আগমনে আমার মন । ডিকন লেনার্ড রোজারিও

ads20

    দীক্ষাস্ননের মধ্যদিয়ে আমরা মাতামন্ডলীর সদস্য হই। সন্তানের প্রতি মায়ের যেমন যত্নের শেষ তেমনি মাতামন্ডলীরও আমাদের প্রতি যত্নের কোন কমতি নেই। মাতামন্ডলী আমাদের শিক্ষা দেয় নিজের আধ্যাত্মিক, সামাজিক ও নৈতিক জীবনের মূল্যায়ন করে জীবনকে প্রস্তুত করতে । নিজের জীবনকে নিয়ে সুচিন্তা করে, ধ্যান করার মধ্যদিয়ে জীবনকে প্রস্তুত করতে পারি। এ ধ্যানে আমাদের হতে পারে যীশুর আগমনকে কেন্দ্র করে। আমরা ধ্যান করতে পারি মুক্তিদাতা যীশু আমাদের হৃদয় মন্দিরে আগমন হৃদয় মনকে প্রস্তুত করতে হবে। আমাদের হৃদয় মনকে প্রস্তুত করার উপযুক্ত একটি সময় হল মাতামন্ডরীর দান ‘‘ আগমনকাল’। যীশুর আগমন উপলক্ষে আমাদের হৃদয় মন কি দিয়ে সাজাব? এ সম্পর্কে সাধু পল বলেন, ‘‘মমতা, সহৃদয়তা, নম্রতা, কোমলতা ও সহিষ্ণুতার সাজেই নিজের অন্তরটাকে সাজিয়ে তোল। পরস্পরের প্রতি ধৈর্যশীল হও। আর কারও প্রতি কোন অভিযোগ থাকলে তোমরা তাকে ক্ষমাই কর; প্রভু নিজে যেমন ক্ষমা করেছেন, তেমনি তোমরাও ক্ষমা কর। আর সমস্ত কিছুর উপর স্থান দাও ভালবাসাকে’’ (কলসীয় 3:12-14) আমরা মান্ডলীক উপাসনা বর্ষ শুরু করি আগমনকাল দিয়ে। ‘‘ তোমরা প্রভুর আসার পথ প্রস্তুত কর রাখ, সোজা- সরল করে তোল তাঁর আসার পথ। 

    সমস্ত গিরিপর্বত ভরিয়ে তোলা হোক, সমস্ত গিরিপর্বত নিচু করে দেয়া হোক। যা কিছু আঁকা বাঁকা তা সোজা সরল হোক, চলার বন্ধুর পথ হয়ে ওঠুক মসৃণ সমান। তখনই তো রক্তমাংসের সমস্ত মানুষ ঈশ্বরের ত্রাণকর্ম দর্শন করবে’’ লুক 3:5-6। আগমন হল প্রতীক্ষার, প্রস্তুতির ও আত্মশুদ্ধির কাল। এসময়ের ত্রাণদাতার আগমনের ওপর ও মানুষের মন পরিবর্তনের কথা বিশেষ শুরুত্ব দেওয়া হয়।প্রভুর আগমনের জন্য প্রস্তুতি এবং পূর্ণভাবে তাকে গ্রহণ করার জন্য আমাদের প্রয়োজন মন পরিবর্তন করা। মন পরিবর্তনের অর্থ শুধু অনুতাপ বা প্রায়শ্চিত্ত করা নয়, বরং মন পরিবর্তন হল মনোভাবের পূর্ণ রূপান্তর। যে সকল ব্যর্থতা, অন্যায়, অবহেলা আমাদের জীবনকে পিছনে নিয়ে গিয়েছে; তাকে জয় করে নতুন অঙ্গীকারে তাকাই সম্মুখপানে। এই সময়ে আমরা বিশেষ ধ্যান প্রার্থনা করি এবং প্রস্তুতি নেই যীশুর আগমন প্রতীক্ষায়। আসলে তিনি বহু যুগ আগে এসেছিলেন পৃথিবীতে । তিনি আবার আসতে চান আমাদের হৃদয়ে রাজত্ব করতে । যীশু এ জগতে আসলেও কারো কারো হৃদয় গোশালায় তার স্থান হয় না। তাই মাতামন্ডলী এই আগমনকালে আমাদেরকে আহবান জানাচ্ছে পরিশুদ্ধ হৃদয়ে প্রভুকে ধারণ ও বহন করতে। আসুন, আমরা প্রভুর আগমন প্রতীক্ষায় থাকি। কারো প্রতীক্ষায় চেয়ে থাকা তো ভালোবাসারই নিদর্শন।প্রতীক্ষার অর্থ হলো যা ঘটতে যাচ্ছে সে সম্পর্কে শুভ প্রত্যাশা, একে অপরের প্রতি নির্ভরতা, ঈশ্বরের প্রতি আস্থা, যার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে তার প্রতি বিশেষ সম্মান, যিনি আসবেন তাকে স্বাগতম জানানোর জন্য উতলা এবং সচেতন থাকা। এভাবে অপেক্ষা বা প্রতীক্ষা হয়ে ওঠে সৃজনশীল মুহূর্ত, হয়ে ওঠে অর্থপূর্ণ ও ক্রিয়াশীল। যা ঈশ্বর প্রত্যাশা করেন আমাদের কাছ থেকে।আগমনকালের প্রধান দিক হল অনুতাপ ও মন পরিবর্তন। একজন মানুষ যখন নিজের উপলদ্ধিতে আনতে পারে তার পাপময় জীবনের কথা এবং তার পাপময় জীবনের অবসান ঘটিয়ে ঈশ্বরের দেখানো পথে চরে সেটাই হলো অনুতাপ। অনুতাপই একজন মানুষের হৃদয়, মন ও জীবন-যাত্রার সার্বিব পরিবর্তন ঘটায়। আমরা যদি আত্মমূল্যায়ন করে দেখি তাহলে আমরা দেখতে পাবযে, আমাদের অবস্থাও সে সময়কার ফরিসি, সাদুকি কিংবা করগ্রাহক ও সৈন্যদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। তাই আমাদের প্রয়োজন নিজের পাপের অনুতাপ করা ও মন পরিবর্তন করা। মাতামন্ডলী আমাদের আহবান করে আমরা যেন দক্ষিগুরু সাধু যোহনের জীবনাদর্শ ও তার বাণী গ্রহন করে জীবনের পরিবর্তন ঘটাই আর আগমনকালের মূল করণীয় কাজ হলো আমাদের মন ও জীবনের পরিবর্তন ঘটানো। ক্ষণিকের কিছু দুষহ স্মৃতি, কিছু ব্যর্থতা, স্বার্থপরতা প্রসূত অশান্তি এসবতো আমাদের জীবনেরই অংশ। আমরা মানুষ তাই ভুল করি, ভুল বুঝতে পারি, অনুতাপ করি, ক্ষমা চাই আর ক্ষমাও পাই। কি অসীম প্রভুর করুনা, কত না মহৎ তাঁর প্রেম। মিলনের এ শুভ যাত্রায়, আসুন আমরা সে পথেই হেঁটে যাই এবং তাকাই সম্মুখপানে। এসেছে নবক্ষণ, নবপ্রাণে খ্রিষ্টকে বরণের। তাই আসুন, মন পরিবর্তন করি, জীবনের মন্দতা পরিহার করি, ধার্মিকতার পথে চলি, কৃচ্ছততা ও ত্যাগস্বীকার করি আর এভাবেই প্রভু যীশুর আসার পথ সোজা সরল করে তুলি।


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS