আমরা দেখতে পাই ডাক্তারদের গাড়িতে ক্রশ + চিহ্ন। এটি দেখলে সকলে বুঝতে পারি ডাক্তারের গাড়ি। আবার ক্লিনিকে অথবা হাসপাতালের দরজায়ও একই + চিহ্ন দেখা যায়। যার ফলে সকলে বুঝতে পারে যে এখানে ডাক্তার আছেন। ঠিক তদ্রুপ কোন বাড়িতে অথবা এলাকায় কোন ঘরে ক্রুশ দেখা যায় তখন স্পষ্ট বোঝা যায় এটি খ্রীষ্টিয়ানদের বাড়ি অথবা গীর্জা ঘর। ঠিক তখনই প্রশ্ন আসতে পারে, খ্রীষ্টিয়ানরা কেমন ইত্যাদি ইত্যাদি।
ক্রুশ মানেই যন্ত্রনা, অপমান, নির্যাতন, শাস্তি এবং দুঃখ ভোগ স্বীকার করা। যিশাইয় ৫৩;৩-৫ পদ = তিনি অবজ্ঞাত ও মনুষ্যদের ত্যাজ্য, ব্যাথার পাত্র ও যাতনা পরিচিত হইলেন; লোকে যাহা হইতে মুখ আচ্ছাদন করে, তাহার ন্যায় তিনি অবজ্ঞাত হইলেন, আর আমরা তাহাকে মান্য করি নাই। সত্য , আমাদের যাতনা সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন, আমাদের ব্যাথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন; তবু আমরা মনে করিলাম, তিনি আহত, ঈশ^রকর্ত্তৃক প্রহারিত ও দুঃখার্ত্ত। কিন্তু তিনি আমাদের অধর্ম্মের নিমিত্ত বিদ্ধ, আমাদের অপরাধের নিমিত্ত চূর্ণ হইলেন, আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ত্তিল, এবং তাহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইল।
সাধু পৌলের জীবন = এই মাত্র জানি, পবিত্র আত্না প্রতি নগরে আমার কাছে এই বলিয়া সাক্ষ্য দিতেছেন যে বন্ধন ও ক্লেশ আমার অপেক্ষা করিতেছে- প্রেরিত ২০;২৩। “ যিহুদীদের হইতে পাঁচবার উনচল্লিশ আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছি। তিনবার বেত্রাঘাত, একবার প্রস্তরাঘাত, তিনবার নৌকাভঙ্গ সহ্য করিয়াছি, অগাধ জলে এক দিবারাত্র যাপন করিয়াছি।---- ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায়, অনেক বার অনাহারে, শীতে ও উলঙ্গতায় ”- ২ করি ১১;২৪-২৭ পদ।
আমাদের খ্রীষ্টিয় জীবনে মাঝে মাঝে অপমান, দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রনা আসে, তখন মনে হয় কেন এই সকল আমাদের জীবনে আসে ? কেনই বা এই দুনিয়ায় আসলাম ? আমরা তখন হয়তো ঈশ্বরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করি অথবা প্রতিশোধের চিন্তা করি। এর কোনটাই ঠিক নয়। কারণ আমি তো সেই দিনই খ্রীষ্টের সঙ্গে চুক্তি করেছি, যে দিন আমি প্রকাশ্যে মন্ডলীর সাক্ষাতে বাপ্তিস্ম গ্রহণ করেছি। খ্রীষ্টকে গ্রহণ করার অর্থই হইল ‘ ক্রুশ ’ বহন করা। তাই তো ভক্ত লিখেছেন, “ আমায় লহ, লহ, লহ যীশু হে, ক্রুশের আরও সন্নিধান, দেহ আমায়, আমায়, আমায় প্রভু হে, ------------- তব কুক্ষিদেশে স্থান। ”
আর যে কেহ আপন ক্রুশ তুলিয়া লইয়া আমার পশ্চাৎ না আইসে, সে আমার যোগ্য নয়। মথি ১০;৩৮ + ১৬;২৪, মার্ক ৮;৩৪, লুক ৯;২৩ পদ।
ক্রুশ মানে ক্ষমা “ পিতঃ, ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কেননা ইহারা কি করিতেছে, তাহা জানে না- লুক২৩;৩৪ পদ।” যীশুর মত স্তিফানও ক্ষমার বাণী উচ্চারণ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, প্রভু, ইহাদের বিপক্ষে এই পাপ ধরিও না- প্রেরিত ৭;৬০ পদ।সাধু পৌল তার বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতায় বলেছেন, নিন্দিত হইতে হইতে আশীর্বাদ করিতেছি, তাড়িত হইতে হইতে সহ্য করিতেছি, অপবাদিত হইতে হইতে বিনয় করিতেছি- ১ করি ৪;১২,১৩।
প্রভু যীশু খ্রীষ্ট বলেছিলেন, “ কিন্তু আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তোমরা আপন আপন শত্রুদিগকে প্রেম করিও, এবং যাহারা তোমাদিগকে তাড়না করে, তাহাদের জন্য প্রার্থনা করিও- মথি ৫;৪৪ পদ্।”তোমরা পরস্পর মধুর স্বভাব ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ^রও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন- ইফি ৪;৩২ পদ।
ক্রুশ মানে পাপের ক্ষমা, আরোগ্য লাভ, পরিত্রাণ তৎপরে অনন্ত জীবন।মৃত্যু পথযাত্রি সেই দস্যু, যিনি দুস্কর্মের জন্য ক্রুশে ঝুলছিলেন, তার মৃত্যু অবধারিত। সেই মুহুর্তে সে বুঝতে পেরেছিল, তার পাপের ক্ষমা প্রয়োজন। তাই সে অন্য দস্যুকে ধিক্কার দিয়ে নিজেকে শুধ্রে নিয়ে যীশুর নিকটে অবনত হৃদয়ে একটি প্রার্থনা জানিয়েছিল, যীশু আপনি যখন আপন রাজ্যে আসিবেন, তখন আমাকে স্মরণ করিবেন। তিনি তাহাকে কহিলেন, আমি তোমাকে সত্য বলিতেছি, অদ্যই তুমি আমার সঙ্গে পরমদেশে উপস্থিত হইবে- লুক ২৩;৪২,৪৩ পদ। যীশু ঠিকই ঐ সময়ে ঐ দস্যুকে ক্ষমা করে অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন।
যীশু খ্রীষ্ট দস্যুর নিকটে যেমন প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, আজও তেমনি তাঁর জীবন্ত বাক্যের মাধ্যমে আমাদের পাপের ক্ষমার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাই তো তিনি বলেছেন, হে পরিশ্রান্ত ও ভারাক্রান্ত লোক সকল, আমার নিকটে আইস, আমি তোমাদিগকে বিশ্রাম দিব- মথি ১১;২৮। পাপের ক্ষমা এবং অনন্ত জীবন দেওয়ার জন্য প্রভু যীশু ঐ ক্রুশের উপর থেকে দুই হাত বাড়িয়ে পরিত্রাণের ডাক দিয়ে বলছেন, ফিরে আয় ফিরে আয়।
ইব্রীয় ৯;২২ = আর ব্যবস্থানুসারে প্রায় সকলই রক্তে শুচীকৃত হয়, এবং রক্ত সেচন ব্যতিরেকে পাপ মোচন হয় না। ২৮ = তেমনি খ্রীষ্টও অনেকের পাপভার তুলিয়া লইবার নিমিত্ত এক বার উৎসৃষ্ট হইয়াছেন, তিনি ২য় বার বিনা পাপে আমাদিগকে দর্শন দিবেন, যাহারা পরিত্রাণের নিমিত্ত তাঁহার অপেক্ষা করে।
উপসংহার ঃ- কোন এক সময় যীশুর নিকটে এক যুবক এসেছিল অনন্ত জীবনের উ্েদ্দশ্যে। যীশু তাকে অনন্ত জীবনে প্রবেশের জন্য যাহা করা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছিলেন। সে যেন যীশুকে অনুসরণ করে। কিন্তু ঐ যুবক দুঃখিত হইয়া চলিয়া গিয়াছিল। কারণ সে যীশুর জন্য ক্রুশ বহন করতে প্রস্তুত নয়। মৃত্যুর পূর্বেও যীশু তাঁর আপন শিষ্যদের বলেছিলেন, তোমরাও কি চলিয়া যাইতে ইচ্ছা করিতেছ ? তখন শিমন (পিতর) বলেছিলেন, প্রভু, কাহার কাছে যাইব ? আপনার নিকটে জীবনের কথা আছে- যোহন ৬;৬৭.৬৮ পদ। আর এই পিতরই পবিত্র আত্মায় পূর্ণ হওয়ার পর থেকে খ্রীষ্টের জন্য কত না দুঃখ-কষ্ট, যাতনা সহ্য করেছিলেন। কারণ একটাই, ক্রুশ। খ্রীষ্টের সহিত আমি ক্রুশারোপিত হইয়াছি, আমি আর জীবিত নই, কিন্তু খ্রীষ্টই আমাতে জীবিত আছেন- গালা ২;২০ পদ। আর যাহারা খ্রীষ্ট যীশুর, তাহারা মাংসকে তাহার মতি ও অভিলাষ শুদ্ধ ক্রুশে দিয়াছে-৫;২৪ পদ। ক্রুশই জীবন, ক্রুশই প্রাণ, ক্রুশেই আমার মরণ। ঈশ্বর তাঁর জীবন্ত বাক্যের আলোকে আমাদের সকলকে আশীর্বাদ দান করুন, আমেন।
পাষ্টর কিশোর তালুকদার
হাউজ চার্চ অব বাংলাদেশ, ঢাকা।