ঈসায়ী জীবনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক

ads20

     আভিধানিক অর্থে একজন ঈসায়ী হলেন, একজন ব্যক্তি, যিনি ঈসাকে মসীহ্ বলে স্বীকার করেছেন, অথবা যিনি ঈসার শিক্ষাকে ধর্মের ভিত্তি মনে করেন তিনিই একজন ঈসায়ী। তবে কিতাবুল মোকাদ্দসের সত্যকে সঠিক যোগাযোগের জন্য ঈসায়ী হওয়া মানে বুঝাতে এটা খুব সংক্ষিপ্ত উত্তর। ইঞ্জিল শরীফে মাত্র তিনবার ‘ঈসায়ী’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।(প্রেরিত 11:26;26:28; 1 পিতর 4:16 )। আন্তিয়খিয়াতে ঈসা মসীহের অনুসরণকারীদের প্রথম ‘‘ঈসায়ী ‘ বলে ডাকা হয়েছিল (প্রেরিত 11:26) কারণ তাদের আচার-আচরণ , কাজ এবং কথাবার্তা ছিল মসীহের মত। আক্ষরিক অর্থে ‘যারা ঈসা মসীহের দলের’ বা যারা মসীহের অনুসারী’ তারাই হচ্ছে ‘ঈসায়ী’

    দূর্ভাগ্যজনক বিষয়, সময়ের সাথে সাথে ঈসায়ী শব্দটির অর্থ এবং গুরুত্ব অনেকাংশে  হারিয়ে গেছে। এমন কি যারা ধার্মিক এবং উঁচু মাত্রার নৈতিকতা মেনে চলেন,তাদের মধ্যেও ঈসা মসীহের সত্যিকার অনুসারী থাকতেও পারে বা নাও পারে। অনেক লোকই ঈসা মসীহকে বিশ্বাস করে না, কিন্তু সাধারণভাবে গীর্জায় যায়, অথবা  একটা ঈসায়ী দেশে বাস করে বলে মনে করে তারা ঈসায়ী। কিন্তু গীর্জায় গেলে বা আপনার চেয়ে দুর্ভাগ্য কারও সেবা করলে অথবা ভাল লোক হলেই আপনি একজন ঈসায়ী হয়ে যাবেন না।একটা গীর্জার সদস্য হলে, নিয়মিত গীর্জায় গেলে এবং গীর্জার কাজে দান করলেও আপনি একজন ঈসায়ী হয়ে যাবেন না।

    কিতাবুল মোকাদ্দস শিক্ষা দেয় যে, ভাল কাজ করলেই আমরা আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হতে পারি না। তীত 3:5 আয়াত বলে, ‘‘কোন সৎ কাজের জন্য তিনি আমাদের উদ্ধার করেন নি,তাঁর করুণার জন্য তা করলেন। পাক-রুহের দ্বারা নতুন জন্ম দান করে ও নতুন ভাবে সৃষ্টি করে তিনি আমাদের অনন্ত ধুয়ে পরিস্কার করেন। আর এভাবে তিনি আমাদের উদ্ধার করলেন। তাই ঈসায়ী মানে এমন একজন যে আ্ল্লাহ্ দ্বারা নতুন জন্ম লাভ করেছে (ইউহোন্না :3:3, 3:7; 1পিতর 1:23 ) এবঙ যে ঈসা মসীহের উপরে বিশ্বাস ও নির্ভর করেছে। ইফিষীয় 2:8 আমাদের বলে আল্লাহ দয়া মধ্যে দিয়ে তোমরা পাপ থেকে উদ্ধার পেয়েছ। এটা তোমাদের নিজেদের দ্বারা হয়নি। তা আল্লাহ দান। একজন ব্যক্তি সত্যিকার ঈসা মসীহকে ও তাঁর কাজকে এবং সেই সাথে তাঁর পাপের বেতন দেওয়ার জন্য ঈসার ক্রুশে মৃত্যুবরণ এবং তৃতীয় দিনে তাঁর পুনরুত্থানের প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা  রেখেছে, সেই একজন প্রকৃত ঈসায়ী।

    ইউহোন্না 1:12 আয়াতে আমাদের বলেছে ‘‘তবে যতজন তাঁর উপর বিশ্বাস করে তাঁকে গ্রহণ করল তাদের প্রত্যেককে তিনি ্আল্লাহর সন্তান হবার অধিকার দিলেন।‘‘ অন্যদের প্রতি ভালবাসা এবং আল্লাহর কালামের প্রতি বাধ্যতা হচ্ছে একজন প্রকৃত ঈসায়ী চিহৃ(1 ইউহোন্না 2:4,10) বস্তুত একজন প্রকৃত ঈসায়ী আল্লাহর একজন সন্তান , সত্যিকারভাবে আল্লাহর পরিবারের অংশ এবং যাকে ঈসা মসীহের নতুন জীবন দেওয়া হয়েছে।

    ঈসায়ীদের আত্মিক বৃদ্ধি:

    ঈসায়ীদের আত্মিক বৃদ্ধি হলো আরও বেশী করে প্রভু ঈসার মত হয়ে উঠার একটি প্রক্রিয়া। আমরা যখন ঈসার উপর আমাদের বিশ্বাস স্থাপন করি তখন পাক-রূহ্ আমাদের ঈসার মত করে তৈরী করার এবং তাঁর প্রতিরূপ হওয়ার প্রক্রিয়া আমাদের মধ্যে শুরু করেন। খুব সম্ভব 2 পিতর 1:3-8 আয়াতে সবচেয়ে ভালভাবে আত্মিক বৃদ্ধিকে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘‘আমাদের যা কিছু ্প্রয়োজন তার সব কিছু’ আমরা আল্লাহর শক্তিতে লাভ করে থাকি, আর এটি হচ্ছে আত্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার একটি পন্থা বা উপায়। লক্ষ্য করুন যে, আমাদের যা কিছু দরকার তা ‘‘তাঁকে গভীরভাবে জানবার মধ্য দিয়ে’’ আসে। আর এটিই হচ্ছে আমাদের প্রয়োজনীয় জিনিস অর্জন করার একটি প্রধান বিষয়। আল্লাহকে জানবার জন্য যে জ্ঞানের দরকার তা তাঁর কালাম থেকে আসে যা আমাদের আধ্যাত্মিক পরিশুদ্ধতা লাভ ও আত্মিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য দেওয়া হয়েছে।

    কিভাবে পাপের উপরে বিজয়ী হতে পারি:

    পাপের উপরে বিজয়ী হবার জন্য চেষ্টা করতে কিতাবুল মোকাদ্দস আমাদের বিভিন্ন উপায় দেখিয়ে দিয়েছে। এই জীবনের সর্ম্পূণ খাঁটিভাবে পাপের উপরে বিজয়ী হওয়া অনেক কঠিক (1 ইউহোন্না 1:8), কিন্তু তবু এটাই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য। আল্লাহর সাহায্য ও তাঁর কালামের নীতিমালা অনুসরণ করে আমরা ধাপে ধাপে পাপের উপরে বিজয়ী হতে পারি এবং ক্রমশ মসীহের মত হতে পারি।


    উপসংহার:

    যদি আমি একজন মসীহ্ বিশ্বাসী বা ঈসায়ী হই তবে আমাকে অবশ্যই সত্যিকার অর্থে শব্দের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। কিভাবে প্রতিনিযত আরও প্রভু ঈসার মত হওয়া যায় সে চেষ্টা করতে হবে। সর্বদা আল্লাহর আদেশ পালনে সচেষ্ট হতে হবে, কারণ 1 ইউহোন্না 5:3 আয়াতে আছে- ‘‘ আল্লাহর আদেশ পালন করাই হলে আল্লাহর প্রতি ভালবাসা। তাঁর আদেশ ভারী বোঝার মত নয়’।




    লেখক: শিমিয়োন সরকার।


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS