ক্ষমতার লোভ বনাম নিষ্পাপ শিশুর রক্ত

ads20
    ‘‘ওকে ছেড়ে দাও ,ওকে ছেড়ে দাও, তোমার পায়ে ধরি বাবা, আমার সন্তানকে ছেড়ে দাও । না, না; ওকে মের না, ওকে মের না!’’ শত শত মায়ের বুক ভাঙ্গা আহাজারি আর হোরোদের সৈন্যদের চিৎকারের আকাশ বাতাস ধ্বনিত হতে লাগল। কিন্তু কে কার কথা শোনে! সৈন্যরা জোর করে ছিনিয়ে নিচ্ছে মায়ের কোল থেকে তাঁর  দুধের শিশুকে, ছোরা দিয়ে একটি মাত্র কোল ,তারপর সব শেষ। বুকে আঁকড়ে ধরে থাকা সন্তানকে না দেওয়ার জন্য সৈন্যরা শিশুর মাকে টেনে হিঁচড়ে ঘর থেকে বের করে আনছে। বুটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত মা কোনক্রমেই তাঁর সন্তানকে দিতে চায় না, কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারে না। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ছোট ছোট শিশুদের মাথা, শরীর থেকে বিছিন্ন হাত ও পা! হেরোদের সৈন্যরা যেন এক পৈশাচিক উম্মাদনায় মেতেছে। কোন কোন মা তাঁর সন্তানের মস্তকবিহীন শরীর নিয়ে হাই মাউ করে কাঁদেছে। কেউ বা হন্যে হয়ে খুঁজছে ছোরার আঘাতে বিছিন্ন হয়ে যাওয়া তাঁর সোনামনির অঙ্গ প্রত্যঙ্গ। অনেকে পাগলিনী প্রায় আবার কেউ কেউ ইতি মধ্যে জ্ঞান হারিয়েছে। চোখের সামনে এমর্মান্তিক কান্ড ঘটতে দেখে কিছু করতে না পেরে অসহায় পিতারা সৈন্যদের পায়ে পড়ছে, কেউ বা প্রতিবাদ করায় সন্তানের সাথে সেও বলি হচ্ছে। কেউ বা নিজেদের মাথার চুল ছিঁড়ছে ও নিজ  দেহ ক্ষত বিক্ষত করছে।ছেলেমেয়েরা যে যেখানে পারছে, ছুটে পালাচ্ছে । চারিদিকে শুরু রক্ত আর রক্ত। আর রাস্তার কুকুরগুলি এই তাজা রক্তের স্বাদ নিচ্ছে। কি বীভৎস, কি ভয়ংকর এ দৃশ্য।
    কিন্তু কেন? কেন এ ভয়ংকর ও নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞ? উত্তর একটাই,‘ আমি রাজা, আমি রাজা থাকব।কেন আবার নূতন রাজা জন্ম ? রাজা হেরোদ ভাবতেই পারছে না যে, তার স্থলে অন্য কেউ একজন রাজা হবে। তাইতো ক্ষমতালিন্সু, শিশু হত্যাকারী  হেরোদ যীশুর জন্মের আনন্দকে এক চরম বিভীষিকায় পরিণত করল। পণ্ডিতগণ তাকে ঠকিয়েছে জানতে পেরে রাগে ও ক্ষোভে উন্মাদ হেরোদ নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে  রাখার জন্য দু’বছর ও তার কম বয়সের সকল সন্তানকে হত্যা করার নির্দেশ নিয়ে পৃথিবীতে যে জঘন্য ও কলঙ্কজনক অধ্যায়ের জন্ম দিল, বিশ্বের ইতিহাসের তা আর শোনা যায় না। আর এর মাধ্যমে পুরাতন নিয়মে যিরমিয় ভাববাদী দ্বারা কথিত এই বচন পূর্ণ হলো, ‘‘রামায় শব্দ শুনা যাইতেছে হাকাকার ও অত্যন্ত রোদন; রাহেল আপন সন্তানদের জন্য রোদন করিতেছেন, সান্ত্বনা পাইতে চান না, কেননা তাহারা নাই (যিরমিয় 31:15)।
    স্বপ্ন যোগে দর্শন পেয়ে যোষেফ ও মরিয়ম ইস্রায়েল থেকে পালিয়ে মিশরে চলে গেলেন। আর যীশুর জায়গার অন্য শিশুরা নির্মম ভাবে হত হলো। পুরাতন নিয়মেও একই রকম ঘটনা দেখা যায়। মিশরে দাসত্বকালে এক নিয়ম জারি হয়েছিল, যিহুদীদের যত পুত্র সন্তান জন্ম নেবে তাদের হত্যা করা হবে। কিন্তু ঈশ্বরের মহা পরিকল্পনা ছিল,যেন তিনি সমস্ত ইস্রায়েল জাতিকে ফরৌনের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে পারেন। তেমনি যীশুকে নিয়ে ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল যেন যীশু পাপের দাসত্ব থেকে সমগ্র মানব জাতিকে রক্ষা করতে পারেন। ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে কেউ ধ্বংস করতে পারে না। পৃথিবীতে অনেক রাজা রানীর উত্থান পতন হয়েছে, অনেক রাজ্য চিরতরে ধ্বংস হয়েছে কিন্তু যীশু খ্রীষ্টের মন্ডলী আজও মহা ক্ষমতায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে শয়তান সব সময় সর্তক কী করে  ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে নষ্ট করবে। আর এর জন্য শয়তান বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে মানুষদের প্ররোচিত করে। যেমন সৃষ্টির শুরুতে আদম হবা শয়তানের প্রলোভনে প্ররোচিত হয়ে ঈশ্বরের বিরাগভাজন হলো এবং নিজেদের লোভ সম্বরণ করতে না পেরে শয়তানের কাছে আত্মসমর্পণ করল। এ জন্য তাদের চরম মূল্য দিতে হয়েছে। অপরপক্ষে শয়তান ইয়োবকে পরাজিত করতে পারেনি।

    শয়তান স্বয়ং যীশুকে বার বার সম্পদ ও ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে পরাভুত করতে চেয়েছে। যেহেতু যীশুর সকল প্রকার স্বার্থপরতা ও লোভের উর্দ্ধে ছিলেন, তাই শয়তান যীশুকে ছেড়ে পালিয়েছে। তাবে যীশুর সাথে না পেরে শয়তান ঈঙ্করেতিয় যিহুূদার অন্তরে প্রবেশ করে পরিশেষে সামান্য ত্রিশটি মুদ্রার বিনিময়ে যীশুকে শক্রদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে।
    আজও শয়তান তৎপর কখন কাকে প্রলোভিত করবে। আর যারা চরিত্রে দুর্বল, দুষ্ট ও লোভী তারাই সহজে শয়তানের কাছে আত্মসমর্পণ করে। পরবর্তীতে এই মানুষগুলি শয়তানের পক্ষ হয়ে কাজ করে ও তাদের নিষ্ঠুরতার শিকার হয় নিরীহ সাধারণ মানুষ। যেমন বাইবেলে উল্লিখিত নিম্পাপ শিশুরা শিকার হয়েছে ফরৌণ ও হেরোদের। সুতরাং নিম্পাপ শিশু ও নিরীহ সাধারণ মানুষদের কোন ক্ষতি হোক তা ঈশ্বরের ইচ্ছা নয়, তা হয়ে থাকে শয়তানের প্ররোচনায় দুষ্ট লোকদের কারণেই ।
    যীশুর জন্মের পর যে সকল শিশু মৃত্যুবরণ করেছিল মন্ডলীতে তারা আজ‘‘ পবিত্র নিম্পাপ শিশু’’হিসেবে পরিচিত এবং তারাই খ্রীষ্টের জন্য প্রথম সাক্ষ্যমর । তাই তারা মন্ডলীতে সুমহান মর্যাদা পাওয়ার অধিকারি। 28 ডিসেম্বর তাদের পর্বদিন হিসেবে পালন করা হয়। প্রাচীন ধর্মতত্বে এই শিশুদের রক্তকে সাক্ষ্যমরদের রক্ত না বলে বরং সাক্ষ্যমরদের ‘কুসুম’ বলা হয়েছে। হেরোদের প্রচন্ড ক্ষমতার লোভ ও সেই ক্ষমতাকে আঁকড়ে ধরে থাকার জন্যই এই কুসুমগুলি প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই ঝড়ে গেল।
    খ্রীষ্টেতে প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আজকেও বর্তমান সমাজেও এরকম দেখা যায়। ক্ষমতার লোভের একজন অন্য জনকে দেখতে পাই না। সেই রাজার মত বলে আমি রাজা থাকব, আমি রাজা, কেন আবার নূতন রাজার জন্ম?  আমরা আমাদের নিজের ক্ষমতা কে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরণের পাপ কাজে লিপ্ত হয়।
    আমাদের মনে রাখতে হবে ঈশ্বরের পরিকল্পনাকে কেউ ধ্বংস করতে পারবে না।

    পাস্টর মাসুদ রানা


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS