সিদ্ধান্ত

ads20

    ভূমিকা:- ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে মোশির দ্বারা বলেছিলেন, আমি অদ্য তোমাদের বিরুদ্ধে আকাশমন্ডল ও পৃথিবীকে সাক্ষী করিয়া বলিতেছি যে, “ আমি তোমার সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, আশীর্বাদ ও শাপ রাখিলাম। অতএব জীবন মনোনীত কর, যেন তুমি সবংশে বাঁচিতে পার- দ্বিতীয় বিবরণ ৩০;১৯ পদ।

    # ইস্রায়েলর প্রতি যিহোশূয়ের প্রবোধ বাক্য:-

    যদি সদাপ্রভুর সেবা করা তোমাদের মন্দ বোধ হয়, তবে যাহার সেবা করিবে, তাহাকে অদ্য মনোনীত কর, নদীর ওপারস্থ তোমাদের পিতৃপুরুষদের সেবিত দেবগণ হয় হউক, কিন্বা ----ইমোরীয়দের দেবগণ হয় হউক; কিন্তু আমি ও আমার পরিজন আমরা সদাপ্রভুর সেবা করিব- যিহোশূয় ২৪;১৩-১৫ পদ ”।

    ইস্রায়েল জাতির উত্তর ঃ- ১৬-১৮ = লোকেরা উত্তর করিল, আমরা যে সদাপ্রবুকে ত্যাগ করিয়া অন্য দেবগণের সেবা করিব, তাহা দুরে থাকুক। কেননা আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু , তিনিই আমাদিগকে ও আমাদের পিতৃপুরুষণকে মিসর দেশ হইতে, দাস গৃহ হইতে হইতে বাহির করিয়া আনিয়াছেন; ও আমাদের দৃষ্টিগোচরে সেই সকল মহৎ চিহ্ন-কার্য করিয়াছেন, এবং আমরা যে পথে আসিয়াছি, সেই সমূদয় পথে ও যে সমস্ত জাতির মধ্য দিয়া আসিয়াছি; তাহাদের মধ্যে আমাদিগকেরক্ষা করিয়াছেন; আর সদাপ্রভু এই দেশনিবাসী ইমোরীয় প্রভৃতি সমস্ত জাতিকে আমাদের সম্মুখ হইতে দুর করিয়া দিয়াছেন; অতএব আমরাও সদাপ্রভুর সেবা করিব; কেননা তিনিই আমাদের ঈশ্বর।

    ২২ = তখন লোকেরা যিহোশূয়কে কহিল, না, আমরা সদাপ্রভুরই সেবা করিব।

    ২৪ = তখন লোকেরা যিহোশূয়কে কহিল, আমরা সদাপ্রভুরই সেবা করিব, ও তাঁহার রবে  কর্ণপাত করিব।

    # যে দিন যীশু খ্রীষ্টকে ক্রুশে দেওয়া হয়েছিল, সেদিন কালভেরী পাহাড়ে তিনটি ক্রুশ ছিল। মধ্যের ক্রুশটিতে ছিলেন যীশু এবং তাঁর দু’পাশে ছিল দুই ডাকাত। সে সময় ডাকাত, খুনী, বিদ্রোহ ধরণের জঘন্য লোকদের ক্রুশে দিয়ে হত্যা করবার নিয়ম ছিল। কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের কেন এরকম শাস্তিু ব্যবস্থা করা হয়েছিল ? কেন তিনি ক্রুশের উপর ঝুলে তিলে তিলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন ? কি ছিল তাঁর অপরাধ ?

    তার একমাত্র উত্তর হল:- “ পাপী মানুষের জঘন্য শাস্তি চিরতরে বিনষ্ট করবার জন্য যীশু খ্রীষ্ট স্বেচ্ছায় সাদরে মৃত্যুকে গ্রহণ করেছিলেন। ”

    যীশুর সঙ্গে ক্রুশে ঝুলন্ত অপর ডাকাতটির বিষয়ে একটু চিন্তা করা যাক। সে যীশুকে তিরস্কার করে বলেছিল, “তুমি নাকি মশীহ ?” তাহলে নিজেকে এবং আমাদের রক্ষা কর। তখন অন্যান্য লোকেরাও এই ডাকাতের সঙ্গে সুর মিলিয়ে যীশুকে আরও তিরস্কার করল। কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে অপর ডাকাতের মনে বিরুপ মনোভাব উদয় হল। সে মনে মনে অনুভব করল যে, সে দোষী। অতীত জীবনের সমস্ত পাপ তাকে ভিষণ ভাবে নাড়া দিল। প্রকৃত পক্ষে তার মনের পরিবর্তন ঘটল। তাই সে প্রথমে নিজের পাপ স্বীকার করে অপর ডাকাতকে তিরস্কার করে বলল, “ আমরা তো উচিৎ শাস্তি পাচ্ছি, আমাদের যা পাওনা, তা-ই পাচ্ছি। কিন্তু ইনি (যীশু) কোন অপকার্য করেন নি। সে মনে প্রাণে বুঝতে পেরেছিল যে, তার মৃত্যু অবধারিত; তাই সে তৎক্ষণাৎ যীশুকে বলল; “ যীশু আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করবেন। ”

    আমাদের দেশের আইন মতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী ‘ রাষ্ট্রপতির ’ কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারে। আমরা ঠিক জানি না তখনকার সময়ে যিহুদীদের এমন রীতিনীতি/আইন ছিল কিনা। কিন্তু একটি বিষয় জানি, এই ডাকাত লোকটি যীশুর সম্পর্কে খুব ভালভাবেই জানতো। সে জানতো, যীশু ছাড়া আর কোন মুক্তি নাই।

    উদাহরণ ১ # যখন যীশু সেই পক্ষাঘাতী লোকটিকে বলেছিলেন; যাও, তোমার পাপ সকল ক্ষমা হইল। যীশুর এই কথায় অনেক অধ্যাপকেরা মনে মনে তর্ক করে বলেছিল, ঈশ্বর ব্যতিরেকে আর কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না। তখন তিনি তাদের মনের বিতর্কতা জেনে বলতে বাধ্য হয়েছিলেন, “ পৃথিবীতে পাপ ক্ষমা করিতে মনুষ্য-পুত্রের ক্ষমতা আছে ”- মার্ক ২;১০ পদ।

    উদাহরণ ২ # অধ্যাপক ও ফরীশীরা ব্যভিচারে ধৃত একটি স্ত্রীলোককে যীশুর নিকটে এনেছিল যেন তাহারা পাথর মেরে তার বিচার করতে পরে। তাদের মুল লক্ষ্য ছিল যেন তারা যীশুর বিরুদ্ধে দোষারোপের সুত্র পাইতে পারে। তখন যীশু তাদের বললেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে নিস্পাপ, সেই প্রথমে ইহাকে পাথর মারুক।’ তখন তাহারা এই কথা শুনিয়া , এবং আপন আপন সংবেদ দ্বারা (বিবেকের) দোষীকৃত হইয়া একে একে বাহিরে গেল। প্রাচীন লোক অবধি আরম্ভ করিয়া শেষ জন পর্যন্ত অর্থাৎ কনিষ্ঠ পর্যন্ত গেল। কেহ সেই স্ত্রীলোকটিকে পাথর মারতে পারল না। কারণ পবিত্র বাইবেল বলে,“ কেননা সকলেই পাপ করিয়াছে এবং ঈশ্বরের গৌরব-বিহীন হইয়াছে।” -রোমীয় ৩;২৩ পদ। তাই সেই দিন একজনও সেই পাপে ধৃতা স্ত্রীলোকটিকে পাথর মারতে পারেনি। অবশেষে যীশু উপরের দিকে মাথা তুলে ঐ স্ত্রীলোকটি ভিন্ন আর কাউকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নারী, যাহারা তোমার নামে অভিযোগ করেছিল, তাহারা কোথায় ? কেহ কি তোমাকে দোষী করে নাই ? তখন সে উত্তর করিল, না প্রভু, কেহ করে নাই। তখন যীশুও তাহাকে বলিলেন, “আমিও তোমাকে দোষী করি না; যাও, এখন অবধি আর পাপ করিও না।” - যোহন ৮;১-১১ পদ। যতদুর সম্ভব দ্বিতীয় ডাকাতটি যীশু খ্রীষ্টের এই চরম শিক্ষা পেযেছিল অথবা দেখেছিল। তাই সে খ্রীষ্টের কাছে তার প্রাণ ভিক্ষা করে বলেছিল, প্রভু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন।

    আর এই কারণ পবিত্র বাইবেল এই কথা বলে, “ কেননা ঈশ্বর জগতের বিচার করিতে পুত্রকে জগতে প্রেরণ করেন নাই, কিন্তু জগত যেন তাঁহার দ্বারা পরিত্রাণ পায়।” - যোহন ৩;১৭ পদ।

    আপন রাজ্যে :- প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যখন তাঁর শিষ্যদের আপন রাজ্য সম্পর্কে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছিলেন, “ তোমাদের হৃদয় উদ্বিগ্ন না হউক, ঈশ্বরে বিশ্বাস কর, আমাতেও বিশ্বাস কর। আমার পিতার বাটিতে অনেক বাসস্থান আছে, যদি না থাকিত, তোমাদিগকে বলিতাম। কেননা আমি তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করিতে যাইতেচি। আর আমি যখন যাই ও তোমাদের জন্য স্থান প্রস্তুত করি, তখন পুনর্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; যেন আমি যেখানে থাকি, তোমরাও সেইখানে থাক।” যোহন ১৪;১-৩ পদ।

    আমার মনে হয় যীশুর কথা সেই ডাকাত শুনেছিল, তাই তো সে আর দেরি না করে আজ সঠিক সিদ্দান্ত নিল এবং প্রভুকে বলল, প্রভু, আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন।

    সুতরাং মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামী সেই ডাকাত মৃত্যুর ঠিক পূর্ব মুহুর্তে তার সঠিক সিদ্ধান্তটি বেছে নিল। যিনি পাপ ক্ষমা করিতে এবং জীবন দিতে পারেন, তাঁর কাছেই জীবন ভিক্ষা চাইল। আর অমনি সেই দন্ডেই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট সেই ডাকাতের প্রার্থনা গ্রাহ্য করলেন এবং বললেন,“ তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে। ”

    উপসংহার:- এক খ্রীষ্ট ভক্ত তার গানের সুরে বলেছেন, ‘ দুই স্টেশনে গাড়ি থামে, নামব নরকে বা স্বর্গে, যদি স্বর্গে যেতে চাও, বাইবেল আমাদের পথ দেখায়। ’ খ্রীষ্টেতে আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজ আমাদের সময় এসেছে, সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের। আমাদের সম্মুখে জীবন ও মৃত্যু, স্বর্গ আর নরক, দুটো পথই খোলা আছে; আমরা আসলে কোন পথ বেছে নেব ? সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঠিক সময় এসেছে ঠিক সেই দিন ঐ ডাকাতের জীবনেও এসেছিল এবং সে সঠিক সিদ্ধান্তই বেছে নিয়েছিল। যিনি সকল উকিলের উপরে উকিল, সকল রাষ্টপতির উর্দ্ধে রাষ্টপ্রতি, সকল বিচারকের উর্দ্ধে বিচারক; তাঁর কাছেই যখন ঐ ডাকাত প্রাণ ভিক্ষা করেছিল, তখন খ্রীষ্ট তার আকুল নিবেদনে সারা দিয়ে বলেছিলেন, “ তুমি আজকেই আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হবে। ” সঠিক সময়ে সটিক সিদ্ধান্তই সেই দিন ঐ ডাকাতের জীবনে অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা নিয়ে এসেছিল।

    তাই আসুন, জীবন মনোনীত করি এবং খ্রীষ্টের দেওয়া অনন্ত জীবনে চলবার জন্য খ্রীষ্টের কাছে নিজেদের সমর্পণ করি, আমেন !!!

    - পাষ্টর কিশোর তালুকদার 


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS