যীশু খ্রীষ্টের দাবি সমূহ :
০১. আমিই সেই জীবন খাদ্য, যে ব্যক্তি আমার কাছে আইসে, সে ক্ষুধার্ত হইবে না, এবং যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে তৃষ্ণার্ত হইবে না, কখনও না। (যোহন ৬;৩৫ পদ।)
০২ .আমি জগতের জ্যোতি, যে আমার পশ্চাৎ আইসে, সে কোন মতে অন্ধকারে চলিবে না, কিন্তু জীবনের দীপ্তি পাইবে। যোহন ৮;১২,১৩পদ।
০৩ আমিই মেষদের দ্বার। যোহন ১০;৭ পদ।
০৪ আমিই উত্তম মেষপালক, উত্তম মেষপালক মেষদের জন্য আপন প্রাণ সমর্পণ করে। যোহন ১০;১১ পদ।
০৫ আমিই পুনরুত্থান ও জীবন, যে আমাতে বিশ্বাস করে, সে মরিলেও জীবিত থাকিবে। যোহন ১১;২৫ পদ।
০৬ আমিই পথ ও সত্য ও জীবন; আমা দিয়া না আসিলে, কেহ পিতার নিকটে আইসে না। যোহন ১৪;৬ পদ।
০৭ আমি দ্রাক্ষালতা, তোমরা শাখা; যে আমাতে থাকে এবং যাহাতে আমি থাকি, সেই ব্যক্তি প্রচুর ফলে ফলবান হয়; কেননা আমা ভিন্ন তোমরা কিছুই করিতে পার না। যোহন ১৫;৫ পদ।
০৮ আমিই জগৎকে জয় করিয়াছি। যোহন ১৬;৩৩ পদ
০৯ আমিই তিনি (নাসরতীয় যীশু) যোহন ১৮;৫ পদ।
১০ আমি আল্ফা এবং ওমিগা, আদি এবং অন্ত, ইহা প্রভু ঈশ্বর কহিতেছেন, যিনি আছেন ও যিনি ছিলেন, ও যিনি আসিতেছেন, যিনি সর্বশক্তিমান। প্রকাশিত বাক্য ১;৮ পদ।
১১. আমি মরিয়াছিলাম, আর দেখ,** আমি যুগপর্যায়ের যুগে যুগে জীবন্ত; *আর মৃত্যুর ও পাতালের চাবি আমার হস্তে আছে।প্রকাশিত বাক্য ১;১৮ পদ।
১২. “ দেখ, আমি শিঘ্র আসিতেছি, এবং *আমার দাতব্য পুরস্কার আমার সহবর্তী, *যাহার যেমন কার্য, তাহাকে তেমন ফল দিব।” *প্রকাশিত বাক্য ২২;১২ পদ।
যীশু খ্রীষ্টের দাবি সমূহের ব্যাখ্যা:
১) ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতিকে প্রান্তরে মান্না এবং ভাড়ই পাখি দিয়ে তাদের তত্বাবধান করেছিলেন। ঐ খাদ্য খেয়ে ইস্রায়েল জাতি মারা গিয়েছিল। কিন্তু যীশু খ্রীষ্ট স্বর্গ থেকে নেমে এসেছেন। আর এই জন্য পবিত্র বাইবেল প্রমাণ করে যে, তিনি আদিতে বাক্য ছিলেন, তিনি ঈশ্বরের নিকটে ছিলেন, এবং সেই বাক্য মাংসে মূর্তিমান হয়ে পৃথিবীতে আবির্ভূত হইলেন। তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ- যোহন ১;১,১৪ পদ। শাস্ত্র বলে, পাপ যে বেতন দেয়, তা মুত্যু; কিন্তু ঈশ্বর পুত্রের মধ্য দিয়ে মানব জাতিকে অনুগ্রহ দান করেছেন। যেন যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট হবে না, কিন্তু অনন্ত জীবন পাবে। আজ প্রতিটি মন্ডলীতে পবিত্র প্রভুর ভোজেন অনুষ্ঠান পালিত হচ্ছে। আর পবিত্র প্রভুর ভোজের মধ্য দিয়ে আমরা খ্রীষ্টের মৃত্যুকে স্মরণ করছি, করব, যতদিন তিনি না ফিরে না আইসেন।
২) ১যোহন ১;৫ পদে বলা হযেছে, ‘ঈশ্বর জ্যোতি’। আর প্রভু যীশু খ্রীষ্ট তো স্বর্গ থেকেই এসেছেন। সুতরাং তিনিও জ্যোতি, যদি কেহ জ্যোতির কাছে আইসে, সে কোন মতে অন্ধকারে চলিবে না, কিন্তু জীবনে দীপ্তি পাবে। এখনও সুযোগ আছে, যারা প্রভু যীশুকে বিশ্বাস করে না; অন্ধ্যকারে রয়েছে, তারা যদি যীশুকে বিশ্বাস করে, তবে মহা আলোতে জীবন-যাপন করতে পারবে।
৩) যে কোন ঘরের অথবা অফিসে দরজা থাকে। দরজা দিয়েই ঘরে প্রবেশ করতে হয়। তদ্রুপ স্বর্গ-রাজ্যে প্রবেশ করতে হলে, যীশু খ্রীষ্টের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করতে হয়। এই জন্য তিনি বলেছেন, তিনি দ্বার। স্বর্গ- রাজ্যে যেতে হলে যীশুর মধ্য দিয়েই প্রবেশ করতে হবে।
৪) এই জগতে অনেক মেষপালক আছে, মেষদের জন্য জীবন দেওয়াই হল উত্তম মেষপালকের দায়িত্ব। যখন কেন্দুয়া/বাঘ আসে, তখন এই জগতের মেষপালকেরা জীবন বাঁচাতে ঠিকই মেষ রেখে পালিয়ে যায়। কিন্তু খ্রীষ্টই একমাত্র উত্তম মেষপালক, যিনি তাঁর মেষদের জন্য নিজের জীবন দান করেছেন। তাঁর এই উৎসর্গের জন্য আজ আমরা পাপের ক্ষমা পেয়েছি, অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা পেয়েছি।
৫) এই দুনিয়ায় অনেক মহা মানব, অবতার, নবী, মনিষী, জ্যোতিষীগণ এসেছেন, তারা এই পৃথিবীর সাধারণ নিয়মে এসেছেন, আবার সাধারণ নিয়মে মৃত্যু বরণ করেছেন। কিন্তু একমাত্র প্রভু যীশু খ্রীষ্ট, তিনি মৃত্যুকে জীবন দিয়েছেন, এবং তিনি নিজেও মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন। ৪০ দিন পর্যন্ত নিজেকে জীবিত প্রমাণ করার পর তিনি যেখান থেকে নেমে এসেছিলেন, সেই স্বর্গে, ঈশ্বরের নিকটে প্রতি গমন করিলেন। আজ যদি কেহ যীশুকে বিশ্বাস করেন, তবে তার মৃত্যু নাই; কেবল প্রভুতে নিদ্রিত থাকেন- যোহন ৬;৪০, প্রকা ১৪;১৩ পদ। এই জন্যই আমরা বলে থাকি, ‘ খ্রীষ্ট বিশ্বাসীদের মৃত্যু নাই।” আমেন
৬) আমি পূর্বেই বলেছি, স্বর্গে যাওয়ার একটাই দরজা, আর সেই দরজা হলেন আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। এখানেও দেখি, অবিশ্বাসী থোমার প্রশ্নের উত্তরে যীশু বলতে বাধ্য হয়েই সেই দিন বলেছিলেন, “ আমিই পথ, ও সত্য, ও জীবন।” যদি কোন সঠিক রাস্তা/পথ থাকে, তবে তিনি হলেন সেই রাস্তা, যদি কোন চিরন্তন সত্য ব্যক্তি থাকেন, তিনি হলেন যীশু। কারণ পূর্বে আমরা দেখেছি, ‘ তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ ’ - যোহন ১;১৪ পদ। এই দুনিযায় যীশু ব্যতিত কেহ জীবন দিতে পারে নি, এবং মারা গিয়েও কেহ পুনরুত্থিত হতে পারে নি। একমাত্র যীশু মৃত মানুষদের জীবন দিয়েছেন এবং তিনি নিজেও মারা গিয়ে পুনরুত্থিত হয়েছেন। এবং যত লোক যীশুকে বিশ্বাস করবে; তিনি সকলকে সেই অনন্ত জীবনে নিয়ে
যাবেন- যোহন ৫;২৪,২৯, ১৪;১-৩ পদ।
৭) শিস্যদের বোঝানোর জন্যই মূলতঃ তিনি নিজেকে দ্রাক্ষালতার সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেমন দ্রাক্ষালতার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় অনেক ফল ধরে; তদ্রুপ আত্মিক জীবনে ফল অর্জন করতে হলে খ্রীষ্টের সঙ্গে যুক্ত থাকলেই প্রচুর ফল অর্জন করা সম্ভব। আর সেই যুক্ত থাকা হল, নিয়মিত প্রার্থনাশীল জীবন যাপন করা, শাস্ত্র অধ্যায়ন করা, প্রচার করা, শিষ্য তৈরী করা এবং অনেক লোকদের প্রভুর জন্য জয় করা। খ্রীষ্টের সঙ্গে যুক্ত না থাকলে এসব করা কখনই সম্ভব নয়।
৮) যীশু এই জগত থেকে প্রস্থান করিবেন, এই বিষয়ে শিষ্যদের সঙ্গে আলোচনার শেষ অংশে গিয়ে প্রভু তাদের পরম সান্তনা বাক্য বলেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের চমৎকার একটি দৃষ্টান্তের মধ্য দিয়ে সেই সান্তনা বাক্য বুঝিয়ে দেন। তিনি বলেন, প্রসবকালে নারী দুঃখ পায়, কারণ তাহার সময় উপস্থিত, কিন্তু সন্তান প্রসব করিলে পর, জগতে একটি মনুষ্য জন্মিল, এই আনন্দে তাহার ক্লেশ মনে থাকে না- যোহন ১৬;২১ পদ। ঠিক তদ্রæপ এই জগতে আমরা নানা ভাবে ক্লেশ পাইতেই পারি। কিন্তু আমাদের সর্বদা এই একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, প্রভু যীশু খ্রীষ্ট যেমন অনেক যাতনারুপ ক্লেশের মধ্য দিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করেছেন। ঠিক তার পর তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং পিতা ঈশ্বরের মহিমার দক্ষিণে আছেন। খ্রীষ্টের পুনরুত্থানের ফলেই শিষ্যদের দ্বারা সুসমাচার প্রবল ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুসমাচার প্রচারের ফলে
অনেক লোক খ্রীষ্টে বিশ্বাসী হয়ে পরিত্রাণ পেয়েছে। এটাই পিতার ঈশ্বরের আনন্দ, খ্রীষ্টের আনন্দ। বাংলা প্রবাদে আছে, ‘কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না।’ আমাদের সকল দুঃখ-কষ্ট আনন্দে পরিণত হয়, যখন আমাদের দ্বারা কেউ একজন পরিত্রাণ পায়। পর্রিাণের আনন্দই হইল জগতকে জয় করা।
৯) যদিও বাইবেল এই কথা বলে, নাসারৎ হইতে কি উত্তম কিছু হইতে পারে ? তথাপিও লোকদের সেই ধারণা বদলাতে বেশী দিন অপেক্ষা করতে হয় নি। যীশু খ্রীষ্টের মহিমা রাতারাতি সমস্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছিল সূর্যের আলোর ঝলকানির মত। কেবল তাই-ই নয়, এমন কি দিয়াবল, সেও যীশুকে বলেছিল, ‘ হে নাসরতীয় যীশু, আপনার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি ?’-মার্ক ১;২৪ পদ। অন্ধ লোকটি লোকদের গমনের শব্দ শুনে জিজ্ঞাসা করেছিল, ইহার কারণ কি ? তখন লোকেরা বলেছিল, “ নাসরথীয় যীশু সেখান দিয়া যাইতেছে।”- লূক ১৮;৩৭ পদ। এভাবে আরও অনেক ঘটনার কথা আমরা জানি। এই পৃথিবীতে মানূষ সুস্থ হওয়ার জন্য ডাক্তার, হাকিম, কবিরাজের কাছে যায়। কিন্তু যিনি সকল চিকিৎসকের উর্দ্ধে মহান চিকিৎসক, তিনি হলেন আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্ট। আর সেই জন্যই সেই দিন পিতর সেই জম্ম খঞ্জকে “ নাসরতীয় যীশু খ্রীষ্টের ” নামে সুস্থ করেছিল- প্রেরিত ৩;৬ পদ।
১০) আদিতে বাক্য ছিলেন, বাক্য ঈশ্বরের সহিত ছিলেন, এবং বাক্য ঈশ্বর ছিলেন। তিনি আদিতে ঈশ্বরের কাছে ছিলেন- যোহন ১;১,২ পদ অনুসারেই আমরা দেখতে পাই, যীশু খ্রীষ্ট নিজেই ঈশ্বর ছিলেন। তাই তিনি নিজেকে আল্ফা ও ওমিগা, প্রথম এবং শেষ, আদি ও অন্ত হিসাবে দাবি করেছেন। আর সেই কারণে তিনি সর্বশক্তিমানও বটে। প্রমাণ: যীশুর একাদশ শিষ্য গালীলে যীশুর নিরুপিত পর্বতে গমন করিলেন, আর তাঁহাকে দেখিয়া প্রণাম করিলেন; কিন্তু কেহ কেহ সন্দেহ করিলেন। তখন যীশু নিকটে আসিয়া তাঁহাদের সহিত কথা কহিলেন, বলিলেন, স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্তৃত্ব আমাকে দেওয়া হইয়াছেমথি ২৮;১৬-১৮ পদ। সুতরাং যীশু খ্রীষ্ট সর্বশক্তিমান।
১১) যিনি মারা গিয়ে পুনরুত্থিত হলেন, তিনি যুগে যুগে জীবন্তই। আর এই কারণ তাঁর (যীশুর) হস্তে মৃত্যু ও পাতালের চাবি গচ্ছিত আছে।
১২) যীশু খ্রীষ্ট স্বর্গ থেকে মর্ত্তে নেমে এসেছিলেন, তিনি তাঁর মিশন কাজ অর্থাৎ পরিত্রাণের কাজ শেষ করে পূনরায় স্বর্গে চলে যান। আর তিনিই পূনরায় দুনিয়ায় ফিরে আসবেন তাঁর প্রতিজ্ঞা রক্ষা করবার জন্য।
# ১ম প্রতিজ্ঞা : বিচার = যোহন ৫;২২,২৩ পদ অনুসারে আমরা দেখতে পাই, পিতা কাহারও বিচার করেন না, কিন্তু সমস্ত বিচারভার পুত্রকে দিয়াছেন। যেন সকলে যেমন পিতাকে সমাদর করে, তেমনি পুত্রকেও সমাদর করে।
# ২য় প্রতিজ্ঞা: তাঁর রাজ্যে নিয়ে যাওয়া = যোহন ১৪;১-৩ পদ অনুযায়ী আমরা দেখতে পাই, “ যীশুই পথ ” বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি তাঁর শিষ্যদের প্রথমেই সান্তনার বাক্য শুনান। হয়তবা তাঁহারা দ্বিধা-দন্দের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। আর তখনই প্রভু তাঁদের বললেন, তোমাদের হৃদয় উদ্বিঘ না হউক; তোমরা ঈশ্বরকে এবং আমাকে বিশ্বাস কর। আমার পিতার বাটিতে --------------------------- যাইতেছি। ---- তখন পূনর্বার আসিব, এবং আমার নিকটে তোমাদিগকে লইয়া যাইব; যেন আমি যেখানে থাকি, তোমরাও সেইখানে থাক।
উপসংহার: উপরের যীশু খ্রীষ্টের নিজের দাবি সমূহের উপর আলোচনা এবং পবিত্র বাইবেলে বর্ণীত সমস্ত তথ্য খেকে আমরা জানতে পারি যে, যীশুর সমস্ত দাবিই যথার্থ এবং বিশ্ব মানব জাতির মুক্তির জন্য এক মহা পরিত্রাণের সুসংবাদ। কারণ আর কেহ এই দুনিয়ায় ফিরে আসেন নাই, আসবেনও না; একমাত্র যীশু খ্রীষ্টই ফিরে আসবেন। হ্যাঁ, খ্রীষ্ট আসবেন, তবে তাঁর এক হাতে থাকবে ‘ বিচার দন্ড ’’ আর এক হাতে থাকবে তাঁর সন্তানদের জন্য পুরস্কার- মথি ২৫;৩১-৪৬, প্রকা ২২;১২ পদ।
লেখক: পাষ্টর কিশোর তালুকদার