কোন ব্যক্তি বা মন্ডলী ‘কাথলিক’ অথবা ‘অকাথলিক’ বা ‘ভ্রান্ত; তার বিচার শুরু হলো। এই বিচারের সুন্দর একটি মাপকাঠি ছিল, যেমন লারেন্সের অধিবাসী ভিনসেন্টের ভাষায় ‘‘ভ্রান্ত-অভ্রান্ত পরীক্ষা করার সময়ে মনে রাখতে হবে যে, অবিকৃত সুসমাচার ‘সর্বদা, সর্বস্থানে, সকলে প্রচার করে।’’ যেসব মন্ডলী এই পরীক্ষায় উর্ত্তীর্ণ হতো শুধু তাদেরকেই কাথলিক মন্ডলী বলা হতো।
রোম সাম্রাজের আফ্রিকা প্রদেশে (আধুনিক তিউনিশিয়া) সিপ্রিয়ান এবং আগস্টিন তাঁরা উভয়ে দেখলেন যে মন্ডলীর সঙ্গে মতভেদ ঘটায় কিছু লোকজন বাইরে গিয়ে নতুন নতুন মন্ডলী স্থাপন করার চেষ্টা করছে। সিপ্রিয়ান সেই প্রথম বললেন যে, ‘মন্ডলীর বাইরে মক্তির সম্ভাবনা সুদুরপরাহত।’ বিপক্ষদল বললেন, ‘কোনটা প্রকৃত মন্ডলী সেটা বিচার করবে কে? উভয় দলের বিশপগণ বিশ্বাস করতেন যে, তাঁরা কাথলিক মন্ডলীর অন্তর্ভূক্ত, অপরদল বিপথগামী। আগস্টিনের প্রতিপক্ষ ডোনাটিস্ট দল বলল যে, মন্ডলীর মধ্যে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলে তারা দলত্যাগ করেছে। আগস্টিন বললেন যে, মন্ডলীর প্রেমের বন্ধন ছিন্ন করেছেন বলে তারা অবশ্যই দোষী। তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, খ্রীষ্টের মধ্যস্থাতায় ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কে রক্ষা করার জন্য-ই মন্ডলীর প্রতিষ্ঠা এবং মন্ডলীর কাছে প্রকৃত বিশ্বজনীন সুসমাচার রয়েছে বলেই ঈশ্বরের সঙ্গে সম্পর্কে স্থাপনে মানুষ আগ্রহী হযে ওঠেন। দিনের পর দিন তর্ক চলে েএবং সেই সঙ্গে তিক্ততাও বেড়ে ওঠে। ফলে অবস্থাটা এমন হয় যে অপ্রেমের দোষটা শুধু ডোনাটিস্টদের ঘাড়ে চাপানো যায় না। রোম সম্রাট রাজনৈতিক স্বার্থচিন্তা করে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলে যোগ দিয়ে রাষ্ট্রের সমস্ত শক্তি নিয়ে ডোনাটিস্টদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য এগিয়ে এলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল নিজেদের কাথলিক বরে অভিহিত করলেন ও বিপক্ষদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সুযোগ খুঁজতে লাগল। 380 খ্রীষ্টাব্দে সম্রাট থিয়োডোসিয়াস একটি অনুশাসনে প্রজাদের পরিস্কার করে বলে দিলেন যে, যারা সাধু পিতর দ্বারা প্রচারিত ধর্মবিশ্বাস অনুসারে জীবন-যাপন করবেন তারা‘‘ কাথলিক খ্রীষ্টিয়ান’’ বলে জনসমাজে পরিচিত হবেন, অন্যরা সবাই উন্মাদ ও বিপথগামী । সুতরাং এখন সঠিকভাবে বিশ্বাস করা এবং না-করার ওপর কে কাথলিক এবং কে নয় সেটা বিচার করা শুরু হল। তখন ব্যক্তিগত সহ্য উলদ্ধির পরিবর্তে মন্ডলী রাষ্ট্রের সহায়তায় বলপ্রয়োগ করে মানুষকে দিয়ে বিশ্বাস করাবার জন্য প্রস্তুত হলো। এতে যারা আপত্তি করল তাদের অভিশাপ দিয়ে মন্ডলী থেকে বিতাড়ন করা হলো। আগে বিশপগণ মন্ডলীর দ্বারা প্রচারিত ধর্ম সত্য বলে জনসমক্ষে সাক্ষ্য দিতেন, এখন তাঁরা আইনের সাহায্যে লোককে দিয়ে একথা বলিয়ে নিতে শুরু করলেন।
রোমের কাথলিক মন্ডলরি সদস্যরা নিজেদের‘‘কাথলিক ‘’ বলে অভিহিত করেন এবং অন্যরাও শব্দটি এইভাবে ব্যবহার করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাছাড়া অন্যান্য মন্ডলীর মধ্যেও এমন একদল লোক আছে যাদের মতাদর্শের সঙ্গে রোমান কাথলিকদের বহু সাদৃশ্য থাকায়, তারা নিজেদের কাথলিক বলে আখ্যাত করেন। এর দ্বারা তারা এটুকুই বোঝাতে চান যে, তাঁরা ‘‘প্রোটেস্টান্ট’’নন। এমন কি World Council of Churches (WCC) ঘোষনা করেছে যে, মন্ডলীগুলির মধ্যে কোন কোনটি মুখ্যত কাথলিক , পক্ষান্তরে কোন কোনটি মুখ্যত প্রোটেস্টান্ট । বিশ্বাসসূত্রে সে কাথলিক ( সর্বজনীন) মন্ডলীতে বিশ্বাস করে।