অবশেষে কৃষ্ণ চন্দ্র পাল ও গোকুলকে গভর্ণর কর্ণেল বী -এর কাছে ধরে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু গভর্ণর তাদের শাস্তি না দিয়ে বরং তাদের এই সাহসের জন্য জনসমক্ষে প্রশংসা করলেন। সুতরাং গোলমাল করে লাভ না হওয়ার তারা এ বিষয়ে আর অগ্রসর হলো না।
কেরী ও তাঁর বন্ধুদের জীবন-যাপন দেখে এমন একটা সময় আসল যখন কৃষ্ণ চন্দ্র পাল খ্রীষ্টকে অনুসরণ করার জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করলেন। এবং ১৮০০ খ্রীষ্টাব্দের ১৮ ডিসেম্বর মাসে হুগলী নদীতে ডঃ কেরীর ছেলে ফিলিক্সের সাথে তিনিও বাপ্তাইজিত হলেন এবং কিছুদিন পর কৃষ্ণ চন্দ্র পালের পরিবারের অন্য সকলের বাপ্তাইজিত হলেন। তাদের দেখাদেখি শুরু হিন্দু নয়, মুসলমানেরাও আসতে লাগল। এই ভাবে বিভিন্ন জাতি নিয়ে প্রথম মন্ডলী গঠিত হলো। এই মন্ডলীভুক্ত লোকদের মধ্যে কোন জাতি ভেদ থাকল না। কে বড় আর কে ছোট, এ বিভেদ আর রইল না। কৃষ্ণ চন্দ্র পাল বাপ্তিস্ম গ্রহনের পর সুন্দর একটি গান লেখেন যা পরবর্তীতে মার্শম্যান ইংরেজীতে অনুবাদ করেছিলেন। গানটি হলো, ‘‘হে ঈশ্বর, আমার আত্মা, আমাকে আর ভুলে যেও না।’’
বাপ্তিস্মের পর কিছু কাল কাঠমিস্ত্রির কাজ করার পর তিনি ১৮০৪ খ্রীষ্টাব্দে একজন পালক হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং তাঁকে কলকাতায় একজন দেশী মিশনারী হিসেবে পালকীয় কাজ করার জন্য পাঠানো হয়। দীর্ঘ নয় বছর কলকাতায় কাজ করার পর তিনি বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে আসেন। ঐ সময় সিলেটের খাসিয়া উপজাতিদের মধ্যে কোন খ্রীষ্টিয়ান ছিল না। কৃষ্ণ চন্দ্র পালই প্রথম ব্যক্তি, যিনি খাসিয়া পাহাড়ে গিয়ে উপজাতিদের মধ্যে খ্রীষ্টধর্ম প্রচার করেন। এর ফলে সেখানকার অনেকে তাঁর কাছে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হন এবং তিনি খাসিয়া মন্ডলীর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। আজ খাসিয়াদের প্রায় সকলেই খ্রীষ্টিয়ান।
কৃষ্ণ চন্দ্র পালের কাজের প্রতি ভালবাসা ও সঠিক ভাবে সকল দায়িত্ব পালন করার জন্য কেরী তাঁর উপর খুব খুশি ছিলেন। কেরী তাঁর সম্পর্কে বলেন, ‘কৎরংযহধ ঢ়ধষ রং ংঃবধফু, বিষষ রহভড়ৎসবফ, ধহফ ও সধু ধফফ, বষড়য়ঁবহঃ সরহরংঃবৎ ড়ভ ঃযব মড়ংঢ়বষ, ধাবৎধমরহম ঃবিষাব ঃড় ভড়ঁৎঃববহ ংবৎসড়হং ধ বিবশ.’
এই রকম আত্মত্যাগী মানুষ কৃষ্ণ চন্দ্র পাল দীর্ঘ কুড়ি বৎসর প্রভুর পক্ষে পরিচর্যার কাজ করেন। তিনি প্রতি মাসে ৬ ডলার ভাতা পেতেন। তাঁর সম্পর্কে অন্য একজন বলেন, ‘‘ এই ব্যক্তি বয়স্ক অবস্থায় খ্রীষ্টকে গ্রহণ কনে একজন প্রকৃত খ্রীষ্টিয়ান হন এবং খ্রীষ্টিয় পরিচর্যায় নিজেকে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত করেন। আনন্দপূর্ণচিত্তে তিনি প্রভুর সাক্ষ্য বহন করতেন ও সাধারণদের মাঝে খ্রীষ্টের ভালবাসা সহভাগ করতেন।’’
তিনি শত শত লোককে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত করেন এবং ১৮২২ খ্রীষ্টাব্দে ২২ আগষ্ট কলকাতায় শান্তিতে প্রভুতে নিদ্রিত হন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি আর কয়েকটি গান রচনা করেছিলেন, যা আজও বিভিন্ন মন্ডলীতে গাওয়া হয়, ইংরেজীতেও অনুবাদ করা হয়েছে। তাঁর এই সুন্দর জীবনের জন্য আমরা প্রভুর গৌরব করি ও প্রার্থনা করি, যেন আমরাও প্রভুর পক্ষে সুন্দর কিছু করতে পারি।