গুড ফ্রাইডে যীশু খৃষ্টের আত্মদানের বাণী

ads20
    মানুষের পাপমুক্তির জন্য যীশু খৃষ্টের দুঃখভোগ ও মৃত্যু ছিল ঈশ্বর পরিকল্পিত। কেন তার সে মৃত্যু? এ প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তরঃ ঈশ্বর পবিত্র ও প্রেমময় এবং তিনি ন্যায়বান ও ধর্ম্মময়। তাঁর এ সব গুণই তাঁর নিষ্পাপ ও নিঃষ্কলঙ্ক পুত্রের দুঃখভোগ ও মৃত্যু দাবী করেছে। ঈশ্বর পাপী মানুষের প্রতি প্রেমময় বলেই, তাদের পাপমুক্তির স্বার্থে তাদের সমুচিত দন্ড তিনি তাঁর পুত্রের ওপর বর্তালেন। যেহেতু ঈশ্বর ন্যায়বান, তাই তিনি এই সমস্ত পাপ ও অপরাধকে এড়িয়ে যাননি। তিনি এ সকলের বিরুদ্ধে এক পবিত্র ক্রোধ অনুভব করেন। পাপের শাস্তি হতেই হবে। 
    কিন্তু ঈশ্বরের প্রেম, পাপে অভিযুক্ত সকল মানবজাতির উপর থাকা অভিশাপের কাছে এসে থেমে যায় নি। ক্রোধে, পাপীর মরণে যে তাঁর শান্তি নাই। যিহিষ্কেল নবীর মাধ্যমে তাই ঈশ্বর বলেছিলেন, “আমার জীবনের দিব্য, দুষ্টের মরণে আমার সন্তোষ নাই; বরং দুষ্টলোক যে আপন পথ হইতে ফিরিয়া বাঁচে ইহাতেই আমার সন্তোষ।” ঈশ্বর নিজে মানবরূপে, পিতা পুত্ররূপে এলেন তাঁর ক্রোধ প্রশমিত করতে, মানুষের হয়ে মানুষের শাপ বহন করতে। মানবের মধ্যে অবতীর্ণ খৃষ্ট দেহায়িত ঈশ্বর। খৃষ্ট আমাদের ব্যবস্থার অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে, আমাদের পরিবর্তে অভিশপ্ত হলেন। শাস্ত্রে আছে, “যে ব্যক্তিকে গাছে টাঙ্গানো যায়, সে শাপগ্রস্থ” গালাতীয় ৩:১৩। “এতেই প্রেম আছে; আমরা যে ঈশ্বরকে প্রেম করেছিলাম, তা নয়; কিন্তু তিনিই আমাদের প্রেম করলেন, এবং নিজ পুত্রকে আমাদের পাপার্থক প্রায়শ্চিত্ত হবার জন্য প্রেরণ করলেন” ১ যোহন ৪:১০। “প্রায়শ্চিত্ত” মানে ‘পরিবর্ত’ বা বিকল্প কিছুর দ্বারা ঈশ্বরের ক্রোধ দূর করা। এই ‘পরিবর্ত’ ঈশ্বর নিজে যুগিয়েছেন। সেই পরিবর্ত ‘যীশু খৃষ্ট’ যে কেবলমাত্র ঈশ্বরের ক্রোধ দূর করেন, তা নয়; তিনি তার দন্ড নিজে বহন করেন। ঈশ্বরের ক্রোধ ন্যায্য এবং তার জন্য মূল্য দেওয়া হয়েছে, তা তুলে নেওয়া হয়নি। পাপী মানুষের হাতে খৃষ্টের দুঃখভোগ ও মৃত্যু আমাদের পাপের ঋণ শোধ করেছে এবং ঈশ্বরের বিচারের সামনে দাঁড়ানোর জন্য আমাদেও যে ধার্ম্মিকতা প্রয়োজন খৃষ্টের বাধ্যতা তা যুগিয়েছে। 
    download (2)নোপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন, “আলেকজান্ডার, সীজার, শার্লেমান এবং আমি সাম্রাজ্য স্থাপন করেছি। কিন্তু আমাদের এ সৃজনী-প্রতিভার জন্য আমরা নির্ভর করেছি সামরিক শক্তির উপর। কিন্তু একমাত্র যীশু খৃষ্ট বিশ্বব্যাপী তাঁর সাম্রাজ্য স্থাপন করেছেন প্রেমের দ্বারা এবং আজও তাঁর প্রেমের প্রতিদানে অগুনিত মানুষ তাঁর জন্য প্রাণ দিতেও প্রস্তুত।” বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ যীশু খৃষ্টের বিষয়ে বলেছেন, “খৃষ্টান শাস্ত্রে বলে, ঈশ্বর মানবগৃহে জন্মগ্রহণ করিয়া বেদনার ভার বহন ও দুঃখের কন্টককিরীট মাথায় পরিয়াছিলেন। মানুষের সকল প্রকার পরিত্রাণের একমাত্র মূল্যই সেই দুঃখ। মানুষের নিতান্ত আপন সামগ্রী যে দুঃখ, প্রেমের দ্বারা তাহাকে ঈশ্বরও আপন করিয়া এই দুঃখসংগমে মানুষের সঙ্গে মিলিয়াছেন, দুঃখকে অপরিসীম মুক্তিতে ও আনন্দে উত্তীর্ন করিয়া দিয়াছেন- ইহাই খৃস্টধর্মের মর্মকথা।”— বাইবেলের শিক্ষানুসারে মানুষের পাপের ফল আত্মিক মৃত্যু, ঈশ্বরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্নতা। আর সেই বিচ্ছিন্নতা থেকে তৈরী হয় মানুষে মানুষে বিছিন্নতা ও বিবাদ। ঈশ্বরের কাছ থেকে বিছিন্ন মানুষ হয়েছে শারিরীক মৃত্যু ও জড়তার অধীন। খৃষ্ট এসেছিলেন মানুষের পাপের ফল থেকে মুক্ত করে তাকে আত্মিক অর্থে স্রষ্টা ঈশ্বরের সঙ্গে পুনর্মিলিত করে মানুষে মানুষে প্রেম ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে। ঈশ্বর প্রেমময় তাই তিনি মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য মানুষের প্রাপ্য দন্ড তাঁর নিঃস্পাপ পুত্র খৃষ্টের উপর দিলেন। খৃষ্ট ক্রুশে হত হলেন। মানুষ খৃষ্টকে অন্যায়ভাবে হত্যা করল। মানুষের পাপের সমস্ত তিক্ততা তিনি সহ্য করলেন। যারা সেদিন তাঁকে হত্যা, করেছিল তারা ভেবেছিল যে তাদেরই জয় হয়েছে, তারা সতব্ধ করে দিয়েছে সত্যকে। দয়া, ক্ষমা ও প্রেমের অবতার খৃষ্ট নীরবে বরণ করে নিলেন হিংসা ও ঘৃণার সকল আঘাত ও অপমান। সেদিন ঈশ্বর দেখলেন মানুষের পাপ তাকে কত নিষ্ঠুর ও অন্যায়ের পথে নিয়ে যেতে পারে। মর্তের আস্ফাালনে স্বর্গ সেদিন হেসেছে। সত্যের মৃত্যু নাই। তাই খৃষ্ট হলেন পুনরুত্থিত, মৃত্যুঞ্জয়ী। হিংসা, ধ্বংস ও বিনাশের শৃঙ্খল ভাঙ্গলেন তিনি। ঈশ্বরপুত্র মানুষ হয়ে এসেছিলেন যেন মানুষ ঐশ্বরীক গৌরবে ভূষিত হতে পারে; যেন মানুষ তাঁর প্রেমে পাপ ও হিংসার উপর জয়লাভ করতে পারে। খৃষ্ট বলেছেন, হিংসা ও দুঃখ মানুষের জন্য অলঙ্ঘনীয় নয়। তার উপর জয়লাভেই জীবনের গৌরব। জগতে মন্দতা আছে। কিন্তু মন্দতার উপরে ওঠার শক্তিতেই প্রকৃত মনুষ্যত্বের পরিচয়। আজ দিকে দিকে সীমাহীন হিংসা, লোভ ও জিঘাংসা দেখে মনে হয় যেন মানবীয় মূল্যবোধের কোন স্থান নাই, নাই জীবনের মূল্য। চারিদিকে আজ সহিংসতার অভিযান। চীরঞ্জীব খৃষ্টের আত্মিক উপস্থিতি ও তার শক্তিই আজ আমাদের সকল পাপ-অন্ধকারের মধ্যেও তাঁর অভয়বাণী হোক্ আমাদের সত্ ও আলোকীত জীবনের চলার পথের পাথেয়; পরিত্রাতা খৃষ্টের আত্নদান আমাদের সকলের সৃষ্টি করুক এক আত্নজিজ্ঞাসা! 
    লেখক : রেভাঃ মার্টিন অধিকারী, অধ্যক্ষ, খৃষ্টীয় ঈশতত্ত্ব মহাবিদ্যালয় বাংলাদেশ



    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS