়। সেই সময় তিনি পার্থিব সব ধরণের
কষ্ট, দুঃখ, ব্যাথা, যন্ত্রনার উর্দ্ধে। তিনি
পুর্নজীবিত হয়েছেন কারণ কবর তাঁকে ধরে
রাখতে পারেনি (প্রেরিত ২ঃ২৪)। আমরা
জানি পাপের বেতন - মৃত্যুদন্ড। কিন্তু যীশু
সম্পূর্ন নিষ্পাপ অথবা পাপহীন ছিলেন।
এই পৃথিবীতে থাকা অবস্থায় তাঁর পিতার
ইচ্ছা পূরণে বাধ্য ছিলেন, এই পৃথিবীতে
পাপহীন জীবন কাটাবার ফলে এই পৃথিবীর
পাতাল বা কবর তাঁকে অনন্তকাল ধরে
রাখতে পারেনি তাঁর মৃত্যুটা ছিল ক্ষণস্থায়ী,
পিতা ঈশ্বর তাঁর পুত্রের দেহকে পাতালের
ক্ষয় হতে দেননি (প্রেরিত ২ঃ২৭)। যীশুর
পুনরুত্থান আরো সঠিকভাবে প্রমানিত হয়
তখনকার কিছু বিশ্বাসী এবং বিশেষ
শিষ্যদের চাক্ষুস সাক্ষের মাধ্যমে। আমরা
একটু চিন্তা করি সেই নির্দিষ্ট কিছু শিষ্য
যীশুকে ]ুশে টাঙ্গানোর আগে তাঁকে
চেনেনা বলে অস্বীকার করেছিল, পরিত্যাগ
করে চলেগিয়েছিল (মার্ক ১৪ঃ৫০)। যীশুর
জীবনে শেষ সন্ধিক্ষনে যাতনা ভোগের
সময় তিনি একেবারেই একা, খুব কাছের
সঙ্গীদের দ্বারা তিনি পরিতাজ্য। অবর্ননীয়
অত্যাচারের পর ]ুশবিদ্ধ যাতনাক্লিষ্ট
অবস্থায় দূর থেকে কিছু সাহসী বিশ্বাসীরা
তাঁর যাতনা কষ্ট দেখেছিল (মরিয়ম, যোহন
ও অন্যান্যরা) আর নিজেরা সেই কষ্ট
উপলব্ধি করছিল। তখন কোথায় ছিল
যীশুর ঘনিষ্ট সঙ্গী পিতর ? যে অল্প কিছুক্ষন
আগে নিজ মুখে বলেছিল যে কোন দিনও
তার প্রভুকে ছেড়ে যাবেনা। সে কোথায়
ছিল তখন ? আমরা সকলে ঘটনাটি কম
বেশী জানি।
এক্ষনে এই ঘটনার ৫০দিন পরের ঘটনার
দিকে একটু দৃষ্টিপাত করি। যেই পিতর
কিনা যীশুকে ]ুশে দেবার আগে অল্পকিছু
লোকের সামনে যীশুকে চেনেনা বলে
অস্বীকার করেছিল সেই পিতরই ঐদিন
অসংখ্য লোকের সামনে যীশুর মৃত্যু ও
পুনরুত্থান সম্পর্কে জোড়ালো বক্তব্য বা
সাক্ষ দিচ্ছে এবং তার সাক্ষে বিশ্বাসী ও
অনুতপ্ত হয়ে ৩ হাজার লোক যীশুকে
বাপ্তিস্ম গ্রহন করে। আমরা পিতরের এই
অভাবনীয় পরিবর্তনকে কিভাবে বিবেচনায়
আনতে পারি ? পিতরের নিজের লেখায়
এর সমাধান দেয় (১ম পিতর ১ঃ৩)।
মৃতগনের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের
পুনরুত্থান এবং জীবন্ত প্রত্যাশার দ্বারা
আমাদিগকে পুনঃজন্ম দিয়াছেন। পিতরের
বিশ্বাস সত্যে পরিণত হবার প্রম কারণ
যীশুর পুনরুত্থান, স্বচক্ষে পুনরুত্থিত
যীশুকে দেখে তারও জীবনের প্রত্যাশা,
পুর্নজীবন লাভ করার বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছিল
এবং সেই কারণেই নিষ্ঠুরভাবে মৃত্যুবরণ
করার আগ পর্যন্ত পিতর খ্রীষ্টেতেই জীবন
সম্পর্কে প্রচার করেছিল দৃঢ়তার সাথে।
পিতরের মত পৌলও একই সাক্ষ্য
দিয়াছেন তার বিশ্বাসী জীবনে, যেন আমি
তাঁহাকে, তাঁহার পুনরুত্থানের পরা]ম ও
তাঁহার দুঃখভোগের সহভাগিতা করি,
এইরূপে তাঁহার মৃত্যুর সমরূপ হই
(ফিলীপিয় ৩ঃ১০-১১)। যদি যীশুর
পুনরুত্থান ইতিহাসের হালকা কোন ঘটনা
হত তাহলে কি প্রভুর নিষ্ঠুর মৃত্যু ও
পুনরুত্থান সম্পর্কীয় ঘটনার বর্ননা দিতে
গিয়ে ও জীবনের প্রত্যাশায় স্বইচ্ছায় তাঁর
শিষ্যরা মৃত্যুবরণ করতে পারত ? আমার
মনে হয় কখনই তা সম্ভব হত না।
আমরাও আমাদের জীবন, প্রত্যাশা সম্পর্কে
যদি চিন্তা করি তাহলে কি পূর্বকালের
বিশ্বাসীদের জীবনের মত যীশুর পুনরুত্থান
আমাদের জীবনে উলে−খযোগ্য কোন পরিবতর্
ন সাধন করতে পারে ? আমরা কতটুকু
সেই পুনঃজীবনের প্রত্যাশায় চিন্তিত ?
প্রভু যীশুর পুনরুত্থান একটি কোন শুধুমাত্র
শাস্ত্রীয় মতবাদ নয়। যদি আমরা ও
বিষয়ের অর্ন্তনিহিত অর্থবুঝি তাহলে তা
আমাদের ভবিষ্যৎ নুতন জীবনের প্রত্যাশায়
পথ চলতে সাহায্য করবে। এই প্রত্যাশা ছাড়া
অন্য কোন আশা নেই আমাদের। বাপ্তিস্ম
হচ্ছে একটি প্রতিকী অনুষ্ঠান, যার মধ্যেদিয়ে
ঈশ্বর আমাদের যীশুর সাথে মৃত্যুবরণ,
কবরপ্রাপ্ত হওয়া ও পুনরুত্থানের ব্যবস্থা
নির্ধারণ করেছেন। আমরা যখন বাপ্তিস্মের পর
জল থেকে উঠি তখন অবশ্য পুনরুত্থানের
সাদৃশ্যেও হইবো (রোমীয় ৬ঃ৫)।
বাপ্তিস্মের পর আমাদের প্রভুর পদক্ষেপ স্মরণ
করে প্রতিনিয়ত আমাদের পদক্ষেপ প্রভুর মত
হওয়া উচিৎ। আমাদের জীবন ধারণে যেন
প্রমানিত হয় যে আমরা প্রভুর জন্য পুনরুত্থিত
হয়েছি সুতরাং এজীবন শুধুমাত্র তাঁরই। বছরে
একটা দিন পুনরুত্থান পালন করাই সব নয়,
প্রতিদিন প্রভুর পুনরুত্থান স্মরণে রেখে
পুনরুত্থানের আসল ক্ষমতা, আসল আদর্শ
নিয়ে জীবন্ত প্রত্যাশায় শেষদিন পর্যন্ত কাটাতে
পারি। পবিত্র শাস্ত্রে আমাদের শিক্ষাদেয়, প্রভু
যীশু পুনরায় এই পৃথিবীতে ফিরে আসবেন
এবং পৃথিবীতে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপিত করবেন,
স্মরণ করি এবং চিন্তা করি প্রভুর শেখানো
প্রার্থনাটি (মথি ৬ঃ১০) তোমার রাজ্য আইসুক,
তোমার স্বর্গে যেমন তেমনি পৃথিবীতেও সিদ্ধ
হোক। বাইবেলে একটি আশা ব্যক্ত করা
হয়েছে যে, প্রভুর ২য় আগমনে মৃতেরা
পুনরুত্থিত হবে, খ্রীষ্টের সাথে অক্ষয়তায়
বসবাস করবে (১ম করিন্থীয় ১৫ঃ২১-২৩),
অতঃপর ঈশ্বরের মহাঅনুগ্রহে মহান
সৃষ্টিকর্তাকে একদিন সঠিক গৌরবদিতে সক্ষম
হবো। সুতরাং খ্রীষ্টের পুনরুত্থানে যদি
আমাদের আন্তরিক ও সঠিক বিশ্বাস না থাকে
তাহলে আমাদের কোন প্রত্যাশাও থাকেনা,
তাই আমরা প্রেরিত পৌলের সাথে আনন্দ
সহকারে বলি কিন্তু বাস্তবিক খ্রীষ্ট মৃতগনের
মধ্য হইতে উঠিয়াছেন, তিনি নিদ্রাগতদের
অগ্রিমাংশ (১ম করিন্থীয় ১৫ঃ২০) - এটাই
কার্যতঃ জীবন্ত প্রত্যাশা এবং এটা আমাদের
জীবনকে পরবর্তীতে বর্তমান জীবনধারা থেকে
মুক্ত করতে সহায়ক।