ভৌগোলিক দৃষ্টিকোন থেকে সব চেয়ে বড়দিন হচ্ছে ২৩শে জুন। আর সব চেয়ে ছোট দিন হচ্ছে ২২শে ডিসেম্বর। আমাদের মুক্তিদাতা যীশু খ্রীষ্ট কোন এক শীতের রাতেই জম্ম গ্রহণ করেন। শীতের সময় দিন তো এমনিতেই ছোট থাকে, তাহলে আমরা বড়দিন বলে আসছি কেন?
এই পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক মহা নবী, অবতার, মহা মানব এসেছিলেন যাদের কারোর জন্মের পূর্বে কোন ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়নি। কিন্তু একমাত্র ইসা মসিহের জন্মের হাজার হাজার বছর পূর্বে কিভাবে কখন কোথায় জন্ম গ্রহণ করবেন, তাহা ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়। বলতে গেলে এই ভবিষ্যৎ বাণী করা হয় মানব জাতির পাপে পতনের ঠিক পরেই। পরে ইহা যিশাইয় ভাববাদির নিকটে ভবিষ্যৎ বাণী করা হয় যাহা পাওয়া যায় যিশাইয় ৭;১৪, ৯;৬,৭ পদে। এবং সব শেষে পূর্ণতা ঘটে মথি ১;১৮-২৫, লূক ২;১-২১ পদে।
গানে আছে, “একটি বছর পরে আবারও এলোরে ফিরে, এইনা মোদের শুভ বড় দিন ভাইরে।” অর্থাৎ বছর ঘুরে দিন যায়, মাস যায়, মাসের পর বছর ফিরে আসে, আসে আবার বড়দিন। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনে বড়দিনের মাস আসছে। কিন্তু প্রশ্ন আসে, “কেমন যাবে এবারের বড়দিন ?”
বেতন/বোনাস:- কভিড-১৯ অর্থাৎ করোনার কারণে ইতিমধ্যে হয়তো কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আবার এমন কোন প্রতিষ্ঠান আছে, যে সমস্ত প্রতিষ্ঠানে ৫০% অথবা ৭৫% বেতন চলছে। আবার কোন কোন প্রতিষ্ঠানে এবারে বোনাস নাও হতে পারে। যে সকল প্রতিষ্ঠানে বোনাস দেওয়া হবে না, সেই সকল প্রতিষ্ঠানের লোকদের অবস্থা কি হবে ? তারা কি অন্যান্য বছরের মত বড়দিনের মার্কেট করতে পারবে ? জানুযারী মাসের ঘর ভাড়া, সমিতির কিস্তির টাকা রেখে গ্রামের বাড়ীতে যাওয়া ইত্যাদি ইত্যাদি কি সম্ভব হবে ?
নগর কীর্ত্তন :- ডিসেম্বর মাস পরলেই আমাদের মন্ডলী গুলোতে বড়দিনের আনন্দের হাওয়া বিরাজ করত। বাড়ী বাড়ী, গ্রামে গ্রামে, মহল্লায় মহল্লায় এমনকি রাস্তায় রাস্তায় নগর কীর্ত্তনের হুরুস্থুল পড়ে যেত। কিন্তু এবার কি সেই ভাবে নগর কীর্ত্তন হবে ?
প্রীতি ভোজ :- বড়দিনের উপাসনা শেষে প্রীতি ভোজের আয়োজন থাকে। সকলে মিলেমিশে আনন্দের সাথে খাওয়া-দাওয়া হইতো। কিন্তু এবার কি সেই ভাবে মিলেমিশে আনন্দের সাথে প্রীতি ভোজের অনুষ্ঠান পালিত হবে ?
সরকারী নির্দেশমালা:- প্রতিটি মস্জিদ, মন্দির, গীর্জালয় এবং উপাসনালয়ে সকলে মাক্স ব্যবহার করবেন এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নিজ নিজ ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবেন।
বড়দিনের মার্কেট, নগর কীর্ত্তন আর প্রীতি ভোজ যাই-ই বলি না কেন সবই হয়তো ঠিক মত হবে ঠিকই কিন্তু অন্যান্য বছরের মত আনন্দ ঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে হচ্ছে না। কারণ কভিড-১৯ অর্থাৎ করোনা আমাদের সেই আনন্দ ঘন পরিবেশ নি:শেষে কেরে নিয়েছে। যদিও পবিত্র বাইবেল এই কথা বলে, “তখন দূত তাহাদিগকে কহিলেন, ভয় করিও না, কেননা দেখ, আমি তোমাদিগকে মহানন্দের সুসমাচার জানাইতেছি; সেই আনন্দ সমুদয় লোকেরই হইবে”- লূক ২;১০পদ।
উপসংহার:- পরিশেষে বলি, দূর্যোগ, মহামারী, সংকট যাই আসুক না কেন, সরকারের প্রতি আনুগত্য বজায় রেখে এবারও বড়দিনে বাড়ী যাব, উপাসনা করব, প্রীতি ভোজের আয়োজন করব। এবং সেই সাথে সাথে খ্রীষ্টের জম্মের বারতা অর্থাৎ পরিত্রাণের সুসংবাদ চারিদিকে ছড়িয়ে দেব। যেন একটিও প্রাণ বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা পায়। তার পরেও প্রশ্ন থেকেই যায়, আসলে “ কেমন যাবে এবারের বড়দিন ?
লেখক:Pastor Kishor Talukder