বাপ্তিস্ম / তরিকাবন্দীর জন্য প্রস্তুতি

ads20

    বাপ্তিস্ম  / তরিকাবন্দীর জন্য প্রস্তুতি
    Preparing for Baptism

     
    কৃতজ্ঞতা স্বীকার
    আল্লাহ্র রহমতে ও কর্তৃত্বে আমি বেশ কিছু মানুষকে আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাদের মোনাজাত ও সাহায্য না থাকলে আমি এই গবেষণা প্রকল্পটি শেষ করতে পারতাম না। সর্ব প্রথমে আমি মাবুদ আল্লাহ্র প্রতি আমার সর্বোওম কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই। আমি আমার শিক্ষা জীবনকে চালিয়ে যাওয়ার জন্য যা কিছু প্রয়োজন মাবুদ আল্লাহ্ তিনি যোগান দিচ্ছেন, জ্ঞান, প্রেরণা, অন্তদৃষ্টি,সৃষ্টিশীল চিন্তা,শক্তি, অর্থায়ন, মনোযোগ নিবন্ধ করার ক্ষমতা, আনন্দ, মনের শান্তি, এবং অধ্যবসায়। আমার নাজাতদাতা এবং প্রভু, হযরত ঈসা মসীহ আমার সর্বেসর্বা, তিনিই আমাকে প্রতিনিয়ত ভবিষ্যৎ তাঁর কাজের দর্শন এবং পাক-রূহ বলে বেহেস্তে অবিরতভাবে উড়ে বেড়ানোর স্বপ্ন দেখানোর মধ্য দিয়ে আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন। করুণাময় প্রভু আমাকে সম্মানিত ও শ্রদ্ধাভাজন মা-বাবা দিয়েছেন, আমার স্ত্রী এবং এক ভাই ও এক বোনের জন্য আল্লাহ্র কাছে কৃতজ্ঞ।
    আমার অধ্যাপকগন ও রুহানিক শিক্ষকগণ যারা আমাকে ধর্মতত্ত¡ শিক্ষা দিয়েছেন তারা আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞার দাবীদার।
    একটি বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন আমার পরিবারের প্রাপ্য। আমার মা-বাবা কঠোর পরিশ্রম করার মধ্য দিয়ে আমাকে অপরিমেয়ভাবে সাহস, উৎসাহ ও সাহায্য যোগান দিয়েছে। আমরা তিন ভাই বোনের দেখা শোনা করা, উপার্জন করা এবং সংসার চালানো। আমার তাদের শারীরিক ও রুহানিক বৃদ্ধি ও হাসির মধ্য দিয়ে আমাকে উৎসাহ ও প্রেরণা যুগিয়েছেন। আবারও আমি সমস্ত গৌবর, সম্মান, মহিমা, প্রশংসা আমার মাবুদ আল্লাহ্, আমার সৃষ্টিকর্তা,আমার মাবুদ আল্লাহ্ এবং আমার ভালবাসার পাত্রকে অর্পণ করতে চাই।      আমেন!
                                                             
    বিষয়বস্তু
            তরিকাবন্দী কি? 
            কে বা কারা এই তরিকাবন্দী গ্রহন করতে পারে ?
            তরিকাবন্দি গ্রহণ করলে কি নাজাত পাওয়া যায় ?
            কিভাবে নতুন জন্ম হয় ?
            কখন এই তরিকাবন্দী নেওয়া উচিৎ ?
            কেন তরিকাবন্দি গ্রহণ করার আদেশ করেছেন ?
            পাক-রূহের তরিকাবন্দীর উদ্দেশ্য কী ?
            নতুন বিশ্বাসীদের মোনাজাত
     
    ভূমিকা:
    বর্তমানে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে মন্ডলী স্থাপন করা। মাবুদ আল্লাহকে শুকরিয় আদায় করি। আল্লাহ্ কালাম প্রচারের ফলে অনেকেই এখন হযরত ঈসা মসীহকে নাজাতদাতা বলে গ্রহণ করেছে এবং নূতন নূতন মন্ডলী স্থাপন হচ্ছে। মন্ডলী বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নতুন বিশ্বাসীদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই নূতন বিশ্বাসীরা বিশ্বাসে এখনও শিশু। সবেমাত্র তারা নূতন জীবন শুরু করেছে। এই বিশ্বাসীদের শিক্ষার প্রয়োজন আছে। শিক্ষা না পেলে তারা দূর্বল থেকে যাবে।
    আমাদের বিশ্বাস, মন্ডলী, নতুন জন্ম ,তরিকাবন্দি, প্রভুর ভোজ ও ধর্মীও অনুষ্ঠান ইত্যাদি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যই আমরা এই পুস্তকটি নতুন বিশ্বাসীদের সিরিজরূপে প্রকাশ করছি। আশা করি এই সিরিজ নতুনবিশ্বাসীদের এবং সাথে সাথে পুরাণো বিশ্বাসীদেরও অনেকটা সাহায্য করবে। বিশ্বাসীরা এই সিরিজ পাঠে উপকৃত হলে আমাদের এ প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে।
     
    “তোমরা আমাদের প্রভু ও নাজাতদাতা ঈসা মসীহের রহমতেও তাঁর সম্বন্ধে জ্ঞানে বেড়ে উঠতে থাক।” (২ পিতর ৩ঃ১৮)
     
    তখন ঈসা কাছে এসে তাঁদের এই কথা বললেন, “বেহেশতের ও দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে।  এইজন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার উম্মত কর। পিতা, পুত্র ও পাক-রূহের নামে তাদের তরিকাবন্দী দাও। আমি তোমাদের যে সব হুকুম দিয়েছি তা পালন করতে তাদের শিক্ষা দাও। দেখ, যুগের শেষ পর্যন্ত সব সময় আমি তোমাদের সংগে সংগে আছি।
     (মথি ২৮:১৮-২০ পদ)
     
    তরিকাবন্দী:
    অন্যান্য ধর্মের যেমন অনেক নিয়ম কানুন আছে আমাদের ঈসায়ী ধর্মে সেইরূপ নেই। তবে যারা হযরত ঈসা মসীহ্ উপর ঈমান এনে সাহাবি হতে চান এবং হযরত ঈসা মসীহকে জীবনের নাজাতদাতা রূপে গ্রহণ করতে চান তাদের কাছে হযরত ঈসা মসীহ্র দু’টো আদেশ আছে।
     
    (১) বাপ্তিস্ম / তরিকাবন্দী গ্রহন করা এবং (২) প্রভুর ভোজ পালন করা। 
    বাপ্তিস্ম / তরিকাবন্দি কেবল মাত্র একবার গ্রহণ করতে হয়। বাপ্তিস্ম / তরিকাবন্দি কি এবং কেন দরকার বা তরিকাবন্দি গ্রহণ করলে কি লাভ হয় এবং তরিকাবন্দি লাভ করার পর কিরূপে চলতে হয় এই সমস্ত আমাদের প্রত্যেক ঈসায়ীদের জানা দরকার।
     
    কিতাবুল মোকাদ্দসে পরিস্কার ভাবে দেখা যায় যে,নতুন জন্ম এবং বাপ্তিস্ম / তরিকাবন্দি দুটি আলাদা অভিজ্ঞতা। মাবুদ আল্লাহ চান যেন প্রত্যেক নতুন জন্ম প্রাপ্ত ব্যক্তি পাক-রূহের তরিকাবন্দি হয় এবং রূহে পূর্ণ জীবন-যাপন করে। শক্তিশালী পরিচর্যার জন্য প্রভুর সেবকদের পাক-রূহে তরিকাবন্দী হওয়া অত্যন্ত আবশ্যকীয় এবং সাধারণ লোকদের বিজয়ী জীবন যাপন করা এবং কৃতকার্য হওয়া প্রয়োজন। এটি একটি অভিজ্ঞতা যে, প্রত্যেক বিশ্বাসীর এটি প্রয়োজন। আমরা ঈসায়ীরা, যখন পাক-রূহের তরিকাবন্দি গ্রহণ করি এবং পাক-রূহের জীবন যাপন করি, তখন পাক-রূহের দানগুলি এবং পাক-রূহের ক্ষমতা ব্যবহার ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব এবং চরিত্র ধারণ করে, তখন সে হরযত ঈসা মসীহের শক্তিতে রূপান্ত রিত হয়।
     
    কিতাবুল মোকাদ্দসে তরিকাবন্দি শব্দ লেখা রয়েছে- কিন্ত মাঝে মাঝে আমরা আবগাহন ও তরিকাবন্দি শব্দ ব্যবহার করি। এই শব্দ গুলো একইঅর্থ অর্থাৎ পানিতে ডুব দেওয়া ও পানিতে গোসল করা। তরিকাবন্দি অনুষ্ঠানে বিশ্বাসীকে পানিতে ডুব দেওয়ানো হয়। পানিকে মৃত্যু ও কবরের সঙ্গে তুলনা করা হয়। হযরত ঈসা মসীহ্ উপর বিশ্বাস করার পর বিশ্বাসীকে পানিতে ডুবানো হয়। পানিকে মৃত্যু ও কবরের সঙ্গে তুলনা করা হয়।  
    হযরত ঈসা মসীহর পর কেউ বিশ্বাস করার পর বিশ্বাসীকে পানিতে ডুবানো হয়। এতে প্রকাশ করা হয় যে, বিশ্বাসী হযরত ঈসা মসীহের সঙ্গে মরে গিছে এবং তারঁই সঙ্গে কবর প্রাপ্ত হয়েছে। এর পর সেই লোককে পানির নীচ থেকে তোলা হয়। পানি থেকে উঠার সময় আমরা বলি নুতন জীবনে প্রবেশ করেছে।
     
    নতুন জন্ম  শব্দটির অর্থ  পুনরায়জন্মগ্রহণ করা। কথাটি হযরত ঈসা মসীহ নীকদীমের বেলায় ব্যবহার করেছিলেন ( ইউহোন্না ৩ঃ৩)।
    “যদি কেউ মসীহের সংগে যুক্ত হয়ে থাকে তবে সে নতুনভাবে সৃষ্ট হল।তার পুরানো সব কিছু মুছে গিয়ে সব নতুন হয়ে উঠেছে।(২ করি ৫:১৭)”।
    “আর সেজন্য সেই তরিকাবন্দির দ্বারা মসীহের সংগে মরে আমাদের দাফন করাও হয়েছে, যেন পিতা তাঁর মহাশক্তি দ্বারা যেমন মসীহকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন তেমনি আমরাও যেন নতুন জীবনের পথে চলতে পারি” (রোমীয় ৬:৪)
     
    পাক-রূহের তরিকাবন্দি- যার অর্থ হলো হযরত ঈসা মসীহকে যে আমি গ্রহণ করেছি তা প্রকাশ্যে স্বীকার করার একটা চিহ্ন স্বরূপ। এ একটি অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে হয়ে থাকে। যার মাধ্যমে নতুন জন্ম প্রাপ্ত ঈসায়ী পরিচর্যারজন্য বা ঈসা মসীহের পথে চলার জন্য আশ্চর্যজনক ক্ষমতার পোশাক পরিধান করে। এই তরিকাবন্দী দ্বারা আমরা নাজাত পাই না, কিন্ত প্রকাশ্যে স্বীকার করার জন্য এটি প্রয়োজন। অন্য কথায় এটা হচ্ছে অন্তরে বসবাসকারী পাক-রূহ জন্য প্রথম উৎসব।
     
    তরিকাবন্দি হচ্ছে হযরত ঈসা মসীহের মৃত্যু ও পুনরুত্থানে অংশী হওয়া (রোমীয় -৬:৩৫; কলসীয় ২:১২; পাপ থেকে ধৌত করা ( ১ করি৬:১১;
     
    নতুন জন্ম হল পাপীদের নাজাতের একটি অভিজ্ঞতা, যা পানির মাধ্যমে আসে অর্থাৎ অনুতপ্ত শব্দটি পাক-রূহের স্পর্শ এবং সাহায্যে আসে ( ইউহোন্না ৩ঃ৫)।
     
    নতুন জন্ম সঠিক ভাবে গ্রহণ করলেই পাক- রূহ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে এক এক রকম করে পাক-রূহ প্রকাশিত হবে (১করি ১২ঃ৬-১১)
    তরিকাবন্দি গ্রহণের আদেশ- এই তরিকাবন্দি গ্রহন করতে আমাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে, এবং অন্যদেরকেও পিতা, পুত্র ও পবিত্র আতœার নামে তরিকাবন্দি দিতে বলা হয়েছে। আমরা দেখি হযরত ঈসা মসীহ্ নিজেই তরিকাবন্দী গ্রহন করে আমাদের সম্মুখেআল্লাহ্র ই”ছা পালন করলেন।
    হযরত ঈসা মসীহ তিনি বলেন- (১) “এজন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার উম্মত কর। পিতা, পুত্র ও পাক-রূহের নামে তাদের তরিকাবন্দী দাও (মথি ২৮:১৯)”। (২) যে কেউ ঈমান আনে এবং তরিকাবন্দী নেয় সে-ই নাজাত পাবে; (মার্ক ১৬ঃ১৬)। (৩) “তরিকাবন্দি নেবার পর ঈসা পানি থেকে উঠে আসবার সংগে সংগেই তাঁর সামনে আসমান খুলে গেল তিনি আল্লাহ্র রূহকে কবুতরের মত হয়ে তাঁর উপরে নেমে আসতে দেখলেন (মথি ৩ঃ১৬)”।
    (৪)“যে কেউ মানুষের সামনে আমাকে স্বীকার করে আমিও আমার বেহেশতী পিতার সামনে তাকে স্বীকার করব (মথি ১০:৩২)”।
     
    এই তরিকাবন্দি কে গ্রহণ করতে পারে? তরিকাবন্দি সকলেই গ্রহণ করতে পারে তবে, এই বিষয়ে একটি জিনিস লক্ষ্য করতে হবে। যিনি তার পাপের জন্য অনুতপ্ত কি না? যিনি স্বীকার করেন যে, আমি একজন পাপী ঈসা মসীহ্ আমার পাপের জন্য তিনি জীবন দিয়েছেন এবং নতুন জীবন যাপনের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তিনি তরিকাবন্দি গ্রহণ করার উপযোগী (প্রেরি ২:৪১; ১৬:৩১-৩৩)। আমাদের মধ্যে আমরা শিশুদের তরিকাবন্দি দেই না। কারণ একজন শিশু নিজে ঈসা মসীহকে নিজের নাজাতদাতা হিসাবে গ্রহণ করতে সমর্থ হয় না। অর্থাৎ তাঁর বোধশক্তি ততটা পরিপূর্ণ হয় না। তবে আমরা আমাদের শিশুদের ঈমামের দ্বারা আল্লাহর কাছে উৎসর্গ করি। এই শিশু উৎসর্গ করার সময় পিতা ও মাতার উভয়েরই উপস্থিতি একান্ত বাঞ্ছনীয়। পিতা ও মাতার শিশুকে নিয়ে সর্ব সমক্ষে দাড়ান এবং শিশুকে উৎসর্গ করা হয়। শিশু উৎসগের্র মধ্যে দিয়ে স্বীকার করা হয় যে, তারা এই উপহারটি আল্লাহর নিকট থেকে পেয়েছেন।
     
    আমরা জানি যে, যখন কোন একজন খেলোয়াড় মাঠে খেলতে যায় তখন সেই খেলার পূর্বে তাকে নিয়মিভাবে প্রশিক্ষণ ও শারীরিক ব্যায়াম করতে হয়। ঠিক , সেই ভাবে যখন কোন একজন হযরত ঈসা মসীহ্কে বিশ্বাস করে তরিকাবন্দি গ্রহণ করতে চায় তখন তাঁর কিছু অনুশীলনকরতে হয়। পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে, তরিকাবন্দি প্রার্থীকে তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ঈসা মসীহ্রে কাছে বিশ্বাস ও তার পাপ স্বীকার করতে হয়। হযরত পিতরের প্রচারের তিন হাজার লোকে পাপ সম্বন্ধে চেতনা প্রাপ্ত হল এবং প্রশ্ন করলো আমাদের কি করতে হবে? হযরত পিতর জবাবে বলেন- “আপনারা প্রত্যেকে গুনাহের মাফ পাবার জন্য তওবা করুন এবং ঈসা মসীহের নামে তরিকাবন্দি গ্রহণ করুন” (প্রেরিত ২:৩৮)। তারা তরিকাবন্দী গ্রহণ করলো এবং পাপের ক্ষমা লাভ করলো। কারণ কিতাবে লেখা আছে, “যদি আমরা আমাদের গুনাহ্ স্বীকার করি তবে তিনিই তখনই আমাদের গুনাহ্ মাফ করেন” (১ ইউহোন্না ১:৯)। প্রভুর কাছে আমাদের জীবন সমর্পণ করার সংগে সংগে পুরাতন জীবনের হিংসা, রাগ, ঘৃণা,চুরি,মিথ্যাকথা বলা ত্যাগ করতে হবে। আমরা কি তরিকাবন্দি গ্রহণে পরেও গুনাহের পথে চলব (রোমীয় ৬:২)?  আল্লাহ্র কালাম আমাদের এই আদেশ দেন। “ সেইজন্য তোমাদের গুনাহ্-স্বভাবের মধ্যে যা কিছু আছে তা ধ্বংস করে ফেল।....তোমরাও আগে ঐ রকম ভাবেই চলতে, কিন্তু এখন রাগ, মেজাজ, হিংসা, গালাগালি, এবং খারাপ কথাবার্তা তোমাদের কাছ থেকে দুর কর। একজন অন্যজনের কাছে মিথ্যা কথা বোলো না, কারণ তোমাদের পুরানো ‘আমি’কে তার কাজ সুদ্ধ কাপড়ের মত ছেড়ে ফেলে তোমরা তো নতুন“আমি” কে পরছে। এই নতুন ‘আমি’ আরও নতুহতে তার সৃষ্টিকর্তাও মত হচ্ছে, যেন সেই সৃষ্টিকর্তাকে তোমরা পরিপূর্ণভাবে জানতে পার (কলসীয় ৩:৫, ৭-১০)।” কিতাব বলে শয়তান সর্বদাই আমাদেরকে মন্দ ও খারাপ পথে পরিচালিত করতে চায়। হযরত ঈসা মসীহের শক্তিতে আমরা মন্দতার উপর জয়লাভ করতে পারি।
     
    কিভাবে একজন বিশ্বাসী তরিকাবন্দি গ্রহণ করতে পারেন? তিনি কি জামাতে/ গীর্জার ঈমাম এর কাছে গেলেই তরিকাবন্দি নিতে পারেন? যখন কোন একজন মনে প্রাণে হযরত ঈসা মসীহ্র কাছে গুনাহ্ স্বীকার করেন, অনুতপ্ত হয়ে গুনাহ্র পথ থেকে ফিরে আসেন এবং ঈসা মসীহের মৃত্যুবরণ ও পুনরুত্থানে বিশ্বাস করেন এবং তরিকাবন্দি গ্রহণ করতে চান, তিনি জামাতের ঈমামের কাছে গিয়ে বলবেন। ঈমাম মন্ডলীর সকলকে জানাবেন এবং শিক্ষার ব্যবস্থা করবেন। অতঃপর মন্ডলীর সিন্ধান্ত অনুসারে নির্দিষ্ট দিনে পুকুরে,নদীতে বা কোন জলাশয়ে নিয়ে যান এবং সেখানে একটি ছোট অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েতাকে তরিকাবন্দি দেওয়া হয়। সেই সময় বিশেষ মন্ডলীর সভ্য সভ্যারা বিশেষভাবে এই অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করবেন এবং সাক্ষী হবেন। মন্ডলীর লোকেরা রূহানিক গান ও কিতাব পাঠ বিশেষভাবে মোনাজাত। অতঃপর ঈমাম পিতা, পুত্র ও পাক-রূহের নামে পানিতে ডুব দেওয়ান। ডুব দেওয়ার অর্থ যে তিনি পাপ রূপে কবরে প্রবেশ করে পাপে মরেছেন এবং পানি থেকে উঠার অর্থ যে তিনি নতুন জীবনে প্রবেশ করেছেন।
    ঈসায়ী  জীবনে কেবল মাত্র তরিকাবন্দি গ্রহণ করলেই তাঁর সারা জীবনের কাজ শেষ হয়ে যায় না। তরিকাবন্দি গ্রহণ করার পর ঈমামের সহভাগিতার দক্ষিণ হস্ত দানের মাধ্যমে মন্ডলীভুক্ত করেন। মন্ডলীর সদস্য পদ লাভ করলে তার দায়িত্ব আরো বেড়ে যায়। মন্ডলীর সমস্ত কার্য্য ও উপাসনায় অংশ গ্রহণ করতে হয়। অনেকে মনে করে নতুন কেবল ঈমাম, প্রচার,সম্পাদক ও পরিচারকদের এই কাজ। কিন্তু‘ তা নয়। প্রত্যেক বিশ্বাসীরই
    উপরোক্ত দায়িত্ব পালন করার প্রয়োজন আছে। আদি মন্ডলীতে এই বিষয় আমরা লক্ষ্য করি- কিতাবুল মোকাদ্দসে লেখা আছে, “তারা প্রত্যেক দিন বায়তুল-মোকাদ্দসে একসংগে মিলিত হত, আর ভিন্ন ভিন্ন বাড়ীতে আনন্দের সংগে ও সরল মনে একসংগে খাওয়া-দাওয়া করত। তারা সব লোক তাদের সম্মান করত। যারা নাজাত পাচ্ছিল প্রভু ঈমানদার দলের প্রত্যেক দিনই তাদের যোগ করতে লাগলেন (প্রেরিত ২:৪৬-৪৭)’’ ।
    সুতারাং আমরা বলতে পারি যে, তরিকাবন্দি গ্রহণ করার পর আমাদের দায়িত্ব রয়েছে মন্ডলীর উপাসনায় যোগদান করা, আল্লাহর গৌরব করা ও মন্ডলীর সমস্ত কাজে সাহায্য করা। যিনি তরিকাবন্দি গ্রহণ করবেন তার নাম, সন, ঠিকানা ও তারিখ, ঈমাম/ সম্পাদক যথাযরূপে একটা খাতায় লিখে রাখবেন। যে অপর এক মন্ডলীতে চলে গেলে তাকে ট্রান্সফার দেওয়া যায়। পাক-রূহের তরিকাবন্দির প্রমাণঃ
     
    ১.বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা ঃ পেরিতের কার্যবিবরণী পুস্তকে এই সর্ম্পকে ৫টি বিষয়ে লেখা আছে ( প্রেরিত ২: ১-৮; ৪-২৪; ৯:১৭-২০; ১০:৪৪-৪৮; ১৯:১-৭ ), এর মধ্যে তিনটি পরিস্কার ভাবে দেখিয়েছেন যে, লোকেরা বিভিন্ন ভাষায় কথা বলেছিল। এছাড়াও আমরা সহজেই বুঝতে পারি যে,অন্য দুইটি ঘটনায়ও লোকেরা বিভিন্নভাষায় কথা বলেছিল। পাক-রূহের তরিকাবন্দির চিহ্ন হল বিভিন্ন ভাষায় কথা বলা।
     
    ২.সু-খবর প্রচারের ক্ষমতা ঃ পাক-রূহের তরিকাবন্দি গ্রহণের মধ্যে রয়েছে সু- খবর খবর প্রচারের শক্তি। যদি কেউ পাক-রূহের তরিকাবন্দি গ্রহণ করে থাকে, তবে সে লোকদের বিশ্বাস তৈরী করে এবং মন্ডলীর উন্নয়নের জন্য  জীবন দিয়ে সু-খবর প্রচার করে। পেরিত ২:১৪; ৪:৩১)।
    ৩.গভীর আত্মবিশ্বাস/নিশ্চয়তা ঃ পাক-রূহের তরিকাবন্দি যে বিশ্বাসী গ্রহণ তরিকাবন্দি গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আল্লাহ্ করে, পাক-রূহ তাকে গভীর আতœাবিশ্বাস/নিশ্চযতা দান করেন, এর প্রমাণের আপনাকে নতুন জীবন শুরু করতে সাহায্য
    প্রাথমিক চিহ্ন বা শক্তিশালী চিহ্ন হল সু-খবর প্রচারের জীবন।
     
    ৪.পাক-রূহের তরিকাবন্দি গ্রহণ করায় শ্রবণ, জ্ঞান, দৃষ্টি এবং অনুসরণ করা স্পষ্টতর হয়।  পাক-রূহের তরিকাবন্দির প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্দেশ্য ঃ
            এটি  ছিল  হযরত  ঈসা  মসীহের  কথা  (মথি  ২৮:১৮-২০)  এবং সাহাবীদের প্রধান চিন্তার বিষয়(প্ররিত ৮৮:১৮-১৬,১৯:১-২ পদ)।
            একজন রূহানীক মানুষ হওয়া (১ করি ২:১৩-১৫)।
            প্রভুর শিক্ষা বুঝতে পারা ( ইউহো ১৪:২৬)
            রূহের এবং সত্যের ইবাদত করা ।( ইউহো ৪৪:২৩-২৪)।
            সবার জন্য এবং আনন্দ সহকারে সাহায্য দেয়ার ক্ষমতা (১করি ১২:৭; ১পিতর ৪:১১)
            পাক-রূহের দান গ্রহণ এবং তার ফল উৎপন্ন করা ( ১ করি ১২; গালাতীয় ৫:২২-২৩)।
            পাপের ব্যবস্থা এবং মৃত্যু থেকে মুক্ত হওয়া (রোমীয় -৮:২৬, ৯-১৩; ২করি ৩:১৭ পদ)।
     
    আমরা জানি যে আমাদের জীবনে পরিচালনার জন্য কিতাবুল মোকাদ্দস সর্বশ্রেষ্ঠ।কারণ এর মধ্যে দিয়ে আল্লাহ আমাদের কাছে কথা বলেন। তরিকাবন্দি সম্বন্ধে কিতাবে যে শিক্ষা ও দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়েছে সেগুলি আমাদের স্মরণ করা উচিত। যারা হযরত ঈসা মসীহ্কে নাজাতদাতা হিসাবে স্বীকার করেছেন, শুধু মাত্র তাদেরই তরিকাবন্ধি গ্রহন করা উচিত।
    মৃত্যবরণ ও পুনরুত্থানে বিশ্বাস করেন তাহলে আল্লাহ আপনার সকল গুনাহ্ মাফ কওে আপনাকে নাজাত দান করবেন। এবং তরিকাবন্দি গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আল্লাহ্ আপনাকে নতুন জীবন শুরু করতে সাহায্য করবেন।
     
    নতুন বিশ্বাসীদের মোনাজাত
     
    হে আমার প্রতিপালক, আমি গুনাহ্গার।
    কোথা থেকে এসেছি, কিসের জন্য জীবন যাপন করছি,
    কোথায় যেতে হবে বুঝতে না পারা এক পথভ্রান্ত পথিক।
    মাবুদ আল্লাহএখন তোমার আহ্বানে বিশ্বাসে স্থির হয়েছি।
    তোমার ক্রুশীয় রক্তে আমাকে ধৌত কর।
    আমার পাপের জন্য মৃত্যু বরণকারীপুনরুত্থিত ঈসা মসীহকে
    আমার মুক্তিদাতা হিসেবে গ্রহণ করছি,
    এখন থেকে বেহেস্তে যাওয়ার পর্যন্ত আমাকে পরিচালনা কর।
    আমাকে নাজাত দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
    হযরত ঈসা মসীহের মধ্য দিয়ে পরিস্কৃত হয়ে
    নতুন মানুষ হিসেবে জীবনএই মোনাজাত করি।
    আমেন।    
     লেখক : পাষ্টর মাসুদ রানা

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS