সবচেয়ে মূল্যবান!!

ads20

    শতকের পর শতক ধরে, যা কিছু মূল্যবান তা মানুষ চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছে এবং পরে সেই মূল্যবান জিনিসটি নিজের অধিকারে নিতে চেষ্টা চালিয়েছে। আর নিজের অধিকারে নেবার প্রচেষ্টাতে সে ন্যায় অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করেনি। আজকের জগতে মানুষের কাছে টাকাই সবচেয়ে মূল্যবান বলে বিবেচিত, আর এই টাকা অর্জনের জন্য মানুষ অন্ধের মত টাকার পিছনে ছুটছে। কিন্তু প্রশ্ন হল খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে আমাদের কাছে মূল্যবান কি?

    একজন খ্রীষ্টিয়ান হিসাবে আমাদের কাছে সেই জিনিসই মুল্যবান হবে, যে জিনিসকে ঈশ্বর মূল্যবান বলবেন। জগতের দৃষ্টিতে যা কিছু মুল্যবান আমরা তাকেও মুল্যবান হিসাবে বিবেচনা করি। কিন্তু ঈশ্বর যখন তাঁর বাক্যে যীশু খ্রীষ্টের রক্তকে মূল্যবান বলেছেন, তখন আমাদের মনে রাখতে হবে স্বর্গ, মর্ত্যে যা কিছু আছে তার মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান যীশুর রক্ত। যদি কেউ একে অস্বীকার  করে তবে মনে রাখতে হবে সে সত্যকে অস্বীকার করছে।

    রক্ত কি?

    কোন দুর্ঘটনার স্থানে রক্ত আমাদের এই ইঙ্গিত দেয় যে সেখানে হয়তো মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে বা কেউ মারাত্মক রকমের আহত হতে পারে। কিন্তু যখন রক্ত আমাদের দেহের শিরা উপশিরার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় বা কোন মৃত্যু পথযাত্রীকে রক্ত দান করা হয় তখন তা হয়ে পড়ে জীবন দায়ী। রক্ত শরীরে না থাকলে শরীর হয়ে পড়ে ফ্যাকাশে, আর এটা চিহ্নিত করে মৃত্যুর। কিন্তু যখন আমরা যীশুর রক্তের দিকে দেখি তখন তা আমাদের কাছে মৃত্যু অপেক্ষা জীবনের কথা বেশি করে মনে করিয়ে দেয়।

    রক্ত অর্থ জীবন :যখন কেউ বলে “উহার রক্ত আমাদের উপরে ও আমাদের সন্তানদের উপরে বর্তুক ”(মথি২৮:২৫) বা যদি বলা হয় “তোমরা প্রত্যেকে সিয়োনকে রক্তে ও যিরূশালেমকে দৌরাত্মে গাঁথিতেছ” (মীখা ৩:১০), তখন এর অর্  হল সেই লোকেরা হত্যার দোষে দোষী। এই রকম ক্ষেত্রে, রক্ত মৃত্যুর প্রতিক। অন্য ক্ষেত্রে, রক্ত মৃত্যুর অর্থ করে না, কিন্তু জীবনের। উদাহরণ স্বরূপ, মাংস খাওয়া ও ই¯্রায়েলীয়দের উৎসর্গের বিষয়ে সব সময়ই বলা হয়েছে যে রক্ত অর্থ জীবন। মাংসময় জীবন, যেটি হল এর রক্ত, তুমি এটি খাবে না। “কিন্তু সপ্রাণ অর্থাৎ সরক্ত মাংস ভোজন করিও না” (আদি ৯:৪), আবার লেবীয় ১৭:১১ পদে বলা হয়েছে, “কেননা রক্তের মধ্যেই শরীরের প্রাণ থাকে।”

    এভাবে সকল উৎসর্গ ও খাবারে, রক্ত হল জীবনের প্রতিক। এটা কখনই জীবন নিয়ে নেবার প্রতিক নয়, কিন্তু রক্ষা করার বা জীবন লাভ করার। এভাবে রক্তের প্রায়শ্চিত্ত মৃত্যুর বা শাস্তির প্রতিক নয় বরং জীবনের প্রতিক। এই একই বিষয় সত্য যখন যীশু তাঁর নিজের রক্তের বিষয়ে বলেছিলেন। এটি তাঁর মৃত্যুর প্রতিক নয়, বরং তাঁর জীবনের। যীশু বলেছিলেন, “সত্য, সত্য,


    আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা যদি মনুষ্যপুত্রের মাংস ভোজন ও তাঁহার রক্ত পান না কর, তোমাদের মধ্যে জীবন নাই” (যোহন ৬:৫৩)। স্পষ্টত, যীশু প্রতিকি ভাবে কথা বলেছিলেন, তিনি তাদের সত্যিকার ভাবে তাঁর মাংস খেতে বা রক্ত পান করতে বলেন নাই, কিন্তু তাঁর জীবনকে গ্রহণ করতে বলেছিলেন। যেটি হল তাঁর মাংস ও রক্ত, যা আত্মিক ভাবে আমাদের বুঝতে হবে।

    ঈশ্বরের দৃষ্টিতে জীবন মূল্যবান: ব্যবস্থা থেকেই ই¯্রায়েলীয়রা শিখেছিল যে ঈশ্বরের কাছে রক্তের কি মূল্য। রক্তের মধ্যে জীবন নিহিত। এই রক্ত ছিল প্রায়শ্চিত্তের একটি হাতিয়ার, যা পাপীর জীবনকে রক্ষা করতো। এই জন্য ঈশ্বরের কাছে জীবন মুল্যবান। ঈশ্বর হলেন জীবন দানকারী; শয়তান, পাপ কাজের মধ্যে দিয়ে এই জীবনকে ধংসের চেষ্টা করে। আমরাও আমাদের জীবনকে সবচেয়ে মূল্যবান হিসাবে বিবেচনা করি। কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের জীবনকে আমরা যতটা মূল্যবান মনে করি তার চেয়েও বেশি মূল্যবান মনে করেন ঈশ্বর। যার প্রমাণ হল আমাদের এই জীবনকে রক্ষা করার জন্য ঈশ্বর তাঁর নিজ পুত্রকে উৎর্গ করলেন, তাঁর একজাত পুত্রের বহুমূল্য রক্ত ঝড়ালেন। এই দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা বলতে পারি যে, ঈশ্বরের দৃষ্টিতে আমাদের জীবন মূল্যবান। আমাদের এখন ভেবে দেখা দরকার আমরা ঈশ্বরের মত মূল্যবান হিসাবে আমাদের জীবনকে দেখি কি না!

    জীবন কি?

    ঈশ্বরই হলেন জীবনের উৎস। তাঁর কাছ থেকেই জীবন আসে। আদি পুস্তক ২:৭ পদ অনুসারে, “আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে (অর্থাৎ মনুষ্যকে) নির্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন; তাহাতে মনুষ্য সজীব প্রাণী হইল।” মানুষের মধ্যে যে প্রাণবায়ু আছে তা কোন -জীবজন্তু বা গাছ-পালা থেকে তাকে পৃথক করে না। মানুষের প্রাণবায়ু যা থেকে তাকে পৃথক করে তা হল জীবন ও মৃত্যু। এই কথা পৃথিবীর উপরে সকল প্রাণবায়ু বিশিষ্ট প্রাণীদের বেলায় একমাত্র সত্য। সমগ্র বাইবেলে ঈশ্বর প্রাণদানকারী বলে চিত্রিত হয়েছেন। যতদিন প্রাণবায়ু আছে ততদিন জীবন আছে, যেদিন ঈশ্বর এই প্রাণবায়ু নিয়ে নেবেন সেদিন আর জীবন থাকবে না। গীত ১০৪:২৯ পদ বলে, “তুমি নিজ মুখ আচ্ছাদন করিলে তাহারা বিহ্বল হয়; তুমি তাহাদের নি:শ্বাস হরণ করিলে তাহারা মরিয়া যায়, তাহাদের ধূলিতে প্রতিগমন করে।” তাই মৃত্যু হল মানুষের সব ধরণের কার্যকলাপের অবসান। এই জন্য গীতরচক গীত ১৫০:৬ পদে বলেছেন যেন শ্বাস বিশিষ্ট সকলেই সদাপ্রভুর প্রশংসা করে।

    জীবন হল জন্ম থেকে মৃত্যু মধ্যবর্তী সময়। এই সময়ের মধ্যেই মানুষ বিভিন্ন অভিজ্ঞতা লাভ করে। একদিকে থাকেন ঈশ্বর অন্যদিকে জগত। মানুষের বেছে নেবার উপরেই নির্ভর করে তার জীবনের অভিজ্ঞতা কেমন হবে। যারা ঈশ্বরের উপরে বিশ্বাসে জীবন যাপন করেন তাদের জীবন ঈশ্বর নিয়ন্ত্রণ করেন। অন্যদিকে জাগতিক জীবন জগতই নিয়ন্ত্রণ করে। দীর্ঘজীবন ঈশ্বরের অনুগ্রহ মাত্র (হিতো১০:২৭)।

    জীবন হল বেছে নেওয়া। মোশি ই¯্রায়েলীয়দের বলেছিলেন বেছে নিতে। বেছে নেওয়াটা কঠিন কিছু নয়, কিন্তু বেছে নিতেই হয়, জীবন অথবা মৃত্যু, আশীর্বাদ অথবা অভিশাপ (দ্বি বি ৩০:১১)। যেটি ঈশ্বর মানুষের জীবনের সামনে ঝুলিয়ে রাখেন। যিহোশূয়ও ঠিক একই আবেদন করেছিলেন (২৪:১৪-১৫)।

    জীবনের সাথে রক্তের সম্পর্ক: আদি ৯ অধ্যায়ে নোহ ঈশ্বরের কাছ থেকে নিয়ম লাভ করেছিলেন। এই নিয়মের অংশ পূর্বের মাংস খাবার বিষয়ের নিষেধাজ্ঞাকে বদল করে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল নোহ ও তার পরিবার পশু মেরে খেতে পারবে। তবে, এই অনুমতি এই নিয়মের সঙ্গে এসেছিল, “কিন্তু সপ্রাণ অর্থাৎ সরক্ত মাংস ভোজন করিও না” (৪ পদ)।

    পুরাতন নিয়মে একটি কারণে ঈশ্বর পশুর রক্ত খাওয়া নিষেধ করেছিলেন, তা ছিল জীবনের পবিত্রতাকে শ্রদ্ধা করতে শিখানো। সমগ্র বাইবেলে রক্তকে জীবনের প্রতিক হিসাবে দেখা হয়েছে (লেবীয় ১৭:১)। বাইবেলে প্রথম রক্ত শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে আদি ৪:১০ পদে যেখানে ঈশ্বর খুনি কয়িনকে প্রশ্ন করছেন, “তুমি কি করিয়াছ? তোমার ভ্রাতার রক্ত ভূমি হইতে আমার কাছে ক্রন্দন করিতেছে।” এই রক্তপাত প্রতিনিধিত্ব করছে জীবন হারানোর।

    সপ্রাণ ভোজনে নিষেধাজ্ঞার কারণ:সপ্রাণ ভোজন অর্থাৎ রক্ত সহ খাওয়া। মোশির ব্যবস্থার অধিনে, কিছু কিছু খাবার অশুচি বলে খাওয়া যেত না, যার মধ্যে ছিল স্বরক্ত কোন পশুর মাংস (দ্বি বি ১২:১৬)। প্রাথমিক মন্ডলীতে যিহূদী ও পরজাতিয় বিশ্বাসীদের মধ্যেকার সমস্যা সমাধানে পরজাতিয় বিশ্বাসীদের বলা হয়েছিল স্বরক্ত মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে যেন তাদের সেই কাজের মধ্যে দিয়ে তাদের যিহূদী বিশ্বাসী ভাইদের বিঘাœ না জন্মে, আর তারা যেন পৌত্তলিক আচার অনুষ্ঠান থেকে দুরে থাকেন (প্রেরিত ১৫:২০)।

    আর একটি কারণে ঈশ্বর স্বরক্ত মাংস খেতে নিষেধ করেছিলেন যা ছিল নি:সন্দেহে উৎসর্গের সাথে সম্পর্কিত। রক্ত ছিল একমাত্র পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত (ইব্রীয় ৯:২২); সেজন্য, রক্তকে দেখা হত পবিত্র বস্তু বলে। ঈশ্বর এটি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন যে উৎসর্গের রক্ত সব সময় বিবেচনা করতে হবে বহুমূল্য বলে। লোকদের উৎসর্গের বিষয় বলেই ঈশ্বর রক্তকে মানুষের খাবার হিসাবে অনুমতি দেন নাই।

    পশুর প্রতি মানুষের আচরন হতে পারে আর একটি কারণ যার কারণে ঈশ্বর নোহ ও তার পরিবারকে স্বরক্ত মাংস খেতে নিষেধ করেছিলেন। ঈশ্বর কখনই চাননি যে মানুষ বন্য পশুর মত আচরণ করুক, যেমন পশুরা অন্য পশু শিকার করে এবং সঙ্গে সঙ্গে খেতে শুরু করে। কিন্তু মানুষ এমন করবে না, পরিবর্তে তারা এর মধ্যে থেকে রক্ত ঝড়ে যেতে দেবে এবং খাবার আগে নিশ্চিত হবে যে পশুটি মৃত।

    এছাড়া, অনেকে বলেছেন যে ঈশ্বর এই আদেশ স্বাস্থ্যের কারণেও দিয়েছেন। মাংসের মধ্যে রক্ত অর্থ এটি ভাল ভাবে রান্না করা হয়নি, আর ভাল করে রান্না না করা খাবার খেলে রোগ আর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। আমরা আজকে এর বিপদ সম্পর্কে জানি, অহরহ আমাদের এ বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে যে আমরা যেন এমন না করি। প্রাচীন সংস্কৃতিতে, এই ঝুকি ছিল মারাত্মক কারণ তখন খাবারের এতটা মান বজায় রাখা হতো না।

    রক্ত বা জীবনের পবিত্রতা: দৈহিক বা বাস্তব অর্থে, রক্তের সাথে মানুষসহ যে কোন জীবের জীবন সম্পর্কিত। দ্বি বি ১২:২৩ পদে বলা হয়েছে, “কেবল রক্ত ভোজন হইতে অতি সাবধান থাকিও, কেননা রক্তই প্রাণ; তুমি মাংসের সহিত প্রাণ ভোজন করিবে না।” যতক্ষণ রক্ত আছে ততক্ষণ জীবনও আছে। যখন দেহ থেকে রক্ত নি:শেষিত হয়, তখন জীবনও নি:শেষিত হয়ে যায়। জীবনের সঙ্গে রক্তের সংযোগ খুব দৃঢ় যে কারণে ব্যবস্থা রক্ত বা রক্ত সহ মাংস খাওয়া নিষিদ্ধ করেছে। রক্ত বা জীবন উৎসর্গ ছিল আরাধনাকারী রক্ত বা জীবনের বিকল্প, যদিও তা যথেষ্ট ছিল না বরং ছিল আরও মূল্যবান বা খ্রীষ্টের নিখুঁত উৎসর্গের জন্য আকাংখ্যা সৃস্টিকারী (ইব্রীয় ১০:১-৪)।

    ঈশ্বর মানব জীবনের জন্য শ্রদ্ধার আকাংখ্যা করেছেন এবং হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন (দ্বি বি ৫:১৭)। যেখানে রক্তপাতের মত সন্ত্রাশ রয়েছে সেখানে জবাবদিহিতাও থাকবে, তাছাড়া থাকবে কেবল শাস্তি (দ্বি বি ১৯:২১)। যীশু জীবনের এই উপলব্ধিকে প্রসারিত করেছেন দৈহিক জীবনের চেয়েও ব্যাপকতর অর্থে, তিনি কড়া ভাষায় বলেছেন, কারো প্রতি রাগ করা, অপমান করা, বা গাল দেওয়া(মথি ৫:২২), এগুলি জীবনকে আহত করে এবং আত্মাকে, আত্ম-সম্মানকে এবং অন্যের কল্যাণকে হত্যা করে, যারা এসব করে তারা বিচারের দায়ে পড়বে।

    যীশুর রক্ত মূল্যবান: এটা ঠিক যে যখন মানুষ কোন জিনিসকে মূল্যবান বলে মনে করে যে তখন তার সব কিছু দিয়ে তা পাবার জন্য চেষ্টা করে। এই ক্ষেত্রে আমরা মনে করতে পারি ‘দামী মুক্তার’ দৃষ্টান্তটি (মথি ১৩:৪৫-৪৬)। আবার যার কাছে দুর্লভ একটি মুদ্রা থাকে, বা অন্য কোন কিছু থাকে, সে তা কখনই ছাড়াতে বা হারাতে চায় না, কিন্তু সে তার সেই দুর্লভ জিনিসটি অন্যদের দেখাতে ভালবাসে।

    আমাদের কাছে আসলে যে দুর্লভ জিনিসটি রয়েছে তা হল খ্রীষ্টের রক্ত, আমাদের সেই দুর্লভ জিনিসটি অন্যদের দেখানোর জন্য সব সময়ই চেষ্টা করতে হবে অবশ্য যদি আমরা নিজেরা সেই রক্তকে মূল্যবান বলে মনে করি। আমরা যে তা মুল্যবান মনে করি তা আমাদের সুসমাচারে প্রচারের অগ্রহের মধ্যে দিয়েই প্রকাশ পাবে।

    সবচেয়ে বড় কথা হল যখন আমরা আন্যদের ভালবাসি তখন আমরা ইচ্ছুক হই যেন সেও খ্রীষ্টের মূল্যবান রক্তে জীবন লাভ করতে পারে। খ্রীষ্ট আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন “কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত প্রাণ সমর্পণ করে, ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই” (যোহন ১৫:১৩)। কিন্তু খ্রীষ্টের মৃত্যু আরও এক ধাপ এগিয়ে, আমরা যখন তাঁর শত্রু ছিলাম তখনও তিনি আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন (রোমীয় ৫:৬-৮)। যদি আমরা সত্যিকার ভাবে আমাদের প্রতিবাসিদের ভালবাসি, তবে আমাদের রক্ত তাদের জন্য পাতিত করবো। যদি আমরা সত্যিকার ভাবে ঈশ্বরকে ভালবাসি, তবে আমরা ইচ্ছুক হবো আমাদের রক্ত তাঁর জন্য পাতিত করতে।

    রক্ত অর্থ ঈশ্বরের সত্য:বাইবেল মাঝে মাঝে উল্লেখ করেছে “নিয়মের রক্ত” (ইব্রীয় ১০:২৯)। ঈশ্বরের নিয়মের ১০টি আজ্ঞা যেটি তিনি পাথরের উপরে লিখেছিলেন (দ্বি বি ৪:১৩)। যে বাক্সে ১০টি আজ্ঞা রক্ষিত হয়েছিল তাকে বলা হয় নিয়ম সিন্দুক (গণনা ১০:৩৩)। ব্যাপক অর্থে, নিয়ম হল ব্যবস্থা পুস্তক বা ঈশ্বরের কথা (গীত ১০৫:৮)।

    আমাদের সহজ সরল ভাবে ঈশ্বরের সত্য জানাটা যথেস্ট নয়, তিনি চান আমরা যেন এই সত্য পালন করি ও তাতে জীবন যাপন করি। তিনি চেয়েছেন যেন এই নিয়ম আমাদের হৃদয়ে ও মনে লিখিত থাকে। এটাই হল সত্যিকারের নিয়ম। “সদাপ্রভু কহেন, তাহাদের সহিত আমার নিয়ম এই, আমার আত্মা, যিনি তোমাতে অধিষ্ঠান করিয়াছেন, ও আমার বাক্য সকল, যাহা আমি তোমার মুখে দিয়াছি, সেই সকল তোমার মুখ হইতে, তোমার বংশের মুখ হইতে ও তোমার বংশোৎপন্ন বংশের মুখ হইতে অদ্যাবধি অনন্তকাল পর্যন্ত কখনও দূর করা যাইবে না; ইহা সদাপ্রভু কহেন” (যিশা ৫৯:২১)। একবার যদি আমরা বুঝি যে নিয়ম হল ঈশ্বরের ১০ আজ্ঞা এবং এর ব্যাপকতর অর্থ, তাঁর সব বাক্য বা সত্য, তাহলে আমরা দেখতে পাবো নিয়মের রক্ত, যেখানে এটি ব্যবহৃত হয়েছে সত্যের প্রতিক হিসাবে। উদাহরণ হিসাবে, যখন মোশি লোকদের উপরে রক্ত ছিটাতেন, তিনি বলতেন, দেখ, এই সেই নিয়মের রক্ত, যাহা সদাপ্রভু তোমাদের সহিত এই সকল বাক্য সম্বন্ধে স্থির করিয়াছেন”(যাত্রা ২৪:৮)। এটি স্পষ্ট যে রক্ত ছিটানোটা ছিল একটি প্রতিক যে লোকেরা ঈশ্বরের সত্য বা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এবং তারা তাঁর ব্যবস্থা পালন করবে।

    নূতন নিয়মে: নূতন নিয়মে, “খ্রীষ্টের রক্ত,” কথাটি আমাদের কাছে খুবই প্রচলিত একটি কথা, তবে আমাদের এই কথাটি কেবল মাত্র খ্রীষ্টের মৃত্যুকে ইঙ্গিত দেয় না দেয় জীবনেরও। যীশু যদি তাঁর রক্তের অর্থ করতেন তাঁর মৃত্যুর প্রতিক হিসাবে, তবে তিনি হয়তো বলতেন, “এই আমার মৃত্যুর রক্ত।” কিন্তু তিনি কি বলেছেন? তিনি বলেছেন, “কারণ ইহা আমার রক্ত, নূতন নিয়মের রক্ত” (মথি ২৬:২৮), এবং “এই পান পাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয়” (লূক ২২:২০)। আবার, নূতন নিয়ম হল ঈশ্বরের সত্য বা ব্যবস্থা, যেটি আমাদের হৃদয়ে লিখিত হয়েছে (যিহি ৩১:৩১, ৩৩)।

    যেহেতু রক্ত এই প্রসঙ্গে অর্  করে ঈশ্বরের সত্য এটি জ্যোতির সাথে চিহ্নিত, এবং বলা হয়েছে যে এটি আমাদের সকল পাপ মোচন করে (১ যোহন ১:৭)। তাছাড়া আমরা পড়েছি যে রক্ত সাক্ষ্য বহন করে এবং আত্মার সাথে ঐক্যমত পোষন করে, আর আত্মা সাক্ষ্য বহন করেন কারণ এটি সত্য (১ যোহন ৫:৬-৮)। এখানে আবার, রক্ত সত্যের সাথে সংযুক্ত।

    যখন আমরা বুঝতে পারি যে রক্ত অর্থ ঈশ্বরের ব্যবস্থা, তাঁর বাক্য, তাঁর সত্য, তাহলে আমরা দেখতে পারি যে কেন এটি বলা হয়েছে যে আমাদের তাঁর রক্ত পান করতে হবে (যোহন ৬:৫৩-৫৬) এবং শুচি হতে হবে বা ধৌত হতে হবে তাঁর রক্তে (প্রকা ১:৫)। তিনি চেয়েছেন আমরা যেন তাঁর বাক্য পান করি, তাঁর সত্যে পরিস্কৃত হই। যীশুই সত্যিকার বাক্য যিনি মাংসে মূর্র্তিমান হয়েছিলেন, তিনি মানব রূপে ঈশ্বরের অনন্তকালীন প্রজ্ঞা, যেন তাঁর রক্ত-জীবন হল ঐশ্বরীক সত্য, অর্থাৎ, নূতন নিয়ম, যা আমাদের জন্য দেওয়া হয়েছে, যা আমাদেরকে শুচি করে এবং আমাদেরকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

    ঈশ্বর রক্ত চান না: পুরাতন নিয়মের উৎসর্গে, রক্ত কেবলমাত্র ঈশ্বরের আগ্রহের বিষয় ছিল না। কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন তারা তাঁর নিয়ম পালন করবে এবং তাঁর জীবন গ্রহণ করবে। সে সময়ে আশে পাশে অনেক জাতি ছিল, ধর্ম ছিল, যারা রক্ত ব্যবহার করতো এবং উৎসর্গ কেবল পশু করতো তাই নয় কিন্তু মানুষও উৎসর্গ করতো। কিন্তু এরকম উৎসর্গ ঈশ্বর চান না। আর এটাই অন্যদের থেকে ই¯্রায়েলীয়দের পৃথক করেছিল, যেটি রক্ত ব্যবস্থার প্রতিক হিসাবে ও জীবন হিসাবে ব্যবহৃত হতো। আর এই রক্ত জীবনের প্রতিনিধিত্ব করতো। উৎসর্গে রক্ত, সত্য ও জীবনের প্রতিকিকরণ করতো। কিন্তু দৈহিক রক্ত আসলে কোন প্রায়শ্চিত্ত সাধন করতে পারে না। “..বৃষের কি মেষের, কি ছাগের রক্তে আমার কিছু সন্তোষ নাই” (যিশা ১:১১)। মনে রাখতে হবে ঈশ্বর রক্ত চান না, কিন্তু চান কৃতজ্ঞতা ও প্রতিজ্ঞা রক্ষা। এটি কখনই সম্ভব নয় যে ষাড়, বা ছাগ বা মেষ এর রক্ত মানুষের পাপ নিয়ে যাবে (ইব্রীয় ১০:৪)। এই অংশটি আমাদের দেখায় যে ঈশ্বর আক্ষরিক ভাবে রক্ত চান না। যখনই লোকে মনে করে যে ঈশ্বর রক্ত চান তখন লোকে আসলে তাঁকে সম্পূর্ণরূপে ভুল বোঝে, বুঝতে হবে যে রক্ত আসলে কিসের প্রতিনিধিত্ব করছে।অনেক লোক যীশুর রক্ত নিয়েও এরকমই ভুল ধারণা পোষন করে। তারা ভুলে যায় যে রক্ত আসলে কিসের প্রতিনিধিত্ব করে, তারা আক্ষরিক ভাবে রক্তের দিকে দৃষ্টি রাখে, যীশু যে সত্য ও জীবন দান করেন তার পরিবর্তে তারা এই ধারণা পোষণ করে। যখন বাইবেল যীশুর রক্তের কথা বলে, তখন অনেক লোক মনে করেন যে রক্ত তাঁর মৃত্যুর প্রতিনিধিত্ব করে, তারা কখনোই এটা চিন্তা করে না যে বাইবেল আসলে রক্তের বিষয়ে কি বলছে। আর এরকম হলে আমরা বুঝতে পারি যে তারা ভুল পথেই এগিয়ে চলেছে।লক্ষ্য জীবনের দিকে, মৃত্যুর দিকে নয়বাইবেল আমাদের বলে যে যীশু তাঁর মৃত্যু দ্বারা আমাদের শয়তানের শক্তি ও পাপের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন। যীশু তাঁর সমগ্র জীবন মন্দ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আর তাঁর কষ্টভোগ ছিল এই যুদ্ধের চূড়ান্ত রূপ, তাঁর পুনরুত্থান ছিল তঁচূড়ান্ত বিজয় শয়তানের উপরে। এই বিজয় ছিল জগতের সকল লোকের জন্য যারা শয়তাদের দাসত্বে বন্দি। বাইবেল বলে, ঈশ্বররক্ত মাংস রূপ ধারণ করেছেন যেন “..মৃত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্তৃত্ব বিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থ্ৎা দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন”(ইবীয় ২:১৪)। আজও তিনি তাঁর জীবন দ্বারা আমাদের রক্ষা করছেন (রোমীয় ৫:১০)। যীশুর মৃত্যু ছিল আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, তিনি মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে শয়তানের উপরে বিজয় লাভ করেছেন এবং আমাদের জন্য বিজয় এনেছেন।চারটি সুসমাচারের মূল কথা হল জীবন। যোহন তার সুসমাচারে তার উদ্দেশ্যকে সারাংশ করেছেন, “কিন্তু এই সকল লেখা হইয়াছে, যেন তোমরা বিশ্বাস কর যে, যীশুই খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের পুত্র, আর বিশ্বাস করিয়া যেন তাঁহার নামে জীবন প্রাপ্ত হও” (২০:৩১)। যীশু বলেছেন তিনি হলেন জীবনে প্রবেশের সরু দরজা বা প্রবেশ পথ (মথি ৭:১৩-১৪)। ঈশ্বর পুত্র সৃষ্টিতে সক্রিয় ছিলেন এবং তিনি এসেছিলেন তাদের সকলের জন্য নূতন জীবন বা জন্ম দিতে যারা তাকে বিশ্বাস করবে(যোহন ৩:১৬)। যারা নূতন জন্মের অভিজ্ঞতা লাভ করবে, তাদের বর্ণনা করা হয়েছে যে তারা তাদের পূর্বের জীবনে মৃত (লূক ১৫:৩২)। এভাবেই যীশু ইতিহাসের কেন্দ্রে একমাত্র ব্যক্তি যিনি “জীবনের উৎস”(যোহন ৫:৪০)। এই জীবন স্বর্গরাজ্যে প্রবেশের মত একই রকম, আর মানব ও ঈশ্বরের মধ্যেকার সম্পর্ক পুনঃস্থাপন, যেরকম সৃষ্টিতে ছিল। যখন যীশু রোগীকে সুস্থ্য করেছেন, মন্দ আত্মা তাড়িয়েছেন, কুষ্ঠকে শুচি করেছেন, আসলে তিনি জীবনকে পুনরুদ্ধার করেছেন। যখন তিনি ঈশ্বরের সুসমাচার ঘোষণা করেছেন, তিনি আসলে রক্ষা করেছেন এবং পুনরুদ্ধার করেছেন আদমের পাপে হারান জীবনকে।

    শেষ কথা:

    খ্রীষ্টিয়ানের জীবনে খ্রীষ্টের রক্তের দাম সবচেয়ে বেশি। আর যে কারণে খ্রীষ্টের রক্ত পাতিত হয়েছে তাহল আমাদের সিদ্ধতা, পবিত্রতা ও নূতন জীবনের জন্য। যীশুর রক্ত অসীম মূল্যবান হলেও কিন্তু এটি যারা বিশ্বাস করে তাদের জন্য সুপ্রাপ্য। সেজন্য আমাদের চেষ্টা করতে হবে যেন অনেকে এই রক্ত লাভ করতে পারে, এই রক্তে নিজেদের শুচি করতে পারে এবং জীবন লাভ করে স্বর্গরাজ্যের অধিকারী হতে পারে। আমেন!

    লেখক: রেভা. পল কাজল দাশ

    ফার্মগেট, তেজগাঁও, ঢাকা-১২১৫


    পরিচিতদেরকে জানাতে শেয়ার করুন

    আপনার জন্য আরো কিছু পোস্ট

    RELATED ARTICLES

      ADS