মানব জাতির জন্য খ্রীষ্টের শান্তি

ads20

    কে না শান্তি চায় ? দুনিয়ার সকলেই শান্তি চায়। শান্তিতে থাকতে চায়, বাস করতে চায়। কিন্তু কোথায়ও শান্তি নাই। তাই ভক্ত লিখেছেন, ‘শান্তি শান্তি, শান্তি দিব, আমার কাছে এসো’।  এখানে ভক্ত কার বিষয়ে বলেছেন ? নিশ্চয় যিনি স্বর্গ থেকে ধরায় এসেছিলেন মানব বেশে, তারই বিষয়ে। তিনি আর কেউ নন, কেবল মাত্র আমাদের ত্রাণকর্তা প্রভু যীশু খ্রীষ্ট।

    খ্রীষ্ট জন্মের হাজার হাজার বছর পূর্বে ঈশ্বর ভবিষদ্বাণী করেছিলেন যে, একজন বালক জন্ম গ্রহণ করবেন। আর তাঁর নাম হইবে “ আশ্চর্য মন্ত্রী, বিক্রমশালী ঈশ্বর, সনাতন পিতা, শান্তিরাজ ”। স্বয়ং ঈশ্বর অশান্তির এই সংসারে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবার জন্যই স্বর্গের সিংহাসন ছেড়ে এই ধরাধামে নেমে  এলেন যেন তাঁর সৃষ্টির সেরা জীব আমরা শান্তিতে বসবাস করতে পারি। 


    পবিত্র বাইবেলে মোট দুইশত বত্রিশবার ‘শান্তি’ শব্দটি বিভিন্ন সময়ে ব্যবহৃত হয়েছে। ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের আদি পিতা, বহু জাতির পিতা অব্রাহামের সহিত প্রথম নিয়ম বা চুক্তি স্থাপিত হয়। ঠিক সেই সময়ে ঈশ্বর অব্রাহামকে বলেছিলেন, ‘ আর তুমি শান্তিতে আপন পূর্বপুরুষদের নিকটে যাইবে, ও শুভ বৃদ্ধাবস্থায কবর প্রাপ্ত হইবে ’- আদি ১৫;১৫ পদ। কারণ অব্রাহাম ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র ছিলেন। তিনিই অব্রাহামের নিকট প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তার মধ্য দিয়েই পৃথিবীর যাবতীয় গোষ্ঠি আশীর্বাদ প্রাপ্ত হইবে। আর রাজগণ তোমা হইতে উৎপন্ন হইবে।

    অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করা বাক্য যিশাইয় ভাববাদীর মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করেছে। তিনি বলেছেন, ‘ কারণ একটি বালক আমাদের জন্য জন্মিযাছেন, 

           একটি পুত্র আমাদিগকে দত্ত হইয়াছে; 
           আর তাঁহারই স্কন্ধের উপর কর্তৃত্বভার থাকিবে,
           এবং তাঁহার নাম হইবে – আশ্চর্য মন্ত্রী,
           বিক্রমশালী ঈশ্বর,সনাতন পিতা; শান্তিরাজ ’ - যিশা ৯;৬ পদ।

    মথি লিখিত সুসমাচার ১;২১ পদে আমরা দেখতে পাই, ‘ আর তিনি পুত্র প্রসব করিবেন, এবং তুমি তাঁহার নাম যীশু ( ত্রাণকর্তা ) রাখিবে; কারণ তিনিই আপন প্রজাদিগকে তাহাদের পাপ হইতে ত্রাণ করিবেন ’। কিন্তু লূক লিখিত সুসমাচার ২;১৩,১৪ পদে আমরা দেখতে পাই স্বর্গীয় বাহিনীর এক বৃহৎ দল ঈশ্বরের স্তব গান করতে করতে বলেছেন,

    ‘ উর্ধ্বলোকে ঈশ্বরের মহিমা, পৃথিবীতে তাঁহার প্রীতিপাত্র মনুষ্যদের মধ্যে শান্তি ’।

    যীশু খ্রীষ্ট তাঁর আপন শিষ্যদিগকে সুসমাচার প্রচার করতে পাঠান। তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন, ‘ তাহাতে সেই গৃহ যদি যোগ্য হয়, তবে তোমাদের শান্তি তাহার প্রতি বর্তুক; কিন্তু যদি যোগ্য না হয়; তবে তোমাদের শান্তি তোমাদের কাছে ফিরিয়া আইসুক ’ - মথি ১০;১৩ পদ। মানব জাতির এতটুকু শান্তির জন্য তিনি নেমে এসেছিলেন, কেবল তাই-ই নয় বরং এই শান্তি প্রতিষ্ঠা করবার জন্য তিনি তাঁর শিষ্যদেরকেও প্রেরণ করেছিলেন। ঠিক এর পর পরেই প্রভু যীশু খ্রীষ্ট শান্তির জন্য আহŸান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘ হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল; আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব অর্থাৎ শান্তি দিব। কারণ আমি শান্তিরাজ।

    খ্রীষ্ট যখন পিতরের শাশুড়ীকে জ্বর থেকে আরোগ্য করলেন ঠিক তার পরেই তিনি নৌকায় উঠিলে শিষ্যেরাও যীশুর সঙ্গে গেলেন। পরে সমুদ্রে ভারী ঝড় উঠিল। তাহাতে শিষ্যেরা প্রভুর নিকটে আবেদন জানালে তিনি বায়ু ও সমুদ্রকে ধমক দিলে তাহাতে মহাশান্তি হইল। কারণ তিনি শান্তিরাজ।

    খ্রীষ্ট যখন এই পৃথিবী থেকে তাঁর পরিত্রাণের মিশন কাজ শেষ করে পিতার কাছে চলে যাবেন অর্থাৎ সময় উপস্থিত জেনে মৃত্যুর পূর্বে শিষ্যদের নিকটে পরম আশ্বাস বাণী বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি; জগৎ যেরুপ দান করে, আমি সেইরুপ দান করি না। যীশু খ্রীষ্টের অবর্তমানে ‘ পবিত্র আত্মাকে দান করে যাচ্ছিেিলন যেন তাহারা সব সময় শান্তিতে থাকতে পারে ’। কিন্তু তার পরেও কি পৃথিবীতে শান্তি আছে ?

    খ্রীষ্ট স্বর্গধাম থেকে এই ধরাধামে নেমে এসেছিলেন ‘ শান্তি ’ প্রতিষ্ঠা করতে। তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করলেন ঠিকই কিন্তু আমরা সেই শান্তি রক্ষা করতে পারি নাই। আজ পৃথিবীর সর্বত্র অশান্তি বিরাজ করছে। কোথাও কোন শান্তি নাই। অথচ প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা আমাদের শান্তিরাজের “ শুভ জন্মদিন অর্থাৎ শুভ বড়দিন ” উৎসব পালনের জন্যই নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে যাব। হরেক রকম পিঠে-পায়েস খাব। আনন্দ-উল্লাস করব। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, আসলে কি শান্তিরাজের আনন্দ/শান্তি আমাদের মনে, প্রতিটি ঘরে ঘরে আছে ? আজ আমাদের সব চেয়ে বড় যে আদালত, ‘ বিবেক ’; বিবেকের কাছেই প্রশ্ন। কারণ এমন কোন পরিবার নেই, যেখানে অশান্তি নাই। এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই, যেখানে অশান্তি নাই। এমন কোন মন্ডলী নেই, যেখানে অশান্তি নাই। আজ পরিবারের মধ্যে ভাইয়ে ভাইয়ে অশান্তি, প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতার দ্বন্দের কারণে অশান্তি, পবিত্র মন্ডলীতে নানাবিধ কারণে অশান্তি। আজ আশান্তির মাত্রার যেন কোন শেষ নাই। আবার কেউ ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ। আর এই ক্ষমতার উৎস হইল মন্দ শক্তি। তাই তো খ্রীষ্ট বলেছিলেন, জগৎ যেরুপ দান করে, আমি সেইরুপ দান করি না।

    খ্রীষ্ট তাঁর প্রিয় শিষ্য যোহনকে দর্শনে বলেছিলেন, ‘ তুমি যাহা যাহা দেখিলে, এবং যাহা যাহা আছে, ও ইহার পরে যাহা যাহা হইবে, সেই সমস্তই লিখ। আর সেই দর্শনেরই একটি ঘটনা, যাহা হইবে বলা হয়েছিল, যথা- পরে একটি অশ্ব বাহির হইল, সেটি লোহিতবর্ণ, এবং যে তাহার উপরে বসিয়া আছে, তাহাকে ক্ষমতা দত্ত হইল; যেন সে পৃথিবী হইতে শান্তি অপহরণ করে, আর মনুষ্যেরা পরস্পরকে বধ করে- প্রকা ৬;৪ পদ। আর এই কারণ আমরা জানি, শয়তান/দিয়াবলই সকল অশান্তির মুল।

    উপসংহার :- আজ পৃথিবীর সর্বত্র অশান্তি, দেশে-বিদেশে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে, পরিবারে এমনকি পবিত্র মন্ডলীতেও। তার পরেও প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমরা সকলে বড়দিনে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে যাব। অশান্তির রাজ্যে/সাগরে ডুবে থেকেও আমরা বড়দিনের আনন্দ উপভোগ করব। কিন্তু আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঐ একটি কথা মনে রাখা জরুরী, “ শান্তি আমি তোমাদের কাছে রাখিয়া যাইতেছি, আমারই শান্তি তোমাদিগকে দান করিতেছি; জগৎ যেরুপ দান করে, আমি সেইরুপ দান করি না ”। শান্তি বজায় রাখা আমাদের সকলের খ্রীষ্টিয় নৈতিক দায়িত্ব। যেন আমাদের মধ্য দিয়ে খ্রীষ্টের শান্তির বারতা প্রকাশ পায়। এবারের বড়দিনে সকলের জীবনে বয়ে আনুক খ্রীষ্টের অনাবিল সুখ, শান্তি আর আনন্দ, আমেন।

    লেখক:Pastor Kishor Talukder


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS