ঈসা মসীহ্ দেহ, মন রূহের মহান আরোগ্যকারী হিসেবে সুখ্যাত। আসুন তাঁর করা কিছু কাজের সত্য কাহিনী আমরা পড়ি।
কুষ্ঠরোগ এবং জ্বর
একজন চর্মরোগী ঈসার কাছে এসে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বলল, “ আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।’’ লোকটির উপর ঈসার খুব মমতা হল। তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই,তুমি পাক-সাফ হও।’ আর তখনই তার চর্মরোগ ভাল হয়ে গেল।
পরে তাঁরা মজলিস-খানা থেকে বের হয়ে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়ীতে গেলেন। ইয়াকুক এবং ইউহোন্না ও তাঁদের সংগে ছিলেন। শিমোনের শাশুড়ীর জ্বর হয়েছিল বলে তিনি শুয়ে ছিলেন। ঈসা আসামাত্রই তাঁর কথা তাঁকে বলা হল। তখন ঈসা তাঁর কাছে গিয়ে হাত ধরে তাঁকে তুললেন। তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল তিনি তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
একটি মৃত বালিকা এবং একজন অসুস্থ মহিল।
ঈসা যখন নৌকায় করে আবার সাগরের অন্য পারে গেলেন তখন তাঁর চারপাশে অনেক লোক এসে ভিড় করল। তিনি তখনও সাগরের পারে ছিলেন। সেই সময় যায়ীর নামে ইহুদী মসলিস-খানার একজন নেতা সেখানে আসলেন এবং ঈসাকে দেখে তাঁর পায়ের উপর উবুড় হয়ে হয়ে পড়লেন। তিনি ঈসাকে মিনতি করে বললেন, ‘‘আমার মেয়েটা মারা যাবার মত হয়েছে। আপনি এসে তার উপর আপনার হাত রাখুন;তাতে সে সুস্থ হয়ে উঠবে।’
তখন ঈসা তাঁর সংগে চললেন। অনেক লোক ঈসার সংগে সংগে যাচ্ছিল এবং তাঁর চারপাশে ঠেলাঠেলি করছিল। সেই ভিড়ের মধ্যে একজন স্ত্রীলোক ছিল যে বারো বছরে রক্ত¯্রাব রোগে ভুগছিল। অনেক ডাক্তারের হাতে সে অনেক কষ্ট পেয়েছিল, আর তার যা কিছু ছিল সবই সে খরচ করেছিল,কিন্তু ভাল হবার বদলে দিন দিনই তার অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। ঈসার বিষয় শুনে সে ভিড়ের মধ্যেই ঈসার ঠিক পিছনে এসে তাঁর চাদরটা ছুঁলো, কারণ সে ভেবেছিল যদি কেবল তাঁর কাপড় সে ছুঁতে পারে তাহলেই সে ভাল যাবে । ইসার চাদরটা ছোঁয়ার সংগে সংগেই তার রক্ত¯্রাব বন্ধ হল এবং সে তার নিজের শরীরের মধ্যেই বুঝল তার অসুখ ভাল হয়ে গেছে। তাঁর সাহাবীরা বললেন, ‘‘ আপনি তো দেখছেন লোকে আপনার চারপাশে ঠেলাঠেলি করছে, আর তুবও আপনি বলছেন, কে আপনাকে ছুঁলো?
এই কাজ কে করেছে তা দেখবার জন্য তবুও ঈসা চারদিকে তাকাতে লাগলেন। সেই স্ত্রীলোকটির যা হয়েছে তা বুঝে সে কাঁপতে কাঁপতে এসে ঈসার পায়ে পড়ল এবং এব বিষয় জানাল। ঈসা তাঁকে বললেন, ‘‘মা, তুমি বিশ্বাস করেছ বলে সুস্থ হয়েছ। শান্তিতে চলে যাও, তোমার আর এই কষ্ট না হোক।’’
ঈসা তখনও কথা বলছিলেন, এমন সময় সেই মজলিস-খানার নেতা যায়ীরের ঘর থেকে কয়েকজন লোক এসে যায়ীরকে বলল, ‘‘ আপনার মেয়েটা মারা গেছে; হুজুরকে আর কষ্ট দেবেন না।’’
সেই লোকগুলোর কথা শুনে ঈসা যায়ীরকে বললেন, ‘‘ভয় করবেন না, কেবল বিশ্বাস করুন।’’
ঈসা কেবল পিতর, ইয়াকুব ও ইয়াকুবের ভাই ইউহোন্নাকে তাঁর সংগে নিলেন। যায়ীরের বাড়ীতে এসে তিনি দেখলেন খুব গোলমাল হচ্ছে। লোকেরা জোরে জোরে কান্নাকাটি করছে। ঈসা ভিতরে গিয়ে লোকদের বললে, ‘‘ আপনারা কেন গোলমাল ও কান্নাকাটি করছেন? মেয়েটি মারা যায় নি, ঘুমাচ্ছে।’’
এই কথা শুনে লোকেরা হাসাহাসি করতে লাগল। তখন ঈসা তাদের সবাইকে ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। তারপর তিনি মেয়েটির মা-বাবা এবং তাঁর সংগের সাহাবীদের নিয়ে মেয়েটি যে ঘরে ছিল সেই ঘরে ঢুকলেন। মেয়েটির বয়স ছিল বারো বছর। ঈসা মেয়েটির হাত ধরে বললেন, ‘‘টালিথা কুম্,’’ অর্থাৎ ‘‘খুকী, তোমাকে বলছি, ওঠো।’’ আর তখনই মেয়েটি উঠে হেঁটে বেড়াতে লাগল। এতে তাঁরা খুব আশ্চর্য হয়ে গেলেন।
ইঞ্জিল শরীফ, দ্বিতীয় সিপারা: মার্ক ৫:২১-৪২
অন্ধত্ব
পরে ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা জেরিকো শহরে গেলেন। যখন তিনি সাহাবীদের ও অনেক লোকের সংগে শহর থেকে চলে যাচ্ছিলেন তখন তীময়ের ছেলে বরতীময় নামে একজন অন্ধ ভিখারী পথের পাশে বসে ছিল। ‘‘ উনি নাসরত গ্রামের ঈসা,’’ এই কথা শুনে সে চিৎকার করে বলতে লাগল, ‘‘ দাউদের বংশধর ঈসা, আমাকে দয়া করুন।’’ এতে অনেকে তাকে ধমক দিয়ে চুপ করতে বলল, কিন্তু সে আরও চিৎকার করে বলল,‘‘ দাউদের বংশধর, আমাকে দয়া করুন।’’
ঈসা থেমে বললেন, ‘‘ওকে ডাক।’’লোকরা অন্ধ লোকটিকে ডেকে বলল, ‘‘ভয় নেই, ওঠো। উনি তোমাকে ডাকছেন।’’ তখন সে তা গায়ের চাদরটা ফেলে লাফ দিয়ে উঠল এবং ঈসার কাছে গেল।
ঈসা তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘আমি তোমার জন্য কি করব? তুমি কি চাও?’’ অন্ধ লোকটি বলল, ‘‘হুজুর, আমি যেন দেখতে পাই।’’ ঈসা বললেন, “যাও,তুমি ঈমান এনেছ বলে ভাল হয়েছে” তাতে লোকটি তখনই দেখতে পেল এবং পথ দিয়ে ঈসার পিছনে পিছনে চলতে লাগল।
ইঞ্জিল শরীফ,দ্বিতীয় সিপারা: মার্ক ১০: ৪৬-৫২
এর পরে ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা সাগর পার হয়ে গালীল প্রদেশের উল্টা দিকে গাদারীদের এলাকায় গেলেন। তিনি যখন নৌকা থেকে নামলেন তখন সেখানকার গ্রামের একজন লোক তাঁর কাছে আসল। সেই লোকটিকে অনেকগুলো ভূতে পেয়েছিল বলে সে অনেক দিন ধরে কাপড়-চোপড় পরত না এবং বাড়ীতে না থেকে কবরস্থান থাকত। ঈসাকে দেখে সে চিৎকার করে উঠল এবং তাঁর সামনে মাটিতে পড়ে জোরে জোরে বলল, ‘‘আল্লাহতালার পুত্র ঈসা, আপনার সংগে আপনার কি সম্বন্ধ? দয়া করে আপনি আমাকে যন্ত্রণা দেবেন না।”
লোকটি এই কথা বলল কারণ ঈসা সেই ভুতকে তার মধ্য থেকে বের হয়ে যেতে হুকুম দিয়েছিলেন। সেই ভূত বার বার লোকটিকে আঁকড়ে ধরত। যদিও তখন তা হাত-পা শিকল দিয়ে বাঁধা থাকত এবং পাহারা দেওয়া হত তবুও সে সেই শিকল ছিঁড়ে ফেলত, আর সেই ভূত তাকে নির্জন জায়গায় তাড়িয়ে নিয়ে যেত। ঈসা তাঁকে জিজ্ঞাস করলেন, ‘‘তোমার নাম কি?’’ সে বলল, ‘‘বাহিনী,’’ কারণ অনেকগুলো ভূত তার ভিতরে ঢুকেছিল। তখন সেই ভূতগুলো ঈসাকে কাকুতি-মিনতি করতে লাগল যেন তিনি তাদের হাবিয়া-দোজখে না পাঠান।
সেখানে পাহাড়ের ধারে খুব বড় এক পাল শূকর চরছিল। ভূতগুলো ঈসাকে অনুরোধ করল যেন তিনি সেই শূকরগুলোর ভিতরে ঢুকতে তাদরে অনুমিত দেন। তিনি অনুমতি দিলে পর তারা লোকটির মধ্য থেকে বের হয়ে শূকরগুলো ভিতরে ঢুকল। তাতে সেই শূকরের পাল সাগরের ঢালু পার দিয়ে জোরে দৌড়ে গিয়ে পানিতে ডুবে মরল।
যারা শূকর চরাচ্ছিল তারা এই ঘটনা দেখে দৌড়ে গিয়ে সেই গ্রামের ও তার আশেপাশের সব জায়গায় এই খবর দিল। কি হয়েছে তা দেখবার জন্য তখন লোকেরা বের হয়ে আসল। ঈসার কাছে এসে তারা দেখল, যার মধ্য থেকে ভূতগুলো বের হয়ে গেছে সে কাপড়-চোপড় পরে সুস্থ মনে ঈসার পায়ের কাছে বসে আছে। এ দেখে তারা ভয় পেল। যারা সেই ঘটনা দেখেছিল তারা ঐ লোকদের কাছে বলল কেমন করে লোকটা সুস্থ হয়েছে।
ইঞ্জিল শরীফ, তৃতীয় সিপারা: লূক ৮:২৬-৩৬