আদিতে বাক্য ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বরের কাছে ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। তিনি আদিতে ঈশ্বর ছিলেন সকলই তাঁহার দ্বারা হইয়াছিল, যাহা হইয়াছে, তাহার কিছুই তাঁহা ব্যতিরেকে হয় নাই। তাঁর মধ্যে জীবন ছিল, এবং সেই জীবন মনুষ্যগণের জ্যোতি ছিল। আর সেই জ্যোতি অন্ধকারের মধ্যে দীপ্তি দিতেছে, আর অন্ধকার তাহা গ্রহন করিল না। যোহন: ১: ১-৫ পদ। আমরা পবিত্র বাইবেলের মধ্য দিয়ে এই সত্য দেখতে পাই, ঈশ্বরের বাক্য এবং যীশুর মহত্ব ও অবতারত্ব। যোহন লিখিত এই সুসমাচারের মধ্য দিয়ে আমরা দেখতে পাই, ঈশ্বরের প্রকাশ ছিলেন আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। তিনি বাক্য ছিলেন এবং পরে মাংসে মূর্ত্তিমান হইলেন এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ। আমরা সাধারন দৃষ্টিতে দেখলে মনে করি যীশু খ্রীষ্ট দুই হাজার বছর আগে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন এর পূর্বে তিনি এই পৃথীবিতে ছিলেন না। কিন্তু বাইবেলের এই উপরক্ত উক্তি থেকে বুঝতে পারি তিনি আদিতেও ছিলেন এখন ও আছেন।
যীশুর বিষয়ে যোহনের সাক্ষ্য :
যোহন লিখিত সুসমাচারে দেখতে পাই তিনি সাক্ষ্যের জন্য আসিয়াছিলেন, যেন সেই জ্যোতির বিষয়ে সাক্ষ্য দেন, যেন সকলে তাঁহার দ্বারা বিশ্বাস করে । তিনি নিজে জ্যোতি ছিলেন না কিন্তু আসিলেন যেন সেই জ্েযতির বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। আর তিনি যিহুদিদের, যাজকগল ও লেবিয়দের কাছে তার নিজের ও যীশুর বিষয়ে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন । সেই সময় অনেকে মনে করেছিলেন হয়ত তিনিই সেই খ্রীষ্ট কিন্তু যোহন বললেন, আমি সেই খ্রীষ্ট নই, কিন্তু আমি সেই খ্রীষ্টের বিষয়ে সাক্ষ্য দিতেছি। যোহন সেই সাক্ষ্যে এও বলিলেন, আমার পরে যিনি আসিতেছেন তিনি জগতে আসিতেছেন। তিনি রক্ত মাংশ হইতে নয়, মাংসের ইচ্ছা হইতে নয়, মানুষের ইচ্ছা হইতেও নয়, কিন্তু ঈশ্বর হইতে জাত। কারণ তাঁহার পূর্ণতা হইতে আমরা সকলে পাইয়াছি, আর অনুগ্রহের উপরে অনুগ্রহ পাইয়াছি; কারণ ব্যবস্থা মোশি দ্বারা দত্ত হইয়াছিল, অনুগ্রহ ও সত্য যীশু খ্রীষ্ট দ্বারা উপস্থিত হইয়াছে।
পুরাতন নিয়মের যিশাইয় পুস্তকের ৪০ অধ্যায়েও আমরা যেই যোহনের ঘোষনার কথা দেখতে পাই, এক জনের রব সে ঘোষনা করিতেছে, তোমরা প্রান্তরে সদাপ্রভুর পথ প্রস্তুত কর, মরুভুমিতে আমাদের ঈশ্বরের জন্য রাজ পথ সরল কর। আদিপুস্তকে জগৎ সৃষ্টির বিবরণেও দেথতে পাই ঈশ্বর আকাশ মন্ডল ও পৃথিবী সৃষ্টি করিলেন। পৃথিবী ঘোর ও শুন্য ছিল, এবং অন্ধকার জলধির উপরে ছিল, আর ঈশ্বরের আত্মা জলের উপরে অবস্থিতি করিতেছিলেন। পরে তিনি আকাশমন্ডল সহ সমস্ত কিছই সৃষ্টি করিলেন। পরে ষষ্ট দিনে ঈশ্বর কহিলেন, আইস আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মান করি; আর তাহারা সমুদ্রের মৎসদের উপরে, আকাশের পক্ষীদের উপরে, পশুগণের উপরে, সমস্ত পৃথিবীর উপরে ও ভুমিতে গমনশীল যাবতীয় সরীসৃপের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবে। এখানে ঈশ্বরের এই সৃষ্টির কথাতেই আমরা খ্রীষ্টের অস্তিত্বের কথা বুঝতে পারি।
খ্রীষ্টের আগমন আমাদের প্রয়োজনীয়তা :
ঈশ্বর আদম ও হবাকে সৃষ্টি করিলেন, আর তাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পৃথিবীতে মানুষ বৃদ্ধি পেতে লাগল। একটা সময়ে সেই আদম ও হবা থেকে মানব জাতির পতন শুরু হল । আদম ও হবা এদন উদ্দান থেকে বিতারিত হল । আদম ও হবার বংশ বৃদ্ধির সাথে সাথে পাপ ও জগতে বৃদ্ধি পেতে লাগল । এক সময় ঈশ্বর নিজেই মানব জাতি সৃষ্টির জন্য অনুশোচনা করিলেন। আদি পুস্তক ৬ :৬ পদে দেখতে পাই ঈশ্বর সদাপ্রভু পৃথিবীতে মনুষ্যের নির্মান প্রযুক্ত অনুশোচনা করিলেন,ও মন:পীড়া পাইলেন। মানব সংসারে পাপ প্রবেশ করল শয়তানের প্রলোভনে। পাপ একটি প্রলোভনের মধ্যদিয়ে উপস্থিত হয়েছিল। পাপের জন্ম মানুষের স্বার্থ ও অহঙ্কার থেকে। পতনের পুর্বে আদব ও হবার অহংকার হল, সৃষ্টিকর্তার পরাধিনতা তারা চাউল না। নিজের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইল। আর সদাপ্রভু কহিলেন, আমি যে মনুষ্য নির্মান করিয়াছি, তাকে ভুমন্ডল হইতে উচ্ছিন্ন করিব।
আ্র আদি পুস্তক ৬ অধ্যায়ে এও দেখতে পাই নোহ এর সময়ে জল প্লাবনের মাধ্যমে নোহের পরিবার ব্যতিত সকল মানুষকে বিনষ্ট করিলেন। অবশ্য পরে তিনি নোহের সহিত ঈশ্বর নিয়ম স্থাপন করিলেন। আদি পুস্তক ৮: ২১ পদে ঈশ্বর কহিলেন আর কখনও সকল প্রানীকে সংহার করিব না। যাবৎ পৃথিবী থাকিবে তাবৎ শস্য বপনের ও শস্য ছেদনের সময়, এবং শীত ও উত্তাপ, এবং গ্রীষ্মকাল ও হেমন্ত কাল, এবং দিবা ও রাত্রি, এই সকলের নিবৃত্তি হইবে না।
আদিপুস্তকে আমরা আবার সেই পাপের পতন দেখতে পাই। আর তার ফল স্বরুপ ঈশ্বর অব্রাহামের সময় সদোম ও ঘমোরার বিনাশ ঘটিয়েছিল। আদি ১৯: ২৪-২৬ পদে দেখতে পাই সদাপ্রভু সদোম ও ঘমোরার উপরে গন্ধক ও অগ্নি বর্ষাইয়া সেই সমুদয় নগর, সমস্ত অঞ্চল নগর নিবাসী সকল লোক ও সেই ভুমিতে জাত সমস্ত বস্তু উৎপাটন করিলেন। আর সেই সময় লোটের স্ত্রী তাঁহার নিষেধজ্ঞা অমান্য করে পিছন হইতে পশ্চাৎ দিকে দৃষ্টি করিলেন, আর লবণস্তম্ব হইয়া গেল। এভাবে আমরা দেখতে পাই মানূষ পৃথিবীতে বাড়তে থাকে আর পাপও বাড়তে থাকে আর বিভিন্ন সময় ঈশ্বর তাঁর ভক্তদের পৃথিবীর মানূষ্যদের রক্ষার জন্য পাঠান যেন সেই সমস্ত মানূষ তাদের কথা শূনে মন পরিবর্তন করে ও রক্ষা পায়, কিন্তু মানূষ আর কোন ভাবেই পাপের পথ থেকে ফিরে না। বিভিন্ন পাপাচারণ করে, প্রতিমা পূজা করে, অন্যের সম্পদ লুন্ঠন করে আর এভাবে পৃথিবীতে পাপে পূর্ণ হয়ে যায় । পাপের জন্য দায়ী মানূষ নিজেই। অন্য কাউকে এর জন্য দোষারোপ করা যায় না। পাপ বাহ্যিক ব্যবস্থা থেকে উৎপন্ন হয় না। মানুষের মন্দ চিন্তা থেকেই পাপের জন্ম। নিজের শক্তিতে সে আর পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে পারে না। আর তাই ঈশ্বর তার সাধের সৃষ্টির মানুষকে মুক্ত করার চিন্তা করলেন। আর তখন ঈশ্বর তাঁর একজাত পুত্রকে প্রেরণ করেন যেন মানুষ তাদের পাপ থেকে রক্ষা পায় ।
একমাত্র যীশু খ্রীষ্টই এই পাপের দাষত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেন। এবং এর জন্যই পৃথিবীতে তাঁর আগমন-রোমীয় ৭:১-২৫ পদ।
ঈশ্বর যীশুকে মুক্তিদাতা রুপে পাঠালেন :
ঈশ্বর তাঁর প্রিয় পুত্রকে পাঠালেন যেন মানূষ তাদের পাপ থেকে মুক্ত হতে পারে। রোমীয় ৮: ২ পদে বলা হয়েছে কেননা খ্রীষ্ট যীশুতে জীবনের আত্মার যে ব্যবস্থা, তাহা আমাকে পাপের ও মৃত্যুর ব্যবস্থা হইতে মুক্ত করিয়াছে। ঈশ্বর তাহা করিয়াছেন, নিজ পুত্রকে পাপময় মাংসের সাদৃশ্যে এবং পাপার্থক বলিরুপে পাঠাইয়া দিয়া মাংসে পাপের দন্ডাজ্ঞা করিয়াছেন, যেন আমরা যাহারা মাংসের বশে চলিতেছি, ব্যবস্থার ধর্মবিধি সেই আমাদিগেতে সিদ্ধ হয়।
ঈশ্বর জগতের বিচার করিতে পুত্রকে পাঠান নাই, কিন্তু জগৎ যেন তাঁর দ্বারা পরিত্রান পায়। আমরা যোহন লিখিত সুসমাচারের ৩: ১৬ পদে দেখতে পাই, কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত প্রত্রকে দান করিলেন যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়। উল্লেখিত পদের দ্বারা আমরা পরিস্কার ভাবে উপলব্ধি করতে পারি যে, যীশু আমাদের একমাত্র ত্রানকর্তা, তার মাধ্যমেই পরিত্রান পাওয়া যায়। ঈশ্বর সত্য। কারণ ঈশ্বর যাহাকে প্রেরণ করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বরের বাক্য বলেন; কারণ ঈশ্বর আত্মাকে পরিমান পূর্বক দেন না। পিতা পুত্রকে প্রেম করেন, এবং সমস্তই তাঁহার হস্তে দিয়াছেন । যে কেহ পুত্রকে বিশ্বাস করে, সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে: কিন্তু যে কেহ পুত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।্
যীশুই পথ :
যীশু বলিলেন, আমিই পথও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আইসে না। ঈশ্বরের কাছে যেতে হলে আমদের প্রভু যীশুর উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। কারণ তিনি পিতাতে আছেন, এবং পিতা তাহাতে আছেন। তিনি যে সকল কথা বলেন, তা তিনি নিজে থেকে বলেন না, পিতা ঈশ্বরই তাহাতে থাকিয়া এই সব কথা বলেন। এবং সকল কার্য্য সাধন করেন । এই জন্য যীশু বলেছেন, যে কেহ আমাতে বিশ্বাস করে, আমি যে সকল কার্য্য করিতেছি, সেও করিবে, এমন কি, এ সকল হইতেও বড় বড় কার্য্য করিবে।
উপসংহার :
যীশু বলেন আর তোমরা আমার নামে যাহা কিছু যাঞ্চা করিবে, তাহা আমি সাধন করিব, যেন পিতা পুত্রে মহিমান্বিত হন। যদি আমার নামে আমার কাছে কিছু যাঞ্চা কর, তবে আমি তাহা করিব। আমরা পাপি হয়েও যদি আমরা তাঁর কাছে আসি ও যাঞ্চা করি তাহলে তা পাবার নিশ্চয়তা তিনি আমাদের দিয়েছেন। কারণ প্রভু যীশূ বলেন, তোমরা যদি আমাকে প্রেম কর, তবে আমার আজ্ঞা সকল পালন কর। আমাদের উচিৎ হবে প্রভুর আজ্ঞা পালন করা এবং সেইমত চলা। তাই আসুন আমরা আমাদের পিতার ইচ্ছা পালন করি, পাপ থেকে মুক্ত হই, আমরা ঈশ্বরের সৃষ্টির সাধের মানুষ, আমাদের তিনি ধংশ করতে চান না । সেই জন্য যীশু বললেন, আমি আপনাদের সত্যিই বলছি, মেষগুলোর জন্য আমিই দরজা। আমার আগে যারা এসেছিল তারা সবাই চোর আর ডাকাত, কিন্তু মেষগুলো তাদের কথা শোনে নি। আমিই দরজা। যদি কেই আমার মধ্য দিয়ে ভিতরে ঢোকে তবে সে উদ্ধার পাবে। সে ভিতরে আসবে ও বাইরে যাবে আর চরে খাবার জায়গা পাবে। চোর কেবল চুরি, খুন ও নষ্ট করবার উদ্দেশ্যেই আসে। আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ পায়।
তাই সদাপ্রভুর প্রশংসা হোক। হে আমার প্রাণ, সদাপ্রভুর গৌরব কর।
আমি সারা জীবন সদাপ্রভুর গৌরব করব;
যতদিন আমি বেচে থাকব আমার ঈশ্বরের প্রশংসা গান করব।
আমেন।