The Last Supper ছবিটির ইতিহাস

ads20
    পৃথিবীতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছে অনেক ছবি। তার মধ্যে একটি হচ্ছে লিওনার্দো দা ভিঞ্তির “শেষ নিস্তার পর্বের ভোজ”। যীশুর  ছবির পরে এই The Last Supper . ছবিটি পৃথিবীর কোটি কোটি খ্রীষ্ট ভক্তদের  ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। আজও The Last Supper   ইটালীর মিলান শহরে The Maria delle  নামে এই গীর্জার দেওয়ালে রয়েছে এক মাথা থেকে অন্য মাথা পর্যন্ত। ১৪৮৮ শ্রীষ্টাব্দে দা ভিঞ্চি এই ছবি আকতে শুরু করেন এবং ১৪৯৮ খ্রীষ্টাব্দে ১০ বছরের অক্রান্ত পরিশ্রমের পর The Last Supper  আঁকা শেষ হয়। কিন্ত দুর্ভাগ্যক্রমে ১০০ বছরের মধ্যে ১৫৮৭ খ্রীষ্টাব্দে দেখা গেল ছবি থেকে রং উঠে যাচ্ছে - জায়গায় জায়গায় ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। ১৭৬৮ খ্রীষ্টাব্দে ছবির সামনে একটি পর্দা দেওয়া হলো। কিন্তু সেই পর্দা আরও ক্ষতি করল, ছবির সামনে বাতাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেল। ছবির চারিধারে পর্দার ঘেরাটোপ থাকায় তাপমাত্রা বেড়ে গেল। ছবিতে ফাটল দেখা দিল। এরপর ১৯৪৩ খ্রীষ্টাব্দে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মিলান শহরে বোমা পড়ল। মারিয়া ডেল গীর্জার সব কিছু ধ্বংস হলেও The Last Supper  আশ্চর্যভাবে রক্ষা পায়। ছবি আকার ৫০০ বছর পরে পৃথিবীর প্রাচীন ছবি সংস্কারক ডঃ ব্রামবিলা এ ছবির সংস্কার করেন। ছবিটিতে দেখা যায় প্রভু যীশু ছবির কেন্দ্রস্থলে বসা। যীশুর ঠিক পিছনেই খোলা দরজা । পৃথিবী ও আকাশ দেখা যাচ্ছে, অর্থাৎ তিনি বিশ্বচরাচরের প্রভৃ। তিনি বেগুনিয়া বস্ত্র পরা এবং ছবিতে তিনিই একমাত্র ঘিনি সোজাসুজিভাবে বসে আছেন। একা মনে দা ভিথ্চি পবিত্র বাইবলের খুঁটিনাটি অনেক বিষয় মিলিয়ে এই ছবি আঁকছেন। ছবি আঁকা প্রায় শেষ হয়ে আসছে।
     শেষে তিনি যিহুদা ঈস্কোরিয়াতের মুখ আকছেন। মন্দতা আর পাপের অর্তদবন্দে ক্ষতবিক্ষত একটি মুখ আঁকবেন। কিন্তু রং আর রেখায় সেইভাব ফুটিয়ে তুলতে পারছেন না। ছবিটি অসমাপ্ত রেখে তিনি মিলানের কারাগারে গেলেন। কারাকক্ষে প্রতিটি কয়েদীর মুখে টর্চের আলো ফেলে তিনি যিহুদার মুখের প্রতিকৃতি খুঁজছেন । হঠাৎ কারাকক্ষে এক কয়েদীর মুখে আলো ফেলতেই তিনি চিৎকার করে উঠলেন, “এবার পেয়েছি সেই মুখ” । সেই কয়েদীর মুখে ফুটে উঠা বিদ্বেষ ও অসৎ কর্মের নিশ্চিত প্রমাণ দেখে দা ভিঞ্ আনন্দে আত্মহারা । কয়েদীকে নিয়ে তিনি তার শিল্পশালায় এলেন। সেখানে ঢুকেই সেই কয়েদী , যার নাম ব্রুনো ভিটোরিয়’ সে মনে মনে ভাবল, জায়গাটা যেন চেনা চেনা লাগছে। যীশুর ছবির সামনে এসে ব্লুনো ভিটোরিয় থমকে দীড়ালো ৷ তারপর চিৎকার করে বললো ঃ বাতিটা এখানে আনুন তো! দা ভিঞ্চি কাছে এলে ব্রুনো ভিটোরিয় বলে উঠল, একবার যীশুর মুখের দিকে আর আমার মুখের দিকে তাকান। বিস্ময়ে হতবাক দা ভিঞ্চি অসহায়ভাবে বলে উঠলেন, “না - না; এ হতেই পারে না”। ক্রুনো ভিটোরিয় বলল, “১০ বছর আগে গীর্জার গায়কদল থেকে যীশুর মুখখানি আঁকার জন্য যে মডেল আপনি বেছে নিয়েছিলেন, আমিই সেই হতভাগ্য ক্রুনো ভিটোরিয়”:ভাগ্যের কি পরিহাস! সেই আমিই হয়েছি আজ ঈক্ষোরিতীয় যিহুদা! আঁকুন আমাকে- আমাকে আকুন। আর্তনাদে ভেঙ্গে পড়লো ব্রুনো ভিটোরিয়।


    যে স্থানে প্রভু তার শেষ ভোজ প্রস্তুত করেন  :

    (এই সেই ঘর যেখানে প্রভূ যীশু নিস্তারপর্বের ভোজ প্রস্তুত করেন এবং শিষাদের পা ধুইয়ে দেন। আজও তা কালের সাক্ষ্য বহন করছে ।)

    জানা যায় সাধু মার্কের মা মরিয়ম, একজন ধনশালী মহিলা ছিলেন এবং তাদের অনেক দাস দাসী ছিল। যিরুশালেম নগরে তাদের দ্বিতল একটি সুরম্য ও প্রশস্ত প্রাসাদ ছিল। সময়ে সময়ে প্রভু বীশু এই গৃহে আসতেন। মরিয়ম যীশুর বিষয়ে
    আগেই শুনেছিলেন এবং তারও ইচ্ছা যীশুর কথা শুনার। মার্ক তখন ছোট, সেও যীশুর চরণে বসে যীশুর কথা শুনত ও অপলক দৃষ্টিতে যীশুকে দেখত। আস্তে আস্তে সেও যীশুর একজন একনিষ্ঠ শিষ্যে পরিণত হলো। যীশুর প্রয়োজনে আসতে পেরে সে নিজেকে ধন্য মনে করত । তাইতো প্রায়ই সে নিজের ঘর যীশু ও তীর শিষ্যদের জন্য ছেড়ে দিত। এই সেই ঘর, যে ঘরে প্রভু যীশু তার শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছেলেন ও শেষ ভোজ প্রস্তুত করেছিলেন। এই ঘরেই যীশুর মৃত্যুর পর শিষ্যরা জড়ো হয়েছিলেন এবং যীশু তাদের সাক্ষাৎ দিয়েছিলেন । 

    এই ঘরেই কমবেশ ১২০ জন জড়ো হয়ে প্রার্থনায় রত ছিলেন এবং পেন্টিকস্টের দিনে তারা সকলে পবিত্রআত্মায় অবগাহিত হয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, এই সেই ঘর, যে ঘর থেকে সর্বপ্রথম বিশ্ব মণ্ডলীর জন্ম হয়েছিল৷ নিজের ঘরকে ব্যবহার করতে দিয়ে মার্ক কতটা ক্ষতিত্রস্থ হয়েছিল জানিনা, কিন্তু তিনি ধন্য মানুষে পরিণত হয়েছেন । সারা বিশ্বমণ্লী তাকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS