১ম পরিবার বনাম আমার পরিবার

ads20
    আমাদের পরিবার বলতে সাধারণতঃ মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী নিয়েই বুঝায়।
    আবার আমাদের সমাজে ছোট ও বড় পরিবার রয়েছে। ছোট পরিবার থেকেই বড় পরিবারের
    বিস্তার লাভ কিন্তু এই পরিবার কখন কিভাবে গঠিত হয়েছে তা আজ আলোাচনার বিষয়।
    ১ম পরিবার ঃ- ঈশ্বর এই সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন তাঁর মূখের বাক্যের দ্বারা। প্রতিটি সৃষ্টির
    পর পরেই তিনি দেখলেন যে, সে সকল উত্তম। এভাবে পর্যায়ক্রমে এক এক দিন গত হয়।
    প্রথম থেকে পঞ্চম দিন পর্যন্ত ঈশ্বর একই বাক্য বললেন যে, সেকল উত্তম। কিন্তু মানব জাতি
    মূখের বাক্য দ্বারা সৃষ্টি হয়নি, নির্মাণ করতে হযেছে। সৃষ্টি আর নির্মাণ এক বিষয় নয় কারণ
    নির্মাণ করতে প্রয়োজনীয় উপকরণ দরকার। আর তাই তিনি তারই সৃষ্টির উপকরণ দ্বারা মনুষ্য
    নির্মাণ করলেন। তখন ষষ্ঠ দিন হইলে ঈশ্বর দেখিলেন যে, “ সকলই অতি উত্তম।” কেন ?
    কারণ তিনি নিজ হস্তে আপনার প্রতিমূর্তি, নিজ সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্মাণ করলেন।
    মনুষ্য নির্মাণের রহস্য এখানেই শেষ নয়। তখন কেবল আদম একা, আর এই একাকীত্ব জীবন
    মনুষ্যের জন্য ভাল নয়, তাই তিনি তার জন্য তারই মত সহকারিণী নির্মাণ করলেন। ঈশ্বর
    আদমকে ঘোর নিদ্রায় মগ্ন করলেন; এ যেন বিরাট এক অপারেশন শুরু হতে যাচ্ছে। হ্যা,
    তাই, তিনি আদমের একখানি পঞ্জর লইয়া মাংস দ্বারা সেই স্থান পূরণ করিলেন। সদাপ্রভু
    ঈশ্বর আদম হইতে গৃহীত সেই পঞ্জর দ্বারা এক জন স্ত্রী নির্মাণ করলেন ও তাহাকে আদমের
    নিকটে রাখিলেন। তখন আদম নিদ্রা হইতে জেগে দেখেন, তার পাশে একজন স্ত্রীলোক। তখন
    আদম কহিলেন, ‘ এবার হইয়াছে ’ ইনি আমার অস্থির অস্থি ও মাংসের মাংস; ইহার নাম নারী
    হইবে; কেননা ইনি নর হইতে গৃহীত হইয়াছেন।
    আমাদের এই একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন যে, ঈশ্বর মনুষ্য নির্মাণের পূর্বে পৃথিবী সৃষ্টি
    করলেন যেন মানব জাতি সূখে-শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারে। আবার আদমকে তিনি সারপ্রাইজ
    হিসাবে উপযুক্ত সহকারিণী দিলেন। এভাবে ঈশ্বর প্রথম পরিবার গঠন করলেন।
    ২য় পরিবার ঃ- ঈশ্বর মানব জাতিকে আশীর্বাদ করলেন ও বললেন, ‘ তোমরা প্রজাবন্ত ও
    বহুবংশ হও এবং পৃথিবী পরিপূর্ণ কর।’ ঈশ্বরের আশীর্বাদের ফলে ধীরে ধীরে মানব জাতি
    বৃদ্ধি পাইতে লাগল। আর তখন থেকে এই পর্যন্ত ছেলে ও মেয়ের পক্ষ থেকে সন্বন্ধ দেখা শুরু
    হয়ে আসছে। আমাদের বর্তমান পৃথিবীর নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি সমাজে বিবাহের রীতিনীতি
    চালু আছে। আমাদের খ্রীষ্টিয় সমাজের বিবাহের জন্যও আছে রীতিনীতি; তবে তা একটু
    ব্যতিক্রমী। আর তা হল মন্ডলীর সাক্ষাতে উভয় পক্ষকে একটি দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তি/প্রতিজ্ঞার
    মধ্য দিয়ে এই বিবাহ অনুষ্ঠান সম্পাদন করা।
    চুক্তি/প্রতিজ্ঞা ঃ- মন্ডলীতে বর ও কনে উভয় পক্ষের অভিবাবকগণ উপস্থিত থাকেন। এক
    পাশে বর এবং বরের অভিবাবক, অন্যপাশে কনে এবং তার অভিবাবক স্বাক্ষী হিসাবে থাকেন।
    সম্মানীত পুরোহীত সকলের সাক্ষাতে প্রতিজ্ঞা পাঠ করান। বর, আমি --- আজ থেকে তোমার
    স্বামী হিসাবে সব সময় তোমার পাশে থাকব। সহায়-সম্পদে, আপদে-বিপদে, স্বাস্থ্যে, রোগপীড়ায়, 
    সূখে-দুঃখে সব সময় তোমার সঙ্গে সঙ্গে থাকব। একমাত্র মৃত্যু ব্যতিত তোমাকে
    আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না। কনে, একই ভাষায়, একই কথা দ্বারা
    প্রতিজ্ঞা/চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। আবার পুরোহীত পবিত্র বাইবেল থেকে ঐ অংশটি পাঠ করেন।
    যথা ঃ- সুতরাং তাহারা আর দুই নয়, কিন্তু একাঙ্গ। অতএব ঈশ্বর যাহার যোগ করিয়াছেন,
    মনুষ্য তাহার বিয়োগ না করুক- মথি ১৯;৬ + আদি ২;২৪ পদ। সৃষ্টির শুরুতে ঈশ্বর তাঁর
    বাক্যে যাহা বলেছেন, তাহাই সকল মানব জাতির পরিবার গঠনের মূল তন্ত্র/চাবি। ঈশ্বর
    আদিতে এক জন পুরুষের জন্য এক জন নারীই নির্মাণ করেছেন।
    ত্যাগপত্র ঃ- ফরীশীরা যখন যীশুকে প্রশ্ন করল, ‘ তবে মোশি কেন ত্যাগপত্র দিয়া পরিত্যাগ
    করিবার বিধি দিয়াছেন ? তখন যীশু তাদের বললেন, তোমাদের অন্তঃকরণ কঠিন বলিয়া মোশি
    তোমাদিগকে আপন আপন স্ত্রীকে পরিত্যাগ করিবার অনুমতি দিয়াছেন, কিন্তু আদি হইতে
    এইরুপ হয় নাই- ৭,৮ পদ।’ অর্থাৎ তখনকার সময়ে যে সেই কারণে স্ত্রীকে পরিত্যাগ করা
    যাইত; যেমন আমাদের দেশের বৃহত্তম জনগোষ্ঠি যা করে।
    অন্তঃকরণ কঠিন ঃ- এই প্রসঙ্গে আমাদের এই একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, স্বামী-স্ত্রী
    একাঙ্গ। সুতরাং যে সেই কারণে ডিভোর্স বাইবেল সমর্থন করে না। তাই প্রভূ যীশু বাধ্য হয়ে
    বলেছেন, ব্যভিচার দোষ ছাড়া একে অপরকে পরিত্যাগ করা যাবে না- ৯ পদ। আবার এই
    কথাও মনে করিয়ে দেয় যে, “ আমরা যেন একে অন্যকে ক্ষমা করতে পারি।” আমি আমার
    স্ত্রীকে/স্বামীকে ক্ষমা করতে পারি না, তাহলে সমাজে আর কাকে ক্ষমা করতে পারি ? না, এটি
    সম্ভব নয়। ‘ স্বামী-স্ত্রী একাঙ্গ ’ এই সত্য জেনে যারা এই পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে,
    তারা একে অন্যকে ক্ষমা করতে প্রস্তুত। প্রভূর প্রার্থনায় তাই-ই বলে।
    সতর্কবাণী ঃ- কেননা আমি স্ত্রীত্যাগ ঘৃণা করি, ইহা ই¯্রায়েলের ঈশ্বর সদাপ্রভু কহেন, আর যে
    আপন পরিচ্ছদ দৌরাত্ম্যে আচ্ছাদন করে, [ তাহাকে ঘৃণা করি, ] ইহা বহিনীগণের ঈশ্বর
    সদাপ্রভূ কহেন। অতএব তোমরা আপন আপন আত্মার বিষয়ে সাবধান হও, বিশ্বাসঘাতকতা
    করিও না- মালাখি ২;১৬ পদ। তদ্রুপ হে স্বামীগণ, স্ত্রীলোক অপেক্ষাকৃত দুর্বল পাত্র বলিয়া
    তাহাদের সহিত জ্ঞান পূর্বক বাস কর, তাহাদিগকে আপনাদের সহিত জীবনের অনুগ্রহের
    সহাধিকারিনী জানিয়া সমাদর কর; যেন তোমাদের প্রার্থনা রুদ্ধ না হয়- ১পিতর ৩;৭ পদ।
    বর্তমান চিত্র ঃ- আমাদের বর্তমান খ্রীষ্টিয় সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, এমন অনেক
    পরিবার আছে যারা স্বামী-স্ত্রী থেকে আলাদা জীবন-যাপন করছেন। আবার কেউ বা আপন
    স্ত্রীকে ছেড়ে আরেকটি নতুন ঘর সংসার করছেন। আবার এও দেখা যায়, গাড়ীর মডেল
    পরিবর্তনের মতো নতুন নারীকে বিবাহ করে নতুন করে সংসার চালাচ্ছেন। অথচ, এতোদিন
    ছেলেমেয়ে জম্ম দিয়ে দিনে পর দিন সংসার চালিয়ে আসছে; বছর বিশের মতো তো হবেই।
    তখন কোন কোন সমস্যা ছিল না। এই রকম সুখের সংসার ফেলে রেখে আরেকটি সংসার
    করা, কিভাবে সম্ভব ? এই সন্তানেরা কিভাবে পিতৃ পরিচয় দিবে ? হ্যা, এই সব হচ্ছে আপনার
    আমার সামনেই। আমরাই ঘটতে দিচ্ছি/প্রশ্রয় দিচ্ছি। আমাদেরই নিরব থাকার কারণে কিছু
    বিশ্বাসী ভাই-বোনেরা এভাবে আমাদের সমাজকে কলঙ্কিত করছে। অথচ যখন আমরা এই
    সকলের আওয়াজ পাই, তখন কোন ব্যবস্থা নেই না। তাই এভাবেই ঘটতে থাকে একের পর
    এক বিবাহ বিচ্ছেদ/বহু বিবাহ। দুটো কারণে এই সব ঘটছে, প্রথমতঃ আমাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে,
    দ্বিতীয়তঃ আমরা কারোর বিচার করতে পারি না। এতো সহ্য করার মতো, আরও আছে, আর
    তা হল, মন্ডলীর নেতা/নেতার পরিজনেরা। অথচ তারাই সমাজে মাথা উচুঁ করে দিব্যি ঘুরে
    বেরাচ্ছে। কারণ একটাই, ঐ ফরীশীদের মতো কঠিন হৃদয়; তারা না জানে শাস্ত্র, না জানে
    ঈশ্বরের পরাক্রম। যদি জানতো, বিবাহ ঈশ্বরের-ই গঠন করা পরিবার, যদি মনে রাখতো সেই
    বিবাহের সময় প্রতিজ্ঞা করা অঙ্গিকার, তাহলে তারা এমন ভাবে চলতে পারতো না। তারা
    বিবাহকে মনে করে ‘খেলার পুতুলের মতো।’ কিন্তু আদি হইতে এইরুপ হয় নাই- ৮ পদ।
    উপসংহার ঃ- পবিত্র বাইবেল এই কথা বলে, ‘ সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় ও সেই শয্যা
    বিমল হউক; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন- ইব্রীয় ১৩;৪ পদ।
    বর্তমান বিশ্বের পরিবেশ পরিস্থিতির পেক্ষাপটে এবং করোনা ভাইরাসের মহামারী প্রাক্কালে
    ডিভোর্সের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমতাবস্থায় খ্রীষ্টিয় পরিবারের স্বামী-স্ত্রী কি শেষ পর্যন্ত একে
    অন্যকে ধরে রাখতে পারবে ? পারবে কি মন্ডলীর সাক্ষাতে সেই প্রতিজ্ঞা রক্ষা করতে ? [সুখে-
    দুঃখে, সহায়-সম্পদে, আপদে-বিপদে, স্বাস্থে, রোগ=পীড়ায় সব সময় আমি তোমার সঙ্গে
    থাকিব]। মৃত্যু ছাড়া আমাদের আর কোন কিছুই আলাদা করতে পারবে না। ঈশ্বর তাঁর জীবন্ত
    বাক্যের আলোকে আমাদের সকলকে আশীর্বাদ দান করুন, আমেন।

    পাষ্টর কিশোর তালুকদার
    হাউজ চার্চ অব বাংলাদেশ, ঢাকা। 

    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS