করোনাকালীন বড়দিন কীভাবে ভালোবাসার সর্বোচ্চ নিদর্শন হতে পারে! ভালোবাসায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন, আবার কখনো ভালোবাসার নিদর্শন উজ্জ্বলতম হয়ে ওঠে। পবিত্র বাইবেলে প্রাপ্ত হই, প্রভু যিশু খ্রিষ্ট পৃথিবীর মানুষকে পাপের বন্ধন থেকে বাঁচাতে আত্মহুতি দিয়েছেন, মিথ্যার সাথে আপোষ না করার আদর্শ দেখিয়েছেন, রাষ্ট্্রযন্ত্রের নীতিহীন ও আইন বহির্ভূত বিচার ব্যবস্থার প্রতি ষড়যন্ত্রের সন্দেহকে সুস্পষ্ট করেছেন; সরকারের আজ্ঞাবহ সৈন্যসামন্তকে নিঃশর্তে ক্ষমা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
আর এ সমস্ত কিছুই সম্ভবপর হয়েছে আমাদের প্রতি তাঁর শতভাগ ভালোবাসার জন্যে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে,‘প্রেমে ভয় নাই বরং সিদ্ধ প্রেম ভয়কে বাহির করিয়া দেয়’ (১ম যোহন ৪:১৭)। প্রভু যীশুর এই প্রদর্শিত পথের পদাঙ্কনুসরণ করে একে একে তাঁর ১১ জন শিষ্যই সাক্ষ্যমর হয়েছেন যিশু খ্রিষ্টকে ভালোবেসে। প্রেরিত শিমন পিতরÑ ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। প্রেরিত আন্দ্রিয়Ñ গ্রীস দেশের আখায়স্থ-এ এক্স আকারের ফাঁসির কাষ্ঠে দু’দিন ব্যাপি ক্রুশারোপিত অবস্থায় ছিলেন; এ সময় যারা এসেছেন তাকে দেখতে; তাদের মধ্যে প্রচার করতেন। প্রেরিত যাকোবÑ পিতার নাম সিবদিয় ও মাতার নাম শালোমী। ৪৪ খ্রিষ্টাব্দে হেরোদ প্রথম আগ্রিপ্প খড়গাঘাতে যাকোবের শিরঃচ্ছেদ করেন। প্রেরিত থোমাÑ৬৮ খ্রিষ্টাব্দে মতান্তরে ৭২ খ্রিষ্টাব্দে বর্শাবিদ্ধ করে হত্যা করা হয়। দক্ষিণ ভারতের মাদ্রাজে মায়লাপুরে তাঁর দেহ কবরস্থ করা হয়েছে। প্রেরিত যাকোব- কেউ বলে মিশর দেশে প্রচারকালে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা; দ্বিতীয়মতÑ সুউচ্চ পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়া এবং ধোপার আঘাতে মৃত্যুবরণ; তৃতীয়তÑ করাত দিয়ে বিদীর্ণ করে হত্যা করা হয়। প্রেরিত থদ্দেয় অরারটের লোকেরা তীরবিদ্ধ করে হত্যা করে। উদ্যোগী শিমনÑ পারস্য দেশে সুসমাচারকালে ক্রুশবিদ্ধ করে হত্যা; দ্বিতীয় মতÑ সম্রাট ডোমিসিয়ানের শাসককালে প্যালেষ্টাইনে নিহত হন। সুসমাচার লেখক চিকিৎসক লূকÑ গলদেশে (বর্তমান) ফ্রান্স অঞ্চলে সুসমাচার প্রচার করেন। পরবর্তীকালে গ্রীস দেশে খ্রিষ্টবিশ^াসীদের মধ্যে তাড়নাকালে বিনা বিচারে তাকে ৭০-১০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে জিতবৃক্ষে জীবন্ত অবস্থায় প্রেকবিদ্ধ করে হত্যা করে। মার্ক লিখিত সুসমাচারের লেখক-মহাত্মা যোহন মার্ক: আলেকজান্দ্রিয়ার রাস্তার উপর দিয়া অতি নিষ্ঠুরভাবে তাঁহাকে টানিয়া লইয়া যাওয়ায় তথায় তিনি প্রাণত্যাগ করেন। প্রেরিত যোহন ৯৮- ১১৭ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময় পরিণত বয়সে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু হয়। তিনিই একমাত্র শিষ্য যিনি সাক্ষ্যমর হননি।
একদা শৌল খ্রিষ্টানুসারীদের অত্যাচার-নির্যাতন-হত্যার পরোয়ানা নিয়ে দম্মেশক যাবার প্রাক্কালে দর্শন প্রাপ্তিতে মনপরিবর্তন করলে পৌল নামেই সমাধিক পরিচিত হন। প্রেরিত পৌলই সর্বাধিক স্থানে যিশুর শিক্ষা, আদর্শ প্রচার করেছেন। তিনিও যিশুর ভালোবাসার নেশায় কষ্ট সহিষ্ণু হয়েছেন। তাঁর ভাষায়,‘আমি পরিশ্রমে অতিমাত্ররূপে, কারাবন্ধনে অতিমাত্ররূপে, প্রহারে অতিরিক্তরূপে, প্রাণ সংশয়ে অনেকবার। যিহূদীদের হইতে পাঁচ বার ঊনচল্লিশ আঘাত (প্রতিবারে ঊনচল্লিশ আঘাত; এই প্রকারে পাঁচ বার) মোট একশত পঁচানব্বই আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছি। তিনবার বেত্রাঘাত, একবার প্রস্তরাঘাত, তিনবার নৌকাভঙ্গ সহ্য করিয়াছি, আগধজলে এক দিবারাত্র যাপন করিয়াছি, যাত্রায় অনেকবার নদীসংকটে, মরুসংকটে, সমুদ্রসংকটে, ভাক্ত ভ্রাতৃগণের মধ্যে ঘটিত সংকটে, পরিশ্রমে ও আয়াসে, অনেকবার নিদ্রার অভাবে, ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায়, অনেক বার অনাহারে, শীতে ও উলঙ্গতায় কাল কাটাইয়াছি’ (২ করিন্থীয় ১১: ২৩-২৭)। যীশু বললেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, এমন কেহ নাই; যে আমার নিমিত্ত ও সুসমাচারের নিমিত্ত বাটি কি ভ্রাতৃগণ কি ভগিনী কি মাতা কি পিতা কি সন্তান-সন্ততি কি ক্ষেত্র ত্যাগ করিয়াছে, কিন্তু এখন ইহকালে তাহার শত গুণ না পাইবে; সে বাটি, ভ্রাতা, ভগিনী, মাতা, সন্তান ও ক্ষেত্র, তাড়নার সহিত এই সকল পাইবে এবং আগামী যুগে অনন্ত জীবন পাইবে (মার্ক ১০: ২৯-৩০)।
যিশুর ভালোবাসায় অন্ধেরা চোখের আলো পেয়েছে, খঞ্জরা হাঁটতে পেরেছে, খাদ্যহীনরা খাবার পেয়েছে, নারী-শিশুদের অধিকার সমাজের প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, ধর্মীয় উগ্রবাদীরা অপব্যাখ্যায় লজ্জিত হয়েছে, অচ্ছুত ও নিগৃহতদের ঈশ^রের রাজ্যের নাগরিক হওয়ার অধিকার দিয়েছেন। সামাজিক বৈষম্য, জাতি ভেদাভেদ, অর্থনৈতিক সাম্যতা, নৈতিকতার রাজনীতির দৃষ্টান্তও স্থাপন করেছেন। মানুষের প্রতি মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্য, সৎ কর্ম করার চেতনা এবং স্রষ্টার সাথে আত্মিক মেলবন্ধনের সেতুকে তিনি পাকাপোক্ত করেছেন। পৃথিবীর মানুষের প্রতি, প্রতিবেশীর প্রতি করণীয়ের যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, সেটিকে চলমান রাখা এবং অনুশীলন করা তাঁর অনুসারীদের আবশ্যিক। খ্রিষ্টকে শতভাগ ভালোবাসতে পারলে সমস্ত বাধা-বিপত্তিকেই উৎরানো সম্ভবপর হবে।
করোনাকালীন বড়দিন আমাদের জন্য শতভাগ ভালোবাসা প্রদর্শনের বার্তা বহন করে নিয়ে এসেছে। আমি কী আমাকে নিয়েই ব্যতিব্যস্ত আছি! হয়তো বৈশি^ক মহামারীতে নিকটজনকে হারিয়েছি, সেটি জাগতিকভাবে কষ্টজনক ও মনোব্যথার কারণ হতে পারে কিন্তু খ্রিষ্ট বিশ্বাসীদের জন্য আনন্দদায়ক। বিশ্বাসীদের প্রভুর সান্নিধ্যে থেকে গৌরব প্রশংসায় অংশী হতে পারে। গোটা বিশ্ব কোভিড- ১৯ করাল গ্রাসে ক্ষত-বিক্ষত, মানুষকূল-ই নয়, জীবজগত, প্রাণীজগত ও পরিবেশের ভারসাম্যকে আমরাই ক্ষতিগ্রস্ত ও জীবনধারণের অনুপযুক্ত করে তুলেছি। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বার বার মানবকূলকে হুঁশিয়ারী করেছে, দায়িত্বপালনে যত্নবান হতে আহবান জানাচ্ছে। বড়দিন ভালোবাসা প্রকাশের দিন। মানুষের প্রতি মানুষের, সমস্ত সৃষ্টির প্রতি; ঈশ^রের ‘উত্তম’ সৃষ্টিকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা প্রদর্শন করতে হবে। প্রভু যীশু আমাদের আদেশ দিয়েছেন, ‘তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত শক্তি ও তোমার সমস্ত চিত্ত দিয়ে তোমার ঈশ^র প্রভুকে প্রেম করিবে, এবং তোমার প্রতিবেশীকে আপনার মতো প্রেম করিবে।’ প্রতিবেশী বলতে শুধুমাত্র মানুষ নয়, মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুকেই ভালোবাসাতে বলেছেন। শুভ বড়দিন ও নববর্ষ আমাদের জন্য বয়ে আনুকÑ শান্তি, সম্প্রীতি ও ভালোবাসা।
Best Article hai or best post hai
ReplyDeletewordpress themes free download krne ke liye visit kre Nullwpscript.com
WordPress Themes Latest Free