প্রথম বিষয়কে প্রথমে স্থান দেওয়া - Putting the First Thing First - Sermon

ads20

    শিরোনামঃ প্রথম বিষয়কে প্রথমে স্থান দেওয়া (Putting the First Thing First) 


    Author: Wailes Rangsa ( Principal CCTB )


    কেন প্রথম বিষয়টি প্রথমে রাখা উচিৎ? আপনার জীবনের প্রথম বিষয়টি কি?


     শাস্ত্রাংসঃ মথি ৬: ২৫-৩৩ পদ।


    ভুমিকাঃ ব্যক্তিগতভাবে আমি একজন আশাবাদী (optimistic), আমি নিরাশাবাদী বা pessimistic নই। আমি সবসময় কল্পনা করি, আমার আগামীকালের দিন আরও ভাল হবে। এই প্রত্যাশায় আমি দিনের কাজ দিনে শেষ করার চেষ্টা করি এবং অতীতেও করে এসেছি। আমি যদি কোন কাজ নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করতে না পারি, বিশাল স্নায়ুচাপ অনুভব করি।


    ইদানিং মনে হচ্ছে কাজের চাপটা একটু বেশী হয়ে যাচ্ছে- প্রতিদিনের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করাটা একটু চ্যলেঞ্জিং মনে হচ্ছে। প্রতিদিন আমি যখন আমার ব্যক্তিগত এবং অফিসিয়াল ইমেইল চেক করি, আমি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে লেখা একগুচ্ছ ইমেইল দেখতে পাই। কোন কোনটা সম্ভবনাময় ডনার সম্পর্কিত, কোন কোনটা চলমান প্রজেক্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত, কোন কোনটা প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সাথে সম্পর্কযুক্ত, কোন কোনটা বোর্ডের সাথে সম্পর্কযুক্ত, এবং কোন কোনটা এনজিও বিউরোর সাথে সম্পর্কযুক্ত, অন্যদিকে প্রতিদিনের চলমান কিছু দায়িত্বতো থাকেই যেখানে অনেকসময় তাৎক্ষনিক সাড়া দিতে হয় এবং অনেক সময় অনেক জায়গায় প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করতে হয় তাই মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে যেন ট্রাফিক সিগন্যাল জ্বলে উঠবে! মাঝে মাঝে ব্রেইনটা হ্যাং হয়ে যায়! কোনটা আগে করা উচিত, কোনটা সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ধারণ করাটাই অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। আর অসম্পাদনকৃত কাজগুলো মনে উদ্ভিগ্নতা শুরু করতে থাকে! উদ্ভিগ্নতা আমাকে আক্রান্ত করে! আমি জানি না আপনি এই সমস্ত বিষয়ে কেমন করেন!

    কিন্তু নিশ্চয় আপনি আমার সঙ্গে একমত হবেন যে, বর্তমানে আপনি optimistic বা pessimistic যাই হউন না কেন  মৌলিক বিষয়ে যেমন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চিকিৎসা, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে সবাই কম বেশী উদ্ভিগ্নতার মধ্যে দিনাতিপাত করছে। সবজীর বাজারে গিয়ে কোনটা কিনবেন কোনটা কিনবেন না! এই ব্লাড সুগার, ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলো কি না! ম্যাডিকেল ডায়াগনসিস রির্পোট সঠিক হলো কি না! ছেলেমেয়েরা এস এস সি পাশ করে কোথায় ভর্ত্তি হবে, এইচ এসসি পাশ করার পরে কোথায় চান্স পাবে, এই সমস্ত কিছু খুব সহজেই আমাদের স্নায়ুচাপ বাড়িয়ে দেয় এবং এই সমস্ত ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে ভুলে গিয়ে, অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর কথা ভেবে দুঃশ্চিন্তা গ্রস্থ হয়ে পড়ি। দুঃশ্চিন্তা করা একধরণের রোগ এবং দুর্বল বিশ্বাসের বহিপ্রকাশ। এখন প্রশ্ন হলো, আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি? কেন আমাদের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রথমে স্থান দেওয়া উচিত?


    আমাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি এবং কেন এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রথমে স্থান দেওয়া উচিত এই বিষয়ে দিক নির্দেশনা এবং শিক্ষা দেওয়ার জন্য প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মথি ৬: ২৫-৩৪ পদে এই যুগান্তকারী শিক্ষাটি দিয়েছেন। খেয়াল করুন, এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেকের জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত এই শিক্ষাটি তিনি কিন্তু শুরুতেই দেন নি এর জন্য তিনি নিজেকে অন্যদের কাছে আগে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করেছেন। আমরা জানি, যে তিনি যোহন বাপ্তাইজকের কাছে বাপ্তিষ্ম নিয়েছেন, যোহন বাপ্তাইজক জগতের কাছে তাঁকে ‘ঈশ্বরের মেষশাবক’ হিসাবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন, যিনি জগতের সমস্ত পাপভার লইয়া যাবেন। তিনি আত্না দ্বারা চালিত হয়ে প্রান্তরে দিয়াবল দ্বারা চল্লিশ দিবরাত্রি সার্বক্ষিণভাবে পরীক্ষিত হয়ে শারীরিক, মানসিক, এবং আত্নিক সকল ধরণের প্রলোভনকে জয় করে মিনিস্ট্রির জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। আর যোহন বাপ্তাইজকের করাগারে নীত হলে পর তিনি মিনিষ্ট্রি শুরু করে তিনি সর্ব প্রকার রোগ এবং ব্যধিতে আক্রান্ত, পক্ষাঘাত গ্রস্ত, ভুত গ্রস্ত, মৃগীরোগীদের সুস্থ করেছেন এবং অনেক আরও আশ্চর্য কাজ করেছেন, এভাবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন যে তিনি বিশ্বাসযোগ্য।‍


    তিনি ‍নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ করার পরই, তিনি এই দৈনন্দিন জীবনে অনুকরণীয় এই গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাটি দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, ‘কি ভোজন করিব, কি পান করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিম্বা ‘কি পরিব’ বলিয়া শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না। এই অংশটি পড়লে মনে হয় যেন একটি কবিতা পড়ছি কিন্তু এই অংশটির জন্য যে মুল ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে তা একটি Command। বাংলা অনুবাদ বাইবেলে এটি তেমন বুঝা যায় না কিন্তু ইংরেজী অনুবাদ পড়লে কিছুটা বুঝা যায়, যেখানে বলা হয়েছে, Do not be anxious। আক্ষরিকভাবে এই অংশটি অনুবাদ করলে, অনুবাদ হবে অনেকটা এরকম, আমি তোমাদিগকে নিষেধ করছি তোমরা খাদ্যের বিষয়ে, বস্ত্রের বিষয়ে দুঃশ্চিন্তা করবে না বা উদ্ভিগ্ন হবে না। এটা ঠিক যে আজকাল আমাদের অনেকেরই খাবারের সংকট নাই বরং বাহুল্য আছে! তাই আজকাল খাবারের সংকট সমস্যা সৃষ্টি করে না কিন্তু খাবারের বাহুল্য সমস্যা সৃষ্টি করে কারণ এখন আমাদের আর সাধারণ খাবার ভাল লাগে না। এখন আর ভাত, শাক-সবজী ভাললাগে না সবসময় মাংস পোলাও চাই, সুস্বাদু খাবার চাই যদিও তা স্বাস্থ্যের জন্য হানিকর! সিসিটিবিতে এটা আমার অভিজ্ঞতা, তাই আমি বলি, আমরা শিক্ষার্থীদের এসাইনমেন্ট পড়ে এবং মেন্টরিং করে খুব বেশী জানতে পারি না কিন্তু আমরা তাদেরকে খুব বিশী জানতে পারি খেলার মাঠে, বিশেষ করে যখন তারা খেলায় পরাজিত হয় তখন যে ধরণের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তাতে ভিত্তি করে। অন্যদিকে আমরা তাদেরকে খুব বেশী জানতে পারি সিসিটিবির ক্যান্টিনে, আমরা বলি সিসিটিবির ক্যান্টিনে সবসময় ব্যালেন্স খাবার পরিবেশনার জন্য চেষ্টা থাকে কিন্তু কিছু কিছু ব্যক্তি আছে যেন খাবারটা কখনই তাদের মনের মতো হয় না! যদিও অনেকেই বলে আজকের খাবারটা অনেক ভাল ছিল, তারা বলবে হুম, এটা একটু বেশী হলে ভাল হতো, ওটা একটা কম হলে আরও বেশী ভাল হতো! আর যদি কখনও এটা ওটা কম বা বেশী হয়ে যায় তাহলেতো অভিযোগের শেষ নাই! মনে হয় য়েন খাবারটাই সবচেযে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়! মনে হয় যেন লোকেরা খাবারের জন্যই জীবন যাপন করে এবং মনের মতো খাবার না পেলে পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি করে আর যারা খাবার প্রস্তুত করে তারাও এই ভেবে সবসময় চিন্তিত থাকে।

    কিন্তু প্রভু যীশু এখানে নিষধ করেছেন যেন আমরা খাবারের বিষয়ে দুশ্চিন্তা না করি। আমরা নিশ্চয় জানি যে, এটা যদি অনুরোধ হতো বা ইচ্ছা হতো তবে এটা পালন করা বা না করা সম্পূর্ণভাবে যাকে বলা হচ্ছে তার উপর নির্ভর করতো কিন্তু যেহেতু এটা একটি নিষেধ তাই এটা অমান্য করা হলো নিশ্চিত আজ্ঞা লঙ্গন বা অন্যায়। তাই যদি আমরা এই আদেশ মান্য করতে ব্যর্থ হই তবে আমরা অন্যায় করি। এখন, কেন তিনি আহার পানীয় এবং বস্ত্রের বিষয়ে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর সরাসরি দেওয়ার পরিবর্তে তিনি এই প্রশ্নের উত্তর প্রশ্নের আকারেই দিয়েছেন, আহার এবং পানীয়ের সাথে প্রাণের এবং বস্ত্রের সাথে শরীরের তুলনা করে তিনি বলেছেন, ভক্ষ্য হইতে প্রাণ এবং বস্ত্র হইতে শরীর কি বড় বিষয় নয়?


    এই প্রশ্নকরেই তিনি আকাশের পাখীদের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন, তিনি বলেছেন, আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর। ইংরেজীতে বলা হয়েছে ‘Look’ আমি গ্রীকভাষায় এই মুল ক্রিয়াপদের জন্য যে মুড করা হয়েছে তা দেখছিলাম তাতে দেখলাম এটাও একটি আদেশ। অর্থাৎ তিনি আমাদেরকে আহবান করছেন না কিন্তু আদেশ দিচ্ছেন যেন আমরা আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত করি। এখানে তিনি কি বিষয় দেখার জন্য আদেশ করেছেন? তিনি বলেছেন, দেখ, তাহারা বুনেও না, কাটেও না, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করে না । লক্ষ্য করুন, তিনি বলেছেন, তাহারা বুনেও না, কাটেও না, গোলাঘরে স্ঞ্চয় করে না, তিনি কিন্তু বলেন নি যে তারা পরিশ্রমও করে না।


    অবশ্যই প্রতিদিনের আহারে জন্য তাদেরকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়। তবে তারা গোলাঘরে সঞ্চয় করে না, তাদের কোন ব্যংক ব্যলেন্স নাই। আমাকে বুল বুঝবেন না, এর মানে কিন্তু যীশু বলেন নি যে আমাদের মোটেই সঞ্চয় করার দরকার নাই, সঞ্চয় না থাকলেতো আরও দুঃশ্চিন্তা বাড়বে।কিন্তু এখানে তিনি বলতে চাচ্ছেন যে এখন আমাদের যাদের সঞ্চয় নাই, আমরা যেন সঞ্চয় নাই বলে দুঃশ্চিন্তা না করি যে, আগামী দিনগুলোতে কিভাবে চলব। এই বলে তিনি যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে চেয়েছেন তা হলো স্বর্গীয় পিতার দিকে। এখানে আমাদের স্বর্গীয় পিতা কি করছেন বলে তিনি আমাদেরকে বলেছেন? তিনি বলেছেন, আমাদের স্বর্গীয় পিতাই তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন। তাইতো যারা খাবার পানীয়ের বিষয় নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করে তিনি তাদেরকে অনুযোগ করে বলেছেন, তোমরা কি পাখীদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ নও? তিনি বলতে চাচ্ছেন স্বর্গস্থ পিতা যদি পাখীদের আহার যুগিয়ে থাকেন তবে এটা কতটা নিশ্চয় যে তিনি আমাদেরকে আমাদের প্রয়োজন সকল যুগিয়ে দেবেন! তাইতো যারা জীবন নিয়ে দুশ্চিন্তা করে তিনি তাদেরকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হইয়া আপন বয়স এক হস্তমাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে? কেউ পারে? না কেউ পারে না!


    তারপর পোষাক আশাকের বিষয়ে যারা বেশী চিন্তা করে তিনি তাদের অনুযোগ করে বলেছেন, আর বস্ত্রের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও? কাপড় চোপড়ের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও? আমি জানি অনেকেই কাপড় চোপড়ের ব্যাপারে অনেক স্টাইলিষ্ট এবং সিলেকটিভ। আপনি কি জানেন পৃথিবীতে প্রথম কে বস্ত্র তৈরী করেছিলেন? পৃথিবীর প্রথম বস্ত্র তৈরী হয়েছিল লজ্জা নিবারণের জন্য যার ডিজাইনার ছিলেন ঈশ্বরং স্বয়ং। তিনিই প্রথম আদম এবং হবার লজ্জা নিবারণের জন্য পশুর চামড়া দিয়ে বস্ত্র তৈরী করে আদম হবাকে পড়িয়ে ছিলেন। ধীরে ধীরে বস্ত্র শুধুমাত্র লজ্জা নিবারণ এবং শীত প্রতিহত করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না কিন্তু তা ফ্যাশানে পরিনত হলো। আর বর্তমানে এমন সব ডিজাইনের পোষাক বের হচ্ছে, দেখে মনে হয় পোষাক লজ্জা নিবারণের পরিবর্তে যেন লজ্জা নিরাবরণের জন্য তৈরী হয়েছে। অন্যদিকে এখন আমাদের আর দুই এক সেট জামায় চলে না, কমপক্ষে ডজন খানেক লাগে। তাও যখনই শপিং মলগুলোতে যাই সব ডিজানের কাপড় চোপড়গুলোই সুন্দর লাগে কিন্তু যেই কিনে ঘরে নিয়ে আসা হলো অমনি তা যেন ব্যকডেটেট হয়েগেলো- এভাবে একটার পর একটার প্রতি আমাদের আকাংখা বাড়তে থাকে। যখনই কোন জম্ম দিনের দাওয়াত থাকে, বিবাহ অনুষ্ঠান বা অন্য কোন উৎসবে যাওয়া দাওয়াত থাকে আমাদের নুতন পোষাক চাই, আর নুতন ড্রেস না হলে পড়ে যেন কোন অনুষ্ঠানই আর অনুষ্ঠানের মত লাগে না। আর সৌন্দর্যটাই যেন প্রধান নিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবাই নিজেদেরকে হ্যন্ডসাম এবং সুন্দরী করে উপস্থাপন করতে চায়। আমার দান দশমাংসের জন্য টাকা থাক বা না থাক, বিউটি পার্লারে যাওয়ার বাজেট থাকা চাই।


    যারা নিজেদের ফ্যাসিয়াল সৌন্দর্য নিয়ে খুব বেশী ভাবিত বা চিন্তিত, তিনি তাদেরকেও বলছেন, বস্ত্রের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও? ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর, সেইগুলি কেমন বাড়ে; কেরী অনুবাদে কানুড় পুষ্পের কথা বলা হয়েছে, কোন কোন অনুবাদে বলা হয়েছে ক্ষেত্রের পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর। এখানে প্রভু যীশু যখন বিবেচনা করতে বলছেন, তিনি আসলে আমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন যেন আমরা পরীক্ষা করে দেখি, নীরিক্ষণ করে দেখি এবং বিশ্লেষণ করে দেখি, তবেই আমরা বুঝতে পারব যে সেগুলো শ্রম করে না, সুতাও কাটে না তথাপি কেমন বাড়ে এবং কেমন সুন্দর! এই বলেই প্রভু যীশু এই একটি ফুলের সঙ্গে শলোমনের সমস্ত প্রতাপের তুলনা করেছেন। আমরা জানি, শলোমন যিরাশালেম মন্দির নির্মাণের জন্য বিশেষভাবে ঈশ্বরের কাছে জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা লাভ করেছিলেন, তিনি তা নির্মাণ করেছিলেন, তিনি সৌর্য বীর্যে, এবং প্রতাপে অনেক শক্তিশালী এবং প্রতাপান্বিত ছিলেন। কিন্তু প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তুলনা করে বলেছেন যে, শলোমন আপনার সমস্ত প্রতাপে এই ফুলের একটির ন্যায়ও সুসজ্জিত ছিলেন না।


    এখন, কেন সেগুলো এত সুন্দর বা এত সুসজ্জিত? প্রভু যীশু এর উত্তর দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, সেগুলো এত সুন্দর এবং সুসজ্জিত কারণ ঈশ্বর সেগুলোকে এই রুপে বিভূষিত করেন।এই উত্তর দিয়েই তিনি অনুযোগ করেছেন, ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তাহা যদি ঈশ্বর এইরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্প বিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কি আরও অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন না? তিনি প্রশ্নের আকারে অনুযোগ করেছেন যেন উত্তরটা আমরা দিই, যে হ্যা অবশ্যই ঈশ্বর তিনি আমাদেরকে সুন্দর করে বিভুষিত করেছেন এবং করবেন।


    তাই তিনি খাবারের বিষয়ে, পানীয়ের বিষয়ে এবং বস্ত্রের বিষয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন। বলেছেন, ‘কি ভোজন করিব?’ ‘কি পান করিব?’ এই বলিয়া ভাবিত হইও না। তিনি আমাদেরকে দুঃশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন, তিনি বলেছেন, কারণ পরজাতীয়রাই এই সকল বিষয়ে বেশী ব্যতিব্যস্ত থাকে। কারণ তারাতো সদাপ্রভুকে জানে না, তাদেরতো ভবিষতের কোন প্রত্যাশা নাই। তাদের কাছে বর্তমানে ভোজন, পান এবং বস্ত্রের নিশ্চয়তায় সবকিছু, তাই তারা ভোজন পান এবং বস্ত্রের বিষয়ে সর্বদা উদ্ভিগ্ন থাকে। এই বলেই, প্রভু যীশু আমাদের জন্য এক মহা সুসংবাদ দিয়েছেন, তিনি বলেছেন, ‘তোমাদের স্বর্গীয় পিতা ত জানেন যে এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে”। আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, আমাদের স্বর্গস্থ পিতা আমাদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো জানেন?

    তিনি আমাদের প্রয়োজন সকল জানেন তাই তিনি আমাদেরকে নিষেধ করেছেন যেন আমরা সেই সমস্ত বিষয় নিয়ে ভাবিত হইয়া দুঃশ্চিন্তা না করি। কারণ এই সমস্ত বিষয়ে দুঃশ্চিন্তা করা মানেই হলো ঈশ্বরের উপর আমাদের আস্থাহীনতার বহিঃপ্রকাশ। আর ঈশ্বরের উপর আস্থাহীনতাই হলো অবিশ্বাস আর অবিশ্বাসই হলো পাপ। তিনি আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে দুঃশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেছেন কারণ আমাদের স্বর্গস্ত পিতা আমাদের প্রয়োজন সকল জানেন, তাই আমাদের কি করা উচিত? প্রভু যীশু বলেছেন, ‘কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর তাহা হইলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে’। আমাদের জীবনে কি বিষয়কে প্রথমে স্থান দিতে হবে, এই বিষয়ে তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, আমাদেরকে প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করতে বলেছেন। এই অংশেও যে মুল ক্রিয়াপদ ব্যবহার করা হয়েছে তাও একটি আদেশ। ইংরেজী অনুবাদে বলা হয়েছে, ‘Seek first his Kingdom and his Righteousness’ এটি কোন অনুরোধ বা বিনতী নয় এটি একটি আদেশ যেন আমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করি। লক্ষ্য করুন, তিনি কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় বস্তু সকলের কথা অস্বীকার করেন নি কিন্তু তিনি আমাদের জন্য একটা অগ্রাধিকার স্থাপন করেছেন যেন আমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা করি। রোমীয় পুস্তকে ১৪:১৭ পদে বলা হয়েছে, ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয় বলতে গিয়ে প্রেরিত পৌল বলেছেন, ঈশ্বরের রাজ্য ভোজন-পান নয় কিন্তু ধার্মিকতা, শান্তি এবং পবিত্র আত্নাতে আনন্দের বিষয়। ঈশ্বরের রাজ্যের চেষ্টা করা মানে হলো তাঁর কর্তৃত্বের নীচে নিজেদেরকে নত করা, তাঁর শাসন মেনে নেওয়া। অবশ্যই আমরা অনেকেই অনেক ধরণের প্রয়োজনের মধ্যদিযে দিনাতিপাত করছি, আমাদের অস্বীকার করার কিছু নাই। কিন্তু প্রভু যীশু এখানে আমাদেরকে আদেশ দিযেছেন এবং চ্যালেঞ্জ করেছেন, যদি আমরা তাঁহার রাজ্য ও ধার্মিকতার বিষয় চেষ্টা করি তবে তিনি সেই সমস্ত দ্রব্য আমাদিগকে দিবেন।


    এখন আসুন একটু চিন্তা করি, আজকে আপনার জীবনে ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতাকে প্রথমে রাখার মানে কি? কিভাবে আপনি ঈশ্বরের রাজ্যকে এবং ধার্মিকতাকে আপনার জীবনের প্রথমে স্থান দিতে পারেন? অন্যদিকে আসুন নিজেদের জীবনকে একটু পর্যালোচনা করে দেখি যে, কি বিষয়গুলো আপনার জীবনের প্রথম স্থানগুলো দখল করে আছে, আপনি কি তার একটি তালিকা তৈরী করতে পারেন? এই তালিকায় ঈশ্বরের রাজ্য এবং ধার্মিকতার স্থান কোথায়? সেই সঙ্গে একটু সময় নিয়ে ভাবুন, আজ আপনি কি বিষয়ে চিন্তিত? আপনি চাইলে সেগুলোর একটি তালিকা তৈরী করতে পারেন। আজকে আমাদের জন্য সুসংবাদ হচ্ছে, আমাদের স্বর্গস্থ পিতা সেই সমস্ত বিষয় জানেন। যদি আমরা তাঁহার রাজ্য ও ধার্মিকতাকে প্রথমে স্থান দিই, তবে তিনি আমাদের যত্ন নিবেন। ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করুন। 



    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS