প্রেম ভোজ - রেভাঃ জেমস জীপু রায়

ads20
    বড়দিনে প্রেম ভোজমানে একমিলন মেলার অপুর্ব দৃশ্য। এই দিনে ম-লীর সকলে মিলেমিশে সুস্বাদুখাবারে অংশগ্রহন করে থাকে। গ্রামের মন্ডলীগুলোতে সাধারনত শুধু খাবার দাবার আয়োজন থাকে না,  সেই সাথে সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে থাকে খেলাধুলা,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আয়োজক কমিটি প্রেম ভোজের খরচ অনুযায়ী প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত চাঁদাধরে থাকেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়একজন আরেক জনের চাঁদা দিয়ে সহভাগি তার হাত বাড়িয়ে দেন। বড়দিনের উপাসনা পরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং প্রেম ভোজ হয়ে থাকে। ম-লির ঘরে অথ বাসা মনের কোন উঠানে সব ব্যবস্থা সম্পন্ন হয়। সে একঅপুর্ব প্রেমের দৃশ্য অবতারণাহয়, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রান্নাবান্না, পরিবেশনাচলতে থাকে সম্মিলিত প্রয়াসে। 
    শহরে বড়দিনে অনেক ম-লীতে প্রেম ভোজ অনুষ্ঠিত হয়, যদিও গ্রামের মতএত প্রশস্ত জায়গা থাকে না তবুও সল্পপরিসরে ছোট ছোট প্রোগ্রাম ও প্রেম ভোজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রেম ভোজের মধ্য দিয়ে বড়দিনের আনন্দ পুর্নতাপায়। বাইবেলে গীত ১৩৩ :১ পদে বলা হয়েছে, দেখ, ইহা কেমন উত্তম ও কেমন মনোহর যে, ভ্রাতারাএকসঙ্গে ঐক্যে বাস করে! বড়দিনের ঐক্যতার প্রেম ভোজ দেখতে ঠিক এই রকম উত্তম ও মনোহর। 

    প্রভু যীশুর মৃত্যুরপুর্বে তার শিষ্যদের নিয়ে নিস্তার পর্ব পালনের সময় তিনি ভোজ প্রস্তুত করেছিলেন। (মথি ২৬:২৬-২৯, মার্ক ১৪:২২-২৫, লুক ২২:১৯, ২০,২১) এই ভোজকে আমরা প্রভুর ভোজ বলে থাকি, বাইবেলে যীশু বলেছিলেন যেন  বিশ্বাসীরা এই নিয়মিত ভাবে ভোজে অংশগ্রহণকরেন (১মকরি ১১ :২৪,২৫)।

    প্রাথমিক যুগের ম-লীতে প্রভুর ভোজ পালিত হত, আর তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটিভাঙ্গায় ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিল (প্রেরিত ২:৪২)।
    প্রভুর ভোজ পালন করা হল খৃষ্টের সাথে বিশ্বাসীদের আত্মার মিলনের প্রতীক। এই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আমরা প্রভু যীশুর দ্বিতীয় আগমনের প্রতিক্ষা করি ও লোকদের নিকট বিশ্বাসের স্বাক্ষ্য বহন করি যে, প্রভু যীশু আমাদের পাপের জন্য প্রান দিয়েছিলেন। তাই প্রভুর ভোজে অংশ গ্রহনের পুর্বে বিশ্বাসীদের অবশ্যই নিজেকে পরীক্ষা করে নিতে হয় যে, কেন প্রভু আমাদের জন্য মরেছিলেন, সেই চেতনাকে জাগ্রত করে আমাদের লোভ, তিক্ততা, অশুচিতা, ব্যভিচার অথবা অন্য যে কোনপাপ স্বীকার করা উচিত। (১মকরি ১১ :২৭)
    এটা সত্যি বিস্ময় কর ও হাস্য কর হবে, যদি কোন লোক প্রভুর ভোজ গ্রহন করে অথচ যীশু খৃষ্টকে ত্রানকর্তা রুপে গ্রহন করেন নাই ।

    বড়দিন এলেই সবার আগে যে নামটি আমাদের মনে রাখা উচিত আর তাহল যীশু, যে নামের অর্থ হল ত্রানকর্তা বা যিনি পাপ থেকে পরিত্রান দেন।(মথি ১:২১)
    মরিয়ম ও জোসেফের কোলে যখন যীশু জন্মগ্রহণ করেন তখন বৈথলেহেম যীশুকে যারা দেখতে গিয়ে ছিল তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অবাক করার মত। পন্ডিতেরা যীশুকে দেখতেএসেছিলপুর্ব দেশ থেকে, আর রাখালেরা এসেছিল মাঠ থেকে। কিন্তু এদের সবাইর ঊদ্দেশ্য ছিল একটাই, আর তাহল মুক্তিদাতাকে স্বচক্ষে দেখা আর তাকে সন্মান জানানো। 
    ঈশ্বরের বাক্য আমাদের কে প্রভুর ভোজ পালন করার কথা বলেছে কিন্তু প্রভ ুযীশুর জন্মদিন পালন করার কোন নির্দেশনা নেই তথাপি প্রভুর গৌরবের জন্য পালন করলে কোন অপরাধ বা পাপ হবেনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আমরা যে ভাবে বড়দিন পালন করি থাকি, এতে কি প্রভ ুগৌরবান্বিত হচ্ছেন ? 
    উত্তরটা দেবার আগে কিছুক্ষন চিন্তা করি, বড়দিনে সাধারণত আমরা কি করে থাকি ?
    গির্জা ঘর সহ আমাদের ঘর সাজাই,  নতুন জামা-কাপড় দিয়ে নিজেদেরকেও সাজাই,কীর্তন করি, প্রেম ভোজ করি, সেই সাথে চলে হরেক রকম খাবারের আয়োজন, অনেকে আবার দেশ বিদেশে বেড়াতে যাই, আরো অনেক কিছু করি। সংগতি অনুসারে কারে াকারো ঘরে পার্টি আয়োজন করে, তাতে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে হৈ চৈ চলে। ম-লীতে সংক্ষিপ্তউ পার্থনা করিতার পর কয়েকদিন ধরে চলে বিভিন্ন বিরামহীন প্রোগ্রাম। বড়দিনে এসব কিছুর প্রস্তুতি অনেক দিনে আগে থেকেই চলতে থাকে।  

    কিন্তু যাকে কেন্দ ্রকরে জন্মদিনপালন, যারজন্য জন্মদিনের এত আয়োজন, তার জন্ম কিভাবে হয়েছিল, কেন হয়েছিল,সেই ভাবনা গুলি যেন হারিয়ে যায় অতল গভীরে। 
    বছরে পর বছর ধরে অনেকেই আছি যারা প্রভুর যীশুর পৃথিবীতে আগমনের সঠিক উদ্দেশ্যকে জেনেও হৃদয়ে যীশুকে উহ্য রেখে বড়দিন পালন করছি। পরিত্রানের অভিজ্ঞতাহীন মাথায় যেন চিরস্থায়ী হয়ে চেপে বসে আছে আমি খৃষ্টান, কারন আমি বাপ্তিস্ম নিয়েছি, খৃষ্টান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি, ভাল মন্ডলির নিয়মিত সদস্য, আমি একজন ভাল মানুষ । 

    কিন্তু বাইবেল এই কথাবলে, "কিন্তু যত লোক তাঁহাকে গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন"(যোহন ১ :১২)। অর্থাৎ ব্যাক্তিগত ভাবে  যত দিন না কেউ প্রভুযীশুকে  ত্রান কর্তা রুপে গ্রহন করছে তবে সে প্রকৃত পক্ষে খৃষ্টান বা বিশ্বাসীনা। শুধ ুগ্রহন করলে যথেষ্ট না, সেই সাথে চিরদিন প্রভুর সাথে তার সঠিক সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। আর যারা প্রকৃত বিশ্বাসীনয়, তাদের বড়দিনের সব অনুষ্ঠান সীমাবদ্ধ  থাকে শুধু বড়দিন মৌসুমেই আর তাই বড়দিনের পর তার জীবনের রঙ ফিকে হয়ে আসে । 

    বড়দিন হল পরিত্রানের  দিন কারন লেখা আছে"কারণ অদ্য দায়ূদেরন গরে তোমাদের জন্য ত্রাণকর্তা জন্মিয়াছেন; তিনি খ্রীষ্টপ্রভু" (লুক ২:১১)। একজন অবিশ্বাসীর জীবনে যদি বড়দিনপালনের  সুযোগ থাকে তার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, সে পরিত্রান গ্রহনের আরেকটিবার সুযোগ পেলো। যিনি পৃথিবীতে এলেন যেন পাপী মানব পরিত্রাণ পায়, তার জন্মদিন পালন করার সুযোগএলে আপনি আরেকটিবার সুযোগ পাচ্ছেন যীশুকে উদ্ধার কর্তা রুপে গ্রহন করার। কারন অনেকেই আছেন যারা প্রান হারিয়েছেন এই সুযোগপাননি। আপনি পেয়েছেন, তাই অবহেলা না করে প্রভুযীশুকে গ্রহন করুন। প্রভু কথা দিয়েছেন  তিনি  আপনাকে তার সন্তান হিসাবে গ্রহন করবেন। প্রভু যেখানে আছেন সেখানে আপনিও  থাকবেন, আর আপনার জীবন দিয়ে হবে প্রভুর গৌরব ও প্রশংসা ।
    সমগ্র বাইবেলের মুল পদ টিহল , "কারণ ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্তজীবন পায়।" (যোহন ৩:১৬)
    যীশু নিজেই প্রেম (১ম যোহন ৪:৮),আর যত জন যীশুকে গ্রহন করে তার জীবন থেকে সেই প্রেম কখনো শেষ হয়না।   (১মকরি ১৩:৪) একজন প্রকৃত বিশ্বাসীর জীবন থেকে যীশুর প্রেম ফুরিয়ে যায় না। তাইতারা যে ভোজেই অংশগ্রহন করে থাকেন, সেটাই প্রেম ভোজে রুপান্তারিত হয়।তার জীবনের প্রতিদিনই বড়দিন কারন তিনি নির্মল প্রেমের অধিকারী।তাই আসুন এবারের  বড়দিনে প্রভুযীশুকে সঙ্গে নিয়ে বড় দিন পালন করি।সবাইকে শুভ বড়দিন ......

    রেভাঃ জেমস জীপু রায়

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS