কাথলিক এবং প্রেটেস্টান্টদের বাইবেলের বৈপরীত্ব কি বাইবেলের সত্যতার বিরুদ্ধে সন্দেহ সৃষ্টি করে?

ads20

    ভূমিকাঃ অনেক সময়ে সমালোচকেরা বলে থাকেন  কাথলিক এবং প্রটেষ্টাণ্টদের বাইবেলের পুস্তকের সংখ্যার মধ্যে বৈপরীত্ব রয়েছে। তার কারনে বাইবেল বিশ্বাস যোগ্য নয় ইত্যাদি।এটা সত্য যে কাথলিক এবং প্রটেষ্টান্টদের বাইবেলের পুস্তকের সংখ্যার কিছুটা বৈপরীত্ব রয়েছে। কিন্তু তবুও ১০০% ভাগ নিশ্চিত ভাবে দাবি করা সম্ভব মূল পবিত্র বাইবেল এখনও আগের অবস্থায় রয়েছে যার কোন পরিবর্তন হয় নি। আপনি হয়ত অবাক হয়ে ভাবছেন এটা কিভাবে সম্ভব?এটা সত্য যে কাথলিকরা পবিত্র বাইবলের মধ্যে কিছু নিজেস্ব পুস্তক ধুকিয়ে দিয়েছে এবং তারা বিশ্বাস করে এগুলো ঈশ্বরের বাক্য। কাথলিকদের এই ধরনের কাজ  প্রটেষ্টান্টরা একেবারেই সহ্য করে নি। তাই তারা তাদের বাইবেলে কোন ধরনের  যোগ কিংবা বিয়োগ করেন নি যেমন পবিত্র বাইবেলে আদেশ দেওয়া আছেঃ 

    [ প্রকাশিত বাক্য|২২|১৮|যারা এই পুস্তকের নবীয় বাণীর বচনগুলো শোনে, তাদের প্রত্যেকের কাছে আমি নিজেই গাম্ভীর্যের সঙ্গে ঘোষণা করছি যে: কেউ যদি এতে কোন কিছু যোগ দেয়, তবে এই পুস্তকে যে সমস্ত আঘাতের বর্ণনা দেওয়া আছে, ঈশ্বর তার উপর তেমন আঘাত যোগ দেবেন;  প্রকাশিত বাক্য|২২|১৯|তেমনি কেউ যদি এই নবীয় বাণী-পুস্তকের বচনগুলো থেকে কোন কিছু বাদ দেয়, তবে এই পুস্তকে যে জীবনবৃক্ষ ও পবিত্র নগরীর কথা লেখা আছে, ঈশ্বর তেমন প্রাপ্য থেকে তাকে বাদ দেবেন।]

    কিন্তু কাথলিকরা তা করেছে তাই তাদের সাথে প্রটেস্টান্টদের বিচ্ছেদ ঘটে ছিল বহু পুর্বেই। যখন তারা এই জঘন্যতম কাছ করে ছিল! যখন কাথলিক সমাজ পবিত্র বাইবেল সাধারন মানুষকে পড়তে দিত না প্রতিমাপূজার মত জঘন্যত কাজে লিপ্ত করেছিল গোটা খ্রীষ্টিয় সমাজকে এক অন্ধকারের ভিতরে প্রবেশ করিয়ে ছিল।

    ঠিক তখন ইয়াওয়ে এলোহীম [সদাপ্রভু ঈশ্বর] এক দূরদান্ত সাহসী সৎচিন্তার অধিকারী এক ব্যক্তিকে ব্যবহার করেন। তার নাম মার্টিন লুথার। তিনি প্রথম এই কাথলিক সমাজের জঘন্যতম কাজের  বিরুদ্ধে প্রটেস্ট করেন এবং পবিত্র বাইবেল ভিত্তিক জাতির জন্ম দেন যারা প্রটেস্টাণ্ট নামেই পরিচিতি লাভ করেন।

    কিভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি প্রটেস্টান্টদের পবিত্র বাইবেলের কোন পরিবর্তন হয় নি?কারন ইহুদিরা পূর্বেই তানাখ [পুরাতন নিয়ম] সংরক্ষন করে রেখেছিলেন। প্রটেষ্টান্টরা শুধু সেই পুস্তক গুলোকে ঐশরিক বলে বিশ্বাস করেন। কারন সেই পুস্তক গুলো প্রেরিতদের দ্বারাই সত্যায়িত কারন তারা নিজেরাই সকলে ইহুদি ছিলেন।

    ♦ইহুদিদের তানাখের বিবরন: মোশীর তাওরা গ্রন্থ:৫টি [আদিপুস্তক, যাত্রাপুস্তক, লেবীয় পুস্তক, গণনাপুস্তক, দ্বিতীয় বিবরন]ঐতিহাসিক বই : ১২টি [যিহোশূয়ের পুস্তক, বিচারকর্ত্তাগণের বিবরন, রূতের বিবরন, ১ ও ২ শমূয়েল, ১ ও ২ রাজাবলি, ১ ও ২ বংশাবলি, ঈষ্রা, নহিমিয়, ইষ্টের।]কাব্যিক বই : ৫টি [ইয়োব, গীতসংহিতা, হিতোপদেশ, উপদেশক, পরমগীত।]ভবিষ্যতবানীর বই: ১৭টি [যিশাইয়, যিরমিয়, বিলাপ, যিহিষ্কেল, দানিয়েল, হোশেয়, যোয়েল, আমোষ, ওবদিয়, যোনা, মীখা, নহূম, হবককূক, সফনিয়, হগয়, মালাখি]ইহুদিরা তাদের গ্রন্থ তানাখকে  כִּתְבֵי הַקֹּדֶשׁ [কিতাবী –হ্যাক-কডেস] নামে ডাকেন। যার অর্থ পবিত্র শাস্ত্র।  পবিত্র তানাখে ৩৯টি পুস্তক রয়েছে যা ইহুদিদের নবীদের দ্বারা লেখা হয়েছিল এবং তা সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। 

    সেই পবিত্র তানাখের পুস্তকগুলোকেই প্রটেস্টান্টদের বাইবেলে রয়েছে। এবং ইহুদি ধর্মগুরুরা হিব্রু গ্রন্থগুলোর প্রতিলিপি লিখতেন তারা সেগুলো পুঙ্খানপুঙ্খভাবে নকল করতেন। এমনকি, হিব্রু ভাষায় ‘নকলনবিশ’ [ספר সোফের] শব্দ হিব্রু “গণনা করা” ক্রিয়া থেকে এসেছে, কারণ এই ইহুদি ধর্মগুরুরা মূল লিপি এবং প্রতিলিপির অক্ষরের সংখ্যা গুণতেন যেন প্রতিলিপির হুবহু মিল থাকে। প্রত্যেক শব্দের বানান এবং উচ্চারণ এরা সযত্নে দেখতেন। তাই আমারা বলতে পারি প্রটেস্টান্টদের পবিত্র বাইবেলের কোন পরিবর্তন হয়নি সবই সঠিক অবস্থায় রয়েছে।প্রটেস্টান্টদের পবিত্র বাইবেলের সত্যতার কিই কোন ঐতিহাসিক প্রামান প্রামাণ রয়েছে?   হ্যাঁ প্রটেস্টান্টদের পবিত্র বাইবেলর যে কোন পরিবর্তন ঘটে নি তার অনেক বড় ঐতিহাসিক প্রামাণ রয়েছে আর তা হলো ১৯৪৭ সালে ডেড সী স্ক্রোল্‌সের [Dead Sea Scrolls] আবিষ্কারে পবিত্র বাইবেলের নির্ভরযোগ্যতা মারাত্মকভাবে প্রমাণ হল। এই পাণ্ডুলিপিগুলোর আবিষ্কারের আগে, পবিত্র বাইবেলের  হিব্রু গ্রন্থগুলোর জন্য ৯০০ খ্রীষ্টাব্দের আগে কোন পাণ্ডুলিপির প্রমাণ ছিল না। 

    তারপর ১৯৪৭ সালে পালেস্টাইনে এক রাখাল ছেলে একটি নির্জন এলাকার গুহাতে অনেকগুলো স্ক্রোল অবিষ্কার করল। সেই গুহাতে অনেক প্রাচীন পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেল।  কার্বন-ডেটিং এবং হাতের-লেখার পরীক্ষা অনুযায়ী আগের পাণ্ডুলিপি থেকে এক হাজার বছর বেশী পুরানো [১০০ খ্রীষ্টপূর্ব - ১০০ খ্রীষ্টাব্দ]। পরীক্ষাতে দেখা গেল সেগুলো বর্তমান প্রেটেস্টান্টদের পবিত্র বাইবেলের সঙ্গে মিলে যায়। 


    উপসংহারঃ যারা দাবি করে, “কাথলিক এবং প্রটেষ্টাণ্টদের বাইবেলের পুস্তকের সংখ্যার মধ্যে বৈপরীত্ব রয়েছে। তার কারনে বাইবেল বিশ্বাস যোগ্য নয় ” তাদের এই যুক্তি খুবই ধুর্বল কারন তাদের দাবির কোন ঐতিহাসিক দলিল সমর্থন করে না।

    [Christian Apologist: Mr. Johnson Sarkar]


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS