বড়দিন’ যিশুখ্রিস্ট পুনরুত্থিত ও মৃত্যুঞ্জয়ী

ads20
    আজ বিশ্বের সর্বত্র খ্রিস্ট ধর্মীয় উৎসব ‘বড়দিন’ পালিত হচ্ছে। বড়দিন বড় আনন্দের দিন।
    আমরা যারা যিশুখ্রিস্টকে জগতের ত্রাণকর্তারূপে বিশ্বাস করি, তাদের কাছে এদিনের তাৎপর্য অনেক বড়। নতুন নতুন জামাকাপড় পরা, ভালো ভালো খাবারের ভোজসহ অন্যান্য আনন্দ-ফুর্তিতে এ দিনের তাৎপর্য সীমাবদ্ধ নয়, এর তাৎপর্য পারমার্থিক বা আধ্যাত্মিক। আমরা এখন এমন এক পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে কোটি কোটি মানুষের জীবন বড়ই কঠিন বাস্তবতার আঘাতে চূর্ণ-বিচূর্ণ, জীবন তাদের কাছে বড় এক বোঝাস্বরূপ। মানুষে মানুষে, দেশে দেশে, গোত্রে গোত্রে, ধর্মে ধর্মে ভয়াবহ বৈরিতা ও হিংসা-বিদ্বেষ যেন বেড়েই চলেছে। মানবসভ্যতা এগিয়ে চলেছে, মানুষের জ্ঞানবিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বৃদ্ধি হচ্ছে বটে; কিন্তু তার পাশাপাশি চলছে মানুষের মানবাধিকারের লঙ্ঘন। বড়দিন প্রসঙ্গে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ও অন্যান্য অনেক প্রকাশনায় এক প্রজন্মেরও অধিককাল ধরে অনেক রচনা লিখেছি। সমপরিমাণ সময়ে বহুবারই চার্চে চার্চে এ বিষয়ে প্রচারও করেছি। একই বিষয়ে বারবার লিখতে ও বলতে আর বেশি আগ্রহ থাকে না। আজ তার পরও জানি যে জগতে ঈশ-মানবের শুভ আগমনের তাৎপর্য আমাদের বারবারই অনুধাবন করার চেষ্টা করতে হবে। কারণ আমরা আমাদের মানবীয় সীমাবদ্ধতায় ওই সব বারবার যেন শুনতেই ভালোবাসি, যদিও খ্রিস্টের জীবনদায়ী সুশিক্ষা পালন করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি না।যিশুখ্রিস্ট নতুন কোনো একটা ধর্ম প্রচার করতে পৃথিবীতে আসেননি। তিনি এসেছিলেন নতুন এক জীবনের দর্শনের চূড়ান্ত আদর্শ দেখাতে। তাঁর সময়ে পৃথিবীতে ধর্মমতের কোনো অভাব ছিল না, আজও যেমন নেই। তাঁর শিক্ষা ছিল ধমের্র জন্য মানুষ নয়, কিন্তু মানুষের জন্য ধর্ম। মানুষের প্রকৃত ধর্ম মনুষ্যত্ব, মানবীয় মূল্যবোধে জীবনের সীমাহীন বিকাশ ও বাস্তব জীবনে তার ব্যবহার ও প্রকাশ। পাপের রাজত্ব থেকে মানুষের সামগ্রিক পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বর এই জগতে মানুষ হয়ে এসেছিলেন। কিন্তু মানুষ তাঁকে সেদিন অগ্রাহ্য করেছে, অপমান ও নির্যাতন করে জঘন্য অপরাধে অপরাধী মানুষের জন্য ঔপনিবেশক রোম সাম্রাজ্যে প্রচলিত ক্রুশীয় মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তাঁকে হত্যা করেছে। কিন্তু শাশ্বত চিরঞ্জীব খ্রিস্টকে মৃত্যুকে ধরে রাখতে পারেনি। তাঁর সে মৃত্যু ছিল পাপী মানুষের সঙ্গে শনাক্ত হওয়ার বাহ্যিক প্রকাশ। তাই মানুষের ক্ষমতার বড়াই যেখানে শেষ, ঈশ্বরের ক্ষমতার সেখানেই প্রকাশ হলো। খ্রিস্ট হলেন পুনরুত্থিত ও মৃত্যুঞ্জয়ী। খ্রিস্টীয় ঈশতাত্ত্বিক চিন্তায় যিশুখ্রিস্টের জন্ম, মৃত্যু ও পুনরুত্থানের ঘটনাগুলো একসূত্রে গাঁথা। তিনি মাংসে প্রকাশিত হয়ে মৃত্যুবরণ করলেন, কিন্তু আত্মায় ধার্মিকপ্রতিপন্ন হলেন।
    খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকের বিখ্যাত ভাববাদী যিশাইয় তাঁর বিষয়ে ভাববাণী করে বলেছিলেন, ‘কারণ একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিয়াছেন একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে’—এ উক্তির মাধ্যমে যিশুখ্রিস্টের মানবত্ব ও ঈশ্বরত্ব উভয়কেই বোঝানো হয়েছে। মানব শিশুরূপে তাঁকে জন্ম নিতে হয়েছে, আর মানুষের পরিত্রাণের জন্য ঈশ্বর তাঁর আপন পুত্রকে জগতের জন্য একেবারেই দান করে দিলেন। তিনি তাঁর নিষ্পাপ জীবনকে পাপী মানুষের পাপমুক্তির মূল্যরূপে দান করলেন। কিন্তু মানুষ তাঁকে সেদিন গ্রহণ করেনি। শিষ্য যোহন তাঁর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়ে বলেন, ‘…তাঁর মধ্যে জীবন ছিল এবং সেই জীবন মনুষ্যদের জ্যোতি ছিল। আর সে জ্যোতি অন্ধকারের মধ্যে দীপ্তি দিতেছে, আর অন্ধকার তাহা গ্রহণ করিল না…তিনি জগতে ছিলেন, জগৎ তাহার দ্বারা হইয়াছিল, আর যাহারা তাঁহার নিজের, তাহারা তাঁহাকে গ্রহণ করিল না’ (যোহন ১; ৪-১১)।
    স্বার্থপরতা ও লোভের কারণে মানুষ নিজের জন্য ও অন্যের জন্য দুঃখের কারণ হয়; সবল ও চতুর মানুষ অন্যের অধিকার হরণ করে; সমাজে আসে বঞ্চনা, দারিদ্র্য ও আঘাত। তা থেকে তৈরি হয় অশান্তি ও হিংসা। বাইবেলের অনেক অংশজুড়েই রয়েছে ন্যায্যতার বিষয়ে সুস্পষ্ট শিক্ষা। এই ন্যায্যতার মানব সমাজ গঠনের পথে দরিদ্রের প্রতি প্রেম প্রদর্শনের বিষয়টি পুরনো ও নতুন উভয় নিয়মে বড় এক স্থান করে নিয়েছে। বাহ্যিক আচার-অনুষ্ঠানের চেয়ে ঈশ্বর মূল্য দেন ন্যায্যতাকে : ‘ধার্মিকতা ও ন্যায়ের অনুষ্ঠান সদাপ্রভুর কাছে বলিদান অপেক্ষা গ্রাহ্য। ’ তিনি চান যারা সমর্থ, সবল ও সক্ষম, তারা  দুঃখী, দরিদ্র ও দুর্বলের সাহায্যে এগিয়ে আসুক। খ্রিস্টধর্ম দর্শনে মানুষের জীবনের জন্য পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা দেওয়া হয়েছে। মানুষ দেহে, মনে ও আত্মায় পরিপূর্ণ ও এক সুষম জীবন নিয়ে বেঁচে থাকবে, তা-ই স্রষ্টা ও প্রেমময় ঈশ্বরের ইচ্ছা। যাকোব তাঁর পত্রে বলেছেন, ‘ক্লেশাপন্ন পিতৃমাতৃহীনদের ও বিধবাদের তত্ত্বাবধান করা এবং সংসার হইতে আপনাকে নিষ্কলঙ্করূপে রক্ষা করাই পিতা ঈশ্বরের কাছে শুচি ও বিমল ধর্ম্ম’ (যাকোব ১ : ২৭)। দরিদ্রের সেবা ধর্মের অঙ্গ। সব নবীর মধ্য দিয়ে ঈশ্বর বলেছেন যে প্রকৃত কৃচ্ছ্র সাধনা ও উপবাস শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাই নয়; বরং তার সঙ্গে থাকা চাই ন্যায্যতার কাজ, দুর্বল-দরিদ্রের আর্থসামাজিক মুক্তিদান, যারা সবলের দ্বারা অত্যাচারিত ও শোষিত তাদের আর্থিক কষ্ট দূর করা। ধর্মকর্মের প্রকাশ হতে হবে সমাজে সব কিছুতে ন্যায়বিচারের কাজে। আমোষ তাই বলেছেন, ‘বিচার জলবৎ প্রবাহিত হউক; ধার্ম্মিকতা চির প্রবহমান স্রোতের ন্যায় বহুক। ’ ন্যায়বিচার যেন বাধাগ্রস্ত না হয়। বাইবেলে ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচার যেন একই অর্থ।   মীখা নবীর মাধ্যমে ঈশ্বর বলেছেন, ঈশ্বর লৌকিক ধর্মকর্মে সুখী নন। তাই বলা হয়েছে, ‘হে মনুষ্য, যাহা ভালো, তাহা তিনি তোমাকে জানাইয়াছেন; বস্তুত ন্যায্য আচরণ, দয়ায় অনুরাগ ও নম্রভাবে তোমার ঈশ্বরের সহিত গমনাগমন, ইহা ব্যতিরেকে সদাপ্রভু তোমার কাছে আর কিসের অনুসন্ধান করেন?’ তাই বাইবেলে দরিদ্রদের প্রতি ধনী বা সবল লোকদের সেবা বা প্রেমের কাজ হচ্ছে মূলত ন্যায্যতা ও ঈশ্বরের প্রতি প্রেম ও নম্রতার প্রমাণ।
    বাইবেলে ‘পরিত্রাণ’ মানে সামগ্রিক মুক্তি : আত্মিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি। ঈশ্বর মানুষের সেই মুক্তির জন্য আমাদের আহ্বান করেন। তিনি অত্যাচারিত শাসকের পতন ঘটান ও শোষিত, বঞ্চিত জনতাকে মুক্ত করেন। লুক ১ অধ্যায়ে মরিয়মের ঈশ্বরবন্দনা ও ৪ অধ্যায়ে যিশুর জীবনের উদ্দেশ্যের বিবৃতি সেই কথাই ব্যক্ত করে। অত্যাচারী ও শোষকের পতন ও তার সঙ্গে দুর্বল ও ভাগ্যাহত মানুষের মুক্তি ঈশ্বরের দৃষ্টিতে মহৎ বিষয়।
    আমরা যখন খ্রিস্টের দিকে তাকাই তখন আমরা ব্যক্তিসত্তাগত দুটি অদ্ভুত বিষয় তাঁর মধ্যে দেখতে পাই। একটি হলো, তাঁর ঈশ্বরত্ব ও অন্যটি হলো মানবত্ব। তিনি ঈশ-মানব। একদিকে সম্পূর্ণ ঈশ্বর, অন্যদিকে সম্পূর্ণ মানুষ। তাই তাঁর মধ্যেই ঈশ্বরের পরিপূর্ণ প্রকাশ দেখা যায়। এ কারণেই তিনি বলতে পেরেছিলেন, তিনি ও পিতা এক। এ জন্যই ইহুদিরা তাঁকে ঈশ্বরনিন্দার অভিযোগ এনে হত্যা করতে চেয়েছিল  (যোহন ১০ : ৩১-৩৩)। তিনি তাই বলেছিলেন যে, তিনি পাপ ক্ষমা করতে পারেন, যে ক্ষমতা শুধু ঈশ্বরেরই আছে। তিনি বলেছেন, ‘আব্রাহামের জন্ম হইবার পূর্বেও আমি ছিলাম’  (যোহন ৮ : ৫৮)। তিনি শাশ্বত ঈশ্বরের মানবরূপ। ঈশ্বরের অবিকল প্রতিমূর্তি মানব-খিস্ট্র  মানবের পরিত্রাণের জন্য মানবরূপেই মর্ত্যে আসেন। তিনি অনুপম, অর্থাৎ তিনিই একমাত্র নিষ্পাপ সিদ্ধ মানুষ। তাই তিনি অন্যের পাপ বহন করতে পেরেছেন!
    মানুষের মধ্যে ঈশ্বরের নৈতিক সাদৃশ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার কারণে তাঁর আগমন।
    মানুষকে শুধু পাপের পরিত্রাণ দিয়ে তাকে শুধু স্বর্গে তুলে নেওয়ার জন্যই খ্রিস্ট মর্তে আসেননি। তাঁর প্রচারের কেন্দ্রে ছিল ‘ঈশ্বরের রাজ্য’; অর্থাৎ এ জগতে ঈশ্বরের ইচ্ছায় ও তাঁর পবিত্র প্রেম ও ন্যায্যতার মূল্যবোধে যেন মানুষ চলে। যিশাইয় নবীর মাধ্যমে ঈশ্বর বলেছেন, “কেননা আকাশমণ্ডলের সৃষ্টিকর্তা সদাপ্রভু, স্বয়ং ঈশ্বর, যিনি পৃথিবীকে সংগঠন করিয়া নির্মাণ করিয়াছেন, তাহা স্থাপন করিয়াছেন, ও অনর্থক সৃষ্টি না করিয়া বাসস্থানার্থে নির্মাণ করিয়াছেন, তিনি এই কথা কহেন, ‘আমিই সদাপ্রভু, আর কেহ নয়’। ” (যিশাইয় ৪৫:১৮)। ঈশ্বর এ জগতেই মানুষের মধ্যে বাস করতে চান। আমরা যিশুর শেখানো প্রার্থনায় বলি, ‘তোমার রাজ্য আইসুক, তোমার ইচ্ছাপূর্ণ হউক, যেমন স্বর্গে তেমন এ পৃথিবীতে। ’ তথাকথিত পরিত্রাণের চেয়ে ঈশ্বরের রাজ্যের প্রসঙ্গকে আগে দেখতে হবে।   খ্রিস্টের পরিত্রাণের তাৎপর্য বোঝা প্রয়োজন। ঈশ্বরের রাজ্য আরম্ভ করার জন্য খ্রিস্ট এ পৃথিবীতে এসেছিলেন। এ জগৎ মানে এ জগতের নিয়ম বা স্বভাব। ইহজাগতিক নিয়মনীতিতে তাঁর রাজ্য নয়, কিন্তু ঐশ্বরিক মূল্যবোধে পরিচালিত হবে সে রাজ্য। খ্রিস্টের কথা, ‘আমার রাজ্য এ জগতের নয়। ’ সে রাজ্যের বৈশিষ্ট্য হবে ন্যায্যতা, ধার্মিকতা ও দয়া ও সত্য, সিদ্ধতা ও পবিত্রতা। এ কথা সত্য যে খ্রিস্টে সাধিত মানুষের পরিত্রাণের কাজ ও ঈশ্বরের রাজ্য—এ দুটি বিষয় অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। খ্রিস্ট এসেছিলেন যতটা না সুসমাচার প্রচার করতে, তার চেয়ে বেশি এ জন্য যে তাঁর আগমনের কারণে জগতের পরিত্রাণের বা পাপের অধীনতা থেকে মানবের মহামুক্তির সুসমাচার প্রচারিত হবে।
    খ্রিস্টের প্রচার ও শিক্ষার কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল এ জগতে ‘ঈশ্বরের রাজ্য’, অর্থাৎ সর্বত্র ঈশ্বরের প্রেম ও ন্যায্যতার শাসন। মানুষে মানুষে হিংসা ও বৈষম্য ঘুচিয়ে তিনি চেয়েছেন মানুষের মধ্যে ঐশ্বরিক প্রেম, পবিত্রতার ও ন্যায্যতার মূল্যবোধে চালিত সমাজের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু ক্ষমতা ও অহংকারে মদমত্ত দাম্ভিক মানুষ, ভোগবাদী জাগতিকতাপ্রিয় মানুষ তাঁর শিক্ষাকে গ্রহণ করেনি। কিন্তু কোনো বাধা-বৈরিতা তাঁকে থামাতে পারেনি। তিনি মৃত্যু পর্যন্ত ঐশ্বরিক সত্য ও পবিত্রতার লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। দুর্বল, নিপীড়িত, অসহায় মানুষের সঙ্গে তিনি নিজেকে শনাক্ত করেছেন, মানবীয় অধিকারবঞ্চিত মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন, কথা বলেছেন ধর্মীয় সব ভণ্ডামির বিরুদ্ধে। কে কোন মতামত ও ধর্মের বা জাতির বা গোত্রের তা দিয়ে তিনি মানুষকে বিচার করেননি। ঈশ্বরের আশীর্বাদে যেকোনো মানুষ যে নতুন হতে পারে বা বড় সম্ভাবনার জীবন লাভ করতে পারে, তাই ছিল তাঁর কাছে প্রধান কথা। নিষ্পাপ অমৃত খ্রিস্টের পবিত্রতা ও প্রেম দেখার মতো আমাদের চোখ থাকা চাই; তাঁর অমিয় বাণী শোনার জন্য আমাদের কান থাকা চাই; চাই তাঁর জীবনদায়ী শিক্ষানুসারে জীবন যাপন করার মন ও সদিচ্ছা। কেবল তাতেই হবে আমাদের বড়দিনের সব আয়োজন সার্থক ও সুন্দর।
    লেখক : রেভারেন্ড মার্টিন অধিকারী ,খ্রিস্টীয় ঈশতত্ত্বের শিক্ষক।

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS