ভূমিকা ঃ- জলের পিপাসা লাগে সকল প্রাণীর সকল মনুষ্যের। জল ছাড়া কোন প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। মানব জীবনে বেঁচে থাকার জন্য জলের কোন বিকল্প নাই। পবিত্র বাইবেলে ‘জল’ শব্দটি সাত শত তেরানব্বই বার পাওয়া যায়। ঈশ্বর বিশেষ বিশেষ সময়ে জলের ধারা প্রবাহিত করেছেন তাঁর সন্তান/জাতিকে রক্ষার জন্য। আবার কখনও কখনও পানের অযোগ্য জলকে পানের যোগ্য করেছেন। পবিত্র বাইবেল পাঠ ঃ- যিশাইয় ৫৫;১ পদ। অব্রাহামের দাসী হাগার যখন তার পুত্র ইশ্মায়েলকে নিয়ে র্বে-সেবা প্রান্তর দিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতেছিল, তখন তাদের কুপার জল শেষ হয়ে যায়। ঠিক সেই সময় হাগার তার নিজ চোখের সামনে সন্তানের মৃত্যু দেখবেন না বিধায় সন্তানকে একটি ঝোপের নিচে ফেলে রেখে অনেকটা দূরে গিয়ে উচ্চৈ¯^রে রোদন করিলেন। আর সেই সময় ঈশ্বর তাদের উভয়ের কান্নার রব শুনলেন এবং হাগারের চোখ খুলে দিলে সে এক সজল কুপ দেখিতে পায়। তখন সে তার কুপাতে জল তুলে নিয়ে মা এবং সন্তান নতুন জীবন শুরু করল। ঈশ্বর অব্রাহামের নিকট যে প্রতিজ্ঞা করলেন, হাগারের নিকটও সেই একই প্রতিজ্ঞা করে ইশ্মায়েলকে জল দিয়ে রক্ষা করলেন। সুফসাগর থেকে যাত্রা করে ই¯্রায়েল জাতি শূর প্রান্তরে গমন করেন। তাহারা তথায় তিন দিন যাবৎ যাত্রা করেন কিন্তু কোন জলের সন্ধান পান নি। সেখান থেকে তারা মারাতে উপস্থিত হন, কিন্তু মারার জল পান করিতে পারিল না কারণ মারার জল তিক্ত ছিল। ঠিক তখন লোকেরা মোশির বিরুদ্ধে বচসা করায় ঈশ্বর মোশিকে একটা গাছ দেখান। মোশি সেই গাছ জলে নিক্ষেপ করিলে জল মিষ্ট হইল এবং লোকেরা তৃপ্তি সহকারে পান করিল। এটি ছিল ই¯্রায়েল জাতির জন্য প্রথম অলৌকিক জলের যোগানযাত্রা ১৫;২২-২৭ পদ। এর অনেক দিন পর আবার যখন ই¯্রায়েলীয়দের জলের অভাব হইল তখন তারা মোশির ও হারোণের বিরুদ্ধে বচসা শুরু করল। তারা বলল, ‘ আর তোমরা আমাদের ও আমাদের পশুদের মৃত্যুর জন্য সদাপ্রভুর সমাজকে কেন এই প্রান্তরে আনিলে ? এই কুস্থানে আনিবার জন্য আমাদিগকে মিসর হইতে কেন বাহির করিয়া আনিলে ? এই স্থানে চাষ কি ডুমুর কি দ্রাক্ষা কি দাড়িম্ব হয় না, এবং পান করিবার জলও নাই। এমতাবস্থায় মোশি ও হারোণ সমাজের সাক্ষাৎ হইতে সমাগম-তাম্বুর দ্বারে গিয়া উবুর হইয়া পড়িলেন; আর সদাপ্রভুর প্রতাপ তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল। পরে সদাপ্রভুমোশিকে কহিলেন, তুমি যষ্টি লও, এবং তুমি ও তোমার ভ্রাতা হারোণ মন্ডলীকে একত্র করিয়া তাহাদের সাক্ষাতে ঐ ‘ শৌলকে’ ’ বল, তাহাতে সে নিজ জণ প্রদান করিবে, এইরুপে তুমি তাহাদের নিমিত্তে শৈল হইতে জল বাহির করিয়া মন্ডলীকে ও তাহাদের পশু সকলকে পান করাইবে। ঈশ্বর মোশিকে কেবল বলেছিলেন যেন মোশি শৈলকে বলে, কিন্তু তিনি যষ্টি দ্বারা দুইবার আঘাত করায়
প্রচুর জল বাহির হইলে মন্ডলী ও তাহাদের পশু সকলে পান করিয়া তৃপ্ত হইল এলিয়ের ¯^র্গারোহনের পর লোকেরা ইলিশায়কে কহিল, বিনয় করি, দেখুন, এই নগরের স্থান রম্য বটে, ইহা তো প্রভু দেখিতেছেন; কিন্তু জল মন্দ ও ভূমি ফলনাশক। তিনি কহিলেন, আমার কাছে নুতন একটি ভাঁড় আনিয়া তাহাতে লবণ রাখ। পরে তাঁহার কাছে তাহা আনিত হইল। তিনি বাহির হইয়া জলে উনুইয়ের নিকটে গিয়া তাহাতে লবণ ফেলিলেন, এবং কহিলেন, সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি এই জল ভাল করিলাম, অদ্যাবধি ইহা আর মৃত্যুজনক হইবে না। ইলিশায়ের উক্ত সেই বাক্যানুসারে সেই জল অদ্য পর্যন্ত ভাল হইয়া আছে- ২রাজা ২;১৯-২২ পদ। যে ই¯্রায়েলীয়রা ঈশ্বরকে ও তাঁর ধার্মিকতাকে ভুলে গিযেছিল, তাদেরকে ঈশ্বর আহব্বান করেছেন যেন তারা তাঁর কাছে ফিরে আসে এবং সহভাগিতা ও আশীর্বাদে পূনরায় যোগদান করে। পরিত্রান লাভের জন্য একটা আবশ্যকীয় পূর্বশর্ত হল ‘ ক্ষমা ও ঈশ্বরের সঙ্গে সঠিক সম্পর্কের জন্য একটা খাঁটি আত্মিক ক্ষুধা বা তৃষ্ণা।’ যোহন ৪;১৪, ৭;৩৭ পদে জলকে ‘ পবিত্র আত্মার ’ প্রতীক হিসাবে দেখা হয়। যার ভিত্তি হবে দাসরুপি মশীহের আত্ম বলিদান (যিশা ৫৩ অধ্যায় অনুসারে)। আমাদেরকে আমাদের পাপের জন্য অনুশোচনা করতে হবে এবং বিশ্বাসে ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে হবে। তাছাড়াও, ঈশ্বরের ধার্মিকতা এবং তাঁর বাক্যের ক্ষমতার জন্য ক্ষুধা তৃষ্ণাকে হতে হবে তাঁর আত্মার পূর্ণতা লাভের প্রধান শর্ত। যারা মনে প্রাণে ক্ষুদিত ও তৃষিত, তারা পরিতৃপ্ত হবে (মথি ৫;৬)। সর্ব প্রকার ধার্মিক জীবন যাপনের জন্য প্রধান প্রয়োজন হচ্ছে ‘ ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত হওয়া।’ এই ধরণের ক্ষুধা মোশির জীবনে (যাত্রা ৩৩;১৩-১৮), দায়ুদের জীবনে (গীত ৪২;১-৬), এবং পৌলের জীবনে (ফিলি ৩;৯-১৪) ছিল। যে মনোভাব নিয়ে তিনি মরেছিলেন, সেই রকম মনোভাব পেতে চাই (ক্ষুধা তৃষ্ণা) দেখতে পাওয়া যায়। একজন খ্রীষ্টিয়ানের জীবনের আত্মিক অবস্থা নির্ভর করবে।
ক) ঈশ্বরের উপস্থিতি- ২বিবরণ ৪;২৯ পদ। খ) ঈশ্বরের বাক্যের উপস্থিতি- গীত ১১৯;৫-৭ পদ।
গ) ঈশ্বরের যোগাযোগ- ফিলি ৩;৮ পদ।
ঘ) আত্মার সহভাগিতা- যোহন ৭;৩৭-৩৯, ২করি ১৩;১৪ পদ।
ঙ) ধার্মিকতা- মথি ৫;৬ পদ।
চ) ¯^র্গ-রাজ্যের ক্ষমতা- মথি ৬;৩৩ পদ।
ছ) প্রভুর আগমনের অপেক্ষা- ২পিতর ৩;১২ পদ।
২। ঈশ্বরীয় নিয়ম সমূহের প্রতি খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের যে ক্ষুধা তৃষ্ণা তা ধ্বংস করে দেয় জাগতিক চিন্তাভাবনা, ধন-দৌলত, মায়া (মথি ১৩;২২- কাটাবনের দৃষ্টান্ত)। পার্থিব জিনিসের আকর্ষন- মার্ক ৪;১৯ পদ। জাগতিক সুখাভিলাষ- লুক ৮;১৪ পদ। খ্রীষ্টের প্রতি আসক্ত না থাকা প্রভৃতি কারণ সমূহ- যোহন ১৫;৪ পদ। যখন কোন খ্রীষ্টিয়ানের ঈশ্বর ও তাঁর ধার্মিকতার প্রতি ক্ষুধা শেষ হয়ে যায়, তখনই সে আত্মিক ভাবে মারা পড়ে। এই কারণে আমাদের অবশ্যই পবিত্র আত্মার পরিচালনার উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে (যোহন ১৬;৮, রোমীয় ৮;৫-১৬)। যারা ধার্মিকতার জন্য সর্বদা ক্ষুধিত ও তৃষিত, তারা পরিতৃপ্ত হবেই (যিশা ৫৫;৬)। সদাপ্রভুর অন্যেষন কর, যে পর্যন্ত ঈশ্বরের উত্তর দানের প্রতিজ্ঞা আছে, সে পর্যন্ত আমাদেরকে ঈশ্বরের অন্যেষন করে যেতে হবে (যির ২৯;১৩,১৪)। ঈশ্বরের পরিত্রাণের সময় সীমীত (২করি ৬;১,২)। এমন একদিন আসবে যখন তিনি তাঁর সন্ধান দিতে অ¯^ীকার করবেন- ইব্রীয় ৩;৭- ১১ পদ।উপসংহার ঃ- ঈশ্বর শত শত বছর পূর্বে যিশাইয় ভাববাদীর মধ্য দিয়া ই¯্রায়েল জাতিকে পরিত্রাণের আহŸান জানিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, “ অহো, তৃষিত লোক সকল, তোমরা জলের কাছে আইস। ঈশ্বর প্রান্তরের মধ্যে পাথর থেকে জল দিয়েছিলেন, আর সেই পাথর/শৈল ছিলেন ¯^য়ং খ্রীষ্ট যীশু। শেষ পর্যন্ত যীশুও শমরীয় নারীর কাছে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, “ কিন্তু আমি যে জল দিব, তাহা যে পান করে, তাহার পিপাসা আর কখনও হইবে না; বরং আমি তাহাকে যে জল দিব, তাহা তাহার অন্তরে এমন জলের উনুই হইবে, যাহা অনন্ত জীবন পর্যন্ত উথলিয়া উঠিবে- যোহন ৪;১৪ পদ। আসুন, সারা বিশ্বের এই ক্লান্তিলগ্নে. পিছনের সমস্ত বাঁধাযুক্ত বিষয় সকল পরিত্যাগ করে, ঈশ্বরের আহŸানে সারা দিয়ে ধার্মিকতার জন্য ক্ষুধিত ও তৃষিত হই। প্রভু তাঁর জীবন্ত বাক্যের আলোকে আমাদিগকে সঞ্জীবিত করুন, আমেন।
পাষ্টর কিশোর তালুকদার
হাউজ চার্চ অব বাংলাদেশ, ঢাকা।