পঞ্চম বাণী “আমার পিপাসা পাইয়াছে।”

ads20

     পঞ্চম বাণী - “আমার পিপাসা পাইয়াছে।”

    - (যোহন ১৯ ৪২৮) সাধু যোহন লিখেছেন যে, সব কিছু শেষ হয়েছে জেনে শাস্ত্রের বাণী যাতে পূর্ণ হয় সেই জন্য যীশু বললেন, “আমার পিপাসা পাইয়াছে”। এক সময় যিনি ইহুদীদের মহোৎসবের দিনে উচ্চস্বরে ঘোষণা করেছিলেন, তোমাদের মধ্যে কেউ যদি পিপাসিত হয়, সে আমার কাছে এসে পান করুক। কারণ শাস্ত্রে লেখা আছে - যে কেউ আমাকে বিশ্বাস করে, তার অন্তর থেকে জীবন্ত জলের নদী বইবে (যোহন ৭ :৩৭)। মী একদিন এক শমরীয়া নারীকে জীবন্ত জল দিয়ে তার অনন্ত পিপাসা নিবারণ করেছিলেন, (যাহন ৪ :১৪) এবং যিনি বলেছেন, “যারা আমাকে বিশ্বাস করে তারা কখনও তৃষিত হবে না” (যোহন ৬ ঃ ৩৫) আজ তিনিই হলেন প্রাণান্তকর পিপাসার শিকার! তবে কি জীবন জলের উৎস শুকিয়ে গিয়েছে? যে জল আমি তাদের দিই, শাশ্বত জীবন দিতে তাদের অন্তরে তা এক উৎসে পরিণত হয় - যে জল চিরকাল বইতে থাকে (যোহন ৪ : ১৪)। স্রীষ্টের এ দাবি কি সত্য নয়? অথবা, এ কি ভাগ্যের পরিহাস? পাঠকের মনে এ প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক।



    যোহন লিখিত সুসমাচারকে জীবন জলের শুভবার্তা বলা যায়। এখানে দেখি জল নিয়ে যীশুর প্রথম অলৌকিক কাজ, জল ও আত্মা হতে নতুন জন্মুলাভের অতুলনীয় উদাত্ত আহ্বান এবং প্রান্তরে শৈল যেখানে স্রীষ্টকে আঘাত করে তৃষ্তার্ত বিশ্বমানবের জন্য ঈশ্বর শাশ্বত জীবন জলের ধারা প্রবাহিত করেছেন (১ করি ১০ : ৪)। প্রভুর পবিত্র রক্তই তো ঈশ্বর দত্ত স্বগীয় পানীয় (যোহন ৬ : ৫৫) খ্রীষ্টের পিপাসা তিনটি দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায় ঃ

    ১. দৈহিক পিপাসা :


    বিশ্বব্যাপী সাগরের সৃষ্টিকর্তা আজ এক বিন্দু বারির জন্য হাহাকার করছেন ! নিজের জন্য যিনি কোনদিন কারও কাছে কোনো বস্ত চাননি, ক্ষুৎপীড়িত হয়েও যিনি আহারের জন্য কখনও ব্যাকুল ও ব্যস্ত হয়নি, তিনি এখন ওযষ্ঠ ও জিহ্বার প্রচণ্ড শুষ্কতায় কাতর হয়ে একটু পানীয় জলের জন্য ব্যাকুল হয়েছেন। জলই তো জীবন । দারুণ তৃষ্ায় এখন তার প্রাণ যায়!

    ঈশ্বর পিপাসিত হন না। কিন্তু মানুষ বীশু তুক্কার্ত হয়েছিলেন। তিনি কোল থেকে কবর পর্যন্ত মানুষের সব অবস্থার সঙ্গে নিজেকে এক করে নিয়েছিলেন । মানুষের সমস্ত দুঃখ যন্ত্রণার সহভাগী হয়েছিলেন তিনি । দুঃখভোগী খ্রীষ্ট তাই তো বিশ্বমানবের সব দুঃখহারী শ্রেষ্ঠ বন্ধু

    গীতসংহিতা ৬৯ : ২১ পদের ভবিষ্যদ্বাণী অক্ষরে অক্ষরে সফল হলো, “আমার পিপাসাকালে অস্ররস পান করালো ।” যীশু বাধ্য হয়ে তাই পান করলেন। এও তীর দৈহিক দারুণ পিপাসার এক বাস্তব প্রমাণ । ক্রুশের অতি কাছে থেকেও তার মা এখন কত নিরুপায়! এতটুকু শীতল জলও তিনি তীর প্রাণপ্রিয় সন্তানের মুখে তুলে দিতে সক্ষম নন।

    ২. আত্মিক পিপাসা ঃ


    খ্রীষ্টের এই বাণীতে মানবাত্মা ঈশ্বরের আমাদের মতো পাপীষ্ঠদের ফিরে পাওয়ার চিরন্তন পিপাসা সরব হয়ে উঠেছে। তাই পঞ্চম বাণীতে পিতার সঙ্গে পুর্নমিলনের আকাঙ্খা উচ্চারিত হলো। আমাদের পাপের জন্য ক্রুশোপরে দপ্ডিত শ্বীষ্ট আমাদের পাপীষ্ঠ আত্মার জন্য অনন্ত পিপাসাক্রিষ্ট। তিনি নিজেও পিতৃ-বিচ্ছেদ যন্ত্রণায় জর্জরিত । ঈশ্বরের সঙ্গে মানুষের বিচ্ছেদের কারণ পাপ।
    “আমার পিপাসা পাইয়াছে - বলেছেন পাপীর বন্ধু পরিত্রাতা শ্রীষ্ট। এ পিপাসা কি আমরা কোনদিন ক্ষণেকের তরেও উপলব্ধি করেছি বা করছি? সেই শমরীয়া নারীর মতো এখনও কি আমাদের জীবনের উর্বরতা, শান্তি-সফলতা ধ্বংসকারী শুধু “মৃত-জল' পান করে চলেছি (২ রাজা ২ : ১৯-২১)? অর্থ লিন্সা, ধন-মান-পদ মর্যাদা, অথবা মাসিক অভিলাষের পিপাসাও থাকে সব সব সময় আমাদের অন্তরে । যোহন চার অধ্যায়ে বর্ণিত সেই শমরীয়া নারীর জীবনে ও মূর্খ জমিদারের দৃষ্ান্তে উপরোক্ত মানবিক তৃষ্জার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় (লেক ১২ : ১৩-২১)। আবার সংসারমনা, ভোগ বিলাসে মত্ত যিরশালেমের ধনী যুবক ও কর আদায়কারীদের মধ্যে বিশেষ প্রভাবশালী এক ধনবান - সক্কেয় দেখিয়েছেন যে, যে কোন অবস্থায় পাপীদের অন্তরে ঈশ্বরের ক্ষমা, শান্তি ও শাশ্বত জীবন লাভের তৃষ্ণা তীব্র হয়ে উঠতে পারে (মার্ক ১০
    :১৭-২২; লৃক ১৯ : ১-১০)।

    ৩. এশ্বরিক পিপাসা ঃ


    “আমি তৃষ্যার্ত”। এ দুটি শব্দ ঈশ-অন্তরের নিদারুণ ব্যথারও বহিঃপ্রকাশ। অপব্যয়ী পুত্র কন্যাদের ফিরে আসার পথ চেয়ে রয়েছেন তিনি আজও । এদোনে আদম-হবা হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তিনি দারুণ পিপাসা ক্রিষ্ট। হারানো সন্তানদের জন্য পিতা-মাতার অন্তরের যাতনা ভুক্তভোগী ব্যতীত আর কেউ জানে না এবং যে কোনো উপায়ে ও যে কোন মুল্যে তাদের ফিরে পাওয়ার জন্য কোন পিতা-মাতা চেষ্টার কোন ক্রটি করেন না। তাদের ফিরে না আসা অবধি তারা যে কত বিন্দ্র রজনী যাপনকরেন, তা ঈশ্বর ব্যতীত আর কে জানেন?

    হারানো পুত্রের দৃষ্টান্তে তার বাড়ী ফিরে আসার দৃশ্যে দেখি, বাড়ী থেকে সে যখন বেশ কিছুটা দূরে আছে, এমন সময় তার বাবা দেখতে পেলেন যে তার ছেলে ফিরে আসছে। তাকে দেখে বাবার মন মমতায় ভরে গেল। তিনি দৌড়ে গিয়ে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেলেন। পিতা ঈশ্বরের অন্তরে পাপে নিমজ্জিত সন্তানদের ফিরে পাওয়ার গভীর বাসনা এর মধ্যে ফুটে উঠেছে। এই তো তার হারিয়ে যাওয়া ও দিশেহারা নরকগামী মানুষদের আত্মাকে জয় করার অনন্ত তৃষ্তা। এত তীব্র তার এ পিপাসা যে নিরানববইটি মেষ ছেড়ে তিনি একটি মাত্র হারানো মেষের অন্বেষণে ছুটে বেড়ান, এবং দশটি সিকির একটি সিকি হারিয়ে গেলে প্রদীপ জ্বেলে সিকিটা না  পাওয়া পর্যন্ত ঘরের প্রতিটি কোণ ভাল করে খুঁজে দেখেন (লুক ১৫ : ৩)। তাইতো যে পথে অনুতাপানলে দগ্ধ মগ্দলীনী মরিয়ম, অস্পৃশ্যা শমরীয়া নারী এবং নবজীবন প্রার্থী সক্কেয়রা অপেক্ষা করে, প্রভু যীশু সেই পথ ধরেই চলেন। যীশুর পঞ্চম বাণীটি ঈশ্বর ও মানবের পরস্পরের জন্য অনন্ত পিপাসার কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।



    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS