ঈশ্বরে প্রিয় পাত্র হওয়া।

ads20

    ভুমিকাঃ  আমরা প্রত্যেকে জানি যে, ঈশ্বরের মানুষ সৃষ্টির একটাই উদ্দেশ্য ছিল যে মানুষ যেন ঈশ্বরকে মনে, প্রাণে ,ভালবাসে এবং ধন্যবাদ গৌরব প্রশংসা করে। ঈশ্বর মানুষের কাছে স্বর্ণ চাননা, মনি, মুক্ত , হীরা। এসব কিছুই চাননা, কিন্তু মানুষ যেন তাঁর প্রশংসা করে, গৌরব করে সেটাই চান। যদি আমরা ঈশ্বরের গৌরব,  প্রশংসা না করি, তা হলে আমরা পাপের জীবন যাপন করি। ঈশ্বরকে অস্বীকার করার মানেই হচ্ছে , পবিত্র আত্মার বিরুদ্ধে পাপ, যে পাপের কোন ক্ষমা নেই। খ্রীষ্টিয়ান জীবন হচেছ ঈশ্বরের ধন্যবাদের জীবন, গৌরব করার জীবন। মনে রাখতে হবে যখনই আমরা উপাসনায় যোগদান করি, প্রার্থনা সভায়, ধন্যবাদের সভায় যোগদান করি। তখনই  হচ্ছে আমাদের জীবনের সর্বশ্রেষ্ট সময় উপভোগ করি। প্রথম শতাব্দিতে এমন একটি ঘটনা দেখতে পাই যে, একজন পরজাতি  লোক সৈন্যবাহিনীর শতপতি ঈশ্বরের গৌরব , প্রশংসা করবার জন্য, ঈশ্বরের বিষয় জানার জন্য পিতরের কাছে লোক পাঠিয়েছিলেন যেন সে এবং পরজাতীয় লোকেরা সুসমাচারের বিষয় জানতে পারে। আসুন বন্ধুগণ আমরা পবিত্র বাইবেলে যাই, দেখি কর্নেলিয় কি ভাবে ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হয়েছিলেন।

    পবিত্র বাইবেল পাঠঃ প্রেরিত ১০ঃ ১-৮ পদ।

    যদি আমরা ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র হতে চাই তবে আমাদের ৪ টি বিষয় করনীয় রয়েছে।

    প্রথম বিষয়ঃ  ঈশ্বরের প্রতি মনে প্রাণে ভক্তি শ্রদ্ধা রাখা।

    প্রেরিত ১০:২ পদে বলে, কর্নেলিয়ের ভীষন ভাবে ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল, তাই সে ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হয়ে উঠেছিল। ঈশ্বর তাঁকে দর্শন দিয়ে সুসমাচার সমন্ধে জ্ঞান লাভের জন্য পিতরের স্মরণাপন্ন হয়েছিল। যেন ঈশ্বরের পরিত্রান প্রাপ্ত হয়ে ঈশ্বরের গৌরব প্রশংসায় নিজেকে সম্পূর্ণ ভাবে উৎসর্গ করতে পারে। ঈশ্বর এই বিশ্ব ব্রমান্ডের সৃষ্টি কর্তা, সর্ব্বশক্তিমান পিতা। ঈশ্বর অসীম, কিন্তু মানুষ সসীম। আমরা ঈশ্বরের বিষয় অতি সামান্য টুকুই জানতে পারি। কিন্তু ঈশ্বরকে জানার আকাঙ্খা মানুষের মনে প্রবল । তাই আমাদের হৃদয়,মণ, আত্মা তাঁর প্রতি বিশ্বাসে ভক্তিতে মাথা অবনত করে। আর সেই জন্যই আমরা ঈশ্বরের আরাধনা করি, উপাসনা করি যেন তাঁর সানিধ্য লাভ করতে পারি। এখানে ঈশ্বরের কাছে সবাই সমান। এখানে যিহুদী কি পরজাতি বলে কোন ভেদাভেদ নাই। কর্ণেলিয় একজন পরজাতি লোক হলেও ঈশ্বরের আর্শীবাদ থেকে বঞ্চিত হয়নি। ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধাই তাকে সম্পর্ক স্থাপনের মধ্যদিয়েই ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হতে সাহায্য করেছিল। ঈশ্বর তো আমাদের কাছে টাকা পয়সা ধণ দৌলত চাননা, তিনি চায় যেন আমরা শ্রদ্ধা ভক্তিতে তাঁর গৌরব প্রর্শংসা মহিমা কীর্তন করি।


    দ্বিতীয় বিষয়ঃ ঈশ্বর ভয়শীল জীবন যাপন করা।

    প্রেরিত ১০:২ পদে বলে, কর্ণেলীয় একজন ঈশ্বর ভয়শীল লোক ছিলেন। ঈশ্বর ভয় মানেই হচ্ছে ঈশ্বরের ব্যবস্থা সকল মেনে চলা। ঈশ্বরের বিশ্বস্তায় জীবন যাপন করা। কর্ণেলীয় ঈশ্বর ভয়শীল লোক ছিলেন বলেই ধর্মকর্ম, দান-ধ্যান, মানুষের প্রতি ভালবাসা ছিল। যার জন্য কর্ণেলিয় ঈশ্বরের দর্শন প্রাপ্ত হয়েছিল এবং ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র হতে পেরেছিল। ঈশ্বরও তাঁর প্রার্থনা শ্রবন করেছিল।

    সাধু দায়ূদ যথার্থই বলেছেন- ঈশ্বর ভয় প্রকৃত জ্ঞানের আরম্ভ। ঈশ্বরকে যারা ভয় করে না তারা মূর্খ। গীত ৫৩: ১ পদে। ঈশ্বর ভয় আমাদেরকে পাপ থেকে দূরে রাখে। সেই সঙ্গে ঈশ্বরের বিধান মেনে চলতে সাহায্য করে।ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধা ভক্তি ভয় থাকলেই ঈশ্বর ও ভক্তের প্রতি সাড়া দেন, সান্নিধ্য লাভের সুযোগ করে দেন এবং ঈশ্বরের ভালবাসায় ভক্তের জীবন ভরিয়ে তুলেন। ভক্ত ও ঈশ্বরের প্রতি ভালবাসা নিজেকে বিলিয়ে দেন ও জীবন উৎসর্গ করেন।   আসুন বন্ধুগণ আমরা ঈশ্বরের ভয়শীল জীবন যাপন করি, ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হই।


    তৃতীয় বিষয়ঃ ঈশ্বরে উদ্দেশ্য দানশীল জীবন যাপন করা।

    কর্ণেলিয় প্রচুর পরিমাণে লোকদিগকে দান করত। কর্ণেলিয় একজন পরজাতি রোমান সৈন্যবাহিনীর শতপতি ছিলেন। নিশ্চয় তার অনেক অর্থ প্রাচুর্য ছিল। যা কিছু পেয়েছিল সে জন্য সে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল। দান করা হচ্ছে ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। প্রকৃত পক্ষে দানের মধ্যদিয়ে নির্মল আনন্দ পাওয়া যায়। বন্ধগণ খ্রীষ্টিয়ান জীবন দানের জীবন। কারণ ঈশ্বরই মানুষের প্রতি শ্রেষ্ট দান দিয়েছেন। যোহন ৩:১৬  পদে বলে, ‘‘কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেই তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়’’ সুতরাং ঈশ্বর মানুষের জন্য শ্রেষ্ট দান হিসাবে নিজ পুত্রকে দিলেন যেন তাঁর জীবন দানের মধ্য দিয়ে মানুষ পাপ থেকে পরিত্রান খুঁেজ পায়। আমাদের উচিত দানের জীবন অনুশীলন করা। আমাদের মনে রাখতে হবে ঈশ্বর হৃষ্ট চিত্ত দাতাকে ভালবাসেন। আমরা যখন দান করব, তখন ভগ্ন চিত্ত হৃদয় দিয়ে যেন দান করি। ভাববাদীরা বলেছেন, ঈশ্বর বলিদানে প্রীত নহেন,হইলে তাহা দিতাম। তিনি চান আমাদের ভগ্ন চূর্ণ হৃদয়। তাই বন্ধুগণ আসুন আমাদের ভগ্ন চূর্ণ হৃদয় নিয়ে ঈশ্বরকে দান করি এবং ঈশ্বরের প্রিয়পাত্র হই।


    চতুর্থ বিষয় ঃ প্রার্থনাশীল জীবন যাপন করা।

    প্রেরিত ১০ : ২ পদে আরো বলে, - কর্ণেলিয় একজন প্রার্থনাশীল জীবন যাপন করত। যদিও কর্ণেলিয় একজন পরজাতি লোক ছিলেন তথাপী সে নিয়মিত প্রার্থনা করত। প্রার্থনার মধ্যদিয়ে ঈশ্বরের কাছে নিজেকে সমোরপন করতেন। ঈশ্বরের সহিত যোগাযোগ স্থাপন করে তাঁর দর্শন লাভ করা সম্ভবপর হয়েছিল।

    প্রার্থনা হচ্ছে আত্মিক জীবনের শ্বাস-প্রশ্বাস, যার মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সঙ্গে কথা বলতে পারি, তাঁকে পিতা বলে সম্বোদন করে আমাদের নিবেদন সকল তুলে ধরতে পারি। যীশু যখন এই পৃথিবীতে ছিলেন; তখন দুর্বল মূহুর্ত গুলি কাটিয়ে উঠবার জন্য নির্জন স্থানে গিয়ে পিতার নিকট প্রার্থনা করতেন। যীশু আমাদেরকে প্রার্থনা করতে বলেছেন, এমনকি তিনি প্রতিজ্ঞাও করেছেন, আমাদের প্রার্থনা তিনি শুনবেন। প্রকাশিত ৩:২০ পদে; ( খ্রীষ্টেতে প্রিয় ভাইবোন , আমি আপনাদের বলতে চাই, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট প্রতিনিয়তো আমাদের দরজায় নক করতেছে। আমরা যদি তাঁর সাথে প্রার্থনা সব সময় যোগাযোগ রাখি এবং তাঁর গলার আওয়াজ শুনে দরজা খুলে দেই। তাহলে তিনি আমাদের সঙ্গে থাকবেন। মথি১৮:১৮-২০ , ( এই পৃথিবীতে যদি ভাল কিছু  করি তা স্বর্গে জমা থাকবে। কিতাবে এই অংশে লেখা আছে যেখানে দুই বা তিন আমার নামে উপস্থিত হয় সেখানে আমি উপস্থিত হই, তো খ্রীষ্টেতে ভাইবোন আজকে আমরা এই তড়ড়স  মিটিং এ দুই এর অধিক লোক উপস্থিত আছি। তাই এখানে ও ঈশ্বর উপস্থিত আছেন। সবাই বলি আমেন।  লুক ১৮:১-৮, পদেও   আমরা প্রার্থনার বিষয় পাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে কোন শর্তে আমরা ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করতে পারি? আমাদের উচিত সর্ব্বদা ঈশ্বরের সন্তান হয়ে দ্বাবী নিয়ে প্রার্থনা করা উচিত। যদি আমরা পাপে জীবন যাপন করি তা হলে আমাদের পক্ষে সন্তান হিসাবে জোড়ালো দাবি নিয়ে কোন প্রার্থনা করতে পারি না। যদি করি তিনি সে সকল প্রার্থনা শুনেন না। আমাদের প্রার্থনা যেন কখনই একজন ভিক্ষুকের মত যাচ্ঞা করা না হয়। সন্তান হিসাবে পূর্ণ দাবি নিয়েই যেন প্রার্থনা করি। ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হতে হলে নিশ্চয়ই তাঁর সন্তান হিসাবে প্রার্থনাশীল জীবন যাপন করতে হবে। প্রকৃত পক্ষে খ্রীষ্টিয়ান জীবন প্রার্থনাশীল জীবন।

    তাই বন্ধুগণ আসুন আমরা কর্ণেলিয়র মত ঈশ্বর ভক্ত, ঈশ্বর ভয়শীল জীবন যাপন করি এবং দানশীল ও প্রার্থনাশীল জীবন অনুশীলন করি। যেন আমরা ঈশ্বরের প্রিয় পাত্র হই । ঈশ্বর তাঁর নিজ বাক্যে আশিবার্দ করুক। আমেন। 




    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS