খ্রীষ্টিয় জীবনে বেড়ে উঠার প্রেরণা

ads20
    খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের সব সময় খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনে পূর্ণতা লাভের জন্য সচেতন থাকা প্রয়োজন। খ্রীষ্ট যেমন সমস্ত গুনে পূণর্, আমাদের তেমনি সমˉ— গুনে পূর্ণ থাকা একান্ত প্রয়োজন। পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে, খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতা লাভই হচ্ছে খ্রীষ্টিয়ানের লক্ষ্য। আমাদের লক্ষ্য যদি নীচু হয়, তবে আমরা অল্প পাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু উচু বা বড় লক্ষ্য স্থির করে বেশী পাওয়ার চেষ্টা করা অনেক ভালো। আজকের লেখনিতে যীশু কিভাবে বেড়ে উঠেছিলেন তার উপর জোর দেয়া হয়েছে। আত্মিক দিক দিয়ে বেড়ে ওঠা সম্পর্কে উদাহরণ বা দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে জাগতিক ভাবে বেড়ে ওঠার উদাহরণ দেয়া হয়েছে। খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতা লাভ করতে অনেক সময় লাগে, সেজন্য বিশ্বাসীর ভবিষ্যতের কঠিন লক্ষ্যগুলি থেকে তার বর্তমান লক্ষ্যগুলিকে আলাদা করে দেখানোর চেষ্টাও করা হয়েছে। বিশ্বাসীদের চরিত্র যখন খ্রীষ্টের চরিত্রের মত সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠে এবং বিশ্বাসী যখন পরিচর্যা কাজ ভালভাবে করেন, তখনই আমরা প্রমান পাই যে, তিনি আত্মিকভাবে বেড়ে উঠেছেন।

    বেড়ে ওঠার  জন্য সৎ ইচ্ছা :
    ছোট ছেলে-মেয়েরা যখন বড় হয়ে উঠতে থাকে, তখন বেশীর ভাগ মা-বাবারা সেটা খুব আগ্রহ নিয়ে লক্ষ্য করে থাকেন। বড় হয়ে ওঠার সময় ছেলে মেয়েদের চিহ্ন ফুটে ওঠে অর্থাৎ তাদের যে কথাবার্তা এবং আচার ব্যবহার দেখা যায়, তা মা-বাবারা গর্বের সাথে অন্যদের কাছে বলে থাকেন। ছেলে মেয়েরা নিজেরাও কবে বড় হবে সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তারপর একদিন তারা সত্যি সত্যিই বড় হয় ও পরিবারের জন্য অনেক কাজ ও দায়িত্ব পালন করে। ছেলে মেয়েরা যদি স্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে না ওঠে, তবে তাদের নিজেদের কাছে এবং মা-বাবার কাছেও এর চেয়ে দুঃখের বিষয় আর কিছু হতে পারে না।

    আমাদের আতিœক জীবনের বেলাতেও এই একই কথা। ঈশ্বর চান যেন মানুষের সাথে তাঁর সহভাগিতা দিন দিন আরো বেড়ে ওঠে। মানুষও তাই চায় । মানুষের সংগে ঈশ¡রের এই সহভাগিতা নষ্ট হয়ে গেলেই সে অন্তরে অন্তরে অনুভব করে যে, সে হারিয়ে গেছে। এমনকি মানুষ যখন বুঝে উঠতে পারে না যে তার কি দরকার, ঠিক তখনই সে ঈশ¡রের সাথে এই সহভাগিতা খুঁজে পেতে চায়। যীশু খ্রীষ্টকে ত্রাণকর্তা হিসাবে গ্রহণ না করা পর্যন্ত মানুষ এই সহভাগিতা লাভ করতে পারে না। এমনকি বিশ্বাসী হয়েও মানুষ ঈশ্বরের পূর্ণ সহভাগিতা উপলদ্ধি করতে পারে না, যে পর্যন্ত সে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পূর্ণভাবে গ্রহন না করে। এখানে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য বলতে যীশু খ্রীষ্টের মত হয়ে উঠা বুঝানো হয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি যে, খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতা লাভের মধ্য দিয়েই ঈশ্বর এবং মানুষ উভয়ের ইচ্ছা বা আকাংক্ষা পূর্ণ হয় ।

    ‘বেড়ে ওঠা’ মজার ব্যাপার হলেও বেশ কঠিন। আমার মনে হয়, বড় হয়ে ওঠার সময়কার বিভিন্ন মজার মজার ঘটনা আপনি বেশ স্মরণ করতে পারেন । আর দুঃখ কষ্টের দিনগুলিও নিশ্চয় ভুলে যাননি, তাই না ? এ থেকে আপনি অনেক প্রেরণা পাবেন। আবার বেড়ে ওঠার সাথে সাথে আপনি ঈশ্বরের পরিবারের লোক হিসাবে নতুন নতুন অধিকার এবং প্রয়োজনীয় দায়িত্ব সম্বন্ধে সজাগ হয়ে উঠবেন। আমরা সবাই এটা চাই। নতুন নিয়মে ১ম করন্থিয় ১৩ঃ১১পদে-”আমি যখন শিশু ছিলাম,তখন শিশুর মত কথা বলতাম, শিশুর মত চিন্তা করতাম আর শিশুর মত বিচারও করতাম। এখন আমার বয়স হয়েছে, তাই শিশুর আচার-ব্যবহারগুলো বাদ দিয়েছি”।

    সৃষ্টির শুরুতে- ঈশ্বর কেন মানুষ সৃষ্টি করলেন ? পবিত্র শাˉে¿ আছে যে, জগত সৃষ্টির সময় ঈশ্বর কয়েক বার তাঁর কাজ কেমন হয়েছে তা ভালো করে দেখে নিলেন। প্রতিবার তিনি দেখলেন যে তাঁর কাজ ভালো হচ্ছে। ছয় দিনের দিন ঈশ্বর তাঁর নিজের পরিকল্পনা অনুসারে মানুষ সৃষ্টি করলেন। মানুষকে ঈশরের প্রতিমূর্তিতে তৈরী করা হল (আদি ১ঃ২৭পদ )। এরপর ঈশ্বর আবার তাঁর কাজ দেখালেন এবং বুঝালেন যে তাঁর কাজ খুব ভালো হয়েছে। ঈশ্বর যদি মানুষ সৃষ্টি না করতেন তবে এই সৃষ্টি অসম্পূর্ণ থেকে যেতো। তাই মানুষ সৃষ্টির ফলেই তাঁর পরিকল্পনা পূর্ণ হল। ঈশ্বর এবং মানুষের সহভাগিতার মধ্য দিয়ে উভয়েরই মৌলিক চাহিদা মিটলো । এই সহভাগিতার মাধ্যমেই মানুষ ঈশ্বরে বৃদ্ধি পেতে পারবে এবং ঈশ্বরের গৌরব করতে পারবে, আর তাতে মানুষের জন্য ঈশ্বরের যে উদ্দেশ্য রয়েছে, তাও পূর্ণ হবে।

    বেড়ে ওঠার  জন্য মানুষের ইচ্ছা ঃ
    মানুষ হয়ে জন্ম নেবার পেছনে কি কারণ এবং কি উদ্দেশ্য রয়েছে, প্রত্যেক মানুষই তা জানতে চায় । সব মানুষই জীবনের অর্থ খুঁজে পাওয়ার জন্য অস্থির হয়ে ওঠে। মানুষের জীবনে একটা লক্ষ্য থাকা দরকার। পরিত্রাণ না পেয়ে মানুষ তার ভবিষ্যত ও পরকাল চিন্তা করে। সে এমন এক তৃপ্তি পেতে চায় যা শুধুমাত্র  ঈশ্বরের  সংগে সহভাগিতার মধ্য দিয়ে পাওয়া যায়।  ঈশ্বরের  সংগে মানুষের এই সম্পর্ক থাকলে মানুষের ব্যক্তিত্ব পূর্ণভাবে বেড়ে উঠতে পারে, যার ফলে পিতা ঈশ্বরও সুখী হন। মানুষ   যতক্ষণ ঈশ্বর থেকে দূরে থাকে,ততক্ষণ তার আত্মিক ভাবে বেড়ে ওঠার ইচ্ছাও পূর্ণ হতে পারে না।

    যারা পরিত্রান পায়নি তাদের প্রত্যেকের মনের মধ্যে একটা শূন্যতা আছে। এই শূন্যতা একটা বিপদ সংকেতের মত। যখন মানুষ তার জীবনে ঈশ্বরের ইচ্ছা পূর্ণ না করে, তখন সে মনে মনে এবং আত্মিকভাবে অনেক দুঃখ-কষ্ট ভোগ করে। মানুষ হাত পা হারালে যেমন দৈহিক শারীরিক ব্যথা অনুভব করে, আত্মিক দুঃখ কষ্টকে ঠিক সেভাবে তুলনা করা যায়।

    বেড়ে ওঠার জন্য মানুষের ইচ্ছার পথ বা দিক নির্দেশনা ঃ-

    আপনি কি কাউকে কখনও খুব বেগে প্রবাহিত একটি নদীর বাঁধ দিতে দেখেছেন? প্রায় সময়েই এটা সম্ভব নয় , কারণ যেহেতু নদীর গতিবেগ খুবই বেশী থাকে সেইজন্য তাকে থামানোও খুব কষ্টকর এবং কঠিন । এই চলার শক্তিকে বলে ”গতিশক্তি” । গতিশক্তি এমন এক শক্তি যা আমাদের ভিতরে থাকে এবং সব সময় সামনের দিকে এগিয়ে যেতে ধাক্কা দেয়।

    ঈশ্বর সদাপ্রভু মানুষের মধ্যেও এই শক্তি দিয়েছেন। তা ছাড়া এই শক্তিকে নিজের পছন্দ মত বিভিন্ন দিকে ব্যবহার করবার স্বাধীনতাও ঈশ্বর মানুষকে দিয়েছেন। এটা বলা যেতে পারে যে, একজন মানুষের মধ্যে একটা ইচ্ছারুপ নদী আছে, আর এই নদী তার নিজের গতিপথে ভিন্ন ভিন্ন দিকে বয়ে চলে। যে সব লোক ঈশ¡রের কাছ থেকে একদম দুরে আছে, আর তাদেরকে পবিত্র বাইবেলে, ”ঝড়ের মধ্যে সমুদ্রের ঢেউয়ের মত” বলে উলে¬খ করা হয়েছে ( যিহুদা ১৩ পদে)। যারা পরিত্রাণ পায়নি তারা এই গতিশক্তিকে তাদের নিজের নিজের লক্ষ্য পূরণ করবার জন্য ব্যবহার করে। কিন্তু তার পরিণাম দূর্ভাগ্যজনক। খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতা লাভ করবার জন্য কিভাবে এই গতিশক্তিকে ব্যবহার করতে পারি,তা নি¤েœ দেয়া হলো।

    ১। যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে  ঃ
    ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে যীশু খ্রীষ্ট এই জগতে এসছিলেন, যেন আমরা আমাদের জীবনের সত্যিকার উদ্দেশ্য জানতে পারি। কিন্তু ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, যীশু খ্রীষ্টের সেই সম্পর্কেও আদর্শ বা দৃষ্টান্ত। তিনি তাঁর সৃষ্টিকর্তার সাথে সঠিক সম্পর্ক বজায় রেখে ছিলেন বলেই তাঁর জীবনে একেবারে পুরোপুরি পূর্ণতা এসেছিল। যীশুর জীবন, মৃত্যু এবং তাঁর পূনুরূত্থান মানুষের জীবনকে”উদ্দেশ্যপূর্ণ” করার পথ খুলে দিয়েছে। পাপ মানুষের কাছ থেকে যা জোর করে ছিনিয়ে নিয়েছিল, যীশুখ্রীষ্ট তা আবার ফিরিয়ে দিলেন। খ্রীষ্টকে বিশ্বাস করলে আমরা ঈশ্বরের পরিবারভুক্ত হই এবং আমাদের আত্মার ”গতিশক্তিকে” চালাবার জন্য ঠিক পথ খঁজে পাই।

    ২। পরিত্রানের নিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে ঃ
    অনেকে মনে করেন যে, নূতন জন্ম লাভ করাই খ্রীষ্টিয় জীবনে চরম লক্ষ্য। আমরা খ্রীষ্টিয়ান বা ঈশ্বরের সন্তান, একথা জানানো শক্তিশালী খ্রীষ্টিয় জীবন যাপনের নিশ্চয়তার পক্ষে যথেষ্ট নয়। শক্তিশালী খ্রীষ্টিয় জীবন অর্থ গতিময়, যে জীবন বেড়ে উঠছে।
    নবজাতক শিশু দিন দিন বড় হয়ে ওঠে, কারণ তার মধ্যে জীবন আছে। ঠিক তেমনিভাবে একজন নতুন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীকেও দিন দিন বেড়ে উঠতে হবে। ঈশ্বর তাকে যেদিকে চালাতে চান, সেদিকেই চলা তারপক্ষে তখন সম্ভব। কিন্তু এমনি থেকে বেড়ে ওঠা যায়না, খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতার দিকে বেড়ে ওঠার জন্য অবশ্যই বিশ্বাসীর ইচ্ছা থাকতে হবে এবং চেষ্টা করতে হবে। খ্রীষ্ঠিয় জীবনে পূর্ণতার পথে এগিয়ে যেতে হলে, আপনার প্রথম কাজ হল আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে যে, আপনার পাপের ক্ষমার জন্যই যীশু মৃত্যুবরণ করেছিলেন এবং পূনরূত্থান করেছিলেন। আর তার পরের কাজ হল, যীশু খ্রীষ্টকে আপনার জীবনে প্রভু হিসাবে মেনে নিতে হবে এবং তাঁকে মুখে স্বীকার করতে হবে। যে মানুষ সেইভাবে বিশ্বাস করে এবং  স্বীকার করে সে তার নিজের আত্মার উপরে কর্তা এবং প্রভু হিসাবে খ্রীষ্টের আত্মাকে লাভ করে। আর তখন পবিত্র আত্মা তাকে তার সত্যিকার উদ্দেশ্যের পথে এগিয়ে যাবার গতিময় জীবন দান করেন। অবশ্য এই ভাবে এগিয়ে যাবার পথে মানুষ অনেক বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। কিন্তু বাধা-বিপত্তি থাকা সত্ত্বেও পবিত্র আত্মার সাহায্যে মানুষ খ্রীষ্টয় জীবনে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলতে পারে। ১ম করিšী’য় ৩ঃ২৩ পদে লেথা আছে, তোমরা খ্রীষ্টের” কথাটির মানে,যীশু খ্রীষ্ট আমাদের প্রভু এবং কর্তা।

    ৩। স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়ে ঃ
    খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতা বলতে আমরা একটি উপায়কে লক্ষ্য করি যা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার সংগে তুলনীয়। আর এইভাবে বেড়ে ওঠার মধ্য দিয়েই আমরা আত্মিক জীবনে পূর্ণতা বা সিদ্ধতা লাভ করি। আমদের খ্রীষ্টিয় জীবনকে একটা বীজের সাথে তুলনা করা যায়।  বাইবেলে প্রায়ই কৃষিকাজ এবং গাছপালার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠা এবং পুর্ণতার উদাহরণ দেওয়া হয়েছে । আমরা এমন এক বীজের মধ্য দিয়ে নতুন জন্ম লাভ করি যা নষ্ট হয় না বা ধ্বংস হয় না। বাইবেলে ১ম পিতর ১ঃ ২৩ পদে এই বিশেষ রকমের বীজের কথা বলা হয়েছে। ১ যোহন ৩ঃ ৯ পদে যে বীজের কথা বলা হয়েছে তা ঈশরের বীজ। বিশ্বাসী হিসাবে এই বীজ আমাদের অন্তরে থাকে।


    বেড়ে ওঠার প্রেরণা ঃ
    বেড়ে ওঠা একটা আনন্দের ব্যাপার, আর এর মধ্যে বেশ মজা আছে। কিন্তু বেড়ে ওঠা কাজটি একটু কঠিনও বটে। একজন মা তার ছোট বাচ্চাকে দিয়ে কয়েকটা বীজ লাগিয়েছিলেন। তিনি তার ছেলেকে কি করে একটা জিনিস বেড়ে ওঠে তারই অভিজ্ঞতা দিতে চেয়েছিলেন। ছেলেটি একদিন কাঁদতে কাঁদতে মায়ের কাছে এসে বলল ”মা” আমার লাগানো বীজগুলো বড় হবে না। আমি প্রত্যেকদিন তুলে তুলে দেখি ওগুলো একটুও বড় হচ্ছে না। অবাক হবেন না, আমরাও প্রায়ই এই রকম করে থাকি। বেড়ে ওঠার জন্য, সময় ,উপযুক্ত খাবার এবং ভালো মাটিও দরকার। বিশ্বাসীর বেলায় মাটি হোল মানুষের আত্মা এবং এবং ইচ্ছা। আপনি যদি পবিত্র আত্মার সাথে সহযোগিতা করেন তাহলে আপনি স্বাভাবিক ভাবে বেড়ে উঠতে থাকবেন।
    বাবা বা স্কুলের শিক্ষকরা অনেক সময় পুরস্কার দিয়ে দিয়ে আমাদেরকে বেড়ে উঠতে উৎসাহিত করে থাকেন। এই পুরস্কারগুলিকে বলা হয় প্রেরণা। আমাদের ভিতরে যে মনটা কোন কাজ বা চিন্তার দিকে আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেটাই হোল প্রেরণা।
    যীশু খ্রীষ্ট বেড়ে ওঠার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত ঃ

    আমরা জানি যে আমদের স্বর্গীয় পিতা চান যে, আমরা জীবনে পূর্ণতা লাভ করি এবং তার সহভাগিতা পাই।
    ঈশ্বর সদাপ্রভু যে উদ্দেশ্যে আমাদেরকে তাঁর সাদৃশ্যে সৃষ্টি করেছেন, আমাদের দিন দিন বেড়ে উঠে সেই উদ্দেশ্য পূর্ণ করা উচিৎ।
    কিন্তু ”বিশ্বাসী হিসাবে জীবনে পূর্ণতা লাভ করা” কথাটা বোঝা মনে হয় বেশ কঠিন । যা দেখা যায় এমন লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করেই আমরা খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতার একটা পরিস্কার বর্ণনা দিতে চাই। পবিত্র বাইবেল হচ্ছে সবার জন্য। যীশু প্রায়ই দৃষ্টান্ত দিয়ে কথা বলতেন,আর এই গুলি ছিল মানুষের জীবনের একবারে সাধারণ অভিজ্ঞতারই কথা চিত্র। আমরা দেখতে পাব যে, বেড়ে ওঠা সমন্ধে বাইবেলে যে মাপকাঠি আছে , তা খুবই পরিস্কার এবং তা আমাদের সবার জন্যই খাটে। ইফিষীয় ৪ঃ ১৩ পদে আমরা দখতে পাই যে, ঈশ্বর চান, ” খ্রীষ্ট যেমন সমস্ত গুনে পূর্ণ, আমরাও যেন তেমনি সমস্ত গুনে পূর্ণ হয়ে পরিপূর্ণ হই। নতুন নিয়মে মূল ভাষায় এর অর্থ হোল:পূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা মানুষ” অথবা আমরা বলতে পারি সর্বদিক দিয়ে পূর্ণভাবে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ। আত্মিকভাবে যীশু ছিলেন সম্পূর্ণ নিস্পাপ। তাই জীবনের সবক্ষেত্রেই তিনি আমাদের বেড়ে ওঠার জন্য পূর্ণ ও একমাত্র আদর্শ। (২য় করিšী’য় ৫ঃ২১পদ)। আমরা যদিও এই নিস্পাপ সম্পূর্ণতায় পৌছাতে আশা করতে পারি না, তবুও খ্রীষ্টের মত হয়ে ওঠাই আমাদের সত্যিকারের লক্ষ্য। আমরা দেখেছি যে,যীশু খ্রীষ্ট হচ্ছেন আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত এবং তাঁর পূর্ণ সিদ্ধতাই আমাদের লক্ষ্য। একটু লক্ষ্য করলে আমরা দেখব, যীশু বিশেষভাবে চারটি ক্ষেত্রে বেড়ে উঠেছিলেন এবং পূর্ণতা অর্জন করেছিলেন। জীবনের যে সব ক্ষেত্রে আপনাকে বেড়ে উঠতে হবে,এই চারটি ক্ষেত্রের সংগে কি সেইগুলির সম্বন্ধ দেখা যায়? ২ পিতর ৩ঃ১৮ পদে আমাদেরকে,প্রভু ও উদ্ধারকর্তা যীশু খ্রীষ্টের দয়ার ও ত াঁর সম্বন্ধে জ্ঞানে কেন বেড়ে ওঠার কথা বলা হয়েছে?  আমরা যীশুর জীবন সম্পর্কে যতই জানবো, বিশ্বাসী হিসাবে নিজেদের পূর্ণতার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ততই ভালো করে বুঝতে পারব। বিশ্বাসীর দৈহিক পূর্ণতার মধ্যে এমন আচরণ থাকবে,যা পিতা ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করে । মানুষের মন হলো ঈশ্বরের একটি আশ্চর্য দান ।

    বেড়ে ওঠার পথে বাধা ঃ
    প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে ওঠার কতগুলি বাধা আছে। একদিকে যেসব বিষয়গুলি খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতা লাভ করতে বাধা দেয় সেগুলি আমাদের বাইবেলে পরিস্কারভাবে উলে¬খ করা হয়েছে। এইগুলি আমাদের অবশ্যই জানা দরকার। মনে করে দেখুন যখন আপনি শিশু ছিলেন তখন আপনার মা-বাবা আপনাকে কতকগুলি জিনিস বলতেন যেগুলি মানুষের ক্ষতি করে। তারা হয়তো আপনাকে নদী পুকুরের কাছে যেতে কিম্বা গাছে উঠতে নিষেধ করতেন। তাদের প্রথম কাজ ছিল ক্ষতিকর বিষয়গুলি আপনাকে জানানো যেন সেগুলি আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন।
    ভুল সময় বেছে নেওয়া ঃ
    ইব্রীয় ৫ঃ১২ পদ অনুসারে লোকেরা কি জন্য আত্মিকভাবে বেড়ে উঠতে বাধা পেয়েছে তা জানা যাবে। নতুন জন্ম আত্মিক জীবনের শিশু অবস্থার আরম্ভ। আপনি কি কোন সময় কোন ছেলে মেয়েকে বড়দের পোষাক পরে বড় হবার ভান করতে দেখেছেন ? ছোটরা যদি বড়দের জামা,জুতা এবং শাড়ী পরে তবে কার না হাসি পায় ? এই সব ছেলে মেয়েদের আমরা অনেক সময় বলি,” বড় হও তখন এগুলি পরতে পারবে।” সময় নিরুপণ করা বা ঠিক করা খুবই দরকার। শুধু সঠিক কাজটি করলেই আমাদের চলবে না, কাজটি ঠিকভাবে করবার জন্য আমাদেরকে ঠিক সময়টিও বেছে নিতে হবে। ভুল সময়ে কাজ করলে বোঝা যাবে আমরা যে শুধু কাঁচা রয়েছি তা নয় বরং সবদিক দিয়ে বেড়ে ওঠতে বাধাও পেয়েছি। ইব্রীয় ৫ঃ১২ পদে আমরা একটা জলন্ত দৃষ্টান্ত দেখি যে, আত্মিক দিক দিয়ে বেড়ে ওঠার সময়ও অনেক বাধা আসে। কারণ আত্মিক জীবনে অগ্রসর হওয়ার জন্য ঈশ্বরের বিষয়ে জ্ঞানকে কাজে না লাগানোই এরকম হয়। সাধারনতঃ দুই প্রকার সময় আছে। নতুন নিয়ম যে ভাষায় লেখা হয়েছিল সেই গ্রীক ভাষায় গ্রীকরা দুইরকম ভাবে সময়কে ব্যবহার করত। প্রথমত--ক্রনোস অর্থাৎ ” সময়”এর দ্বারা মিনিট, ঘন্টা এবং দিন বুঝাতো । ২য়--”কায়রোস”অর্থাৎ সন্ধিক্ষণ বা চরম মুহুর্ত (কাল)  দ্বারা বিশেষ বিশেষ কাল বা সময় বুঝানো হোত।এই কালের মধ্যে বলা যায় জন্মের কাল, বাল্যকাল,বৃদ্ধকাল, পরীক্ষার কাল, মানুষের জীবনের  কোন বিশেষ মুহুর্ত বা সময় ইত্যাদি।
    খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতার পথে সময়ের এই দুই রকম ধারণাই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বাইবেলে প্রায়ই সময় পূর্ণ হওয়ার কথা লেখা আছে। এ বিষয়ে ইফিষীয় ১ঃ ১০ পদ একটি উদাহরণ। লেখা আছে,তিনি স্থির করে রেখেছিলেন যে সময় পূর্ণ হলে পর তিনি স্বর্গের ও পৃথিবীর সব কিছু মিলিত করে খ্রীষ্টের শাসনের অধীনে আনবেন।

    ইচ্ছা শক্তিকে ভুল পথে ব্যবহার করা ঃ
    ঈশ্বর মাঝে মাঝে বিশেষ ঘটনারকাল বা বিপদকাল দিয়ে থাকেন। কিন্তু সেই সময়ে আমরা কিভাবে চলব তা আমাদের নিজেদেরকেই ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন। আর এই ইচ্ছা শক্তিই আমাদের আত্মার সবচেয়ে বড় দিক।  এই ইচ্ছা শক্তিকে আমাদের স্বাধীনতা অনুসারে কাজে লাগাতে ঈশ্বর বাধা দিতে চাননি। আপনি যদি ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেন তাহলে নিজের ইচ্ছাকে আপনি ভুল পথে ব্যবহার করছেন। খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতা লাভ করার জন্য আমাদের ইচ্ছাকে ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে নত করতে হবে। এমন কি প্রভু যীশুর ক্রুশে মুত্যুবরণ করবার জন্য তাঁর মানবিক ইচ্ছাকে ঈশ্বরের ইচ্ছার কাছে নত করেছিলেন।-মথি-২৬ঃ৩৯-৪২পদ।


    খ্রীষ্টে বেড়ে ওঠার  জন্য পবিত্র আত্ম্ আমাদের সাহায্য করে ঃ

    পবিত্র আত্মা কেমন ভাবে আমাদের বেড়ে উঠতে সহায্য করেন? যেমন-বাবা-মা ধৈয্যের সাথে ছেলে মেয়েদেরকে কথা বলতে এবং হাটতে শেখান এবং তাদেরকে বেড়ে উঠতেও সাহায্য করেন। পবিত্র আত্মাও নতুন খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদেরকে ঠিক একইভাবে শিক্ষা দিয়ে থাকেন। ১ম করিন্থীয় ২ অধ্যায়ে প্রেরিত পৌল এর ব্যাখ্যা দিয়েছে । পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের গোপন বিষয় আমাদের কাছে প্রকাশ করেছেন। ঈশ্বরের কাছ থেকে যা কিছু আসে তা যেন আমরা বুঝতে পারি সেইজন্যই পবিত্র আত্মা আমাদিগকে সাহায্য করতে আসেন।


    উপসংহার ঃ
    আত্মীক জীবনের মধ্য দিয়ে সত্যিই যদি আমরা স্বর্গীয় পিতার গৌরব করতে চাই, তাহলে খ্রীষ্টিয় জীবনে পূর্ণতার ও বেড়ে ওঠার আসল লক্ষ্য আমাদের গ্রহন করতে হবে। প্রার্থনা করূন যেন পবিত্র আত্মা ঈশ্বরের প্রদত্ব সম্পদগুলির ব্যবহারের মাধ্যমে আপনাকে আমাকে আত্মিকভাবে বেড়ে উঠতে সাহয্য করেন। আসুন আমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের প্রাপ্য এই পরিপূর্ণ জীবন লাভের জন্য আকাঙ্খিত হই। আর প্রার্খনা করি যেন খ্রীষ্টিয় পরিচর্যা নামক বিষয়টি এবং খ্রীষ্টে বেড়ে ওঠার বিষয়টি অন্যদেরকে খ্রীষ্টের মত বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে পারি।’

    সমাপ্ত

     আইভান সমদ্দার

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS