ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড-এর সূচনা ও ইতিহাস

ads20

     সূচনা ও ইতিহাস

    প্রসঙ্গকথাঃ‘‘সমবায়ই শক্তি, সমবায়ই মুক্তি’’, ‘‘সমবায়ই সমৃদ্ধি’’, ‘‘একতাই বল’’, ‘‘দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ’’– এসব নীতিকথা, প্রবাদ বাক্য অমূলক নয়। বরং আজ তা এ সমাজে, দেশে এমনকি সারা বিশ্বে অত্যন্ত সফলভাবে প্রমাণিত। ‘‘If at first try you don’t succeed, try and try again.” অর্থাৎ, ‘‘একবার না পারিলে দেখ শতবার’’। ‘‘Where there is will, there is way.” অর্থাৎ, ‘‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’’। এসব নীতিকথা যিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করে বাস্তব রূপ দিতে আপ্রাণ চেষ্টা করে সফল হয়েছেন, তিনিই হলেন আমাদের আজকের ‘‘ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড”-এর স্বপ্নদ্রষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা মিঃ সিতাংশু সেন।

    মিঃ সিতাংশু সেন স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই ঢাকায় বাস করতেন। প্রথমে তিনি মহাখালীর শাহীন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। ১৯৭২ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ইন্দোনেশিয়া দূতাবাসে রাজনৈতিক সচিব হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭৫ খ্রীষ্টাব্দের শেষের দিকে তিনি বরিশাল, ফরিদপুর ও খুলনার ২০/২৫ লোক নিয়ে ‘খ্রীষ্টিয় সংসদ’ নামে একটি সমিতি গঠন করেন। এই সমিতির সদস্যদের কাজ ছিল ঘরে ঘরে গিয়ে প্রার্থনাসভা পরিচালনা করা, কারও মৃত্যু হলে তাদের কবর দেওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করা ইত্যাদি। এই সমিতির সদস্যরা সবাই ঢাকায় এসেছিলেন চাকুরীর আশায়। সবাই ছিলেন আর্থিক কষ্টে জর্জরিত। বেশীর ভাগই ছিলেন বেকার।

    ‘‘সমবায় হচ্ছে আর্থসামাজিক উন্নয়নে সম্মিলিত একটি আন্দোলন’’। এই মহান চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে এদেশের পশ্চাৎপদ হতদরিদ্র খ্রীষ্টিয়ান জনগোষ্ঠীকে দারিদ্রের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে রেভাঃ ফাদার চার্লস জে. ইয়াং ১৯৫৫ খ্রীষ্টাব্দে ঢাকার ৫০ জন সদস্য নিয়ে সর্বপ্রথম ‘‘দি খ্রীষ্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেড’’ প্রতিষ্ঠা করেন।

    সমিতি গঠনের পরিকল্পনাঃ

    মিঃ সিতাংশু সেন ক্রেডিট ইউনিয়নের প্রথম সারির একজন সদস্য। তিনি ক্রেডিট ইউনিয়নের একজন এরিয়া কালেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন। যার ফলে তিনি সমবায় সম্পর্কিত বেশ অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। মিঃ সেন ক্রেডিট ইউনিয়নের বোর্ড অব ডিরেক্টরস-এর ইলেকশনে পরপর দুই বার অংশগ্রহণ করে জয়ী হতে পারেননি। তৃতীয় বার ইলেকশনের প্রস্তুতির প্রাক্কালে তার সমিতির একটি মিটিং ডাকলেন। ঐ মিটিংয়ে অল্প বয়সের একটি ছেলে মিঃ সেনকে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘‘আপনারা তো বড় চাকরী করেন-প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন, আমাদের জন্য কী করেছেন’’? এই কথা মিঃ সেনের মনে দাগ কাঁটলো, তাকে ভাবিয়ে তুললো। সেই থেকে তিনি একটি সমবায় সমিতি গঠন করার চিন্তা করতে লাগলেন।


    অবশেষে ১৯৮০ সনের প্রথম দিকে মিঃ সিতাংশু সেন তার ৪১ নম্বর দিলু রোডের ভাড়া বাসায় ‘খ্রীষ্টিয় সংসদ’-এর সদস্যদের নিয়ে সভা ডাকলেন। সভায় তিনি প্রস্তাব করেন, ‘‘আমাদের খ্রীষ্টিয়ান সমাজের নিম্ন আয়ের লোকদের কথা চিন্তা করে এবং সমাজের উন্নয়নের জন্য একটি নতুন সমবায় সমিতি গঠন করতে চাই’’। উপস্থিত সকলে সানন্দে সমর্থন দিলেন। অবশেষে ৩০/০৮/১৯৮০ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে সমবায় সমিতি গঠন করলেন। সমিতির নামকরণ করা হলো ‘‘ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান ক্রেডিট ইউনিয়ন’’। প্রথমে ৭ জন সদস্য সমন্বয়ে মাত্র ৭০ টাকা পুঁজি নিয়ে সমিতি গঠন করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

    এই ৭ জন সদস্য হলেনঃ-

    ১। মিঃ সিতাংশু সেন

    ২। প্রয়াত আন্দ্রিয় হালদার

    ৩। মিঃ ফ্রান্সিস প্রীতিষ হালদার

    ৪। মিসেস্ তেরেজা হালদার

    ৫। মিঃ জেম্স আর. কে. হাজরা

    ৬। মিসেস্ রমা সেন

    ৭। প্রয়াত লরেন্স এইচ. কে. অধিকারী

    পরে এই ৭ সদস্যের মধ্য থেকে একজন বাদ দিয়ে ৬ সদস্য নিয়ে পরিচালকমন্ডলী গঠন করা হয়-

    ১। মিঃ সিতাংশু সেন                                   – সভাপতি

    ২। প্রয়াত আন্দ্রিয় হালদার                            – সম্পাদক

    ৩। প্রয়াত লরেন্স এইচ. কে. অধিকারী          – কোষাধ্যক্ষ

    বাকী ৩ জন বোর্ড সদস্য।

    মিঃ সিতাংশু সেন-এর গঠিত এই সমিতিকে সমাজের অনেকেই মানতে পারলো না- অনেকে বলেছে, ‘‘সিতাংশু সেন যে সমিতি করেছে, তা হলো সিতাংশু সেনের হায় হায় কোম্পানী’’। এটা টিকবে না, মানুষের টাকা-পয়সা নিয়ে শেষ পর্যন্ত কেটে পড়বে।এসব অপবাদ, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা উপেক্ষা করে প্রথমে দিলু রোড ও মগবাজার এলাকায় বসবাসরত লোকেরা সদস্য হলেন। এর মধ্যে মিঃ প্রাণজিত সেন, মিঃ মাইকেল পুলক চৌধুরী, মিঃ মনীন্দ্রনাথ বিশ্বাস, মিঃ সুজিত সেন, মিস্ প্রীতিলতা সেন, মিঃ ফ্রান্সিস হালদার, মিঃ শমূয়েল হালদার, মিঃ সুশান্ত হালদার এবং মিঃ সাইমন সুবোধ বাড়ৈ।মিঃ সেন তার ছুটির দিনে সমিতির কাগজপত্র নিয়ে মটর সাইকেলে পাড়ায় পাড়ায় খ্রীষ্টিয়ানদের খুঁজে বের করতেন, উৎসাহ দিতেন, সদস্য করতেন। তিনি বিভিন্ন চার্চ ও খ্রীষ্টিয়ান অফিসে ঘুরে ঘুরে মানুষদের উদ্বুদ্ধ করতেন। খুব বেশী সারা এসেছিল বাড্ডা এলাকা থেকে। বাড্ডা এলাকায় প্রয়াত হরষিৎ অধিকারী অনেক অবদান রেখেছেন। রায়ের বাজার এলাকায় প্রয়াত আন্দ্রিয় হালদারই বেশী কাজ করেছিলেন। মহাখালী এলাকায় মিঃ জেম্স আর. কে. হাজরা, মীরপুর এলাকায় প্রয়াত লরেন্স এইচ. কে. অধিকারী, মিঃ রূবেন বৈদ্য ও মিঃ বার্ণবাস বিনোদ বিশ্বাস এবং মগবাজার এলাকায় মিঃ রমেশ চন্দ্র অধিকারী খুব সক্রিয় ছিলেন। মিঃ সুধীর অধিকারী এই সমিতি গঠন ও সমাজসেবায় মিঃ সেনকে সবচেয়ে বেশী উদ্বুদ্ধ করেছিলেন এবং প্রফেসর দীপকলাল চৌধুরী সর্বদা সাহায্য-সহযোগিতা করেছিলেন।প্রয়াত আন্দ্রিয় হালদার রাড্ডা বার্নানে তার নতুন চাকরী নিয়ে মহাব্যস্ত, প্রয়াত লরেন্স অধিকারী হঠাৎ করে সিলেটে চলে গেলেন ট্রান্সফার নিয়ে। ফলে প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারী উভয়ের কাজের দায়িত্ব ছিল মিঃ সেনের উপর। কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতেন তার স্ত্রী মিসেস্ রমা সেন। তিনি নিজ সংসার সামলিয়ে, ছেলেমেয়ে লালন-পালন করে হাসিমুখে সমিতির কাজ করতেন। তিনি সদস্য ফরম বিতরণ করতেন ও কালেকশন খাতায় লিখে রাখতেন পরে কোষাধ্যক্ষকে বুঝিয়ে দিতেন।   অন্তরালে থেকে তিনি এই সমিতির জন্য অনেক অবদান রেখেছেন।

    রেজিষ্ট্রেশন/নিবন্ধনঃ

    বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি ও চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে দুই বছর কেটে গেছে। ইতোমধ্যে ওয়াইএমসিএ, এনসিসিবি, ও সিএইচসিপি এই তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে অনেকেই সমিতির সদস্য হলেন। সমিতির সদস্য সংখ্যা একশত ছাড়িয়ে গেল। দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য রেজিষ্ট্রি/নিবন্ধন প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে উদ্যোক্তাবৃন্দ চেষ্টা করতে লাগলেন। অবশেষে ১৯৮১ সনে সমিতি রেজিষ্ট্রি করার জন্য মিঃ সিতাংশু সেন লরেন্স অধিকারীকে নিয়ে চৌধুরীপাড়ায় জেলা সমবায় অফিসে গেলেন। সমবায় অফিসারের কাছে কাগজপত্র পেশ করলেন। অফিসার বললেন, রেজিষ্ট্রি হবে না। মিঃ সেন জিজ্ঞাসা করলেন, কেন হবে না ? অফিসার বললেন, খ্রীষ্টিয়ানদের একটা ক্রেডিট ইউনিয়ন আছে, আর কটা চাই ? অফিসার পরামর্শ দিলেন ‘‘বহুমুখী’’ যুক্ত করলে দেয়া যেতে পারে। মিঃ সেন বললেন, ঠিক আছে এটাকে ‘বহুমুখী’ করে দিন। অফিসার রাজী হলেন।উদ্যোক্তাদের সাথে পরামর্শ করে নাম দেয়া হলো ‘‘ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’’। এই নামে ফরম পূরণ করে মিঃ সেন ও লরেন্স অধিকারী সমবায় অফিসে গিয়ে জমা দিলেন। তারপরও সমস্যা হলো- ফরমে নাম দেয়া হয়েছিল ১৪ জনের মত, লাগবে কমপক্ষে ২১ জনের। মিঃ সেন ও লরেন্স অধিকারী বৃষ্টির মধ্যে মটর সাইকেলে ভিজতে ভিজতে এনসিসি অফিসে গেলেন। সেখানে মিঃ সুবোধ অধিকারী ও মিঃ মাইকেল সাহা ও মিঃ টমাস তুহিন দাশসহ অনেকেই ঐ ফরমে স্বাক্ষর করলেন। সিএইচসিপি’র মিঃ এন্টনী এ. কে. পাড়ৈ ও মিঃ জর্জ মৃণাল অধিকারী, ঢাকা ওয়াইএমসিএ’র অনেকেই ঐ ফরমে স্বাক্ষর করলেন। মিঃ সেন ও লরেন্স অধিকারী পুনরায় সমবায় অফিসে গিয়ে কাগজপত্র জমা দিলেন। ঐ দিনই ‘সাময়িক নিবন্ধন’ দেয়া হলো। যাবতীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ছয় মাস পরে ১১ই মার্চ, ১৯৮২ খ্রীষ্টাব্দে সমিতি নিবন্ধন লাভ করে। রেজিষ্ট্রেশন নম্বর- ১৫২/৮২। সমিতি নিবন্ধন লাভ করার পরে মানুষের মধ্যে ক্রমশঃ আস্থা ও নির্ভরতা বৃদ্ধি পেতে লাগলো। ফলে দ্রুত সদস্য সংখ্যা বাড়তে লাগলো। সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মিঃ সিতাংশু সেন তার ভাড়া বাসার একটি রুম সমিতির অফিসের জন্য বিনা ভাড়ায় ছেড়ে দিলেন।

    সমিতির প্রতিষ্ঠালগ্নে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। কমিটি নিম্নরূপ-


    ১। মিঃ সিতাংশু সেন                     – সভাপতি

    ২। মিঃ পনূয়েল রাজেন রায়            – সহ-সভাপতি

    ৩। মিঃ এন্টনী এ. কে. পাড়ৈ             – কোষাধ্যক্ষ

    ৪। প্রয়াত লরেন্স এইচ. কে. অধিকারী – সদস্য

    ৫। মিঃ জেম্স আর. কে. হাজরা        – সদস্য

    ৬। মিঃ জর্জ মৃণাল অধিকারী           – সদস্য

    ৭। মিঃ আলবার্ট সুবীর মন্ডল             – সদস্য

    বার্ষিক সাধারণ সভাঃ

    ২৫শে অক্টোবর, ১৯৮১ খ্রীঃ প্রথম বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সাধারণ সভায় কোন আয়োজন ছিল না। সমিতির প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছিল, তা অনুমোদন করা হয় এবং এই সমিতি গঠনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, অবদান রেখেছেন তাদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়। উপস্থিত সদস্য-সদস্যাবৃন্দ সমিতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে সব ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা করার অঙ্গীকার করেন। ১৮ই মার্চ, ১৯৮৩ খ্রীঃ দ্বিতীয় বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি প্রাঙ্গণে। ১২ই এপ্রিল, ১৯৮৫ খ্রীঃ জাতীয় চার্চ পরিষদ প্রাঙ্গণে তৃতীয় বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪২৭ জন।এর পরে ক্রমশঃ সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে লাগলো-সমিতি তার অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে ধাবিত হলো। নতুন নেতৃত্ব আসতে লাগলো-নেতৃত্ব বদল হতে লাগলো, নতুন নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলো- সমিতি ক্রমশঃ উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে লাগলো। এক পর্যায়ে রাইট রেভারেন্ট বার্ণবা দ্বিজেন মন্ডল-এর সর্বাত্মক সহযোগিতায় মিঃ সিতাংশু সেন-এর ৪১ নম্বর দিলু রোডের বাসা থেকে ৩৯১ নিউ ইস্কাটনে সাধু থোমার গীর্জার গ্যারেজে সমিতির অফিস স্থানান্তরিত হলো। পরে ৩৫৪ দিলু রোডে (বর্তমান কড্রিয়াল হোমস্) এলডার মাইকেল এ. শাহ্-এর ক্রাইষ্ট চার্চের সাথে দুইটি রুম ভাড়া নিয়ে সমিতির কার্যক্রম পরিচালিত হতে লাগলো।সমিতির ক্রমবর্ধমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় মিঃ বার্ণবাস বিনোদ বিশ্বাস সভাপতি থাকাকালীন ১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে বর্তমান প্রধান কার্যালয়ের জন্য ২.৫ কাঠা জমি ক্রয় করা হয়। ঐ জমি দখলে রাখা তথা নিজস্ব জায়গায় অফিস করার জন্য ১৯৯৪ খ্রীঃ শেষের দিকে সাময়িকভাবে টিনসেড ঘর নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে মিঃ পলাশ পল কাপালী সভাপতি থাকাকালীন ১২ই নভেম্বর, ২০০৪ খ্রীঃ সকাল ১০-৩০ মিঃ অফিস ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। ৩০শে সেপ্টেম্বর, ২০০৫ খ্রীঃ শুক্রবার নতুন অফিস ভবনে কার্যক্রম শুরু উপলক্ষ্যে এক প্রার্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।সেদিনের সেই ছোট্ট সমিতি হাঁটি-হাঁটি পা-পা করে অনেক প্রতিকুল পরিস্থিতি পেরিয়ে পঁচিশ বছরের পূর্ণতা লাভ করে। অবশেষে ততকালীন সভাপতি মিঃ পলাশ পল কাপালীর নেতৃত্বে ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৬ খ্রীঃ ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এই সমিতির রজত-জয়ন্তী উৎসব পালিত হয়। অবশেষে ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০০৬ খ্রীঃ স্কয়ার গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রয়াত স্যামসন এইচ চৌধুরী কর্তৃক অফিস ভবন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়।ঢাকা খ্রীষ্টিয়ান বহুমুখী সমবায় সমিতি গঠন করার জন্য মিঃ সিতাংশু সেন ও তার স্ত্রী মিসেস্ রমা সেন এবং অগ্রণী ভূমিকায় যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কঠোর শ্রম ও নিঃস্বার্থ অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

    ১। সমিতির ভিত্তিঃ

         এই সমিতির ভিত্তি হচ্ছে ‘খ্রীষ্টের আদর্শ’। মূলমন্ত্র হচ্ছে- ‘‘একতা, বিশ্বাস, সততা ও পারস্পরিক সহযোগিতা’’।


    ২। সমিতির প্রধান উদ্দেশ্যঃ

    সদস্য-সদস্যাদের পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমবায় পরিবার গঠন করে পরিকল্পিত জীবন যাপনে উদ্বুদ্ধ করা।

    নিয়মিত সঞ্চয়ের মাধ্যমে মূলধন গঠন করে তার সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক, সামাজিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

    সদস্য-সদস্যাদের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবণতা গড়ে তোলা।

    সদস্য-সদস্যাদের পারিবারিক এবং সামাজিক উন্নতিকল্পে বা প্রয়োজনে সহজ কিস্তিতে ঋণ প্রদান করা।

    অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা ও স্বাবলম্বী জীবন গঠন করা।

    পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহানুভূতিপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার মাধ্যমে সামাজিক একতা ও সেবার নেতৃত্ব গড়ে তোলা।

    সামাজিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা, পারিবারিক এবং সামাজিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক মুক্তি বা উন্নতি সাধন করা।

    ৩।   সমিতির ব্যবস্থাপনা কমিটি ও সদস্যদের কর্তব্যঃ  

    সকল সদস্যের সমঅধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করেই সমিতি পরিচালিত। সমিতির সাধারণ সদস্য-সদস্যাবৃন্দ সকল ক্ষমতার উৎস। সমিতির কার্যাবলী সমিতির উপ-আইন এবং বার্ষিক সাধারণ সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমিতি পরিচালনার জন্য ১২ (বার) সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি (Board of Directors) প্রতি ৩ বৎসর পর পর সাধারণ সদস্য-সদস্যাদের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে থাকেন। প্রত্যেক বাৎসরিক সাধারণ সভায় উপস্থিত থেকে বিগত বছরের কার্যাবলী, আয়-ব্যয়ের পর্যালোচনার পাশাপাশি আগামী দিনের কর্মসূচী প্রণয়ন প্রত্যেক সাধারণ সদস্য-সদস্যাদের পবিত্র কর্তব্য। নির্বাচনে নিজ বিবেচনায় ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করে সমিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখা প্রত্যেক সদস্যের নৈতিক দায়িত্ব।

    ৪। বিভিন্ন পরিষদ, কমিটি ও সাব-কমিটিঃ

    প্রাক্তন সভাপতি পরিষদ, উপদেষ্টা পরিষদ, আইন উপদেষ্টা পরিষদ, ক্রেডিট কমিটি, সুপারভাইজরী কমিটি, ফাইন্যান্স কমিটি, অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি, ল্যান্ড কমিটি, শিক্ষা সাব-কমিটি, সমবায় দর্পণ সাব-কমিটি, লোন রিকভারী সাব-কমিটি, মহিলা বিষয়ক সাব-কমিটি, যুব বিষয়ক সাব-কমিটি ও ধর্ম বিষয়ক সাব-কমিটি।

    ৫। নতুন সদস্যপদ প্রাপ্তির নিয়মাবলীঃ

    ক) ঢাকা জেলার মধ্যে বসবাসরত ১৮ বৎসরের ঊর্দ্ধে যেকোন খ্রীষ্টিয়ান নর-নারী সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে পারেন।

    খ) সদস্যপদের জন্য সমিতির নির্ধারিত ফরম পূরণ করতে হবে।

    গ) সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য প্রি-মেম্বারশীপ ক্লাশে অবশ্যই উপস্থিত হতে হবে।

    ঘ) প্রতি মাসের প্রথম ও দ্বিতীয় শুক্রবার বিকাল ৫টায় সমিতির প্রধান কার্যালয়ে প্রি-মেম্বারশীপ ক্লাশ অনুষ্ঠিত হয়। সদস্য ফরম ও ৫ কপি ষ্ট্যাম্প সাইজের ছবিসহ প্রি-মেম্বারশীপ ক্লাশে যোগদানের পরে সদস্যপদের আবেদনপত্র জমা নেয়া হবে।

    ঙ) ঢাকাস্থ নিজ নিজ মন্ডলীর বাপ্তিস্ম সার্টিফেকেট অবশ্যই দাখিল করতে হবে।

    চ) জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট-এর ফটোকপি দাখিল করতে হবে।

    ছ) নতুন সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য মরণোত্তর প্রকল্পে হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক।

    জ) নতুন সদস্যপদ পেতে হলে প্রথমে ক্রেডিট, সেভিংস ও মরণোত্তর প্রকল্পের জন্য সকল ফিসহ কমপক্ষে এককালীন ১,০০০ (এক হাজার) টাকা জমা দিতে হবে।

    ৬।   মাসিক টাকা জমা দেবার নিয়মাবলীঃ

    ১) প্রতি মাসের শেষ কার্যদিবসের মধ্যে সমিতির কার্যালয়ে অবশ্যই শেয়ারের টাকা জমা দিতে হবে।

    ২) প্রতি মাসে কমপক্ষে ক্রেডিট বইয়ে ৫০ (পঞ্চাশ) টাকা জমা দিতে হবে।

    ৩) যদি কোন সদস্য/সদস্যা তার মাসিক শেয়ার জমা না দেন, তবে প্রতিমাসে তার জন্য ২.০০ (দুই) টাকা করে জরিমানা আদায় করা হবে।

    ৭। সমিতির চলমান প্রকল্পসমূহঃ

    ০১। ক্রেডিট প্রকল্প                                         ০৭। মেয়াদী আমানত প্রকল্প (এফডিআর)

    ০২। হাউজিং প্রকল্প                                        ০৮। বন্ধকী ঋণ প্রকল্প (জমি ও ফ্ল্যাট)

    ০৩। সঞ্চয়ী প্রকল্প                                          ০৯। লোন প্রোটেকশন স্কীম

    ০৪। মরণোত্তর প্রকল্প                                        ১০। টপ-আপ লোন

    ০৫। চিলড্রেন এডুকেশন স্কীম (সিইএস)                   ১১। ফ্ল্যাট প্রকল্প

    ০৬। বহুমুখী ডিপোজিট স্কীম (বিডিএস)

    তথ্য

    dcbssl.com.bd




    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS