ঈশ্বর কি সত্যিই আছেন? ঈশ্বর আছেন এমন কোন প্রমাণ আছে কি?? জেনে নিন।

ads20

    ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে তা যেমন প্রমাণ করা যায় না, আবার তিনি যে নাই তাও প্রমাণ করা যায় না। বাইবেল বলে, বিশ্বাসেই এই সত্য আমাদের অবশ্য মেনে নিতে হবে যে, ঈশ্বর সত্যিই আছেন: বিশ্বাস থাকতে থাকতে হবে তাছাড়া ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করা  অসম্ভব, তাই কারণ ঈশ্বরের কাছে যে আসে তাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, ঈশ্বর আছেন এবং যারা ঈশ্বরের ইচ্ছামত চলে তারা তাঁর হাত থেকে তাদের পাওনা পায়” (ইব্রীয় ১১:৬)। যদি ঈশ্বর চান- তাহলে খুব সহজে তিনি তো উপস্থিত হয়ে সারা পৃথিবীর কাছে প্রমাণ করে দিতে পারেন যে, তিনি আছেন। কিন্তু যদি তিনি তা করেন, তাহলে বিশ্বাসের আর কোন প্রয়োজন হয় না। 

    সেইজন্য, যীশু থোমাকে বলেছিলেন, “থোমা, তুমি কি আমাকে দেখেছ বলে বিশ্বাস করছ? যারা না দেখে বিশ্বাস করে তারা ধন্য” (যোহন ২০:২৯)।তবে, তার মানে এই নয় যে, ঈশ্বরের অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নাই। বাইবেল বর্ণনা করেছে, “মহাকাশ ঈশ্বরের মহিমা ঘোষণা করছে, আর আকাশ তুলে ধরছে তাঁর হাতের কাজ। দিনের পর দিন তাদের ভিতর থেকে বাণী বেরিয়ে আসে, আর রাতের পর রাত তারা ঘোষণা করে জ্ঞান। কিন্তু তাতে কোন শব্দ নেই, কোন ভাষা নেই, তাদের স্বরও কানে শোনা যায় না; তবু তাদের ডাক সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে; তাদের কথা ছড়িয়ে পড়ছে জগতের শেষ সীমা পর্য্ন্ত”(গীতসংহিতা ১৯:১-৪)। তারাগুলোর দিকে তাকালে, বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের বিশালতা বুঝতে চেষ্টা করলে, প্রকৃতির আশ্চর্য বিষয়সমূহ লক্ষ্য করলে এবং অস্তগামী সূর্যের সৌন্দর্য দেখলে, সব কিছুই একজন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে দেখিয়ে দিচ্ছে। যদি এও যথেষ্ট না হয়, তাহলে ঈশ্বরের অস্তিত্বের প্রমাণ আমাদের নিজেদের হৃদয়েই রয়ে গেছে। উপদেশক ৩:১১ পদ আমাদের কাছে বলেছে, “... ... তিনি মানুষের অন্তরে অনন্তকাল সম্বন্ধে বুঝবার ইচ্ছা দিয়েছেন।” আমরা আমাদের হৃদয়ের গভীরে অনুভব করি যে, এই জীবনের পরে কোন কিছু রয়েছে, এই পৃথিবীর পরেও কোন কিছু আছে। আমরা আমাদের বুদ্ধি-বৃত্তি দিয়ে এই জ্ঞান অস্বীকার করতে পারি, কিন্তু আমাদের মধ্যে এবং আমাদের চারিদিকে ঈশ্বরের উপস্থিতি তবুও সুস্পষ্ট। তা সত্বেও, বাইবেল সতর্ক করেছে- এর পরও কেউ কেউ ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করবে: “যাদের মন অসাড় তারা ভাবে ঈশ্বর বলে কেউ নেই”(গীতসংহিতা ১৪:১)। যেহেতু সমস্ত পৃথিবী জুড়ে, সকল সভ্যতায়, সকল সংস্কৃতিতে, সমস্ত ইতিহাস জুড়ে ব্যাপক সংখ্যার লোকেরা কোন একজন ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস করে; তার মানে, কোন কিছু (অথবা কেউ) এই বিশ্বাসের পথ দেখিয়েছে।বাইবেলের যুক্তিগুলোর সাথে কিছু তার্কিক যুক্তিও যোগ করা যায়। প্রথমত, কিছু তাত্ত্বিক যুক্তি দেখা যেতে পারে। সবচেয়ে জনপ্রিয় তাত্ত্বিক যুক্তি হচ্ছে, ঈশ্বর সম্পর্কিত ধারণা দিয়েই ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রমাণ করা। ঈশ্বর সম্বন্ধে যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, তা হচ্ছে- ‘তিনি এমন এক সত্ত্বা, তাঁর চেয়ে মহত্তর আর কিছু ভাবা যায় না।’ এভাবেও যুক্তি দেওয়া হয়, ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকার চেয়ে বরং তাঁর অস্তিত্ব থাকাটাই সবচেয়ে বড়, এবং তার মানে, ধারণা করার মত সবচেয়ে বড় সত্ত্বার অস্তিত্ব অবশ্যই আছে। যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে ঈশ্বর সম্পর্কে সবচেয়ে বড় কোন ধারণা করা যায় না, আর তাহলে- ঈশ্বর সম্পর্কে এই সংজ্ঞার গ্রহণযোগ্যতাও থাকে না।

    দ্বিতীয় যুক্তি হচ্ছে উদ্দেশ্যবাদ। উদ্দেশ্যবাদ এভাবে বর্ণনা করে, যেহেতু এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড এক আশ্চর্য উপায়ে সাজানো, সেহেতু একজন ঐশী পরিকল্পনাকারী অবশ্যই আছেন। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, যদি পৃথিবী কোন কারণে সূর্যের কাছে আসে বা সূর্য থেকে দূরে সরে যায়, তাহলে পৃথিবী এখনকার মতন প্রাণীর অস্তিত্ব ধরে রাখতে সমর্থ হবে না। আমাদের বায়ূমন্ডলের কোন উপাদান যদি সামান্য পরিমাণে এদিক-সেদিক হয়, তাহলে এই পৃথিবীতে অধিকাংশ প্রাণীই বেঁচে থাকবে না। এক একটি আমিষ অণুতে ১০ এর পরে ২৪৩ টা শূন্য বসালে যে সংখ্যা দাঁড়ায়, ততগুলো অণু নিয়ে এক একটা কোষ গঠিত হয় (অর্থাৎ ১০ এর পরে ২৪৩ শূন্য)। একটা স্বতন্ত্র কোষকে লক্ষাধিক আমিষ অনুর সাথে তুলনা করা যায়।

    ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে তৃতীয় যুক্তি হচ্ছে, সৃষ্টিতত্ত্বের যুক্তি। কোন কিছু ঘটলে তার কারণ অবশ্যই থাকে। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড এবং যা কিছু সৃষ্টি, তা অবশ্যই কোন ঘটনার ফল। অবশ্যই এমন কিছু কারণ ঘটেছে, যার ফলে সবকিছুর অস্তিত্ব প্রকাশ পেয়েছে। চুড়ান্তভাবে, কারণ ছাড়া অবশ্যই এমন কিছু আছে, যার কারণে সবকিছুই অস্তিত্ব প্রাপ্ত হয়েছে। আর এই ‘কারণ ছাড়াই’ কারণ হচ্ছে ঈশ্বর।

    চতুর্থ যুক্তিটি হচ্ছে নৈতিক যুক্তি। সমগ্র ইতিহাস জুড়ে প্রত্যেকটি সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে কিছু নিয়ম রয়েছে। প্রত্যেকের রয়েছে ভাল-মন্দের জ্ঞান। খুন করা, মিথ্যা কথা বলা, চুরি করা এবং অনৈতিক কাজ করা- প্রায় সার্বজনীনভাবে বর্জন করা হয়েছে। যদি একজন পবিত্র ঈশ্বর না থাকেন, তাহলে এইরকম ভাল ও মন্দ বুঝবার জ্ঞান কোথা থেকে আসে?

    এইসব ছাড়াও, বাইবেল আমাদের বলে যে, লোকেরা সুস্পষ্ট ও অপরিত্যাজ্য ঈশ্বরের জ্ঞান পরিত্যাগ করবে এবং তার বদলে মিথ্যাকে বিশ্বাস করবে। রোমীয় ১:২৫ পদ বলেছে, “ঈশ্বরের সত্যকে ফেলে তারা মিথ্যাকে গ্রহণ করেছে। সৃষ্টিকর্তাকে বাদ দিয়ে তারা তাঁর সৃষ্ট জিনিষের পূজা করেছে, কিন্তু সমস্ত গৌরব চিরকাল সেই সৃষ্টিকর্তারই। আমেন।” বাইবেল আরও বলেছে যে, লোকেরা কোন কারণ ছাড়াই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে না: “ঈশ্বরের যে সব গুণ চোখে দেখতে পাওয়া যায় না, অর্থাৎ তাঁর চিরস্থায়ী ক্ষমতা ও তাঁর ঈশ্বরীয় স্বভাব সৃষ্টির আরম্ভ থেকেই পরিষ্কার হয়ে ফুটে উঠেছে। তাঁর সৃষ্টি থেকেই মানুষ তা বেশ বুঝতে পারে। এর পরে মানুষের আর কোন অজুহাত নেই” (রোমীয় ১:২০)।

    লোকেরা ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করে, কারণ তা ‘বিজ্ঞানসম্মত নয়’, অথবা ‘তাঁর অস্তিত্বের কোন প্রমাণ নেই।’ তাছাড়াও, সত্যিকার কারণ হচ্ছে, একবার যখন কেউ স্বীকার করে ঈশ্বর আছেন, তখন তাদের এ-ও মেনে নিতে হয়, তারা ঈশ্বরের কাছে দায়বদ্ধ এবং তাঁর কাছ থেকে পাপের ক্ষমা দরকার (রোমীয় ৩:২৩, ৬:২৩)। যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব থাকে, তাহলে আমরা তাঁর কাছে আমাদের কাজের জন্য দায়বদ্ধ। যদি ঈশ্বরের অস্তিত্ব না থাকে, তাহলে আমরা তো ঈশ্বর বিচার করবেন এটা ভেবে উদ্বিগ্ন না হয়ে যা খুশী তা-ই করতে পারি। এ কারণেই অনেকে যারা ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করে না, তারা প্রাকৃতিক বিবর্তনের মতবাদকে খুব জোরালোভাবে ধরে রাখে- যা সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করতে তাদের জন্য বিকল্প পথ। ঈশ্বর আছেন এবং সকলেই জানে তিনি আছেন। তবে খুব সত্যি এটাই, যখন কেউ আক্রমণাত্মকভাবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নাই বলে প্রমাণ করতে চায়, তা আসলে ঈশ্বরের অস্তিত্বের পক্ষে একটা যুক্তি।

    ঈশ্বরের অস্তিত্ব আছে, তা আমরা কিভাবে জানতে পারি? খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে, আমরা জানি যে ঈশ্বর আছেন, কারণ তাঁর সাথে আমরা প্রতিদিন কথা বলি। আমরা কাণ দিয়ে শুনতে পাই না যে তিনি কথা বলছেন, কিন্তু তাঁর উপস্থিতি অনুভব করতে পারি- তাঁর পরিচালনা অনুভব করতে পারি; আমরা তাঁর ভালবাসা জানি, আমরা তাঁর অনুগ্রহ আকাংখা করি। আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যার সম্ভাব্য কারণ ব্যাখ্যা করতে ঈশ্বর ছাড়া আর কারও কথা বলা যায় না। ঈশ্বর অলৌকিকভাবে আমাদের রক্ষা করেন এবং জীবনে পরিবর্তন আনেন যা আমরা ভাবতে পারি না- আবার তাঁর অস্তিত্ব স্বীকার করে তাঁর প্রশংসা না করেও পারি না। এইসব যুক্তি দিয়েও তা নিশ্চিতভাবে কাউকে স্বীকার করানো যায় না যে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব সত্যিই সুস্পষ্ট। সব শেষে, ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাসে মেনে নিতে হয় (ইব্রীয় ১১:৬)। ঈশ্বরকে বিশ্বাস করা অন্ধকারে ঝাপ দেওয়া নয়; কিন্তু তা হচ্ছে উজ্জ্বল আলোতে ভরা কামরাতে পা রাখা, যেখানে অনেক অনেক লোক আগে থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।

    ( সংগ্রহীত লেখা )


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS